সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর |
সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর
- অথবা, শিবাজী ও মারাঠাদের উত্থানের কাহিনি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ড. স্মিথ বলেন, “The Decean was the grave of his body as well as of his empire.” ভারতে মারাঠাদের উত্থান ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
তাদের উত্থান মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল । মারাঠা শক্তির প্রধান শিবাজী। তিনি মারাঠাদের নিয়ে একটি স্বাধীন শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের নিমিত্তে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী গঠন করে।
কিন্তু ইতোমধ্যে মারাঠা জাতির প্রতিষ্ঠাতা শিবাজী গোঁড়া হিন্দু ধর্মীয় মতবাদের আওতায় স্বীয় জাতিকে গভীর জাতীয়তাবোধ ও ধর্মবোধে উজ্জীবিত করে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন।
এ উদীয়মান মারাঠা শক্তিকে দমন করার জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেবকে অনেকগুলো নীতি অবলম্বন করতে হয়।
→ সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি : উদীয়মান মারাঠা শক্তিকে দমনের নিমিত্তে সম্রাট আওরঙ্গজেব যে নীতি অবলম্বন করেন কিংবা যেভাবে শিবাজী ও মারাঠাদের উত্থান ঘটে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. মারাঠা শক্তির উত্থান : ১৬২৬ সালে মারাঠা শক্তির প্রধান উদ্যোক্তা শিবাজী অনুগ্রহণ করেন। তার পিতা শাহজী ছিলেন বিজাপুর সুলতানের বেতনভোগী সরদার। শিবাজী ছিলেন খুবই মেধাবী।
তিনি ব্রাহ্মণ কোন্দদেবের নিকট শিক্ষা লাভ করেন। জ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সমরবিদ্যা আয়ত্ত করেন।
অতঃপর তিনি মারাঠাদের নিয়ে একটি স্বাধীন শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের নিমিত্তে 'মাওয়ালী' নামক পার্বত্য জাতিকে নিয়ে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী গঠন করেন।
২. বিজাপুর অভিযান : ১৬৪৬ সালে শিবাজী মাওয়ালী নামক পশ্চিম পার্বত্য উপজাতিদের নিয়ে সামরিক বাহিনী গঠন করেন। বিজাপুর রাজ্যের তোয়ানা এবং পরে রায়গড় ও কোম্পোলা দুর্গ অধিকার করেন।
১৬৪৮ সালে তিনি কল্যাণ ও কঙ্কন দখল করে শূদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালান। শিবাজীর কার্যকলাপে বিজাপুরের সুলতান তার পিতা শাহজীকে বন্দি করেন।
শিবাজী আর আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করবেন না-এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার পিতাকে কারামুক্ত করে। কিন্তু শিবাজী তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পুনরায় আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেন।
৩. আফজাল খানকে প্রেরণ : দাক্ষিণাত্যে সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের প্রতিনিধি। তিনি যখন বিজাপুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন তখন শিবাজী মুঘলদের দক্ষিণ পশ্চিম ভূভাগ অধিকার করে নেন।
সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজধানীতে ফিরে গেলে শিবাজী আবারো যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করেন। অতঃপর বিজাপুরের সুলতান শিবাজীকে দমন করার লক্ষ্যে ১৬৫৯ সালে আফজাল খানকে প্রেরণ করলে তিনি শিবাজী কর্তৃক নিহত হন।
৪. নরপতি শিবাজী : শিবাজী বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কতগুলো দুর্গ অধিকার করে নেন এবং নিজের শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।
১৬৬০ সালে বিজাপুরের রাজা এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শিবাজীর সাথে সন্ধি করেন। ফলে সুলতান কর্তৃক শিবাজী স্বাধীন নরপতি হিসেবে স্বীকৃতি পান।
৫. সম্রাট আওরঙ্গজেব ও শিৰাজী : ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর সম্রাট আওরঙ্গজেব শিবাজীকে দমন করার জন্য সুবাদার শায়েস্তা খানকে দাক্ষিণাত্যের প্রতিনিধি করে পাঠান।
শায়েস্তা খান শিবাজীকে পরাজিত করে পুনা ও কল্পনসহ আরো ২০টি দুর্গ পুনর্দখল করেন। কিন্তু পরে শিবাজী অতর্কিত হামলা করে সেগুলো ছিনিয়ে নেন এবং শায়েস্তা খান পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
৬. পুরন্দরের সন্ধি : শায়েস্তা খানের পরাজায়ের পর সম্রাট আওরঙ্গজেব জয়সিংহ ও দিল্লির স্থানকে শিবাজীর বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে শিবাজী ১৬৬৫ সালে পুরন্দরের সন্ধিতে আবদ্ধ হন।
এ সন্ধিতে শিবাজী বাৎসরিক কর প্রদানে ও প্রয়োজনে সামরিক সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজাপুরে নিজের কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন রাখেন।
৭. রাজা উপাধি ধারণ : মুসলমানদের আনুগত্য স্বীকার করে নিলে মুঘল সেনাপতি জয়সিংহের অনুরোধে সম্রাট আওরঙ্গজেব শিবাজীকে 'রাজা' উপাধি প্রদান করেন।
দুর্গগুলো পুনরায় উদ্ধারে তৎপর হন এবং গোলকুণ্ডা রাজ্যের সাথে সন্ধি স্থাপন করে জিজি, ভেরা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেন। তবে ১৬৮০ সালে শিবাজী আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
৮. শম্বুজীর সাথে সংঘর্ষ : শিবাজীর মৃত্যুর পর তার পুত্র শম্বুজী মারাঠাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনিও পিতার মতো মুঘলদের দাক্ষিণাত্যে নীতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বিদ্রোহী শাহজাদা আকবরকে আরায় দেওয়ার কারণে শম্ভুজীর সাথে আওরঙ্গজেবের সংঘর্ষ বাধে। ১৬৮৯ সালে শম্ভুজী মুঘলদের হাতে প্রথমে পরাজিত ও বন্দি এবং পরে নিহত হন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে এটি আওরঙ্গজেবের চূড়ান্ত বিজয়।
৯. মারাঠা রাজ্যের একাংশ দখল : ১৬৮৯ সালে শম্ভুজীর মৃত্যুর পর সম্রাট আওরঙ্গজেব প্রথমে মারাঠাদের রাজধানী রায়গড় ও পরে তাঞ্জোর ও ত্রিচোনপল্লী অধিকার করেন। ফলে আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য আরো বিস্তৃতি লাভ করে।
১০. সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিশাল সাম্রাজ্য : দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ফলে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। ঐতিহাসিক কালী কিংকর দত্ত বলেন, “সত্যিকারভাবে ১৬৯০ সালে আওরঙ্গজেব তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন এবং সমগ্র ভারতবর্ষ তথা কাবুল থেকে চট্টগ্রাম এবং কাশ্মীর থেকে কাবেরি পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ডের তিনি একছত্র অধিপতি হন।”
১১. সম্রাট আওরঙ্গজেব ও পরবর্তী মারাঠা : সম্রাট আওরঙ্গজেব মারাঠাদের রাজধানী দখলের পর শিবাজীর ভ্রাতা রাজারাম মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এ অবস্থায় সম্রাট নিজে অস্ত্রধারণ করে সাগরা, পাৱলী, পাছালা ইত্যাদি দখল করে নেন। কিন্তু ১৭০০ সালে রাজারামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী তারাবাঈয়ের নেতৃত্বে সংগ্রাম অব্যাহত থাকে।
ফলে দখল পাল্টা দখল শুরু হয়। দীর্ঘমেয়াদি এ যুদ্ধের ফলে মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও বন্যায় মুঘল বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এভাবে মুঘলদের দাক্ষিণাত্যে বিজয়ের আশা ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট আওরঙ্গজেব মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান শত্রু মারাঠাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
মারাঠাদের উপদ্রব মুঘল সাম্রাজ্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তাই সম্রাট আওরঙ্গজেব তাদের দমন করার জন্য বেশ কিছু নীতি অবলম্বন করেন।
তাদের অব্যাহত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুধু মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করেনি, বরং তা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টা বেজে উঠে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের মারাঠা নীতি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।