বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর |
বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর
- অথবা, বিজেতা ও শাসক হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সম্রাট বাবর এবং ইব্রাহীম লোদীর মধ্যে সংঘটিত পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদী পরাজিত হন।
তার পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষ হতে প্রায় ৩০০ বছরেরও অধিক সময় শাসনকারী সালতানাতের পতন হয়।
বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভে যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ছিলেন একজন সফল বিজেতা। শাসক হিসেবে বাবর বিভিন্ন গুণের অধিকারী ছিলেন।
→ বিজেতা হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব : নিম্নে বিজেতা হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো।
১. কাবুল অধিকার : নিয়া রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে হৃতসর্বস্ব বাবর যখন ভাগ্যান্বেষণে পথে পথে ঘুরছিলেন তখন তিনি বাসনা করেন যে তিনি হিন্দুস্থান জয় করবেন।
১৫০৪ সালে উজবেক শাসনের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহের সুযোগে তিনি কাবুল রাজ্য দখল করেন এবং নিজেকে রাজকীয় মর্যাদায় ফিরিয়ে আনেন।
২. বাখশান ও কান্দাহার দখল : বাবর যখন ভারতবর্ষ আক্রমণের সুযোগ খুঁজছিলেন ঠিক সেই সময় দৌলত খান লোদী বাবরকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানায়।
বাবর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত অভিযানে অগ্রসর হন। ইতোমধ্যে বাবর বদাখশান ও কান্দাহার দখল করে পুত্র হুমায়ূনকে বদাখশান এবং কামরানকে কান্দাহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
৩. পানিপথের যুদ্ধ : বাবর ১৫২৬ সালে এপ্রিল মাসে ১২,০০০ সৈন্যের একটি ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে শিবির স্থাপন করেন পানিপথের প্রান্তরে।
বাবরের আগমনের সংবাদ পেয়ে তাকে প্রতিহত করার জন্য দিল্লির সুলতান ইব্রাহীম লোদী ১ লক্ষ সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে এবং ১০০ হস্তীবাহিনী নিয়ে পানিপথের প্রান্তরে উপস্থিত হন।
৮ দিন উভয় বাহিনী চুপচাপ থাকে অবশেষে ৮ম দিনে বাবর গোলদাতা বাহিনী এবং অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা আক্রমণ শুরু করে। ইব্রাহীম লোদী বীরবিক্রমে যুদ্ধে করেও অবশেষে পরাজিত ও নিহত হন।
৪. আফগান ও অভিজাতবর্গ দমন : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করার পর তিনি প্রথমেই দোয়াব অঞ্চলের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণের আফগান অভিজাতবর্গকে দমন করার জন্য মনোনিবেশ করেন।
এতে তিনি সাফল্য লাভ করার পর পুত্র হুমায়ূন ও অনুচরবর্গের চেষ্টায় জৌনপুর, ঢোলপুর, গাজীপুর, কাল্পি, বিয়ানা, গোয়ালিয়র প্রভৃতি রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
৫. খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ : ভারতের রাজপুত বংশের রামা সংগ্রাম সিংহ এবং বাবরের মধ্যে ১৫২৭ সালের ১৬ মার্চ খানুয়ার প্রান্তরে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মুঘল বাহিনীর আক্রমণে দুর্ধর্ষ রাজপুত সৈন্যবাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে রানা সংগ্রাম সিংহ যুদ্ধ করতে করতে নিহত হলেন এবং রাজপুতদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা চিরতরে বিনষ্ট হলো।
এ যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে বাবরের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেল। আর এ যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মুঘল রাজধানী কাবুল হতে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
৬. চান্দেরী দুর্গ জয় : খানুয়ার যুদ্ধের পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৫২৮ সালের ২০ জানুয়ারি বাবর মেদিনী রাওয়ের অধীনে দুর্ভেদ্য রাজপুতদের বিখ্যাত দুর্গ চান্দেরী দুর্গ অবরোধ করেন।
প্রথম দিকে রাজপুত বাহিনী অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বাবরকে কোণঠাসা করে ফেলে। কিন্তু বাবরের উন্নত রণকৌশলের নিকট তারা এক সময় পরাজয়বরণ করে।
ধারণা করা হয় দূর্গে অবস্থানকারী সকল রাজপুত সৈন্য মুঘলদের হাতে নিহত হয় এবং চান্দেরী দুর্গের পতনের পর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকে বাধা দেবার মতো রাজপুতদের শেষ শক্তিটুকু বিলীন হয়ে যায়।
৭. গোগরার যুদ্ধে জয়লাভ : বাবরের চান্দেরী দুর্গ দখলের পর ১৫২৯ সালে গোগরার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ ছিল মূলত বাবরের সাথে আফগান বাহিনীর যুদ্ধ।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত আফগানরা পুনরায় নিহত ইব্রাহীম লোদীর ভাই জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এবং তারা বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ খবর পেয়ে বাবর তার পুত্র আসকারীকে জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদীকে দমন করার জন্য প্রেরণ করেন। নিজের অনুসারীরা দল ত্যাগ করায় মাহমুদ লোদী হতাশ হয়ে বাংলার সুলতান নসরৎ শাহের আশ্রয় গ্রহণ করেন।
তাই স্বভাবতই বাবর বাংলার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হন। ১৫২৯ সালে গোগরা নামক স্থানে সংঘটিত গোগরার যুদ্ধে আফগানদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি দৃঢ় করেন।
৮. দিল্লিতে প্রবেশ : ভারতবর্ষ আক্রমণ করে জয় করার ফলে বাবর বিপুল ধনসম্পদ লাভ করেন। আর্থিক শক্তি যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর বাবর দিল্লিতে প্রবেশ করেন এবং নিজেকে হিন্দুস্থানের বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা করেন। যা ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।
→ শাসক হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব : শাসনক্ষেত্রে বাবর অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। শাসক হিসেবে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো।।
১. মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর লোদী শাসক ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতবর্ষ হতে প্রায় ৩০০ বছরেরও অধিক সময় শাসনকারী সালতানাতের পতন ঘটে।
২. গোলন্দাজ বাহিনী গঠন : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে বাবর দিল্লি ও আত্মা জয় করে নেন। এর পর তিনি তার বিজিত অঞ্চল সুরক্ষিত করার জন্য সামরিক বাহিনীর অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে গোলন্দাজ বাহিনী গঠন করেন।
৩. উদ্যমী শাসক : সম্রাট বাবর ছিলেন উদ্যমী শাসক। সম্রাট বাবর তার অভিষেক রাজ্য থেকে পরপর দুর্বার রাজ্যচ্যুত হন। এতে তিনি মোটেও হতাশ হননি। দুইবার তিনি যুদ্ধ করে সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেছিলেন।
তিনি ছিলেন রবার্ট ব্রুসের মতো এবং লেনিনের মতো অধ্যবসায় এবং ইচ্ছাশক্তির অধিকারী। তাছাড়া তিনি দৈহিক গড়নেও ছিলেন শক্তিশালী ও সবল একজন বীর যোদ্ধা।
৪. নিরলস কর্মী : সম্রাট বাবর ছিলেন নিরলস কর্মী। কর্মই ছিল তার জীবনের ধর্ম। রাজ্য পরিচালনায় তিনি কখনও ক্লান্তি বোধ করতেন না।
শাসক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে তার চরিত্রে অসংখ্য সদগুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি শত বিপদেও কখনই বিচলিত হননি। মাঝে মাঝে তিনি কঠোর আচরণ করতেন সত্য তবে তা ছিল সাময়িক।
৫. মহানুভব শাসক : বাবর ছিলেন স্নেহপরায়ণ, সদালাপী দয়ালু ও বন্ধুবৎসল। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদের মতে, “সমসাময়িক মধ্য এশিয়ার ইতিহাসে বাবরের মহানুভবতা এক দৃষ্টান্তস্বরূপ।”
কথিত আছে, তার শৈশবের এক খেলার সাথীর মৃত্যুতে তিনি কয়েকদিন পর্যন্ত ক্রন্দন করেছেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি শত্রুদের প্রতিও তিনি সদ্ব্যবহার করতেন।
৬. জায়গিরদারদের ক্ষমতা খর্ব : বাবর স্বর্ণ সময়ের শাসনে সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার তেমন কোনো সংস্কার করতে পারেননি। তিনি বলবন ও আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থা বহাল রাখেন।
তিনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জায়গীরদার ও সামন্ত ব্যবস্থার স্বীকৃতি দিলেও তিনি সামন্ত রাজা ও জায়গিরদারদের ক্ষমতা খর্ব করেন।
৭. প্রাদেশিক শাসন কাঠামো পুনর্গঠন : বাবর সিংহাসনে আরোহণ করে সঠিকভাবে শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করার জন্য প্রাদেশিক শাসন কাঠামো পুনর্গঠন করেন।
বাবর প্রত্যেক প্রদেশে একজন দক্ষ ওয়ালি, দেওয়ান যা রাজস্ব কর্মকর্তা, | শিকদার বা সামরিক কর্মকর্তা এবং কোতোয়াল বা নগর কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। এদের মাধ্যমে তিনি প্রশাসন পরিচালনা করেন।
৮. প্রজাররক শাসক : সম্রাট বাবর ছিলেন একজন প্রজারঞ্জক শাসক। তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য অনেক জনহিতকর কাজ করেন।
তিনি দিল্লিতে ২০টি উদ্যান, সেতু, অট্টালিকা ছাড়াও পানিপথের কারুলবাগ মসজিদ, সংবলের জামে মসজিদ এবং অযোধ্যার বাবরী মসজিদ নির্মাণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দু'বার রাজ্যচ্যুত হয়ে সম্রাট বাবর ভারতবর্ষে একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে সে অক্ষর কীর্তি স্থাপন করে গিয়েছেন তা ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি ছিলেন একজন দক্ষ শাসক। তার সামরিক জ্ঞানের কারণে তিনি একজন বিক্রেতা শাসক হিসেবে পরিচিত। তিনি তার ক্ষুদ্র পিতৃরাজ্য থেকে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে তার আধিপত্য বিস্তার করেন।
তার প্রতিষ্ঠিত রাজ্য আকবরের সময় এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়ে দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। সিংহাসনে আরোহণ করার পর সারাক্ষণ যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে থাকার কারণে তিনি প্রশাসনকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারলেও তিনি যে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যান তা অনুসরণ করে পরবর্তী মুঘল শাসকগণ মুখল শাসনকে দীর্ঘায়ু করতে সমর্থ হন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের বাবরের রাজ্য বিস্তার ও শাসন ব্যবস্থা আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।