সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের Wসুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখসুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে এক অক্ষর স্থান দখল করে আছে। ১২৯৬ সালে তিনি সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজিকে হত্যা করে দিল্লির সালতানাতের মসনদে সমাসীন হন।
সিংহাসনে আরোহণ করার পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজিকে অনেকগুলো বিদ্রোহের মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং তিনি সেখানে কার্যকরভাবে দমন করেছিলেন অভিজাত বর্গের বিদ্রোহ, হাজী মাওলার বিদ্রোহ ও নও মুসলিমদের বিদ্রোহ এবং আকাত খানের বিদ্রোহ ছিল অন্যতম। উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে তিনি বিদ্রোহের কারণ নির্ণয় করেন এবং বিদ্রোহ দমন করেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে বিদ্রোহের কারণ : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে এসব বিদ্রোহের ফলে সুলতানের মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এগুলোর পশ্চাতে বিশেষ বিশেষ কারণ রয়েছে।
উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে অনুধাবন করেন যে, বিদ্রোহের পশ্চাতে চারটি প্রধান কারণ বিদ্যমান। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সুলতানের অমনোযোগিতা : সুলতানের শাসনামলে বিদ্রোহের পশ্চাতে যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেন। তাদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সুলতানের অমনোযোগিতা অন্যতম কারণ।
সুলতানের অমনোযোগিতার ফলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আমির ও অভিজাতরা বিদ্রোহ করে। তারা ক্ষমতা পাওয়ার লোভে সুলতানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাকে।
২. অবাধ ও অত্যধিক মদ্যপান : সুলতানের বিদ্রোহের আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে অবাধ ও অত্যধিক মদ্যপান। মদ্যপানের ব্যাপকতার জন্য লোকজন পরস্পরের সঙ্গে মদের আসরে জোটবদ্ধ হতো। আর জোটবদ্ধ হয়ে তারা সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করত।
৩. গুপ্তচর ব্যবস্থার দুর্বলতা : উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি যে চারটি কারণ চিহ্নিত করেন তার মধ্যে গুপ্তচর প্রথার দুর্বলতা অন্যতম।
সাম্রাজ্যে গুপ্তচর প্রথার দুর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন অঞ্চলে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের কাজ চলছিল। তাদের দুর্বলতার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কি ঘটছে সুলতান তা জানতে পারতেন না ।
৪. অর্থের প্রাচুর্যতা : আলাউদ্দিনের সময়ে অভিজাতনের হাতে টাকা পুঞ্জীভূত হওয়ার কারণে তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে পড়ে এবং ক্ষমতা লোভী ও উদ্ধৃত হয়ে পড়ে। তাদের এ ধরনের আচরণ বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।
সুলতানের বিরুদ্ধে আমির, মালিক ও ওমরাহ অবাধে মেলামেশার সুযোগ পেয়ে একত্রিত হতো এবং বিদ্রোহ করত।o বিদ্রোহ প্রতিরোধে আলাউদ্দিনের ব্যবস্থা। নিম্নে বিদ্রোহ প্রতিরোধে আলাউদ্দিনের ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. গুপ্তচর নিয়োগ : আলাউদ্দিন এই চারটি কারণ স্থির করে যথাযথ পদক্ষেপ নেন। তিনি দেশের সর্বত্র গুপ্তচর নিয়োগ করেন এবং গুপ্তচরদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন।
বারিদ নামক কর্মচারীরা গুপ্তচরদের কর্তা হিসেবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করত। গুপ্তচরদেরকে অভিজাতদের গৃহে, বাজারে ও অন্যান্য স্থানে নিয়োগ করেন।
২. অভিজাতদের অর্থ শোষণ : অতঃপর আলাউদ্দিন অভিজাতদের অর্থ-সম্পদ হ্রাসের নীতি গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিন এরপর আরেকটি হুকুম দ্বারা দরবারি অভিজাতদের যে সকল ইমাম, মিলক, ওয়াকফ বাবদ জমি বা জায়গীর দেওয়া হয়েছিল। তা খারিজ করে দেন। ধনীদের ধনভার লাঘব করার জন্য রাজস্ব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
৩. ভূমিকর বৃদ্ধি : সুলতান ভূমিকর বৃদ্ধি করেন যাতে জনসাধারণ জীবিকা অর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং অলসতায় বিদ্রোহের চিন্তা না করে হিন্দু, খুৎ, মুকাদ্দাম, চৌধুরী ও গ্রামীণ অভিজাতদের বিদ্রোহী মনোভাব দূর করার জন্য সুলতান আলাউদ্দিন ভূমিকর বাড়িয়ে ৫০ ভাগ নির্ধারণ করেন।
এর ফলে এই অভিজাতদের হাতে বাড়তি অর্থ জমা হতো না। ফলে তিনি সহজেই বিদ্রোহ দমন করতে পারেন এবং শাসনব্যবস্থায় সংস্কার করতে পারতেন।
৪. মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য ব্যবহারে নিষেধকরণ : অভিজাতদের দমনের জন্য সুলতান আলাউদ্দিন নির্দেশ দিলেন যে, দিল্লিতে মদ্যপান ও মদ বিক্রয় চলবে না। আলাউদ্দিন নিজের আচরণ দ্বারা এ নির্দেশ কার্যকর করার চেষ্টা করেন।
তিনি বাসাওন দরজায় জনতার সামনে নিজের পানপাত্র ভেঙে ফেলে মদ্যপান বন্ধের সূচনা করেন। রাজকর্মচারীরা শহরের সর্বত্র মদ্যপানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
৫. দরবারি অভিজাতদের সামাজিক জীবন নিয়ন্ত্রণ : দরবারি অভিজাতদের মধ্যে সুলতানের অনুমতি ছাড়া মেলামেশা, পান-ভোজন ও বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়। সুলতান গুপ্তচরদের কঠোর নির্দেশ দেন।
যাতে মালিক ও আমিরেরা এই আইন ভঙ্গ করছে কিনা তা তদারকি করার জন্য অভিজাতরা পরস্পরের সাথে বিবাহ সম্পর্কে স্থাপন করতে হলে সৈয়দ খানের অনুমতি নিতে হতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন খলজি অত্যন্ত সফলতার সাথে তার রাজত্বকালে বিদ্রোহের কারণ চিহ্নিত করেন এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে তা দমন করেন।
সুলতান বিদ্রোহ দমনে তার নীতিগুলো কঠোরভাব প্রয়োগ করেন। যার কারণে অভিজাতরা তার বিদ্রোহ করার সাহস পায়নি। তিনি তার রাজত্বকালের বিদ্রোহগুলো দমন করার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ। যদি তোমাদের আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালের বিদ্রোহ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।