সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর |
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর
- অথবা, বিজেতা হিসেবে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের বর্ণনা দাও।
- অথবা, সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের বিবরণ দাও।
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান মাহমুদ ছিলেন গজনির শ্রেষ্ঠ শাসক এবং একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তিনি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও নিজ পরিকল্পনা চরিতার্থ করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন বোধ করলেন।
তার লোলুপদৃষ্টি ভারতের অতুল ঐশ্বর্য্য ও ধন- দৌলতের প্রতি ও হিন্দুস্থানের উর্বর ভূমির দিকে আকৃষ্ট হয়। তদুপরি ভারতীয় রাজাগণ সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করে মাহমুদের আনুগত্য অস্বীকার করেন এবং তার ভারতীয় মিত্রবর্ণকে অত্যাচার ও উৎপীড়ন করেন।
সে জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে সুলতান মাহমুদ ভারত অভিযান পরিচালনা করেন। ১০০০ থেকে ১০২৭ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ১৭টি অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রত্যেকটি অভিযানে তিনি সফলতা অর্জন করেন।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান : সবুক্তগীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন মাহমুদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন ইসমাইল। পিতার মৃত্যুর পর ইসমাইল ও মাহমুদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে।
মাহমুদ এই সংঘর্ষে জয়যুক্ত হয়ে ৯৯৭ সালে গজনির সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণ করে পিতা সবুক্তগীনের নীতি অনুসরণ করে তিনি সামানিদ বংশের আনুগত্য স্বীকার করেন।
সামান্দিদের আত্মকলহের সুযোগ নিয়ে অল্পকালের মধ্যে নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। অতঃপর তিনি বাগদাদের খলিফার নিকট হতে ইয়ামিন উদ-দৌলা' ও 'আমিন উল মিল্লাত' উপাধি লাভ করে সিংহাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হন।
তিনি গঙ্গনি রাজ্যের চিরাচরিত রীতি আমির পদত্যাগ করে সুলতান বলে ঘোষণা দিলেন। সুলতান মাহমুদ মোট সতেরো বার ভারত আক্রমণ করেছেন।
সেই বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ঐতিহাসিক স্যার হেনরি ইলিয়টের মতে, মাহমুদ মোট ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন।
অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, পজনিকে ধন-সম্পদের প্রাচুর্যে পরিণত করার জন্য একাধিকবার ভারত আক্রমণ করেছেন।
নিম্নে মাহমুদের ভারত অভিযানের ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়া হলো :
১. প্রথম অভিযান সীমান্তবর্তী শহরের বিরুদ্ধে ( ১০০০ ) : সুলতান মাহমুদ ১০০০ সালে বাইবার গিরিপথের সীমান্তবর্তী কয়েকটি শহর অধিকার করেন এবং বিজয়ীর বেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধনদৌলত নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান।
২. দ্বিতীয় অভিযান জয়পালের বিরুদ্ধে (১০০০) : সীমান্তবর্তী শহর আক্রমণের অল্প দিন পরই ১০০০ সালে সুলতান মাহমুদ ধর্মের পতাকা উড্ডীন করার জন্য সত্য ও সুবিচার প্রভৃতির প্রাধান্য স্থাপনের জন্য পিতৃশক জয়পালের বিরুদ্ধে ১০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যসহ অভিমানে অগ্রসর হন।
পেশোয়ারে মাহমুদ ও জয়পাল উভয়পক্ষের সৈন্যের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মাহমুদ জয়পালকে এই যুদ্ধে পরাজিত করেন।
পরাজিত জয়পাল উচ্চপদস্থ কর্মচারী, পুত্র ও পৌরসহ মাহমুদের হাতে বন্দি হন। আড়াই লক্ষ দিনার ও দেড়শত হাতি মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে মাহমুদের হাত থেকে জয়পাল মুক্ত হন।
৩. তৃতীয় অভিযান তীরনামক শহরের বিরুদ্ধে (১০০৪) : ১০০৪ সালে সুলতান মাহমুদ ঝিলাম নদীর তীরবর্তী তীর নামক একটি শহর জয় করার জন্য তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করেন। রাজা | বাজিরায় প্রাণপণে যুদ্ধ করে সুলতান মাহমুদের নিকট পরাজিত হন। পরাজয়ের এই গ্লানি সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন।
৪. চতুর্থ অভিযান মুলতানের বিরুদ্ধে (১০০৬) : ১০০৬ সালে সুলতান মাহমুদ মুলতানের বিরুদ্ধে চতুর্ণ অভিযান প্রেরণ করেন। এই অভিযানে মাহমুদকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। সুলতানের রাজা আবুল ফতেই দাউদ বাৎসরিক কর দানে রাজি হলে সুলতান মাহমুদ মুলতান অভিযান স্থগিত করেন। আনন্দ পাল তার রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় তিনি আনন্দপালের প্রতি ক্রোধান্বিত হন ।
৫. নওয়াজ শাহের বিরুদ্ধে অভিযান (১০০৭) : নওয়াজ শাহ সুলতান মাহমুদের আনুগত্য অস্বীকার করলে সুলতান মাহমুদ ১০০৭ সালে সহজেই নওয়াজ শাহকে পরাজিত ও বন্দি করেন।
৬. পঞ্চম অভিযান আনন্দপালের বিরুদ্ধে (১০০৮) : আনন্দপাল মাহমুদকে তার রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দিলে তিনি আনন্দপালের বিরুদ্ধে অভিযানে অগ্রসর হন।
মুসলমান অভিযানের স্রোত রোধ করার জন্য আনন্দপাল উড্ডয়নী, গোয়ালিয়র, কালিঞ্জর, কনৌজ, দিল্লি, আজমিরের রাজার সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হয়।
পেশোয়ার ও উন্দ এর মধ্যবর্তীস্থানে উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের শুরুতে প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও অবশেষে সুলতান মাহমুদের জয় হয়।
৭. দশম অভিযান থানেশ্বরের বিরুদ্ধে (১০১৪) : ১৪১৪ সালে সুলতান মাহমুদ দশম অভিযান হিসেবে থানেশ্বর আক্রমণ করেন। মাহমুদের এ অভিযানের প্রস্তুতির সংবাদ শুনে থানেশ্বর রাজা গজনিতে এক দূত প্রেরণ করে বাৎসরিক ৫০টি হাতি দানের প্রস্তাব জানান।
মাহমুদ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং থানেশ্বরের দিকে অগ্রসর হন। থানেশ্বর পৌঁছে তিনি সেখানকার হিন্দু মন্দিরটি অরক্ষিত অবস্থায় পান। সুতরাং একপ্রকার বিনা বাধায় তিনি মন্দিরটি ভেঙে সেখানকার ধনরত্ন লুণ্ঠন করেন।
৮. দ্বাদশ অভিযান কনৌজ ও মথুরার বিরুদ্ধে (১০১৮) : ১০১৮ সালে সুলতান মাহমুদের দ্বাদশ অভিযানে কনৌজ ও মথুরার সম্পদ সুষ্ঠিত হয়। কনৌজের রাজা জয়পাল বিনাযুদ্ধে মাহমুদের আনুগত্য স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেন।
কনৌজ ও মথুরা নগরীর মন্দিরগুলো মাহমুদের হস্তে লুণ্ঠিত হয়। এ মন্দিরগুলোর যাবতীয় ধন সম্পত্তি মাহমুদ স্বদেশে নিয়ে যান।
৯. পঞ্চদশ অভিযান (১০২০-২৩) : ১০২০ সালে সুলতান মাহমুদ চান্দেরাজ গোণ্ডের বিরুদ্ধে কালিঞ্জর আক্রমণ করেন। তিনি গোত ও ত্রিলোচন পালের বিশাল সেনাবাহিনীকে সহজেই বিধ্বস্ত করে ধনরত্ন নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন।
পরের বৎসর (১০২১-২২) তিনি গোয়ালিয়রের সর্দারকে বশ্যতা স্বীকার করাতে বাধ্য করে গোয়ালিয়র জয় করেন। অতঃপর কালিঞ্জর অবরোধ করা হয়।
মুসলিম ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন ও ফিরিস্তার মতে, চান্দেলারাজ গোল্ড মাহমুদকে প্রভৃতি পরিমাণ ধনরত্ন দিতে স্বীকৃত হলে তিনি মুক্তি পান।
১০. ষোড়শ অভিযান (১০২৫-২৬) : সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের মধ্যে সোমনাথ মন্দির লুন্ঠন সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। সোমনাথ মন্দিরটি কাথিয়াগড়ের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ছিল।
এই মন্দিরে প্রভূত পরিমাণ ধনসম্পদের সংবাদ পেয়ে ১০২৫ সালে মাহমুদ বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে মুলতানের পথে আজমিরে উপস্থিত হন।
আজমির জয় করে গুজরাট হয়ে ১০২৬ সালে মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরের সম্মুখে উপস্থিত হন। বহুসংখ্যক রাজপুত্র যোদ্ধা ও রাজাগণ এবং গুজরাটের রাজা ভীম সোমনাথ মন্দির রক্ষার্থে মাহমুদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।
কিন্তু মাহমুদের সাথে এক ভীষণ যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়। প্রায় ৫ হাজার হিন্দু এই যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেন। তিনি মন্দির ও বিগ্রহ ভেঙে প্রচুর ধনরত্ন সংগ্রহ করেন।
১১. সপ্তদশ অভিযান (১০২৭) : সুলতান মাহমুদ তার সর্বশেষ যুদ্ধ হিসেবে ১০২৭ সালে জঠদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। জনগণ প্রাণপণ যুদ্ধ করে মাহমুদের হাতে পরাজিত হলেন এবং মাহমুদ স্বদেশে ফিরে আসেন।
জীবনে বেশিরভাগ যুদ্ধে উপস্থিত থাকার কারণে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে ১০৩০ সালে গয়ানিতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যু হয়।
১২. একাদশ অভিযানে শাহি রাজত্বের অবসান : পঞ্চম অভিযানে মাহমুদ আনন্দ পালকে পরাজিত করে নন্দন নামক স্থানে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
১০১৩-১৪ সালে একাদশ অভিযানে সুলতান মাহমুদ শাহি বা শাহিয়া বংশের অবসান ঘটনার উদ্দেশ্য এক বিরাট অশ্বরোহীবাহিনী প্রেরণ করেন এবং নন্দন দুর্গটি অবরোধ করেন।
এ সময় আনন্দ পালের পুত্র ত্রিলোচন নিজপুত্র ভীমকে নন্দন দুর্গের দায়িত্ব প্রদান করে কাশ্মীর পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান মাহমুদ ভারত উপমহাদেশে সাম্রাজ্য বিজেতা হিসেবে প্রভৃত কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি জীবনে প্রত্যেকটি অভিযানে সফলতা লাভ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
অনেক ঐতিহাসিক তার সাম্রাজ্য আক্রমণকে লুণ্ঠন করার সমতুল্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন সাম্রাজ্য অধিকার করে সেখান থেকে আহরিত ধন-সম্পত্তি দ্বারা গজনি নগরীকে সুসজ্জিত করেন। কোনো স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা ভার ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল না।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।