মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম | মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া
মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া বা মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম - পৃথিবী সৃষ্টির পর যত মানুষের জন্ম হয়েছে তাদের সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টির সেরা জীব অথবা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষকে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু মৃত্যু থেকে কোন মানুষ আজ পর্যন্ত পলায়ন করতে পারেনি এবং ভবিষ্যতে পারবেও না। মৃত্যুর কথা শুনলেই মনে হয় গা শিউরে ওঠে অন্তরে প্রচন্ড ভয় কাজ করে।
মৃত্যুর পর আমাদের সেই প্রথম ঠিকানা সাড়ে তিন হাত মাটির গভীরে।মৃত্যুর পর আমাদের সকলের প্রথম ঠিকানা কবর।পৃথিবীর যেকোনো ব্যক্তি মারা যাওয়া এবং নিজের মা-বাবা মারা যাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া |
অন্য যে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ শুনলে আমরা যতটা না কষ্ট পেয়ে থাকি তার চেয়ে অধিক বেশি কষ্ট এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি পিতা মাতার মৃত্যুতে। মা বাবার কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে তারা কবর থেকে অনেক বেশি খুশি হয়ে থাকে।
মৃত মা-বাবার কবরের সামনে কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে যখন দোয়া করা হয় এর চেয়ে খুশির সংবাদ তাদের জন্য কিছুই হতে পারে না। এর মাধ্যমে তারা কবর থেকে নেকি লাভ করতে থাকে।
হাদিসের প্রেক্ষিতে মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম | মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া
কবর মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার মুখী থেকে আখিরাতমুখী হতে পারে।কবর জিয়ারত আমাদের মৃত্যু পরবর্তী আখেরাতের জীবনের কথা স্মরণ করতে সাহায্য করে।
কবরের কথা স্মরণ করলে মানুষ গুনাহ মুক্ত হতে পারে এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা করতে পারে। কবর জিয়ারত করার নিয়ম সম্পর্কে জানা থাকলে সন্তানরা তাদের ভবিষ্যৎ আখিরাত জীবনের সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং আল্লাহ ভীরু হতে পারে।
ইসলামে প্রথম দিকে কবর জিয়ারত করার নিয়ম নীতি না থাকলেও পরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর জিয়ারত করার অনুমতি প্রদান করেছেন।সুনানে ইবনে মাজাহতে উল্লিখিত এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
“তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত করবে, কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দুনিয়ার প্রতি বিমুখতা এনে দেয় এবং আখেরাতমুখী হতে সহায়তা করে।”
মা বাবার কবর জিয়ারত করার সময় বিশেষ কিছু দোয়া পাঠ করতে হয়-
মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম গুলো হলো-
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কবর জিয়ারতে করার সময় নিমোক্ত দোয়াটি পাঠ করলেন,
السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা।
অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া বা ma বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম পালন করার সময় নিমোক্ত দোয়াটিও পাঠ করতে হয়-
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’
অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)
মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া | মা বাবার কবর জিয়ারত করার niyom পালন করার সময় কবরস্থানে সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পাঠ করতে হবে। এরপর কবরবাসীর কবরে যেন সোওয়াব পৌঁছায় এই নিয়তে বিভিন্ন সুরা এবং দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।মৃত ব্যক্তির বা কবরবাসীদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে হবে।
মা-বাবার কবর জিয়ারত করার ফজিলত
মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া বা মা বাবার কবর jiyarot করার নিয়ম জানার পাশাপাশি এর ফজিলত জানা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিসে মা বাবার কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তাই দুরুদ শরীফ, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস,আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পাঠ করা যাবে।
কবর জিয়ারত করার নিয়ম এমন একটি নিয়ম যা আমাদের জীবনের সব নিয়ম থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে আমাদের মনে সব সময় মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে এবং আমরা আখিরাতের প্রতি উৎসাহিত হব।
মা-বাবার কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব গুনাহের কথা স্মরণ হয় এবং নেক আমল করার প্রতি উৎসাহ আগ্রহ সৃষ্টি হয়।কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত আদায় হয়ে যায়।
মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম এর মধ্যে আরো একটি বিশেষ নিয়ম হলো-
কবরের সামনে মুখোমুখি হয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনের দিক রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা যেতে পারে। আবার কেউ চাইলে দুহাত না তুলেও মনে মনে কবরবাসীর মাগফেরাত ও কল্যানের জন্য দোয়া করা যেতে পারে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০, কিতাবুল কারাহিয়্যা)
মা বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া বা মা বাবার কবর জিয়ারত korar নিয়ম পালন করার সময় পবিএতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র অবলম্বন করে কবর জিয়ারতে অংশগ্রহন করা উচিত।ইসলামে যেকোন ইবাদত পালন করার সময় পবিত্রতা অবলম্বন করা কথা বলা হয়েছে।
সেখানে মৃত মা বাবার কবর জিয়ারত করার সময় পবিত্রতা অবলম্বন করা বিশেষ একটি বিষয় যা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে।
জুমার দিন মা বাবার কবর জিয়ারত করা
কবর জিয়ারত করার নিয়ম পালন করার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে ।হাদিস শরীফ এসেছে- যে ব্যক্তি জুম্মার দিন পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত: ৬১১৪)।
কবর জিয়ারত করার সময় শিরকীয় কাজ হতে বিরত থাকা
মা বাবার কবর জিয়ারত করার সময় সকল প্রকার শিরকীয় কাজ এবং কুসংস্কারমূলক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কবর জিয়ারত করার সময় কুসংস্কারমূলক কোন কাজ করলে মুমিন ঈমান হারা হয়ে যেতে পারে।যেমন- কবরবাসীর পক্ষ হতে কোনো কিছু ইচ্ছা পোষণ করা, কামনা করা বা মনের আশা পূরণের চেষ্টা করা, কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম করা বা সিজদা করা, কবরে মানত করা বা দান-খয়রাত করা ইত্যাদি।
কবরবাসীর নেকি লাভের উদ্দেশ্যে কবরের তাওয়াফ করা যাবে না।যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন, (وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ) অর্থাৎ, তারা যেন প্রাচীন গৃহের তওয়াফ করে। (অর্থাৎ কেবল কা’বারই তাওয়াফ বিধেয়।)কবরস্থানের উপর ফুল প্রদান না করা যা খ্রিস্টান বিধর্মীদের সংস্কৃতি।
কবরের উপর বসে থাকা তার উপর চলাচল করা অবৈধ। কারণ রাসূল বলেন, “তোমরা কবরের দিকে মুখ করে) নামায পড়ো না এবং তার উপর। বসো না।” (মুসলিম)
মা বাবার কবর জিয়ারত করার সময় কিছু কাজ একদমই করা উচিত নয় সেগুলো হলো-
আপনজনদের কবর জিয়ারত করার সময় দুঃখ কষ্টে কান্না আসাটা স্বাভাবিক, কিন্তু কবর জিয়ারত করার সময় কান্না করা, হা- হতাশ হওয়া যাবে না। এটি ইসলামের নিন্দনীয় কাজ।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৩২৩৬)
নারীদের পর্দা করার বিষয়ে ইসলামে কঠোর নির্দেশ রয়েছে। নারীদের পর্দা যেন ভঙ্গ না হয় তাই নারীদের কবর জিয়ারত না করাটাই উত্তম বলে বিবেচনা করা হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এবং প্রতিটি মুসলিম উম্মতকে কোরআন হাদিসের সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পিতা মাতার কবর জিয়ারত করার তৌফিক দান করুক।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ
আশা করি বন্ধুরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে এখনি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন আর এই রকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।