জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল |
জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল
- অথবা, জাহাঙ্গীরের চরিত্র বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মুঘল শাসনের ইতিহাসে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তিনি সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর ১৬০৫ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
শাসনকার্য পরিচালনা, বিদ্রোহ দমন, রাজ্যবিস্তার, বাণিজ্য সম্প্রসারণ প্রভৃতি কার্যাবলিতে তার চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। তার চরিত্রে নানা গুণাবলি ছিল।
→ সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্র : সম্রাট জাহাঙ্গীর বহুবিধ সৎগুণের অধিকারী ছিলেন। নিম্নে তার চারিত্রিক গুণাবলি আলোচনা করা হলো :
১. আত্মনির্ভরশীলতা : সম্রাট জাহাঙ্গীরের কোনো মন্ত্রিসভা ছিল না। রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনার উপর নির্ভর করতেন। তিনি অপরের কোনো পরামর্শ সহ্য করতে পারতেন না। মোট কথা তিনি ছিলেন সম্পূর্ণভাবে আত্মনির্ভরশীল।
২. মেধাবী ও বিচক্ষণ : ঐতিহাসিকগণ এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, সম্রাট জাহাঙ্গীর বিচক্ষণ ও মেধাসম্পন্ন ছিলেন। পিতার মতো চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ না করলেও তিনি পিতার অনুসৃত প্রশাসনিক নীতি ও সংস্কারসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করার চেষ্টা করেন।
৩. সাহিত্যানুরাগী : সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন সাহিত্যানুরাগী ও জ্ঞানী-গুণীর পৃষ্ঠপোষক। ফারসি সাহিত্য তার জ্ঞান ছিল গভীর এবং তুর্কি ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন।
তার রচিত জীবনচরিত ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরি' একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ছাড়াও তিনি সঙ্গীত ও চিত্রশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় মুঘল চিত্রশিল্পের এক অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধিত হয়।
৪. পরধর্মসহিষ্ণু : সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন পরধর্মসহিষ্ণুতার এক মূর্ত প্রতিক। তিনি হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের সাধু- দরবেশদের ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন।
তবে পরধর্মে উদারতা দেখাতে গিয়ে তিনি পিতার ন্যায় নিজ ধর্মকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। ঐতিহাসিক বেণী প্রসাদ বলেন, “তার ধর্মীয় নীতি ছিল সম্পূর্ণভাবে পরধর্ম সহিষ্ণুতার উপর প্রতিষ্ঠিত।"
৫. অত্যধিক মদ্যপায়ী ও বিলাসী : অত্যধিক মদ্যপান ও বিলাসী জীবনযাপন ছিল সম্রাট জাহাঙ্গীরের চরিত্রের প্রধান দুর্বলতা। তিনি অত্যধিক মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন বলে অকর্মণ্য ও আরামপ্রিয় হয়ে পড়েন এবং সে সুযোগেই সম্রাজ্ঞী নূরজাহান রাজকার্যে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ লাভ করেন। ইউরোপীয় বণিকগণ তাকে প্রতিভাবান মদ্যপায়ী বলে অভিহিত করেছেন।
৬. উদার ও ন্যায়বিচারক : সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন উদার ও ন্যায়বিচারক। ধনী-দরিদ্র সকলেই তার নিকট সমান বিচার পেত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১২টি মঙ্গলজনক আইন প্রবর্তন করেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে সম্রাটের নিকট তার অভিযোগ পেশ করতে পারে সেজন্য ৬০ টি ঘণ্টাযুক্ত ত্রিশ গজ লম্বা একটি সোনার শিকল আগ্রার দুর্গ থেকে যমুনা নদীর তীর পর্যন্ত ঝুলানো থাকত। যেকোনো বিচার প্রার্থী এ শিকল টেনে বাদশাহের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কতিপয় দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সার্বিক মূল্যায়নে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন। সফল নৃপতিদের মধ্যে অন্যতম।
সাকসেনা বলেন, "What Jahangir achieved in paper Shahjahan achieved in brick and mortar." (জাহাঙ্গীরের কৃতিত্ব যেখানে কাগজে শাহজাহানের কৃতিত্ব সেখানে ইটসুরকির মধ্যে)।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল। যদি তোমাদের আজকের জাহাঙ্গীরের চরিত্র কেমন ছিল পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।