মহিলা ও পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি
মহিলা ও পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি বা কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে - মহিলা ও পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম এটি জানার আগে কেগেল ব্যায়াম কি তা সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। শরীর ও মনকে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম রাখতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করে থাকি কিন্তু কেগেল ব্যায়াম অন্য সব ব্যায়াম থেকে পুরোপুরি আলাদা।
মহিলা ও পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি |
কেগেল ব্যায়াম কি
কেগেল ব্যায়াম এমন এক ধরনের ব্যায়াম যেটি আপনার পেলভিক ফ্লোর পেশিগুলোকে শক্তিশালী ও মজবুত থাকতে সহায়তা করে।
কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
আপনি যদি সম্পূর্ণভাবে কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা লাভ করতে চান তাহলে আপনাকে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়ামটি প্রতিদিন সময় মত করে করতে হবে তা না হলে আপনি বিশেষ উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবেন। নারী ও পুরুষ দুইজনেরই কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি আলাদা।
নারী ও পুরুষ কিভাবে কেগেল ব্যায়াম করবে সেটি আমার আলাদা ভাবে আলোচনা করব।
মহিলাদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি ও নিয়ম
● কেগেল ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে আপনাকে পেলভিক পেশি সনাক্ত করতে হবে। এরপর ভ্যাজাইনা এরিয়ার ভেতর একটি পরিষ্কার আঙ্গুল পুশ করে আশেপাশের পেশি গুলোকে ধীরে ধীরে সংকুচিত করুন। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর দেখবেন পেলভিক ফ্লোর মাসলস্ গুলো আগের স্থানে রুপ নিয়েছে।
● মূএ ত্যাগ করার সময় দু তিনবার করার গতি বন্ধ করে আবার ছেড়ে দিতে হয়। মূএের গতি বন্ধ করাকে নিয়মিত অভ্যাসে রূপান্তরিত করা যাবে না।
● মূএথলি যখন পরিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে তখন ভুলেও কেগেল ব্যায়াম করা যাবে না। এতে পেশি গুলো শিথিল হয়ে প্রসাব অসম্পুর্ণ থাকতে পারে যা মূএ থলিতে রোগবালাই সৃষ্টি করতে পারে।
● কেগেল ব্যায়াম শুরু করার সময় মূত্রথলি সম্পূর্ন ক্লিয়ার থাকাই উত্তম এবং টানটান হয়ে সোজা ফ্লোরে শুয়ে পড়তে হবে। আপনি আপনার ধারণা অনুযায়ী পেলভিস পেশি আস্তে আস্তে সংকুচিত করুন এবং পাঁচ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। পাঁচ সেকেন্ড হয়ে গেলে পেলভিস পেশি গুলোকে রিলাক্স করে দিন। এভাবে ধীরে ধীরে কয়েকবার করার চেষ্টা করুন। এমনকি আপনি আপনার চেষ্টা অনুযায়ী পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড বা ১৫ সেকেন্ড করে বাড়িয়ে করা জন্য ট্রাই করতে পারেন।
● সঠিকভাবে ব্যায়ামটি করার জন্য পেলভিস মাসেলসে দৃঢ় মনোযোগ দিতে হবে এমনকি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো পেট তলপেট এর জায়গায় যেন কোন পেশিতে টান না পরে।
● এই ব্যায়াম করার সময় জোরে জোরে শ্বাস নেয়া যাবে না এমনকি শ্বাস বন্ধ করা যাবে না। স্বাভাবিকভাবে আপনি যেভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে থাকেন ঠিক সে অবস্থায় থাকার চেষ্টা করবেন।
● ব্যায়ামটি করার জন্য আপনার কোনো সময় সেট করার প্রয়োজন নেই তবে আপনি প্রতিদিন মিনিমাম ৩ বার যদি ব্যায়ামটি করেন তাহলে আপনার জন্য সুবিধা হতে পারে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন কাজের ফাঁকে বসে অথবা বিছানায় শুয়ে এমনকি ফ্লোরে শুয়েও ব্যায়ামটি সম্পন্ন করতে পারেন।
● এই ব্যায়ামটি যৌন টাইপের সমস্যা দূর করার জন্য বেশ উপকারী একটি ব্যায়াম। এটি করতে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
● যদি গভীর মনোযোগের সাথে ব্যায়ামটি ঠিকমতো করতে পারেন তাহলে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে আপনি আপনার সঠিক ফলাফল অর্জন করতে পারেন।ব্যায়ামটি সঠিক উপায়ে করার ফলে আপনার ঘন ঘন প্রসাবের বেগের সমস্যা হবে না এমনকি ইন্টারকোর্স করার সময় ব্যাথা অনুভব কম হবে।
পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও কেগেল ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়মটি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
● কেগেল ব্যায়াম শুরু করার জন্য মেয়েদের মতো ছেলেদেরও প্রথমে পেলভিক পেশি নির্বাচন করতে হবে।
● একটি সোজা স্থানে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থায় পেশী সংকুচিত করার ফলে পুরুষ লিঙ্গ কিছুটা তলপেটের সামনে চলে আসবে এবং অণ্ডকোষ কিছুটা উপরমুখী হয়ে যাবে।
● মেয়েদের মতো ছেলেদেরও কেগেল ব্যায়াম করার আগে প্রসাব করে নেওয়া ভালো যেনো মূএথলী খালি থাকে।
● এই ব্যায়ামটি খাটে শোয়া অবস্থায় করা যেতে পারে অথবা ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় করা যায়। খাটে অথবা ফ্লোরে শুয়ে পেলভিস ফ্লোর মাসেলস্ কে ৫ সেকেন্ড সংকুচিত করুন আবার ৫ সেকেন্ড প্রসারিত করুন। এভাবে কয়েকবার করার চেষ্টা করতে হবে। মাসলস্ যখন ধীরে ধীরে একটু স্ট্রং হয়ে উঠবে তখন দাঁড়ানো বা চলাচল অবস্থায়ও করতে পারেন।
● কেগেল ব্যায়াম করার সময় ছেলেরাও শ্বাস-প্রশ্বাস বেশি জোরে নেবে না আবার জোরে ছাড়বেও না। যেভাবে নরমাল অবস্থায় থাকে সেভাবেই ব্যায়াম করতে হবে।
● কেগেল ব্যায়াম থেকে উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে সঠিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে পেলভিক পেশি সংকুচিত ও প্রসারিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে।
প্রতিদিন তিনটি টাইম সেট করে এই ব্যায়ামটি সম্পন্ন করতে পারেন। এই ব্যায়ামটি সম্পন্ন করার ফলে নারীদের সাথে পুরুষদেরও যৌন অক্ষমতার মতো সমস্যা সমাধান হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।