সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর |
সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর
- অথবা, সংবিধান কাকে বলে? সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
- অথবা, সংবিধান কী? সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সংবিধান হলো কোনো রাষ্ট্রের জীবন | বিধান। কোনো রাষ্ট্রের সকল কার্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধিবিধান সংবিধানে উল্লেখ থাকে। সংবিধান ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই কল্পনা করা যায় না।
তাই রাষ্ট্র চিন্তায় সংবিধানের গুরুত্ব অত্যধিক। সংবিধান হলো রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা আইন। তাই সকলে সংবিধানের আইন মানতে বাধ্য। প্রত্যেক সংবিধানের কতিপয় সুনির্দিষ্ট সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো = সংবিধান প্রণয়নে প্রধান্য পায় ।
→ সংবিধানের সংজ্ঞা : সংবিধান হলো কতকগুলো লিখিত বা অলিখিত নিয়মনীতির সমষ্টি, যেগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করে এবং সংবিধানকে রাষ্ট্রের পরিচালিকা শক্তি বলা হয়।
এককথায় বলা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিই হচ্ছে সংবিধান। যেখানে দেশের শাসন কাঠামোর সকল নিয়মকানুন লিখিত বা অলিখিত থাকে।
এগুলো রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্র কিভাবে চলবে, কোন জায়গায় চাকি নীতি গ্রহণ করবে, তা সংবিধানে নির্ধারণ করা থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন দার্শনিক আইনজ্ঞ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ একেকজন একেক মতামতের আলোকে সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে। কয়েকজনের কতিপয় সংজ্ঞা বা মতামত তুলে ধরা হলো :
অধ্যাপক ফাইনারের মতে, "The system of fundamental | political institution is the constitution." অর্থাৎ, রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধই হলো সংবিধান। সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিষয় সম্পর্কে সংবিধানে উল্লেখ থাকে। সংবিধানকে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর কথা বলে উল্লেখ করেন।
Prof. K. C. Wheare , "That body of rules which regulates the ends for which and the organs through which government power is exercised is called a constitutions." অর্থাৎ একটি দেশের সংবিধান হলো সেই সমস্ত নিয়মাবলি যা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগকারী বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অধ্যাপক সি এফ স্ট্রং লিখেছেন, “সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়মকানুনের সমষ্টি যা দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এই দুয়ের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে।
”বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল সংবিধানকে এভাবে বলেছেন, “সংবিধান এমন একটি জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র তার নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেলেনিকের মতে, “সংবিধান হচ্ছে বিচার বিভাগীয় বিধিবিধানের এমন এক সমষ্টি যেগুলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিভাগগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাদের সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পারস্পরিক সম্পর্ক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে মূল ক্ষেত্র স্থির করে।"
জেমস ব্রাইসের মতে, “সংবিধান হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক সমাজের কাঠামো যা আইনের মাধ্যমে বা আইন ছাড়া সংগঠিত হয় অর্থাৎ যাতে আইন এর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত কার্যাদি ও সুনির্দিষ্ট অধিকার সমেত চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিল ক্রাইস্ট-এর মতে, “লিখিত বা অলিখিত | বিধিবিধান আইনের সমষ্টি যা সরকারের সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যকার ক্ষমতার বণ্টন এবং উক্ত ক্ষমতা কার্যকর করার সাধারণ নীতিমালা হচ্ছে সংবিধান।”
→ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি : সংবিধান কতিপয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। সংবিধান ও সাধারণ আইনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। নিম্নে সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. প্রস্তাবনা : সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংবিধানের শুরুতে একটি প্রস্তাবনা থাকবে। এ প্রস্তাবনায় সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটবে। এটা সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
২. রাষ্ট্রের দর্পণ : কোনো সংবিধান পর্যালোচনা করলে দু'দেশের প্রকৃতি ও শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায়। যেমন- ঐ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত না, রাষ্ট্রপতি শাসিত তা সংবিধানের মাধ্যমেই জানা যায়। এটা সংবিধানের অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য ।
৩. আইনভিত্তিক ধারণা : সংবিধানের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো আইনভিত্তিক। সংবিধানের অধিকাংশ অঙ্গচ্ছেদগুলো আইনের দ্বারা বেষ্টিত। আইনের ধারণা থেকেই সংবিধানের উৎপত্তি। আইনের বিধিবিধান সামনে রেখেই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।
৪. প্রথার সমষ্টি : সংবিধান প্রণয়নের অন্যতম উৎস হলো প্রথা। সংবিধান প্রতিষ্ঠার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রথা। প্রথার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণীত হয়। যথা- ব্রিটেনের সংবিধান প্রথার সমন্বয় গড়ে ওঠ
৫. মৌলিক অধিকার : প্রত্যেক সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি থাকে। সংবিধান জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ আইন। তাছাড়া কিছু মৌলিক বিধান প্রতিষ্ঠিত থাকে। যেমন- সরকারসমূহের ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়।
৬. কাঠামোভিত্তি সংবিধান : সরকারের মূল কাঠামো ও গঠন স্থির করে থাকে। ফলে সরকারের কার্যাবলি সঠিক ও সুন্দরভাবে পরিগণিত হয়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট থাকে এবং সরকারের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক স্থির করে।
৭. সম্পর্ক স্থির : সম্পর্ক নির্দিষ্টকরণ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সংবিধান সরকারের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে। এ সকল বিধিবিধান সরকারের বিভাগসমূহের সম্পর্ক ও তাদের সাথে জনগণের সম্পর্ক উল্লেখ করে থাকে।
৮. সার্বভৌমত্ব : সংবিধান হলো কোনো রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর ওপর আর কোনো ক্ষমতা নেই। সার্বভৌম ক্ষমতা এই ক্ষমতার অধিকারী, কিভাবে এ ক্ষমতা প্রয়োগ হবে ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে রাষ্ট্রের সার্বভৌম সুসংহত থাকে।
৯. সরকার নিয়ন্ত্রণ : সরকার নিয়ন্ত্রণ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পূর্বের সরকারগুলো স্বৈরাচারী ছিল বিধায় সংবিধানের উৎপত্তি হয়। এতে সরকারের ক্ষমতা ও জনগণের অধিকার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। সংবিধান থাকায় সরকার সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। সংবিধান সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
১০. সংশোধন পদ্ধতি : সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ও প্রাকৃতিক সম্পর্ক জরুরি অবস্থায় সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি সুপরিবর্তনীয় ও দূষ্পরিবর্তনীয় উভয়ই হতে পারে।
১১. রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের প্রতিফলন : কোনো সংবিধান সেই যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও কাঠামো অনুযায়ী রচিত হয়। ফলে শাসনতন্ত্র রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও চরিত্রের প্রতিফলন ঘটে। যেমন- কোন দেশ সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী তা শাসনতন্ত্র দেখলেই বুঝা যায়।
১২. তফসিল : কোনো সংবিধানে ঐ দেশের ইতিহাস ও তাৎপর্য পূর্ণ ঘটনার মর্মবাণী তফসিলে উল্লেখ থাকে। যেমন- বাংলাদেশের সংবিধানে বর্তমান ৭টি তফসিল রয়েছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ সকল বৈশিষ্ট্য সংবিধানের সামাজিকীকরণে সহায়তা করে।
কোনো দেশের সংবিধানের মাধ্যমে ঐ দেশের প্রকৃতি এবং সংবিধানের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করণে ঐ দেশের প্রকৃত শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।