মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর |
মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, মুহাম্মদ ঘুরী কর্তৃক উত্তর ভারত বিজয় বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : অষ্টম শতকে মুহাম্মদ বিন কাশিম সর্বপ্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে ভারত অভিযান করলেও তার মৃত্যুর কারণে ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে গজনির সুলতান মাহমুদ সতেরো বার ভারতে অভিযান চালিয়ে সফলতা অর্জন করেন। কিন্তু কোনো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা তার উদ্দেশ্য ছিল না।
পরবর্তীতে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে অভিযান চালিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। মুহাম্মদ ঘুরী সুলতান মাহমুদের মতো প্রতিবার যুদ্ধে সফলতা অর্জন না করলেও তার অভিযানের একটি বিশেষ স্থায়ী ফলাফল ছিল।
ঐতিহাসিক মো. মোহর আলী বলেছেন- “Therepeated attacks of sultan Mahmud had shaken the very foundation of this aristocracy and final collapse caused by the Ghuri attacks."
→ মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানসমূহ : মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. মুলতান অধিকার : ১১৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী ভারত অভিযানের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম সসৈন্যে অগ্রসর হন।
এ সময় মুলতানের ইসমাইলীয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমগণ ইসলাম ধর্মমতের বিরুদ্ধবাদী ছিল এবং তাদের সেখানে খুব প্রাধান্য ছিল। মুহাম্মদ ঘুরী প্রথমেই এই ইসমাইলীয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মুলতান অধিকার করেন।
২. উচ্ বিজয় : মুলতান অধিকারের পর ১১৭৫-৭৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সিন্ধুর উচু দুর্গের দিকে অগ্রসর হন। উঁচু দুর্গ মুহাম্মদ ঘুরী মুসলমানদের অধীনে নিয়ে আসেন।
৩. গুজরাট অভিযান : উচ্ বিজয়ের দুই বৎসর পর ১১৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী গুজরাটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তিনি গুজরাটের বাঘেলা বংশের রাজা ভীমের রাজধানী আনাইলওয়া দখল করতে ব্যর্থ হন।
ড.এ.বি. এম. হাবিবুল্লাহর মতে, উক্ত যুদ্ধে তিনি কোনোভাবে প্রাণ রক্ষা করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর ঘুরী যুদ্ধনীতি পরিবর্তন করে খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভারত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।
৪. পাঞ্জাব বিজয় : মুহাম্মদ খুরী গুজরাট অভিযানে ব্যর্থ হয়ে নিরুৎসাহী হননি। শক্তি সবলা করে ১৯৭৯ সালে তিনি পেশোয়ার আক্রমণ করে গজনি বংশের শেষ সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করে পেশোয়ার জয় করেন।
গজনি রাজ্যের শেষ অংশ লাহোর .অধিকার করে স্বীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। পাঞ্জাব অধিকার করে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ প্রশস্ত করেন।
আর. সি. মজুমদার, রায় চৌধুরী এবং দত্ত বলেন, "Its (Punjab) occupation by Muhammad of Ghuri opend the way for his further conquest of india which however made invevitable a conflict with the Rujputs particularly with his neighbour prithviraj the powerful Ghauhan King of anmer and Delhi. "
৫. তরাইনের প্রথমযুদ্ধ : ১১৯০-৯১ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে মুহাম্মদ ঘুরী পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী ভাতিতা অঞ্চল অধিকার করলে পৃথ্বীরাজ এ আক্রমণ প্রতিহত করে যুদ্ধে লিপ্ত হন।
ঐতিহাসিক ফিরিসভার মতে, পৃথ্বীরাজ দুই লক্ষ অশ্বারোহী সৈন্য এবং ৩০ হাজার হাতি ও অন্যান্য পদাতিক সৈন্য নিয়ে ঘুরীর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসেন। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে থানেশ্বরের নিকট তরাইন নামক স্থানে ঘুরী পৃথ্বীরাজের সাথে যুদ্ধে পরাজয়বরণ করেন।
৬. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : মুহাম্মদ ঘুরী তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজয়ে মোটেও বিচলিত হননি। তিনি পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করার জন্য বাস হয়ে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন।
১১৯২ খ্রিষ্টাব্দের এ যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীর বিশাল বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক লক্ষ বিশ হাজার। অশ্বারোহীর সংখ্যা ছিল বার হাজার। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে পৃথ্বীরাজের সাথে ঘুরীর তরাইনের প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মুহাম্মদ ঘুরী রাজপুতদের এই মিলিত বাহিনীকে তীব্র আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর হানসী, সামান, গুহরাম প্রভৃতি দুর্গ মুহাম্মদ ঘুরীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অধিকৃত ভারতের অঞ্চল মুহাম্মদ ঘুরী তার দাস ও বিশ্বস্ত অনুচর কুকুরউদ্দিনের হাতে অর্পণ করে গজনিতে ফিরে যান।
৭. পেশোয়ার ও আনহিলওয়ার জয় : ১১৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবউদ্দিন গোয়ালিয়ার জয় করেন। ১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটের রাজধানী আনহিলওয়ারও অধিকার করেন।
৮. কনৌজের জয়চাদের বিরুদ্ধে অভিযান : ১১৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে এসে জয়চাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এ যুদ্ধে কুতুবউদ্দিন আইবেক ঘুরীকে সাহায্য করেন। চান্দাওয়ারের যুদ্ধে জয়চাদ পরাজিত হয়।
৯. কালিঞ্জর জয় : ১২০২ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেক চান্দেল রাজবংশের রাজধানী কালিঞ্জর আক্রমণ করেন। এই সময় কুতুবউদ্দিন আইবেক উত্তর ভারত ও তার প্রভু মুহাম্মদ ঘুরীর অধীনে আনলেন।
তখন তার এক সেনাধ্যক্ষ ও অনুচর ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি পূর্ব ভারতে আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক বখতিয়ার খলজিকে বাংলা ও বিহার জয় করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
বখতিয়ার খলজির আক্রমণের ভয়ে বঙ্গরাজ লক্ষ্মণ সেন রাজধানী নদীয়া ত্যাগ করে পূর্ব বঙ্গে পলায়ন করেন। ইতোমধ্যে বখতিয়ারের সৈন্যবাহিনী নদীয়ায় উপস্থিত হয়ে সমগ্র নদীয়া অধিকার করে নেন।
তারপর বাংলার রাজধানী লক্ষণাতী বা গৌড়ে স্থানান্তর করা হয়। উত্তর ভারতের দুটি রাজপুত বংশ হলো কালিঞ্জর ও মহোবর চান্দেলা এবং চেদীর কচুরী। দশম শতাব্দীতে বুন্দেলখণ্ডসহ গঙ্গা, যমুনা ও দোয়াবের উত্তরাংশে তুর্কি মুসলিমরা তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে ।
১০. খোক্কারদের সাথে যুদ্ধ ও ঘুরীর মৃত্যু : ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্জাবে খোক্কার জাতি মুহাম্মদ ঘুরীর অনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনতা দাবি করলে শেষবারের মতো মুহাম্মদ ঘুরী সৈন্যসহ ভারতবর্ষে আসেন এবং খোক্কার জাতির বিদ্রোহ দমন করেন । এর পর গজনিতে প্রত্যাবর্তনের পথে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে আতায়ীর হাতে নিহত হন ।.
উপসংহার : পরিশেষ বলা যায় যে, মুহাম্মদ ঘুরী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারতে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। অধিকাংশ যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করলেও প্রাথমিকভাবে বেশকিছু যুদ্ধে পরাজয়বরণ করেছিলেন।
ড. এ. বি. এম. হাবিবুল্লাহ | বলেন, "There could be no two opinions as to the place Muiz-ud-din should occupy in history, Unlike Mahmud Ghori he was a practical statsman of the rotten political structure of india he look the fullest advantage."
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত জয় সম্পর্কে আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।