মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও |
মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও
- অথবা, মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক চিত্র তুলে ধর।
- অথবা, মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : একটি রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নির্ভর করে সেদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর।
আর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এমনই একটি দিক, যা থেকে একটি দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতির ধারাকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায় সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায়, মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল।
বাংলা তখন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে একতা ছিল না। অধিকস্তু তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত ।
• মুসলিম আক্রমণের প্রাকালে বাংলার সার্বিক অবস্থা : মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. সামাজিক অবস্থা : অষ্টম শতকের প্ররিল্পে বাংলার সমাজ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। তবে কোনো শ্রেণিই একান্তভাবে তাদের উপর আরোপিত কার্য নিয়ে ব্যাপৃত থাকত না।
তাই ব্রাহ্মণরাও যুদ্ধবিগ্রহে অংশ গ্রহণ করত এবং ক্ষত্রিয়রা ব্যবসায় লিপ্ত হতো। বৈশ্য ও শূদ্রদের মধ্যে অনেকে শাসনকার্যেও নিয়োজিত হয়েছিল।
জনসাধারণের স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ হতো। সমাজে বহু বিবাহের প্রচলন ছিল কিন্তু কোনো নারীকে একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেয়া হতো না।
২. রাজনৈতিক অবস্থা : মুসলমানদের বাংলা আক্রমণের প্রাক্কালে উত্তর ভারতে কোনো ঐক্যবদ্ধ রাজ্য ছিল না। গোটা উত্তর ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃপতিদের মাঝে মতেরও কোনো মিল ছিল না।
সমকালীন উত্তর ভারতের রাজ্যের বিভক্তি সম্পর্কে মেগাস্থিনিস বলেছেন, “খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বাংলায় কমপক্ষে ১১৮টি রাজ্য ছিল" এখানে গোত্রীয় বিরোধ, একনায়কতন্ত্র, জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব, মুসলিম বিজেতাদের আক্রমণ প্রভৃতি দিক দিয়ে | তখনকার রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়।
৩. অর্থনৈতিক অবস্থা : মুসলিম বিজয়ের পূর্বে এদেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। তাই লোকদের অর্থনৈতিক অবস্থাও সচ্ছল ছিল। জনসাধারণ ধনী ও অভাবমুক্ত ছিল। কৃষিকার্যই ছিল জনগণের প্রধান পেশা।
দেশের শিল্প-বাণিজ্য যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছিল। বঙ্গদেশ ও গুজরাট কার্পাস বস্ত্র তৈরি ও রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু কৃষককে তাদের রুজি-রোজগারের নিমিত্তে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। অপরদিকে, উচ্চশ্রেণির লোকেরা বিলাসিতা ও আড়ম্বরের মধ্যে দিন কাটাত।
৪. ধর্মীয় অবস্থা : মুসলিম বিজয়ের পূর্বে বাংলার ধর্মীয় অবস্থা ছিল কিছুটা ভিন্নধর্মী। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী সাম্যবাদীরা আত্মার অস্তিত্ব, মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, প্রকৃতি পূজা ইত্যাদি বিশ্বাস করত।
গুপ্ত শাসনামলে বাংলায় হিন্দুধর্মীয় সংস্কৃতির কিছুটা বিকাশ ঘটে। পাল রাজারা অহিংস ধর্মনীতি প্রচলন করেন। ফলে সেন আমলে হিন্দু ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায় ।
৫. সাংস্কৃতিক অবস্থা : আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলায় নিজস্ব সাংস্কৃতিক ভাবধারা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কালের গর্ভে তা বিলীন হয়ে যায়। মৌর্য শাসনামলের যে কীর্তি ছিল তা গুপ্ত শাসনামলে বিলীন হয়ে যায়।
পাল রাজাদের শাসনামলে বাংলায় নব সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হয়। এ আমলে শিক্ষা সংস্কৃতির যথেষ্ট প্রসার ঘটে এবং একাধিক বৌদ্ধ বিহার গড়ে ওঠে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম আক্রমণের | প্রাক্কালে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থা তুলনামূলক উন্নত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল।
এ সময় অনৈক্য বিদ্যমান ছিল। এরূপ অবস্থায় বাইরের শক্তির দ্বারা বাংলা আক্রমণ হওয়া অতিরঞ্জিত বিষয় ছিল না।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সার্বিক অবস্থার বিবরণ দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।