সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় |
সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়
- অথবা, “জাহাঙ্গীরের চরিত্র বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ" তুমি কি এ উক্তির সাথে একমত?
উত্তর : ভূমিকা : সম্রাট জাহাঙ্গীর একজন প্রতিভাবান মানুষ। তার অপর নাম 'নুরুদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ পাচ্ছি'। তার চরিত্রে উদারতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও জ্ঞানানুরাগের মতো অপূর্ব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল।
ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “মুঘল ইতিহাসে জাহাঙ্গীর ছিলেন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।” তবে কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে “তার চরিত্রে বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ ঘটেছিল।"
→ জাহাঙ্গীরের চরিত্র : নিম্নে জাহাঙ্গীরের চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো :
১. ঐতিহাসিকদের প্রশংসা : ঐতিহ্যবাহী বেনী প্রসাদের মতে, “জাহাঙ্গীর সুবিচারক ও দয়ালু ছিলেন। আত্মীয়স্বজনের প্রতি অনুরাগপ্রবণ, মহানুভব, অত্যাচার নির্যাতনের প্রতি প্রচণ্ড বীতশ্রদ্ধ ও | সুবিচারের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা তার চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছিল।"
২. ঐতিহাসিকদের সমালোচনা : স্মিথ বলেন, “জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কমনীয়তা ও নৃশংসতা, সুবিচার ও খামখেয়ালিপনা, রুচিসম্মত অভিব্যক্তি ও বর্বরতা, সুবুদ্ধির অপূর্ব সমাবেশ পরিলক্ষিত হয়।”
স্যার টমাস রো-এর সহচর টেরী বলেন, “চারিত্রিক গুণাবলির বিচারে জাহাঙ্গীরের মধ্যে পরস্পর বিরোধী গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটেছিল।”
৩. পরমুখাপেক্ষীহীন : সম্রাট জাহাঙ্গীরের কোনো মন্ত্রিসভা ছিল না। রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনার উপর নির্ভর করতেন। তিনি অপরের কোনো পরামর্শ বা বিরোধিতা সহ্য করতে পারতেন না।
৪. তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী : মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী। তার চরিত্রে বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ ঘটলেও তিনি যে মেধা ও মননে অনন্য সাধারণ ছিলেন ঐতিহাসিকগণ তা স্বীকার করেন।
৫. জাহাঙ্গীরের চরিত্রের নানা দিক : রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি, শিল্প ও সাহিত্যে অনুরাগ, সৌন্দর্য ও মমত্ববোধ তার চরিত্রকে করেছে উজ্জ্বল।
শাসন সংক্রান্ত জটিলতম সমস্যা উপলব্ধি করার মতো যথেষ্ট মানসিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তার ছিল। তবে অধিক মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে তার বুদ্ধি হ্রাস পায়।
৬. কর্তৃত্ব ও ঔদ্ধত্য : সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজেকে সবসময় কর্তৃত্বের অধিকারী মনে করতেন। কেউ তার মতের বিরোধিতা করলে তিনি বরদাশত করতেন না।
এ থেকে তার চরিত্রে ঔদ্ধত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। তাই বলা যায় যে, ঔদ্ধত্য প্রকৃতিই তার চরিত্রের একটি নেতিবাচক দিক।
৭. ন্যায়পরায়ণতা : বিচারের ক্ষেত্রে ধনী গরিব সবাই তার নিকট সমান ছিল। বিচার প্রার্থীদের সুবিধার জন্য তিনি ৬০টি ঘণ্টাযুক্ত সোনার শিকল প্রস্তুত করে তা আত্মার প্রাসান থেকে যমুনা নদীর তীর পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেন। এ শিকল টানলেই বিচার প্রার্থীর আবেদন সম্রাটের নিকট পৌছে যেত।
৮. শাসনক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থা : শাসনক্ষত্র সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা চালু করে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর দক্ষ প্রশাসকের পরিচয় দিয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি রাজ্যময় ১২টি আইন জারি করেন।
৯. স্নেহপরায়ণ : স্নেহপরায়ণতা জাহাঙ্গীরের চরিত্রের এক অন্যতম গুণ। তার পুত্র শাহজাহান বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি নিজে অভিযান পরিচালনা করে তাকে দমন করেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে শাহজাহান পিতার নিকট অনুশোচনা প্রকাশ করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।
১০. চিত্রশিল্পের পৃষ্ঠপোষক : সম্রাট জাহাগীর চিত্রশিল্পে যে অবদান রেখে গেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার পৃষ্ঠপোষকতায় চিত্রশিল্পের এক অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল।
তার সহযোগিতায় শ্রেষ্ঠ চিত্রকর মনসুর, আবুল হাসান, খাজা আব্দুস সামাদ প্রমুখ পথিকৃত অভনে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
১১. সাহিত্যানুরাগী : সাহিত্যের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। ফারসি সাহিত্যে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তুর্কি ভাষার তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন।
তার রচিত জীবন চরিত তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী প্রমাণ করে যে, তিনি একজন সুসাহিত্যিক ছিলেন। ঐতিহাসিক বি.পি. মাকসেনা বলেন, “জাহাঙ্গীরের কৃতিত্ব যেখানে কাগজে, শাহজাহানের কৃতিত্ব সেখানে ইট সুরকির মধ্যে।"
১২ বিলাসপ্রিয় জাহাঙ্গীর : সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রের প্রধান দুর্বলতা ছিল মদ্যপান। তিনি অত্যধিক মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন বলে ক্রমান্বয়ে অকর্মণ্য ও বিলাসপ্রিয় হয়ে পড়েন। আর এ সুযোগ সম্রাজ্ঞী নূরজাহান রাজকার্যে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
১৩. জাহাঙ্গীর ধর্মমত : জাহাঙ্গীরের প্রকৃত ধর্মমত কি ছিল তার সঠিক তথ্য কোথাও উল্লেখ নেই। ধারণা করা হয়, তিনি সুন্নি ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন।
তার চরিত্রে পরমসহিষ্ণুতা ও ধর্মান্ধতার এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা দেয়। কেননা কোনো কোনো সময় তিনি ধর্মের প্রতি চরম উদারতা আবার কোনো কোনো সময় চরম অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর একজন আদর্শবাদী লোক ছিলেন। তিনি একাধারে তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী, ন্যায়পরায়ণতা, স্নেহপরায়ণ, সাহিত্যানুরাগী ছিলেন।
তার চরিত্র সম্পর্কে ঈশ্বরী পাটনী বলেন, "সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল ইতিহাসের অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র এবং তার রাজত্বকালে সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিল।"
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রে কি কি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।