মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর |
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর
- অথবা, ইবনে বতুতার পরিচয় দাও। তার কার্যাবলির কিছু অংশ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত পর্যটক এর মাঝে অন্যতম ছিলেন ইবনে বতুতা। মেধাবী, তরুণ, উদ্যমী ও সাহসী পর্যটক ছিলেন ইবনে বতুতা। দেশ ভ্রমণের প্রবল আগ্রহ বাসনা তার মাঝে পরিলক্ষিত হয়।
রাসুল (সা.)-এর অমীয় বাণী, জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে গমন কর। এই মর্মবাণী উপলব্ধি করে তিনি নিজেকে একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হন। একুশ বছর বয়সে তিনি গৃহের মায়া ত্যাগ করেছিলেন ।
→ ইবনে বতুতার কার্যবলি : নিম্নে ইবনে বতুতার কার্যবলি তুলে ধরা হলো :
পরিচিতি : ইবনে বতুতা ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক। তিনি ১৩০৪ সালে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোর তাঞ্জিনিয়া শহরে জন্ম গ্রহণ করেন, তার আসল নাম ছিল মুহাম্মদ আবু আবদুল্লাহ। ডাক নাম ইবনে বতুতা । ইবনে বতুতা নামেই পৃথিবীতে তিনি সমধিক পরিচিত।
দেশ ভ্রমণের স্পৃহা : ইবনে বতুতার প্রবল আগ্রহ ছিল বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করা। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী এবং রাসূলের অমীয় বাণীর ওপর তিনি যথাযথ আমল করেন । পবিত্র মক্কায় হজ পালনের মধ্য দিয়ে তিনি দেশ ভ্রমণের সূচনা করেন।
ভারতবর্ষে আগমন : ইবনে বতুতা অনেক নদী, সাগর, জনপদ, বন, জঙ্গল, শহর ও নগর অতিক্রম করে ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দ ভারতবর্ষে আগমন করেন। ১৩৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতবর্ষে অবস্থান করেন।
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন : ইবনে বতুতার আগমনের সময় সুলতানি আমলের শাসক ছিলেন মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক। মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের শাসনব্যবস্থার বিচারকের পদ অলংকৃত করেন। দীর্ঘ ৮ বছর তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
কিতাবুল রেহলা গ্রন্থ রচনা। ভারতবর্ষে দীর্ঘ ৮ বছর শাসনব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়েছিলেন।
এখান থেকেই তিনি দিল্লির শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে, ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে প্রচুর আনার্জন করেন। এই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ইতিহাসের বিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল রেহালা রচনা করেন। কিতাবুল রেহালা গ্রন্থ যা ইতিহাসের উৎস, হিসেবে অনেক উপকারিতা প্রদান করে।
মালদ্বীপে গমন : দিল্লির রাজকীয় সম্মান তাকে বেশি দিন বেঁধে রাখতে পারেনি। তাকে সর্বদাই অচেনা পথের আহ্বান | চঞ্চল করে রাখতে পারেনি। তিনি নতুন দিগন্তের সন্ধানে বের হলেন।
১৩৪৫ সালে নানা প্রতিকূল ও দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত দীনহীনভাবে ভিক্ষুকের বেশে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে উপনীত হয়েছিলেন। ১৩৪৬ সালে কালিকট হয়ে শ্রীলংকা ভ্রমণ করে পুনরায় মালদ্বীপে ফিরে যান।
বাংলা অঞ্চলে আগমন : দিল্লির সালতানাতে দীর্ঘকাল শাসনকার্যে সহযোগিতা করে মালদ্বীপ হয়ে ১৩৪৬ সালে ৪৩ দিনে পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামে পৌঁছেন। ড. এস মণ্ডলের মতে সাতগাঁয়ের পথে ইবনে বতুতা বাংলা অঞ্চলে প্রবেশ করেছিলেন।
কিন্তু তা সঠিক নয়। কেননা সাঁতগাও অঞ্চল ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলির অন্তর্গত সমুদ্র বন্দর।শাহজালালের সাথে সাক্ষাৎ ভ্রমণ পিপাসু ইবনে বতুতার মন সর্বদা নতুন কিছু দেখার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত।
তারই ধারাবাহিকতায় তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সিলেটের পথে রওনা হন। সেখানে তিনি বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রহ.) এর সান্নিধ্য লাভ করেন। সাধক ওলী শাহজালাল (রহ.)- এর তখন বয়স ছিল ১৫০ বছর।
বঙ্গের প্রাকৃতিক দৃশ্য : বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য ইবনে বতুতাকে এত মুগ্ধ করেছিল তা বলা বাহুল্য। তার ভ্রমণকালে গ্রাম-বাংলার মনোরম শোভা এবং সবুজ শ্যামলরূপ ও মাধুর্য হৃদয় মন দিয়ে উপভোগ করেছিলেন।
প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি ছাড়াও তাকে বিমোহিত করেছিল মেঘনার দুই পাশে বসা গ্রামের এ ঐতিহ্যবাহী হাট, নদী, অঞ্চল ও ছোট ছোট নৌকা।
• অর্থনৈতিক অবস্থা : ইবনে বতুতা তার বিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল রেহালাতে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলেন এভাবে যে তিনি বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন কিন্তু আর কোথাও বঙ্গের মত এত প্রাচুর্যশীল দেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বল্প মূল্যতা দেখেননি ।
স্বল্পমূল্যতা : মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের শাসনামলে বঙ্গ অঞ্চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অনেক স্বল্পমূল্যতা ছিল। ইবনে বক্তৃতাকে বঙ্গদেশে অবস্থানকারী মুহাম্মদ আলী মাসুদি বলেছিলেন যে, স্ত্রী ঢাকর নিজের জন্য বছরের খাদ্য সামগ্রী জনা করতে মাত্র ৭ টাকা ব্যয় হতো।
ইবনে বতুতা নিজে ১ স্বর্ণ দিনার দিয়ে এক সুন্দরী রমণীকে ক্রয় করে ছিলেন।দোযখ পুর-ই-নিয়ামত নিয়ামত : ইবনে বতুতা বঙ্গদেশকে, ধন সম্পদে পরিপূর্ণ নরক বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলার শস্য সম্পদের প্রাচুর্য, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্ত্বেও পর্যটক ইবনে বতুতা একে দোযখ পুর-ই-নিয়ামত বলে অভিহিত করেছেন। কারণ হলো পাশ্চাত্যের পর্যটকগণ বঙ্গের গ্রীষ্মকালীন উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া সহ্য করতে পারত না।
বিশ্ব পরিচিতি : ইবনে বতুতার ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বঙ্গদেশের ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তিনি বিশ্বের দরবারে বাংলার প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যাবলি উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। বঙ্গদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সমাজব্যবস্থা, প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি মূলত বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি, ইবনে বতুতা মুহাম্মদ- বিন-তুঘলকের রাজ্য পরিচালনায় বিচারক হিসেবে সহযোগিতা প্রদান করে তিনি বিজ্ঞ, জ্ঞানী, গুণীর পরিচয় দিয়েছেন।
বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির মনোরম স্মৃতিগাঁথা তিনি হাজারো ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন। তার সাথে তিনি বঙ্গদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ বিশদ তুলে ধরেছেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে কোন পর্যটকের আগমন হয়েছিল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।