মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও যুক্তরাজ্যের লর্ডসভার কার্যাবলির তুলনামূলক আলোচনা কর।
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার তুলনামূলক আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের মতো মার্কিন কংগ্রেস দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের কক্ষ দু'টির নাম হলো লর্ডসভা এবং কমন্সলভা।
লর্ডসভা উচ্চকক্ষ এবং কমন্সসভা হলো নিম্নকক্ষ বা জনপ্রতিনিধি কক্ষ। অনুরূপভাবে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষকে যথাক্রমে সিনেট এবং জনপ্রতিনিধি সভা বলে অভিহিত করা হয়।
সুতরাং বলা যায়, উভয় দেশেই আইনসভার উচ্চকক্ষ রয়েছে। কিন্তু লর্ড সভার সঙ্গে সিনেটের তুলনামূলক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক বৈপরীত্য সর্বক্ষেত্রেই চোখে পড়ে।
১. গঠনগত পার্থক্য : মার্কিন সিনেটের সঙ্গে লর্ড সভার গঠনগত ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। সিনেট হলো একটি ক্ষুদ্রায়তনবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে ২ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে সর্বমোট ১০০ জন সদস্য সিনেটে রয়েছে। কিন্তু লর্ড সভার আয়তন সিনেটের আয়তনের এগারো গুণ বেশি। বর্তমানে ১,১০০ জন সদস্য নিয়ে লর্ড সভা গঠিত হয়।
২. কার্যকাল : সিনেট সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হলো ৬৬ বছর। প্রতি ২ বছর অন্তর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ঐসব শূন্য আসন পূরণ করতে হয়।
কিন্তু লর্ডসভার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ সদস্য উত্তরাধিকারসূত্রে এবং অবশিষ্টাংশ রাজা বা রানির দ্বারা মনোনীত হয়ে সদস্যপদ লাভ করেন বলে তাঁরা আজীবন সদস্য থাকেন।
৩. কার্য-পরিচালনা : সিনেটের কার্য পরিচালনার দায়িত্ব | উপরাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত রয়েছে। তিনি পদাধিকারবলে সিনেটের সভাপতি হন। কোনো প্রস্তাব বা বিলের সপক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট প্রদত্ত হলে তিনি অচলাবস্থা দূর করার জন্য একটি “নির্ণায়ক ভোট' প্রদান করতে পারেন।
তবে সাধারণভাবে ভার আলোচনা কিংবা ভোটে তিনি অংশগ্রহণ করেন না। কিন্তু সভায় সভাপতিত্ব করেন লর্ড চ্যান্সলার। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজা বা রানি কর্তৃক তিনি নিযুক্ত হন।
৪. সভাপতির ভূমিকা : সিনেটের সভাপতি এবং অর্থাৎ উপরাষ্ট্রপতির হাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যথা- নৌ-বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষানবিশকে নিয়োগ করা, ৪ জান সিনেট সদস্যকে বোর্ড অব ডিজিপার্সে মনোনীতি করা, সামরিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য ২ জন প্রার্থীর নাম অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা, জাতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থার সভাপদ গ্রহণ করা, বিশেষ ধরনের কমিশনের সদস্য মনোনয়ন করা ইত্যাদি।
সর্বোপরি, রাষ্ট্রপতি নিজ কার্যসম্পাদনে অক্ষম হলে রাষ্ট্রপতির কার্যাবলি সম্পাদন করা তাঁর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু লর্ড চ্যান্সেলারের ক্ষমতা নেই।
এমনকি সভার নিয়ম-শৃঙ্খলা বিভাগের জন্য তিনি কোনো সদস্যকে শান্তিও দিতে পারেন না। একাধিক মনসা বক্তৃতা দিতে চাইলে কমপসভার স্পীকারের মতো তিনি তাঁদের যেকোনো একজনকে বক্তৃতা দেওয়ার অনুমতিও দিতে সক্ষম ।
৫. আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সিনেটের সঙ্গ লর্ড সভার ক্ষমতাগত পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে তত্ত্বগতভাবে সিনেট ও লর্ড সভা সম-ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও বাস্তবে লর্ড সভায় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো উত্থাপিত হয়। কিন্তু সিনেট জনপ্রতিনিধি কক্ষের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা করতে পারে।
৬. অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা : অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে সিনেটের সঙ্গে লর্ড সভার মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থ বিল ও বাজেট প্রথমে কেবলমাত্র জনপ্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত হলেও কেবল শিরোনাম ছাড়া সিনেট তার যেকোনো অংশের পরিবর্তন সাধন করতে পারে।
অনুরূপভাবে যুক্তরাজ্যে অর্থবিল ও বাজেট কেবলমাত্র কমপলভার উত্থাপিত হলেও লর্ড সভা তার কোনো অংশেরই পরিবর্তন সাধন করতে পারে না।
৭. নিয়োগসংক্রান্ত ক্ষমতা : নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে সিনেট যে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী, লর্ড সভা সেই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের অনুমতিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি জাতীয় এবং রাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রীয় উচ্চপদে নিয়োগ করতে পারেন।
সিনেট অনুমতি না নিলে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ বৈধ হতে পারে না। এইভাবে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিপদে রাষ্ট্রপতি নিক্সন কর্তৃক হেমসওয়ার্থ ও কার্সওয়েলের নিয়োগ সিনেট বাতিল করে দিয়েছিল।
অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল রাষ্ট্রপতি বুশের সময় টেলরের নিয়োগকে (১৯৮৯) কেন্দ্র করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের লর্ডসভার এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নেই।
৮. সন্ধি ও চুক্তি : মার্কিন রাষ্ট্রপতি যেসব আন্তর্জাতিক সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি সম্পাদন করেন, সেগুলো সিনেটের অনুমোদন- সাপেক্ষ। সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অনুমোদন করলেই কেবলমাত্র সেগুলো কার্যকর করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি উইলসন ভার্সাই সন্ধি ও জাতিসঙ্ঘের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করলেও সনেট তা অনুমোদন না করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। যুক্তরাজ্যের লর্ড সভার হাতে এইসব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নেই।
৯. বিচারসংক্রান্ত ক্ষমতা : জনপ্রতিনিধি সভা ও লর্ডসভা আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষ হলেও তাদের হাতে বিচার সংক্রান্ত কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে। এক্ষেত্রেও তাদের মধ্যে পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
সিনেট রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা “ইমপিচমেন্টে'র রিচার করার অধিকার ও জনপ্রতিনিধি সভা অভিযোগ আনলে তা বিচার-বিবেচনা করার পর সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাব গ্রহণ করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় । কিন্তু লর্ড সভার এরূপ বিচারসংক্রান্ত ক্ষমতা নেই।
১০. অন্যান্য ক্ষমতা : সিনেট যেকোনো পদস্থ সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করার জন্য কমিটি নিয়োগ করতে পারে। তাছাড়া উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সিনেট সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে উপরাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচন করতে পারে।
কিন্তু লর্ড সভার হাতে এইসব ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। তবে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সিনেট এবং লর্ড সভা তত্ত্বগতভাবে সব ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এক্ষেত্রে শেষ বিচার | লর্ড সভা অপেক্ষা সিনেটের শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন সিনেট এবং ব্রিটিশ লর্ড সভার মধ্যে উপরিউক্ত তুলনামূলক আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, লর্ড সভা অপেক্ষা সিনেট অনেক বেশি।
ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অধিকারী। বর্তমান শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব-রাজনীতির | কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় এবং নব্বই-এর দশকের প্রথমদিকে ইউনিয়নের পতন ঘটায় একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় মার্কিন পুঁজিপতিদের দুর্গ সিনেটের গুরুত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে আমলাতন্ত্রের প্রতিভূদের নিয়ে গঠিত রক্ষণশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার দুর্গ হওয়ায় লর্ড সভার ক্ষমতা ও মর্যাদা ক্রমহ্রাসমান ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।