বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন বর্ণনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন আলোচনা কর |
বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
- অথবা, বামনী রাজ্যের উত্থান এবং পতন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাহমনী রাজ্য ছিল ভারতীয় মুসলিম শাসনের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকদের মতে এ বংশের ইতিহাস হলো ষড়যন্ত্র, অন্তর্বিপ্লব এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর বিশেষ করে বিজয়নগর ও বরঙ্গলের হিন্দু রাজ্যের সাথে অবিরাম যুদ্ধের ইতিহাস।
তারা খুব দীর্ঘ সময় ধরে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩৪৭-১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ জন শাসকের মাধ্যমে প্রায় ১৮০ বছর তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
দক্ষিণাত্যের Petty dynasty-এর ইতিহাসে বাহমনী রাজ্যের শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল । প্রশ্নালোকে বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো ।
→ বাহমনী সাম্রাজ্যের উত্থান : দিল্লি সালতানাতের ধ্বংসস্তূপের মধ্য হতে যেসব স্বাধীন রাজ্য মাথা তুলে দাঁড়ায় তাদের মধ্যে বাহমনী রাজ্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ছিল।
বাহমনী সাম্রাজ্য প্রায় ১৮০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে বাহমনী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে সুলতানের অত্যাচার এবং উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে দাক্ষিণাত্যের অভিজাত শ্রেণি বিদ্রোহী হয়ে উঠে ও ইসমাইল মুখের নেতৃত্বে দৌলতাবাদ দুর্গ অবরোধ করে।
ইসমাইল মুখ হাসানের অনুকূলে নিজের অধিকার ত্যাগ করেন এবং হাসান আবুল মুজাফ্ফর আলাউদ্দিন বাহমান শাহ উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
মুজাফ্ফর আলাউদ্দিন বাহমান শাহ'র প্রতিষ্ঠিত বংশের নাম হলো বাহমনী বংশ। হাসান মঞ্জু নামে একজন ব্রাহ্মণ জ্যোতিষীর ভৃতা ছিলেন এবং তার প্রভু ও পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারে তিনি নিজের বংশের নামকরণ করেন বলে যে গল্প প্রচলিত আছে তা পরবর্তী ঐতিহাসিকগণ অস্বীকার করেছেন।
মুদ্রা ও খোদাই কার্য হতেও এটি প্রমাণ করা যায় না। হাসান নিজেকে পারস্যের বিখ্যাত বীর বাহমান বিন ইমদানদিয়ার বংশধর বলে দাবি করেন।
সিংহাসনে আরোহণ করার পর আলাউদ্দিন শাহ গুলবর গাতে নিজের রাজধানী স্থাপন করেন। অল্পকালের মধ্যে তিনি এসব গৌরবময় বিজয়ের অধিকারী হন।
উত্তরে ওয়াঙ্গনা নদী হতে দক্ষিণ কৃষ্ণ নদী এবং পশ্চিমে দৌলতাবাদ হতে পূর্বে ভাঙ্গির পর্যন্ত বিস্তৃত সাম্রাজ্যের চারটি দপ্তর বা প্রদেশে বিভক্ত করে প্রত্যেক প্রদেশে তিনি একজন করে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
'বুরহাম-ই-মাসির' এর রচয়িতায় বলেছেন, আলাউদ্দিন একজন ন্যায়বান রাজা, প্রজাপালক ও ধার্মিক ছিলেন। তার শাসনামলে তার প্রজারা খুব সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা করত। তিনি যেহেতু ধর্মপ্রাণ ছিলেন তাই তার ন্যায়নীতিতে ধর্মের প্রভাব লক্ষণীয় ছিল।
তার রাজত্বকালে প্রজা ও সৈন্যরা পরিপূর্ণ আনন্দের মধ্যে বসবাস করত এবং ইসলামের বাণী প্রচার করার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতার মধ্য দিয়ে সুন্দরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন এবং প্রজাবৎসল শাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বাহমনী রাজ্যের পতন : বিদ্বৎপর্বতের দক্ষিণে বিজয়নগর ব্যতীত বাহমনী রাজ্যও প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠেছিল। প্রায় দুইশত বছরের রাজত্বকালে এই দুইটি রাজ্যের নৃপতিগণ কেবল শিক্ষা, শিল্প সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেননি, বরং দক্ষিণ ভারতে সুদৃঢ় শাসন প্রতিষ্ঠারপূর্বক শান্তি ও শৃঙ্খলাকে সুনিশ্চিত করেছিলেন।
প্রায় ১৮০ বছরের শাসনামলে বাহমনী রাজা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং বাহমনী রাজ্যের শাসকগণ খুব দক্ষতার সাথে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথও বের করে নিয়েছে।
একটি সুশৃঙ্খল সুপরিচালিত শাসনব্যবস্থা তারা পরিচালনা করেছেন। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে বাহমনী রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে এবং একসময় গিয়ে বাহমনী রাজ্যের পতন হয়।
১৪৮২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ শাহের মৃত্যু হলে তাঁর শিশু পুত্র মাহমুদ শাহ সিংহাসন লাভ করেন। শিশু সুলতানের রাজত্বকালে রাজ্যের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা এবং গোলযোগ দেখা দেয়।
এ সুযোগে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করতে আরম্ভ করেন। দাক্ষিণাত্য দল এবং বিদেশিদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়। কিন্তু শাসকগণ এ গোলযোগ দমন করতে পারলেন না।
মাহমুদ গাওয়ান ছিলেন একমাত্র প্রভাবশালী ও সক্ষম শাসক। তিনি রাজ্যকে সংগঠিত রাখতে সদা সর্বদা সক্রিয় ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রের ঐক্য নিশ্চিত করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ফলে রাজ্যের সংহতি ভেঙে যায়। এর মধ্যে রাহমনী রাজ্যের পতনের কিছু নির্দিষ্ট কারণ পরিলক্ষিত হয়।
এর মধ্যে অন্যতম হলো :
শক্তিশালী যোগ্য মন্ত্রীর অপসারণ বাহমনী রাজ্যের পতনের নিকটতম সময়ে শক্তিশালী ও যোগ্য মন্ত্রী তারা অপসারিত করেছিলেন।
সুলতানের নৈতিক অবনতি: বাহমনী রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ হলো সুলতানের নৈতিক অবনতি যা বাহমনী রাজ্যকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে যায়।
শাসনকর্তাদের মতানৈক্য শাসনকর্তাদের দলাদলির মাধ্যমে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র ঘটনাগুলো বৃহৎ আকার ধারণ করে এবং সর্বোপরি মতানৈক্যের জন্য বাহমনী রাজ্যের শাসনকার্যের অবসান হয়। বাহমনী রাজ্য ভেঙে পাঁচটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়। যথা-
১. বিজয়পুরের আদিল শাহী রাজ্য
২. আহমদ নগরের নিজাম শাহী রাজ্য।
৩. বরাতের ইমাদ শাহী রাজ
৪. গোলকুন্দার কুতুবশাহী রাজ্য ও
৫. বিদরের বারিদ শাহী রাজ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনামলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ বংশের উদ্ভব হয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন।
বাহমনী রাজ্য এর মধ্যে অন্যতম ছিল। ১৩৪৭ থেকে শুরু করে ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৮০ বছর তারা রাজত্ব করেছেন। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে তাদের শাসনকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
উপরোল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে বাহমনী রাজ্যের ইতিহাস নিঃসন্দেহে একটি পৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সংযোজন করেছেন।
দাক্ষিণাত্যের একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ হিসেবে তাদের দীর্ঘ শাসন দিল্লি | সালতানাতের অস্তিত্বের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের বাহমনী রাজ্যের উত্থান ও পতন বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।