ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর |
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
- অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা কর।
- অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে একটি গতিশীল বিজ্ঞান যে শাস্ত্র রাষ্ট্র এবং সরকার সম্পর্কে আলোচনা করে তাকেই সাধারণত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলা হয়ে থাকে।
ক্ষমতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। ক্ষমতার ব্যবহার ও প্রয়োগের ভিত্তিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি একটি অতি প্রাচীন বিষয়।
বস্তুত এটা খ্রিস্টের পূর্বে গ্রিক পণ্ডিতগণের রচনায়ও বিধৃত হয়েছে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ করেন। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
→ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব/ প্রয়োজনীয়তা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমেই সরকারের তিনটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। নিম্নে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. গণতন্ত্র সুরক্ষা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে গণতন্ত্র সুরক্ষিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো বিরোধ সংঘটিত হলে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে সঠিক রায় প্রদান করে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মধ্যমে গণতন্ত্র সমুন্নত থাকে। সুতরাং গণতন্ত্র সুরক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি একটি মাইলফলক স্বরূপ। অধ্যাপক সিলী'র মতে "Democracy is form of Government in which everybody has a share."
২. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভূমিকা অপরিসীম। সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় ।
তাই বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতামূলক ভূমিকার মাধ্যমে শাসন বিভাগের অন্যায় অযৌক্তিক নীতিকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হতে পারে।
৩. স্বেচ্ছাচারিতা রোধ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে ক্ষমতার বিভাজন করা হয়। সকল ক্ষমতা একজনের হাতে ন্যস্ত থাকলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই স্বৈরশাসকে পরিণত হতে পারেন। তাই ক্ষমতার বিভাজন থাকলে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অবকাশ থাকে না ।
৪. সুশাসন নিশ্চিতকরণ : সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এর মাধ্যমে সরকারের প্রত্যেকটি বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকে।
আইন পরিষদ দেশের প্রয়োজনে যে আইন প্রণয়ন করে, শাসন ও বিচার বিভাগ তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটতে সক্ষম হয়। ফলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. কর্মপরিধি নির্ধারণ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে কার্যব্যাপ্তি নির্ধারণ করা হয়। এ নীতির মাধ্যমে বিশেষ করে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে বণ্টন করা সহজ হয়।
সরকারের বিভাগ সমূহের কর্মপরিধি নির্ধারণে এ নীতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কারণ এ নীতির মূল লক্ষ্যই হল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা পৃথকীকরণ।
৬. জবাবদিহিতা নিশ্চিত : জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকে সরকারের ক্ষমতা বিভাগসমূহের হাতে পৃথক পৃথকভাবে না করা হয়।
এক্ষেত্রে এক বিভাগ তার কাজ অন্যের উপরে চাপিয়ে নিতে পারে না। ফলে সরকারের বিভাগসমূহের ব জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত হয়।
৭. কার্যসম্পাদনে স্বাধীনতা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে কার্য সম্পাদনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। বিভাগগুলো তার নিজ নিজ দায়িত্ত্বে কার্য সম্পাদন করে এর ফলে সঠিকভাবে যেকোনো কার্য সম্পাদিত হবে। কেননা তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ ক্যালে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় না )
৮. ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত হলে ব্যক্তির মতামত প্রকাশসহ অন্যান্য অধিকার ভোগের সুষম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়।
৯. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি : সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কেননা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করলে সরকারের প্রতিটি বিভাগই তার নিজ নিজ দায়িত্বে কাজ করতে সক্ষম।
কলে প্রত্যেক বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং যেকেনো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
১০. বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযোগ করার ফলে প্রত্যেক বিভাগের কর্মচারীরা তাদের স্ব-স্ব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
ফলে যে ব্যক্তির উপর যে বিভাগের কাজ ন্যস্ত থাকে সে ব্যক্তি সে কাজে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠে। সুতরাং একথা বলা যায়, বিশেষজ্ঞ সৃষ্টিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ভূমিকা পালন করে।
১১. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী সরকারের প্রত্যেকটি বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকে। বিভাগসমূহ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকলে সরকার স্থিতিশীল হয়।
প্রতিটি বিভাগ সাধ্যমত নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়। তাছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ পায় ।
১২, হস্তক্ষেপযুক্ত : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করা হলে এক বিভাগ অপর বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকবে। ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। এতে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা পাবে এবং কোনো প্রকার জটিলতা সৃষ্টি হবে না।
১৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব হয়।
কেননা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করলে বিচার বিভাগের কাজে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
ফলে বিচারকগণ সঠিকভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারে। সুতরাং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে এ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
১৪. বৈজ্ঞানিক নীতি অনুশীলন : বৈজ্ঞানিক নীতি অনুশীলনের ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা একান্ত অপরিহার্য।
কর্মের শ্রেণিকরণ নীতি হচ্ছে আধুনিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম মৌলিক নীতি। কেননা তার অনুশীলনকে যথাযথভাবে নিশ্চিতকরণার্থে ক্ষমত স্বতন্ত্রীকরণ নীতি একান্ত প্রয়োজন।।
১৫. প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি : ক্ষমতা স্বী নীতির মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা বিভিন্ন বিভাগের উপর নয়। করা হয়। প্রতিটি বিভাগ স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে কাজ করে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পায়। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। = প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
১৬. আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ক্ষমত = স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করলে আইন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
কেননা এ নীতি প্রয়োগের ফলে আইন বিভাগকে শাসন বিভাগ কিংবা বিচার বিভাগ সম্পর্কে চিন্তা করা লাগে না। ফলে আইন বিভাগ সুষ্ঠুভাবে আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়।
১৭. জরুরি অবস্থার উপযোগী : জরুরি অবস্থায় বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কারণ এখানে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
১৮. দ্রুত উন্নয়ন : কোনো দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করণে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির রাস্তা প্রয়োগ ঘটলে দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হয়। কেননা একটি বিভাগ স্বীয় অন্য বিভাগের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সরকারের কাজের পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় ক্ষমতা সরকারের স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করা আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।
এ কাজের জটিলতা থেকে সরকারকে মুক্ত করার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীক নীতি প্রয়োগ করা একান্ত অপরিহার্য।
যদিও অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচনা করেছেন, তথাপি এ নীতির গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করেননি।
সুতরাং ব্যক্তিস্বাধীনতা ও প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতকরণে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের গুরু । অনস্বীকার্য। এতে সরকারের সার্বিক কার্যাবলি সুচারুরূপে । সম্পাদনের পাশাপাশি ব্যক্তি স্বাধীনতা হয় সুনিশ্চিত।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।