খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ |
খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ
- অথবা, খলজি বংশের উত্থানের ইতিহাস বিবৃত কর।
- অথবা, খলজি বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে কি জান?
- অথবা, খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ঘটনা লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : পঙ্গু সুলতান কায়কোবাদের হত্যা ও তার শিশুপুত্র শামসুউদ্দিন কায়ুসের প্রাণনাশ এবং তুর্কি মালিক ও আমিরদের দুর্বলতার সুযোগে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি ১২৯০ সালে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তার সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে খলজি বংশের উৎপত্তি ঘটে। আর তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ইতিহাসে খলজি বংশ নামে পরিচিত।
→ খলজি বংশের পরিচয় : খলজি বংশের পরিচয় সম্পর্কে মুসলিম ঐতিহাসিক ও আধুনিক ইতিহাসবিদের মধ্যে মত বিরোধ রয়েছে। ইতিহাসবিদ নিজামউদ্দিন ও ফিরিস্তার মতে, খলজি বংশের তুর্কি জাতি হতে উদ্ভব।
ইতিহাসবিদ জিয়াউদ্দিন বারানির মতে, তারা ছিল তুর্কি জাতি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতির লোক। কোনো কোনো আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, খলজি বংশের মূলত তুর্কি জাতি হতে উদ্ভব ঘটে।
কিন্তু দীর্ঘকাল আফগানিস্তানের সাথে বসবাস করার ফলে তারা আফগান জাতির বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। ভ্রমণবশত অনেকে খলজি বংশকে আফগানিস্তানের অধিবাসী বলে অভিহিত করেছেন। মূলত তারা ইলবারি তুর্কি জাতি ।
→ খলজিদের উত্থান : নিম্নে খলজিদের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কায়কোবাদের দুর্বল শাসন ব্যবস্থা : বলবনের মৃত্যুর পর বুঘরা খানের পুত্র কায়কোবাদ দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। অষ্টাদশ বর্ষীয় যুবক কায়কোবাদ ছিলেন শাসনকার্যে অনভিজ্ঞ ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ।
ফলে তার শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়লে আমিরদের মধ্যে স্বার্থ-সংঘাত শুরু হয়। এ অবস্থায় কায়কোবাদ সামান প্রদেশের শাসনকর্তা জালালউদ্দিনকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান ।
২. জালালউদ্দিনের উচ্চপদ লাভ : জালাল উদ্দিন দিল্লিতে এলে কায়কোবাদ তাকে শায়েস্তা খান উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাকে নিকটবর্তী একটি প্রদেশের জায়গীর প্রদান করে মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন। তার মন্ত্রীর পদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে খলজি বংশের উত্থানের সূচনা ঘটে।
৩. তুর্কিদের অসন্তোষ : বলবনের আমলে অপর দুই আমির কাচিন ও সুরখা বরবক ও ভাগল পদে নিযুক্ত হন। জালালউদ্দিন ছিলেন শাসনকার্যে অভিজ্ঞ। এছাড়া তিনি মোঙ্গলদের সাথে লড়াই করে ইতোমধ্যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
তার এ কৃতিত্বে কাচিন ও সুরখা ঈর্ষান্বিত হন। তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে । রাজদরবারে তার প্রভাব বিস্তার হতে থাকলে তুর্কি আমির ও উলামারা তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে।
৪. তুর্কিদের ষড়যন্ত্র : দিল্লির আমিরগণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এদিকে খলজি আমিরগণ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। খলজি আমির দল ও তুর্কি আমির দল।
তুর্কিদের নেতৃত্ব গ্রহণ করে কাচিন ও সুরখা এবং খলজিদের নেতৃত্ব গ্রহণ করে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ। কাচিন ও সুরখা জালালউদ্দিনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এ সংবাদে ভীত হয়ে জালালউদ্দিন দিল্লিতে অনুচরসহ বাহারপুরে আগমন করে।
৫. তুর্কি-খলজি সংঘর্ষ : কাচান একদল সৈন্য নিয়ে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজিকে আক্রমণ করলে নিজেই নিহত হন। জালালউদ্দিনের পুত্ররা দিল্লি আক্রমণ করে কায়মুসকে বন্দি করে বাহারপুরে নিয়ে আসেন।
তাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দিল্লির নাগরিকগণ বাহারপুর অভিমুখে যাত্রা করেন। তাদের নেতৃত্ব প্রদান করেন সুরখা। সুরখা যুদ্ধে নিহত হন।
৬. কায়কোবাদের হত্যা : তুর্কিদের পরাজয় এবং শিশু সুলতান খলজিদের হাতে হস্তগত হওয়ায় তারা রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা হয়ে উঠে।
জালালউদ্দিন তারকেশরকে রাজপ্রাসাদে প্রেরণ করেন। কায়কোবাদকে বস্ত্রাবৃত করে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করে। এভাবে ইলবারি শাসনের অবসান হয় ।
৭. খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা : ইলবারি বংশের পতন হলে জালালউদ্দিন কিলোখিরিতে এসে ১২৯০ সালে নিজেকে দিল্লির সিংহাসনের সুলতান ঘোষণা করে।
দিল্লির আমির ও নাগরিকগণ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেনি বলে তিনি কিলোঘিরিতে অভিষিক্ত হন। অতপর সেখানে এক বছর অবস্থান নেন। তার ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়ে খলজি বংশের উত্থান হয় ।
৮. খলজি বিপ্লব : জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি ইলবারি তুর্কি বংশের শেষ সুলতান কায়কোবাদকে হত্যা করে ১২৯০ সালে নিজে দিল্লির সুলতান পদে বসেন। এ ঘটনাকে ইতিহাসে খলজি বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথাকথিত দাস বংশের উপর জালালউদ্দিন খলজি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা লাভ করে।
ঠিক তেমনি নিয়তির অমোঘ বিধানে ভ্রাতুষ্পুত্র এবং জামাতা আলাউদ্দিনের চক্রান্তে শিকার হয়ে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজিকে জীবন দিতে হয়। মূলত খলজি বংশের প্রতিষ্ঠা হিসেবে তার অবদান অনস্বীকার্য। আর এ কারণে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ । যদি তোমাদের আজকের খলজি বংশের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।