বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর |
বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর
- অথবা, বাবর মুগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা তোমার সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তর : ভূমিকা : বাবর মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তিনি মধ্যযুগে আফগানিস্তানের কাবুল থেকে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং মুঘল শাসনের সূত্রপাত ঘটান।
তবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে যে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কিনা। কেননা তার প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য হুমায়ূনের সময়ে প্রায় ধ্বংস হয় এবং সম্রাট আকবরকে আবার তা নতুন করে নতুনভাবে জয় করতে হয়।
বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কি-না : অনেক ঐতিহাসিক বাবরকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত করেন। আবার অনেক ঐতিহাসিক তাকে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ।
তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতো আমার মতে সম্রাট বাবরই মুগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। নিম্নে বাবরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো হলো।
১. সঠিক নীতি গ্রহণ : বাবরকে মুঘল সাম্রাজ্যর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে করার পিছনে প্রথম যুক্তি হচ্ছে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক নীতি গ্রহণ করেন। বাবর ভারতবর্ষে এসে রাজপুত ও আফগানদের দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তবে ভারতীয়রা প্রথমে বাবরকেও ভীনদেশী বলে মনে করতেন। যার ফলে বাবর প্রথমেই ভারতের প্রথা, রীতিনীতি তথা শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানোকে সংগত মনে করতেন। যা ছিল বাবরের মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার একটি কৌশল।
২. সামরিক প্রভাব বিস্তার : বাবর অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে শুধুমাত্র সামরিক মেধা, বুদ্ধি ও কৌশল অবলম্বন করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। তাছাড়া বাবরের যুদ্ধাস্ত্রগুলো ছিল উন্নতমানের।
যার ফলে বাবর ভারতবর্ষে সামরিক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। যা পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজ্যকে স্থায়িত্ব প্রদান করে।
৩. পানিপথ ও খানুয়ার যুদ্ধে জয় : পানিপথ ও খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভের কারণেও বাবরকে মুঘল সম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা যায়।
বাবর যদি পানিপথের যুদ্ধে আফগানদেরকে এবং খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুতদের পরাজিত না করতেন তাহলে ভারতবর্ষে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হতো না এবং মুঘল সাম্রাজ্য পরবর্তীকালেও হুমকির সম্মুখীন হতো।
৪. মুঘল জাতিকে ভারতমুখীকরণ : সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে অভিযান পরিচালনা করেন বাবর। পরবর্তীতে বাবর পুরো মুঘল জাতিকে ভারতমুখী করতে সক্ষম হন।
বাবর যদি মুঘল জাতিকে ভারতমুখী না করতেন তাহলে মধ্য এশিয়ার এ জাতিটি নিজেদের মধ্যে অন্তযুদ্ধে বিলীন হয়ে যেত। যা হলে মুঘল সাম্রাজ্য তো [ দূরের কথা মুঘল জাতিও থাকত না।
৫. বৃহৎ রাজ্য গঠন : সম্রাট বাবর ভারতবর্ষের উল্লেখযোগ্য এলাকাসমূহ বিশেষ করে উত্তর ভারতের এক বিশাল অঞ্চল জয় করেন।
যার ফলে বৃহৎ এক রাজ্য গঠন করেই বাবর মুঘল সাম্রাজ্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শুধু তাই নয় বাধৱ দিল্লি নগরকে এ নবগঠিত সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন। যা মুঘল শাসনের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে।
৬. বাদশাহ উপাধি গ্রহণ : বাবরকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলার পক্ষে আরেকটি যুক্তি হচ্ছে তার সার্বভৌমত্ব স্থাপন। বাবর নিজে বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব স্থাপন করেন।
৭. ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় শাসন : সম্রাট বাবর ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। বাবরের সাম্রাজ্য ছিল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। বাবর সকল অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় শাসনের অধিভুক্ত করেন। যা তাকে প্রকৃত মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে ।
৮. যুদ্ধ জয়ে চলমান নীতির প্রবর্তন : বাবরই সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে যুদ্ধ জয়ের চলমান নীতি গ্রহণ করেন। বাবরের পূর্বে সকল যুদ্ধ ছিল দুর্গকেন্দ্রিক। সৈন্যরা সাধারণত দুর্গের ভিতরে অবস্থান নিতেন।
বাবর যুদ্ধের এ নীতি পরিবর্তন করে দ্রুতগামী চলমান বাহিনী দ্বারা যুদ্ধ জয়ের প্রথা চালু করেন। সৈন্যরা তার সময়ে দুর্গের পরিবর্তে তাবুতে থাকা শুরু করেন। বাবরের এ চলমান নীতি পরবর্তীতে আকবর গ্রহণ করেন।
৯. সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রবর্তন করেন : বাবর ভারতবর্ষে সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রবর্তন করেন। বাবর তার দরবারে এক বর্ণবহুল সংস্কৃতি চালু করেন। ঐতিহাসিকবাদের মধ্যে বাবর ভারতের সংস্কৃতির সাথে মধ্য এশিয়ার সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটান। যার ফলে পরবর্তীতে সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
১০. উদারনীতি গ্রহণ : বাবর তার সময়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি এবং শত্রুদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ করেন। তিনি হিন্দুদেরকে উপযুক্ত পদে বসাতেন এবং শত্রুদের সাথে সদ্ব্যবহার করতেন।
পরবর্তীতে তাকেই অনুসরণ করে আকবর রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন। বাবর যদি এ নীতি প্রবর্তন না করতেন তাহলে মুঘল সাম্রাজ্য হয়ত স্থায়ী নাও হতে পারতো হতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নিঃসন্দেহে সম্রাট বাবরই হচ্ছেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। কেননা বাবর শুধুমাত্র সাম্রাজ্য স্থাপনই করেননি পরবর্তীতে যাতে এ সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় সেজন্য মনোযোগী হন।
পরবর্তীতে আকবর যে মুঘল সাম্রাজ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন তা মূলত বাবরের গৃহীত নীতি অনুযায়ীই। এক্ষেত্রে বাবরকেই মুঘল সাম্রাজ্যের একমাত্র প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের বাবর কি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পর্যালোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।