রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর |
রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর
- অথবা, রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে, তুমি কি এ উক্তির সাথে একমত? আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমানকালে রাজনৈতিক দল প্রায় সকল ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক মতামতের প্রধান বাহন ও মাধ্যম।
ইংল্যান্ডে একাদশ শতাব্দীতে দলীয় ব্যবস্থা প্রথম বিকশিত হয়। আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিভূ।
→ রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে : আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে । রাজনৈতিক দল দেশের নির্বাচকমণ্ডলী ও সরকারের মধ্যে সংযোগ সাধন করে থাকে।
বর্তমানকালে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে ।
নিম্নে এ উক্তিটির সপক্ষে যুক্তির অবতারণা করা হলো :
১. ঐতিহাসিক সৃষ্টিকোণ থেকে : ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায়, দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো সর্বদাই সেশের উচ্চ শ্রেণির ব্যক্তিত্বের স্বার্থের অনুকূলে কাজ করে।
মধ্যপন্থি দলগুলো মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং বামপন্থি দলগুলো নিম্নশ্রেণির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ আদায়ের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত থাকে।
২. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে : অনেক সময় ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গঠিত হতে পারে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা নিজ ধর্মের প্রচার ও প্রসারকল্পে আশানুরূপ ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা করায়ত্ত করার চেষ্টা করে। ফলে একটি রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। যেমন- মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামি ইত্যাদি।
৩. নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে : প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এলিট গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থকে হাসিল করার উদ্দেশ্যে জনগণকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
এলিটতন্ত্রের আচরণে যেমন শাসন পরিচালনা করে থাকে, তেমনি রাজনৈতিক সলের স্বার্থে গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক লেবেল ও কাঠামোকে স্বার্থোদ্ধারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
৪. গণতান্ত্রিক পথে : গণতন্ত্রের সংগ্রামের পথে বিভিন্ন শ্রেণি হতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শক্তিশালী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলোর উপর আক্রমণ করা। প্রকৃতপক্ষে, যেখানেই কোনো দল তার নির্দিষ্ট শ্রেণি সীমা অতিক্রম করেছে সেখানেই গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে।
৫. দলীয় ব্যবস্থা ও শ্রেণিসংগঠনের ভিত্তিতে : দলীয় ব্যবস্থা ও শ্রেণি সংগঠন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গোত্রগত ধর্মীয় এমনকি সামাজিক শ্রেণি থেকে উদ্ভূত গোষ্ঠীসমূহ ধারণা দেয় যে, দলীয় ব্যবস্থাকে মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিতে বিচার বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিতে দলের বিভাজন তেমন কোনো প্রকার সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান হতে পারে না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা সংগ্রামে রাজনৈতিক দল সর্বশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতার পরে কতকগুলো দল গড়ে উঠেছিল।
এগুলো নিম্নরূপ :
১. আওয়ামী লীগ : ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ দলের প্রতি সমর্থন পোষণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থই সংরক্ষণ করেনি, বরং সমগ্র শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতেছে।
২. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল : ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল' নামে একটি নতুন দল গঠিত হয়।
প্রথম পর্যায়ে এ দলটি সামরিক ও ইসলামপন্থি লোকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। বর্তমানে এ দল দেশের সকল জনগণের জন্য প্রতিনিধি হিসেবে স্বার্থরক্ষা করে।
৩. জাতীয় পার্টি : বস্তুতপক্ষে, জাতীয় পার্টি গঠিত হয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দ ও কিছু সুবিধাবান লোকদের নিয়ে।
জাতীয় পার্টি জেনারেল এরশাদের বেসামরিককীকরণ প্রক্রিয়ার ফসল। জাতীয় পার্টি মূলত বিভিন্ন শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
৪. জামায়াতে ইসলামি : জামায়াতে ইসলামি হলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এ দলটি মুসলিম জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এ দলটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করে।
ফলে এ দলটি কোণঠাসার মধ্যে আছে। বিভিন্ন সময়ে এ দলটি জোট সরকার গঠন করে সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বলে দেয় যে, এদেশের রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
দলীয় ব্যবস্থাকে কখনই নিরপেক্ষ বলা যায় না। যে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থে নিয়োজিত থাকে সে সমাজে শ্রেণিদ্বন্দ্ব থাকতে বাধ্য। শ্রেণিদ্বন্দ্বের কারণে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি স্বার্থ সংরক্ষক হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।