মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর |
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের কারণসমূহ বর্ণনা কর।
- অথবা, মুঘল বংশের পতনের কারণগুলো উল্লেখ কর ।
- অথবা, ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সমূহ পর্যালোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ছিল গৌরবময় এবং ঘটনাবহুল। তুর্কি সেনাপতি বাবরের হাত ধরে এ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটে এবং তার সুযোগ্য নাতি সম্রাট আকবরের আমলে তা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।
কিন্তু তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের দক্ষ শাসনের অভাবে পতন বা অবক্ষয় শুরু হয়। অবশেষে ব্রিটিশদের আধিপত্য বিস্তারে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ঘটে ১৮৫৭ সালে ।
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ : নানা কারণে মুঘলদের পতন ঘটে। নিম্নে এ কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সাম্রাজ্যের বিশালতা : মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে | মুঘল সাম্রাজ্য বিশাল আকার ধারণ করে। এ বিস্তৃত সাম্রাজ্যকে সুনিপুণভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি সম্রাট আকবরের পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের। ফলে সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
২. উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতা : সম্রাট আকবরের পরের সম্রাটগণ দুর্বল ও অযোগ্য ছিলেন। কিন্তু আওরঙ্গজেবের পর মুঘল সাম্রাজ্যের শাসকগণ এতোই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে পারেনি।
৩. অভিজাত শ্রেণির প্রভাব : মুঘল সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের চিরশত্রু অভিজাতদের প্রভাব দিন দিন বেড়ে যায়। ফলে তারা সম্রাটদের মধ্যে কলহ সৃষ্টিতে সমর্থ হয়। যার | ফলশ্রুতিতে এ সাম্রাজ্য পতনের দিকে চলে যায়।
৪. অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব : সম্রাট আওরঙ্গজেবের ইহলোক ত্যাগের পর পরই তার তিন পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জ্যেষ্ঠপুত্র জয়লাভ করলেও তার শাসনামল ইরানি বংশোদ্ভূত নেতা জুলফিকার খান সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হয়ে ওঠেন। এ কারণেও মুঘল সাম্রাজ্য পতনের পথ প্রশস্ত হয়।
৫. শাসনতান্ত্রিক সংকট : অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা গভীর সংকটে নিক্ষিপ্ত হয়। আর শাসনতান্ত্রিক সংকটে থাকা কোনো সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় এটা বলা যায় না। তাই প্রকৃতির নিয়মেই মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত হতে থাকে।
৬. আইনগত ত্রুটি : যেকোনো সাম্রাজ্য টিকে থাকে শক্তিশালী আইনের শাসনের উপর। আর মুঘল সাম্রাজ্যে সম্রাটসের বিশেষ করে আওরঙ্গজেবের পর থেকে কেউই ত্রুটিহীন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে সাম্রাজ্য পতনের দিকে ধাবিত হয়।
৭. অর্থনৈতিক সংকট : অর্থই হলো রাষ্ট্র বা সাম্রাজ্য চালানোর চালিকাশক্তি। আর এ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলে কোনো সাম্রাজ্য টিকে থাকতে পারে না। মুঘল সম্রাটদের বিলাসিতা, ভোজনপ্রিয়তার দরুন সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।
এমনকি সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ব্যয়ভার সাম্রাজ্যের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে এবং অবিরাম যুদ্ধনীতির ফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। আর এভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।
৮. কৃষি সংকট : অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সরকারি কর্মচারীরা কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করে। আর অত্যাচারের দরুন কৃষক শ্রেণি কৃষিকাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
যে সাম্রাজ্য এক সময় কৃষিপণ্যের উপর নির্ভর করতো, সে সাম্রাজ্য কৃষিপণ্যের সংকটে পড়ে। ফলে সাম্রাজ্য পতনের দিকে চলে যায়।
৯. শিল্প ও বাণিজ্যে মন্দা : কৃষি উৎপাদনের হার হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও মুঘল সরকার শিল্প-বাণিজ্যের দিকে নজর দেয়নি। সরকারি উদাসীনতা, দেশীয় বণিক ও কারিগরদের উপর অবিচার-অত্যাচারের ফলে শিল্প-বাণিজ্যে এ সময়ে মন্দা দেখা দেয়। এটিও সাম্রাজ্য পতনের একটি কারণ হিসেবে দেখা যায়।
১০. নৌ-বাহিনীর অভাব : মুঘল সম্রাটদের নৌ-শক্তি ছিল দুর্বল। ফলে পানিপথে আহমদ শাহ আবদালির নিকট ১৭৫৬- ৫৭ সালে মুঘল ওয়াজির আত্মসমর্পণ করেন। এ কারণটি মুঘল সাম্রাজ্য পতনের সাথে জড়িত।
১১. বিদেশি আক্রমণ : মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ও ভারতের অফুরন্ত সম্পদের সৌন্দর্যে বিদেশি শক্তি ভারত আক্রমণে উদ্যত হয়। সে হিসেবে ১৭৩৯ সালে নাদির শাহ-এর কাছে মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ পরাজিত হয়। যা মুঘলদের পতনের জন্য দায়ী।
১২. যুদ্ধনীতি : মুঘল সম্রাট বাবর ও তার উত্তরাধিকারী সবাই রাজস্ব সংগ্রহ এবং সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য যুদ্ধনীতি অবলম্বন করতো। এ যুদ্ধনীতির ফলেও মুঘল সাম্রাজ্যের পতন হয়।
১৩. চরিত্রের নৈতিক অবনতি : মুঘল সরকারের সমস্ত কর্মকর্তাদের চরিত্রের নৈতিক অবনতি শুরু হয়। তারা সমস্ত প্রকার কুকর্মে লিপ্ত ছিল। এ সকল কর্মকর্তা সাম্রাজ্য রক্ষার ব্যাপারে মনোযোগী ছিল না। ফলে সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
১৪. একনায়কতন্ত্র : মুঘল সাম্রাজ্য টিকেছিল একনায়কতন্ত্র শাসনের উপর। আর একনায়কতন্ত্র টিকে থাকে শাসকের ব্যক্তিগত গুণাবলি, কূটনৈতিক কর্মদক্ষতার উপর। কিন্তু আওরঙ্গজেবের পর থেকে কোনো শাসকের এমন গুণাবলি লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
১৫. প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ প্রশাসকের অভাব : মুঘল সাম্রাজ্য ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু এ বিশাল আয়তনের সাম্রাজ্য রক্ষার পেছনে যে বিপুল প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ প্রশাসক প্রয়োজন তা সম্রাট লক্ষ করেননি। এ কারণেও মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
১৬. স্বাভাবিক স্থিতিকাল অতিক্রান্ত : ইবনে খালদুনের মতে, যেকোনো শাসনকাল ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। সে হিসেবে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটা স্বাভাবিক।
১৭. অন্যান্য কারণ : এছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। যেমন- আওরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ধর্মনীতি, কৃষকদের অসন্তুষ্টি, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, বণিক শ্রেণির প্রতিবাদ ও অভিজাত শ্রেণির ষড়যন্ত্র প্রভৃতি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, বিরোধী আক্রমণসহ নানা কারণে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয় । মুঘল সাম্রাজ্য পতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকলেও এটি প্রায় ৩৩৬ বছর টিকে ছিল।
যা ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে প্রাকৃতিক নিয়মেই পতন ঘটার কথা। তাই কারণগুলো উপেক্ষা করে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক নিয়মেই মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।