ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর |
ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর
উত্তর : ভূমিকা : তুঘলক বংশের দুজন শাসকর্তার মধ্যে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ও মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক ব্যতীত সকল শাসকবর্গই ছিল অযোগ্য। তাদের দুর্বল প্রকৃতির শাসনব্যবস্থা পরবর্তীতে তুঘলক বংশের পতনের পথকে সম্প্রসারিত করেছিল ।
দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন, আবু বকর, হুমায়ুন খান ও নাসিরউদ্দিন মাহমুদ তুঘলক সবাই ছিল অকর্মণ্য, অযোগ্য ।
ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীগণ : নিয়ে ফিরোজশাহের উত্তরাধিকারীদের সম্পর্ক আলোচনা উপস্থাপন করা হলো :
১. দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুগলক শাহ : ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পর তার পৌত্র দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করেন। কিন্তু তিনি বিলাস ব্যসনে মত্ত থেকে সারাদিন কাটাতেন। শাসনকার্যে তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন।
তাছাড়া এত বড় সাম্রাজ্য পরিচালনা করা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল অপরদিকে ফিরোজ শাহের আরেক পৌত্র আবু বকরকে বন্দি করলে আমির-ওমরারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা আবু বকরকে মুক্ত করে গিয়াসউদ্দিনকে হত্যা করে।
২. আবু বকর সুলতান : দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন শাহকে হত্যা করার পর সালতানাতে শাসক হিসেবে আরোহণ করেন আবু বকর।
শাসক হিসেবে আবু বকর যথেষ্ট যোগ্য ছিলেন কিন্তু তিনি অচিরেই নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ শাহের দ্বারা সিংহাসনচ্যুত এবং কারারুদ্ধ হন। কিছুদিন পর আবু বকর কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন।
৩. নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ : ফিরোজ শাহের দুর্বল উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন শাহ ছিলেন অন্যতম। আৰু বকর এর পর নাসিরউদ্দিন কিছুকাল শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। তিনিও পদচ্যুত হন এবং আকস্মিক মৃত্যুকোলে ঢলে পড়েন।
৪. আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ: ১৩৯৪ সালে আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ মাত্র ১ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। নারিসউদ্দিনের মৃত্যু হলে তিনি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনিও শাসক হিসেবে দুর্বল প্রকৃতির ছিলেন।
৫. নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ : তুঘলক বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ। নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ শাহের কনিষ্ঠপুত্র ছিলেন। গুজরাটের জাফর খান এবং জৌনপুরের মালিক খান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তার ক্ষমতা বহুলাংশে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
তৈমুর লং-এর ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য : তৈমুর লং ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত সাহসী যোদ্ধা। বাল্যকাল থেকেই তিনি অদম্য সাহসী ছিলেন। তিনি মূলত সমরকৌশল ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা চাকতাই তুর্কিদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিম্নে তৈমুর লংয়ের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
১. আক্রমণাত্মক মনোভাব : তৈমুর লং একজন আক্রমণাত্মক মনোভাবের লোক ছিলেন। তৈমুর লং কোনো দেশ আক্রমণের ব্যাপারে কোনো অজুহাতের প্রয়োজন অনুভব করত না। তিনি ন্যায়-অন্যায়ের কোনো ধার ধারতেন না।
২. ইসলাম প্রচার ও প্রসার : লেখক আনোয়ার হারোমি লিখেছেন যে, ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য তৈমুর লং সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কেননা তৈমুর লং তার বক্তব্যেই বলতো যে, আমার ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য হলো ইসলাম প্রচার করা।
৩. ধন সম্পদের প্রাচুর্য : ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচুর ধন- সম্পদের সমারোহ ছিল। আর এই অঢেল ধন-সম্পদ তাকে ভারতবর্ষ আক্রমণ করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। তৈমুর লং এর ভারত অভিযান পরিচালনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল তুর্কি খেলাফতের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো।
→ তৈমুরের ভারত আক্রমণের ফলাফল : তৈমুরের ভারত আক্রমণের ফলাফল ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে তৈমুরের ভারত আক্রমনের ফলাফল তুলে ধরা হলো :
১. স্রষ্টার অভিসম্পাদ : তৈমুর লং-এর ভারত অভিযান ছিল স্রষ্টার অভিসম্পাতস্বরূপ । তৈমুরের ন্যায় অন্যকোন আক্রমণকারী একটি মাত্র অভিযান পরিচালনা করে ভারতের উপর এরূপ ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, লুণ্ঠন, অত্যাচার দুর্দশা সৃষ্টি করেছে এমন কোনো নজির ইতিহাসে নেই ।
২. স্বাধীন রাজ্যসমূহের উৎপত্তি : তৈমুরের ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির পরপরই বাংলা, বিহার, সিন্ধু, মালব, পাঞ্জাব, দক্ষিণাত্য-জৌনপুর প্রভৃতি প্রদেশসমূহ স্বাধীনতা ঘোষণা করে ।
৩. স্থাপত্যশিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি : দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠা স্থাপত্যকীর্তিসমূহ তৈমুরের আক্রমণের ফলে বিনষ্ট হয়। ম্লান হয়ে যায় ভারতবর্ষের হাজার বছরের গৌরব ও সমৃদ্ধি, দিপালপুর, দিল্লিসহ অনেক শহর তার স্বকীয়তা হারায়।
৪. ঐতিহাসিকদের ভাষায় : তৈমুরের আক্রমণের পর দুই শতাব্দীকাল স্থায়ী তুঘলক বংশ নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের পরাজয়ের সাথে সাথে পতন ঘটেছিল।
৫. দিল্লি সালতানাতের পতন : তৈমুরের আক্রমণের ফলে তুঘলক বংশের পতন এবং দিল্লি সালতানাতের পতনের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
৬. নতুন বংশের উৎপত্তি : দীর্ঘকাল শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে তুঘলক বংশের পতন হলে ইসলামের ইতিহাসে নতুন রাজবংশ সূচনা হয়। আর তার নেতৃত্ব দেন তৈমুরের ভারতীয় শাসক খিজির খান। ১৪১৪ সালে এই বংশের উৎপত্তি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ফিরোজ শাহের পরবর্তী দুর্বল শাসক, যারা শাসনব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত করতে পারেননি। তাছাড়া তৈমুরের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের ফলে ইতিহাসের পাতা থেকে তুঘলক বংশের শাসন চিরকালের জন্য মুছে গিয়েছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর । যদি তোমাদের আজকের ফিরোজ শাহের উত্তরাধিকারীদের আলোচনা তুলে ধর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।