মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর |
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব নিরূপণ কর।
- অথবা, ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
- অথবা, মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব পর্যালোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে বাবর ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। একজন সফল বিজেতা শাসক হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ।
১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে তিনি ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল শাসনের সূচনা করেন। পানিপথের যুদ্ধে তার বিজয় লাভের ফলে ভারতবর্ষ থেকে প্রায় ৩০০ বছরের সুলতানি যুগের অবসান ঘটে।
সামান্য অবস্থা থেকে বাবর ভারতে এক বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
বাবরের পরিচয় এবং সিংহাসন : জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ইতিহাসে বাবর নামেই পরিচিত। তিনি ১৪৮৩ সালে তুর্কিস্তানের ফরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ওমর শেখ মির্জা।
তিনি পিতার দিক থেকে তৈমুর লও এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশের ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর ১৪৯৪ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি পিতৃরাজ্য ফরগনার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব : নিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো-
১. পিতৃরাজ্য রক্ষা : ওমর শেখ মির্জার মৃত্যুর পর তার পুত্র বাবর ফরগনার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন ফরগনা রাজ্য ছিল শত্রু দ্বারা বেষ্টিত।
বাবর সিংহাসনে আরোহণ করে তৈমুর লঙ-এর মতো দাপটের সহিত লড়াই শুরু করে দেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ১৫১৭ সালে তিনি সমরকন্দ জায় করেন।
এ সময় করণনা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হলে তিনি ফরগনায় ফিরে আসেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সমরকন্দ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
অল্প বয়সে বাবরের রাজ্য জয়ের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, সমরকন্দ জয় তার মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার একটি পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে।
২. কাবুল জয় : সমরকন্দ ও ফরগনা উভয় রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাবর যখন পথে পথে ঘুরছিলেন তখনই তিনি ঠিক করেন যে তিনি হিন্দুস্থান জয় করবেন।
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ১৫০৪ সালে তিনি কাবুল জয় করে নিজেকে রাজকীয় মর্যাদায় ফিরিয়ে আনেন। কাবুল জয় মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল।
৩. পূর্ব প্রস্তুতিমূলক অভিযান : বাবর ভারতবর্ষ অভিযান করার পূর্বে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। আর এটি করতে গিয়ে তিনি বঙ্গৌর দুর্গ, ঝিলামের ভেরা এবং চীনাব নদীর অববাহিকা জয় করেছিলেন।
৪. দৌলত খান লোদীর আমন্ত্রণ : পূর্ব প্রস্তুতিমূলক অভিযান শেষ হওয়ার পর বাবর যখন ভারতবর্ষ আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঠিক তখন দৌলত খাঁ লোদী তাকে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানান হিন্দুস্থান অভিযান করার জন্য। বাবর সে অভিযানে সাড়া দিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণে অগ্রসর হন।
৫. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ : ১৫২৬ সালে ২০ এপ্রিল পানিপথের প্রান্তরে বাব্বা ও দিল্লির শাসক ইব্রাহীম লোদীর মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এ যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীর প্রায় ১ লক্ষ পদাতিক সৈন্য ও ১,০০০ হস্তীবাহিনী ছিল এবং বাবরের ১২,০০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল এবং গাদা বন্দুক ও কিছু কামান বাহিনী ছিল।
তাছাড়া বা যতই ভারতের ভিতরে প্রবেশ করছিল ততোই তার সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অবশেষে উভয় দলের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদী পরাজিত ও নিহত হন। লোদীর প্রায় ৫০,০০০ সৈন্য এতে প্রাণ হারায়। এ যুদ্ধে বাবরের অভিজ্ঞতার সাথে ইব্রাহীম লোনীর তুলনা করা যায় না।
৬. আফগান অভিজাতবর্গকে দমন : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করার পর বাবর সর্বপ্রথম আফগান অভিজাতবর্গকে দমনে মনোনিবেশ করেন। এতে তিনি সফলতা লাভ করে তার পুত্র হুমায়ূন এবং অনুচরবর্গের চেষ্টায় জৌনপুর, ঢোলপুর, গাজীপুর, কান্ট্রি, রিয়ানা, গোলিয়র প্রভৃতি স্থান মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
৭. খানুয়ার যুদ্ধ : দিল্লি ও আগ্রা জয়ের পর বাবরকে ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাজপুত জাতির মোকাবিলা করতে হয়। মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহ ১৫২৭ সালে বাবরকে ভারত হতে বিতাড়িত করার জন্য অগ্রসর হন।
জানুয়ার প্রান্তরে বাবর ও সংগ্রাম সিংহের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুঘল বাহিনীর আক্রমণে দুর্ধর্ষ রাজপুত সৈন্যবাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে রানা সিংহ যুদ্ধ করতে করতে নিহত হলেন এবং রাজপুতদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা চিরতরে বিনষ্ট হলো।
এ যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে বাবরের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেল। আর এ যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মুঘল রাজধানী কাবুল হতে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
৮. চান্দেরী দুর্গ জয় : খানুয়ার যুদ্ধে যে সকল রাজপুত বাবরের কাছে পরাজয় স্বীকার করে সে সকল রাজপুতরা চান্দের রাজ্যের রাজা মেদিনীরাওয়ের নেতৃত্বে আবার বাবরের বিরুদ্ধে সংঘবন্ধ হয় এবং তাদের সকল সামরিক শক্তি চান্দেরীর দুর্গ জমা করতে থাকেন।
মুঘল সম্রাট বাবর গোয়েন্দা মারফত সে খবর পান এবং এ খবর পাওয়ার পর ১৫২৮ সালের ২০ জানুয়ারি বাবর চান্দেরী দুর্গ অবরোধ করেন।
প্রথম দিকে রাজপুত বাহিনী অত্যন্ত ধীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন বাবরকে কোণঠাসা করে ফেলে। কিন্তু বাবরের উন্নত রণকৌশলের নিকট তারা এক সময় পরাজয় বরণ করেন।
ধারণা করা হয় দুর্গ অবস্থানকারী সকল রাজপুত সৈন্য মুঘলদের হাতে নিহত হন এবং এ চান্দেরী দুর্গের পতনের পর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকে বাধা সেবার মতো রাজপুতদের শেষ শক্তিটুকু বিলীন হয়ে যায়।
৯. গোপরার যুদ্ধ : বাবরের চান্দেরী দুর্গ দখলের পর ১৫২৯ সালে গোপরার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ ছিল মূলত বাবরের সাথে আফগান বাহিনীর যুদ্ধ।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত আফগানরা পুনরায় নিহত ইব্রাহীম লোদীর ভাই জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এবং তারা বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ খবর পেয়ে বাবর তার পুত্র আসকারীকে মাহমুদ লোদীকে দমন করার জন্য প্রেরণ করেন। নিজের অনুসারীরা দল ত্যাগ করায় মাহমুদ লোনী হতাশ হয়ে বাংলার সুলতান নসরৎ শাহের আশ্রয় গ্রহণ করেন।
তাই স্বভাবতই বাবর বাংলার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হন। ১৫২৯ সালে গোপরা নামক স্থানে সংঘটিত গোগরার যুদ্ধে বার আফগানদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন ।
১০. হিন্দুস্থানের প্রথম বাদশাহ : ভারতবর্ষ আক্রমণ করে জয় করার ফলে বাবর বিপুল ধনসম্পদ লাভ করেন। আর্থিক শক্তি যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর বাবর নিষ্ঠিতে প্রবেশ করেন এবং নিজেকে হিন্দুস্থানের বাদশা হিসেবে ঘোষণা করেন। যা ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।
১১. ভারতবর্ষে বাদশাহী শাসনের সূচনা : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে ১৫২৬ সালে বাবর নিজেকে বানশাহ হিসেবে ঘোষণা করে বাদশাহী শাসনের সূচনা করে।
কেননা তার পূর্বে আর কেউ নিজেকে ভারতের বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা দেননি। বাবরের কাছে পরাজিত হয়ে আফগান ও পাঠানরা ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নেন। ফলে ভারতবর্ষে | মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট বাবর ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুখল সাম্রাজ্য আকবরের আমলে এসে এক বিশাল ও শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
তার প্রতিষ্ঠিত মুঘল বংশ দীর্ঘদিন ভারতে শাসনকার্য পরিচালনা করে। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “Indeed there are few princes in Asiatic history who can be ranked higher than Babur in genious and accomplishment."
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।