সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর |
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর
- অথবা, ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার ও জনহিতকর কার্যাবলির বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতানি আমলের ইতিহাসে ফিরোজ শাহ তুঘলক এক অনবদ্য নাম। দিল্লি সালতানাতের চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন এবং সালাতানাতের মর্যাদা বৃদ্ধি, তুঘলক বংশের পতন রোধ, সংহতি বিধান, সর্বোপরি জনসাধারণের সার্বিক উন্নতি ও মঙ্গলের জন্য অভূতপূর্ব সংস্কার সাধন করে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি জনগণের কল্যাণ কামনায় সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতেন ।
→ ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার ও জনহিতকর কার্যাবলি : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার এবং জনহিতকর কার্যাবলি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. জায়গীর প্রথার পুনঃপ্রবর্তন : সুলতান ফিরোজ শাহ আমির- ওমরাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের জন্য জায়গীরদার প্রথার পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং সমগ্র সাম্রাজ্যকে কতগুলো জায়গীরে বিভক্ত করে আমির-ওমরাদের মাঝে তা বণ্টন করেন।
২. ঋণ মওকুফ : সিংহাসনে আরোহণ করার পরপরই ফিরোজ শাহ পূর্ববর্তী শাসকদের দেয়া ঋণ ব্যবস্থা মওকুফের সুব্যবস্থা করেন। এতে জনসাধারণের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে আসে। এতে নজিরবিহীন উদারতার বহিঃপ্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।
৩. প্রশাসনিক সংস্কার : যোগ্য ও জনদরদি প্রশাসক হিসেবে | ফিরোজ শাহ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক কার্য সাধন করতে সক্ষম হন। তিনি সমস্ত সাম্রাজ্যকে কতগুলো জায়গীরে বিভক্ত করে আমির-ওমারদের মধ্যে বিতরণ করেন এবং জায়গীরগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জেলায় বিভক্ত করেন।
৪. কৃষি সংস্কার : প্রজাসাধারণের হিতার্থে ফিরোজ শাহ সুখ্যাতি অর্জন করেন। তার দীর্ঘ ৭ বছর এর রাজত্বকালে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষির এত পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা বলা | বাহুল্য। কৃষকের অবৈধ কর প্রথার বিলোপসাধন করেন।
৫. রাজস্ব সংস্কার : ফিরোজ শাহ ভূমিকরের পরিমাণ হ্রাস | করেন। ২৩ প্রকারের শরিয়ত বহির্ভূত কর প্রথার বাতিল করার পাশাপাশি কুরআন অনুযায়ী খারাজ, যাকাত, জিজিয়া ও খুমুস এই চার প্রকার কর ধার্য করেন।
৬. বিচারব্যবস্থা : ফিরোজ শাহ তুঘলক বিচারব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি কাজি ও মুফতিদের উপর বিচার ভার ন্যস্ত করেন। ইতিপূর্বে চক্ষু, নাসিকা ছেদনের যে কঠোর প্রথার প্রচলন ছিল তিনি তা রহিত করেন।
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ : ফিরোজ শাহ শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার জন্য জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা আপন করতেন। এমনকি শিক্ষার জন্য তিনি অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
৮. স্থাপত্যশিল্প : স্থাপত্য নির্মাতা হিসেবেও ফিরোজ শাহ সমধিক পরিচিত ছিলেন। তার বিশেষ কীর্তি হলো ফিরোজাবাদ, ফতেহাবাদ, হিমার, জৌনপুর ও ফিরোজপুর প্রভৃতি শহর নির্মাণ করা। এছাড়াও তিনি ৪টি মসজিদ, ৩০টি প্রাসাদ, ২০০টি সরাইখানা ও ৪টি হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন।
৯. ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎকর্ষ : ফিরোজ শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসা-বাণিজ্য এত বেশি উৎকর্ষ সাধিত হয় যে, তা বলা বাহুল্য। তার রাজত্বকালে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফিরোজ শাহ আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক উঠিয়ে দেন।
১০. ধর্মীয় নীতি : শরিয়ত মোতাবেক ফিরোজ শাহ ব্যক্তিগত জীবন ও রাষ্ট্রীয় কার্যসমূহ পরিচালনা করতেন। তাবে ব্রাহ্মণদের ওপর জিজিয়া কর ধার্য করলেও তিনি কখনোও কোনো শিয়া মতাবলম্বীদের উপর নির্যাতন করতেন না।
১১. ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন : ফিরোজ শাহ তুঘলকের এক অনবদ্য কীর্তি হলো ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন। কেননা তিনি ১,৮০,০০০ জনের ক্রীতদাস বাহিনী গঠন করে। তিনি দাসদের পুত্রবৎ পালনের ব্যবস্থা করেন।
১২. দাতব্য প্রতিষ্ঠান : ফিরোজ শাহ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য দারুল শিক্ষা নামে দিল্লিতে একটি বিশাল হাসপাতাল নির্মাণ করেন।
১৩. সৈন্য বিভাগের সংস্কার : সামন্ত শ্রেণির ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সংস্কার করেন। নিয়মিত সৈন্যদের জায়গীর অনিয়মিতদের বেতন এবং তৃতীয় শ্রেণির সৈন্যদের বিভিন্ন রাজস্ব ব্যবস্থার এলাকায় স্থানান্তরিত করে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
১৪. জলকূপ ও খাল খনন ব্যবস্থা : ফিরোজ শাহ কৃষি কাজের উন্নতির লক্ষ্যে ১৫০টি বৃহৎ জলকূপ এবং ৪টি বৃহৎ খাল খনন করেন। তার এসব খাল খননের ফলে প্রচুর অনাবাদি জমি ফসলের উপযোগী হয়েছিল।
১৫. মুদ্রা সংস্কার: মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের মতো পরীক্ষামূলকভাবে মুদ্রা চালু না করে ফিরোজ শাহ সহজ বিনিয়োগ উপযোগী ও অল্প মানের মুদ্রা প্রবর্তন করেন।
১৬. পিতামহীসুলভ ব্যবস্থা : প্রজাসাধারণের মঙ্গলার্থে ফিরোজ শাহ বিবাহ দপ্তর এবং চাকরি দপ্তর নামে দুটি মানবীয় সংস্কার করেন। তার এই দপ্তর পিতামহীসুলভ দপ্তর নামে পরিচিত।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষণস্থায়ীভাবে ফিরোজ শাহের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে দিল্লির সালতানাত দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু আল-বারানিসহ কতিপয় ঐতিহাসিকদের মতে তুঘলক বংশের সেরা শাসকদের মাঝে ফিরোজ শাহ তুঘলক অন্যতম ছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর । যদি তোমাদের আজকের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার নীতি তুলে ধর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।