মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর |
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর
- অথবা, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “Aurangzeb is one of the greatest rulers of the Mughal dynesty.” সম্রাট শাহজাহানের পর সম্রাট আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহণ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলেও সমসাময়িক ফারসি ঐতিহাসিকগণ তাকে মুঘল সাম্রাজ্যেই শুধু নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের আদর্শ সম্রাট বলে অভিহিত করেছেন। ধার্মিক ও নিষ্ঠাবান মুসলমানগণ তাকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম নৃপতি হিসেবে সম্মান করতেন।
→ সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব : মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন কীর্তিমান শাসক। তিনি তার শাসনামলে অনেক কীৰ্ত্তি প্রদর্শন করেছেন। যা আজো জগৎ মাঝে চিরভাস্বর হয়ে আছে। নিম্নে তার কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. গৃহযুদ্ধে কৃতিত্ব প্রদর্শন : সম্রাট আওরঙ্গজেব তার ভাইদের সাথে সংঘটিত গৃহযুদ্ধসমূহে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন। এসব গৃহযুদ্ধে সম্রাট আওরঙ্গজেব কৌশলে ছোটভাই মুরাদকে কাজে লাগিয়ে পরে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
সম্রাট আওরঙ্গজেব স্বীয় পিতাকে বন্দি করে ১৬৫৮ সালে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করেন এবং বড় ভাই সুজা ও দারাকে হত্যা করেন।
২. ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করা : সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমান। তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে পথের কাটা আগেই পরিষ্কার করতে হবে।
এ লক্ষ্যে তিনি তার ভাইকে হত্যা করেন এবং কতিপয় শত্রুকে উচ্চপদে আসীন করে বশীভূত ও মিত্রে পরিণত করেন। ফলে তার সিংহাসন নিস্কন্টক ও সুসংহত হয়।
৩. রাজ্যজয় : পূর্বপুরুষদের ন্যায় সম্রাট আওরঙ্গরোরও ক্ষমতায় আসীন হয়েই রাজ্যজয়ে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিজাপুর, গোলকুণ্ডা, চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ ও কুচবিহার ভয় করে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হন। তার সাম্রাজ্য আফগানিস্তান থেকে আসাম পর্যন্ত এবং কাশ্মীর থেকে মহীশূর পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে।
৪. বিদ্রোহ দমন : উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের ইউসুফ জাই, আফ্রিদি ও খাটক নামের ৩টি বিদ্রোহী পাঠান উপজাতিকে যুদ্ধ ও ভেদনীতি দ্বারা সম্রাট আওরঙ্গজেব বশীভূত করেন।
এছাড়া তিনি জাট ও শিখদের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। তবে তিনি বুন্দেলা, রাজপুত ও মারাঠাদের সম্পূর্ণরূপে পরাস্থ করতে পারেননি। সুতরাং বলা যায়, বিদ্রোহ দমনে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাফল্য ও ব্যর্থতা উভয়ই রয়েছে।
৫. শাসনকার্যে দক্ষতা : সুদক্ষ শাসক হিসেবে সম্রাট আওরঙ্গজেব বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি রাজ্যের অন্যায় কর, দুর্নীতি ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
তিনি অন্ততপক্ষে ৮০ ধরনের কর রহিত করে দেন। তিনি জনসাধারণকে কৃষি ও বাণিজ্যে উৎসাহিত করতেন এবং ব্যবসা- বাণিজ্যের সুবিধার্থে তিনি রাজ্যের রাস্তাঘাটের উন্নতি সাধন করেন।
৬. শিক্ষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক : সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক। ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “কৃতি সেনাধ্যক্ষ এবং শাসক ছাড়াও তিনি প্রকৃত অর্থেই বিদ্বান ছিলেন।"
তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তার রাজদরবার ছিল বিভিন্ন জ্ঞানী ও গুণীর মিলনকেন্দ্র। শিক্ষার প্রসারকল্পে তিনি তার বিশাল সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
তার রাজত্বকালে কাফিখান মুনতাখাব- আল-জেবুর, মা মির-ই আলমাগেরী, কুলাসাত-আত-তাওয়ারিখি প্রভৃতি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন।
৭. ইসলামের পবিত্রতা রক্ষাকারী : সম্রাট আওরঙ্গজেব অমুসলিমদের মৌলিক অধিকারসমূহ অক্ষুণ্ণ রেখে ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন।
যদুনাথ সরকার বলেন, “ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কুরআনের বিধানসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ এবং যেগুলো প্রত্যেকের উপর বলবৎ করা যায় সেগুলো বলবৎ করাকে স্বীয় কর্তব্য বলে মনে করতেন। অনৈসলামিক কার্যকলাপ তিনি কঠোর হস্তে দমন করতেন।”
৮. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা : সম্রাট আওরঙ্গজেব স্থাপত্যশিল্পেরও যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তিনি তাজমহলের অনুকরণে ১৬৭৮ সালে স্বীয় পত্নী বারী আল দৌরানির সমাধি নির্মাণ করেন। এছাড়া লাহোরের বাদশাহি মসজিদ স্থাপত্য শিল্পের প্রতি তার অনুরাগের সাক্ষ্য দেয়।
৯. দূরদর্শী কূটনীতিবিদ : সম্রাট আওরঙ্গজেব দক্ষ ও দূরদর্শী কূটনীতিবিদ ছিলেন। রাজপুত শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য তিনি মেওয়াট ও মেবার দখল করেন।
যদুনাথ সরকার বলেন, “কূটনীতির দিক থেকে সম্রাট আওরঙ্গজেব অপ্রতিদ্বনী ছিলেন এবং কোনোপ্রকার কূটচক্র এবং গুপ্তকার্য তাকে বিচলিত করতে পারেনি। তিনি সুকৌশলে সকল যড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছেল।"
→ সম্রাট আওরঙ্গজেবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : সম্রাট আওরঙ্গজেব উন্নত ও নৈতিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিলেন। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোকপাত করা হলো :
১. উন্নত নৈতিক চরিত্র : সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারে মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি জীবনে কখনো মদ স্পর্শ করেননি।
মুঘল সম্রাটদের ঐতিহ্যবাহী হেরেমের ভোগ বিলাস থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। সমকালীন ভোগ বিলাস ও আমোদ-প্রমোদকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে ইসলামের মহান বিধান অনুযায়ী তিনি তার জীবনকে পরিচালিত করেন।
২. সরল ও পবিত্র জীবন : সম্রাট আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিগত জীবন ছিল সহজ, সরল, কঠোর ও কলুষমুক্ত। ইসলামে নিষিদ্ধ খাদ্য, পানীয় ও পোশাক-পরিচ্ছদকে তিনি সর্বদা পরিহার করে চলেছেন। পবিত্র কুরআনে শরিফ নকল করে এবং নিজ হাতে টুপি সেলাই করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
৩. সুদক্ষ সেনাপতি : সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন সুদক্ষ সেনাপতি। তার যেমন দৈহিক শক্তি ছিল, তেমনি ছিল মনোবল। তাই তিনি খুব কম যুদ্ধেই পরাজয়বরণ করেন।
অর্ধশতকাল ধরে তিনি অবিরাম যুদ্ধ করে রাজপুত, মারাঠা ও দাক্ষিণাত্য জয় করেন। তার রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য উত্তরে কাশ্মীর দক্ষিণে পূর্ববাংলা ও আসাম, পশ্চিমে কান্দাহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
৪. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব পরধর্মমতের প্রতি খুবই সহিষ্ণু ছিলেন। তিনি পরধর্মকেও শ্রদ্ধা করতেন। স্বধর্মের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। কাফি খানের বক্তব্যে এ বিষয়টি হয়ে উঠে
৫. ধর্মের প্রতি অনুরাগ : ধর্মের প্রতি সম্রাট আওরঙ্গজেব গভীর অনুরাগী ছিলেন। পবিত্র কুরআন তার কণ্ঠস্থ ছিল। ফারসি, হিন্দি, আরবি ও তুর্কি ভাষায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি ধর্মীয় বিধিমালাকে নিজের জীবনে পূর্ণ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।
৬. প্রজাহিতৈষী : প্রজাদরদি শাসক হিসেবে আওরঙ্গজেব শ্রেষ্ঠতর স্থান দখল করে আছেন। প্রজাদের সুখশান্তিকে কেন্দ্র করেই তার সকল কার্যাবলি আবর্তিত হতো।
তিনি জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য প্রায় ৮০ ধরনের কর রহিত করেন । তিনি বলতেন, “আমি নিজের জন্য নয়, আমি অন্যের জন্য পরিশ্রম করতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত হয়েছি।”
৭. পাণ্ডিত্য : সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন সুন্নি মুসলমান। কুরআন, হাদিস ও পারসিক সাহিত্যে তিনি অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তার একান্ত পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফতুয়া-ই-আলমগীরী' নামক মুসলিম আইন সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ রচিত হয়।
৮. নিরপেক্ষ বিচারক : তিনি একজন নিরপেক্ষ বিচারক ছিলেন। তার নিকট ধনী-গরিব সকলেই সমান বিচার পেত। তিনি বিচার বিভাগের সর্বময় কর্তা ছিলেন। তিনি বলতেন, “আমি আইন অমান্য করলে প্রজাবর্গ আইন অমান্য করবে।”
তিনি নিষ্ঠুর নন, বরং কোমল স্বভাবের অধিকারী ছিলেন।উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন আদর্শবান শাসক ছিলেন।
তিনি ছিলেন ন্যায় ও ধার্মিক, রাজ্য বিজেতা, শিক্ষা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি ইসলামের পবিত্রতা রক্ষাকারী, স্থাপত্যশিল্পে পৃষ্ঠপোষক, কূটনীতিবিদ ও চরিত্রবান।
তিনি সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি আরো ছিলেন সুদক্ষ সেনাপতি, প্রজাহিতৈষী ও নিরপেক্ষ বিচারক।
তার অসাধারণ কৃতিত্ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুণে যে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েছিলেন সারা জীবন সংগ্রাম করে তা রক্ষাও করেছিলেন।
ইতিহাসে এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। ফরাসি পরিব্রাজক কর্নিয়ার তাই বলেছেন, “সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন অসাধারণ ও বিরল প্রতিভাবান ব্যক্তি, অদ্বিতীয় রাজনীতিবিদ ও মহান শাসক।”
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কৃতিত্ব ও চরিত্র মূল্যায়ন কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।