জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে | জমি খারিজ করতে কি কি লাগে
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে - জমি খারিজ করতে কি কি লাগে - jomi kharij korar niyom - মানুষ কোন না কোন উপায়ে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ অর্জন করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি সম্পদ হচ্ছে জমি। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ যেমন জমি ক্রয় করে তেমনি বিক্রয় করে থাকে।
সেই জমিটি হতে পারে নিজস্ব জমি অথবা হতে পারে অন্য কারো কাছ থেকে ক্রয় করা বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। শুধু জমি ক্রয় করলে বা বিক্রয় করলেই শেষ? না, এমন একটি সম্পত্তির পরিপূর্ণ পর্যায়িতকরণ, সত্যায়িতকরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এজন্য প্রয়োজন জমি খারিজ পদ্ধতি।
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে | জমি খারিজ করতে কি কি লাগে |
রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে কোন জমির পূর্বের মালিকের নাম পরিবর্তন করে বর্তমান যিনি মালিক হবেন বা নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে জমি খারিজ বলা হয়। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের কোনো সদস্য তার ব্যক্তিগত জমি বা সম্পত্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করে দিতে চাচ্ছে।
যখন অন্য কোন ব্যক্তির নিকট জমি স্থানান্তরিত হয় তখন অবশ্যই মালিকানা স্বত্ব লাভের ব্যক্তিটিও পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
জমি খারিজ এমন একটি প্রক্রিয়া এটি ছাড়া কোন জমির নতুন মালিকানা স্বত্ব পাওয়া সম্ভব নয়। খুব সহজে যদি বিষয়টি বুঝতে চাই তাহলে- পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করাকে জমি খারিজ বলা হয়।
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে চলুন জেনে নেওয়া যাক—
১/ জাতীয় পরিচয় পত্র: জমি খারিজ করতে সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড। ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যতীত একজন ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক এটি সত্যায়িত করা সম্ভব নয়।
তাই জমি খারিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জাতীয় পরিচয় পত্রের কোন বিকল্প নেই। জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে আমরা ব্যক্তির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে সক্ষম হই এবং ব্যক্তিটি কোন স্থান থেকে বা কোন প্রয়োজনে জমি খাদরজ করতে যাচ্ছে তা আমরা জানতে সক্ষম হই।
বর্তমান আমাদের দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি ছাড়াও স্মার্ট কার্ডের প্রচলন চালু হয়েছে। ধারণা করা যায় স্মার্ট কার্ড জমি খারিজ করতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। অবশ্যই এটি খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যক্তির নামে জমিটি খারিজ হবে সেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র কিনা।
যে ব্যক্তির নামে জমি খারিজ করা হবে সেই ব্যক্তির যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না হয় অন্য কোন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র হয় তাহলে সেই ব্যক্তিটি তার প্রাপ্য সম্পত্তি পাবে না বা জমি পাবে না
২/ নির্দিষ্ট এক কপি ছবি : জমি খারিজ করার জন্য অবশ্যই ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ছবি একান্ত প্রয়োজন। পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যতীত অন্য যে কোন ধরনের ছবি ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
পাসপোর্ট সাইজের একটি নির্দিষ্ট ছবি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি ছাড়া ব্যক্তিটির বাহ্যিক গঠন অথবা চেহারা সনাক্ত করা সম্ভব নয় বা মেশিনে স্ক্যানিং করা সম্ভব নয়।
৩/ ডকুমেন্টস অথবা দলিলপত্র: জমি খারিজ করার জন্য ডকুমেন্টস অথবা দলিলপত্র প্রয়োজন। দলিল পত্র অথবা ডকুমেন্টস ছাড়া জমি খারিজ করা সম্ভব নয়। দলিলপত্রের এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে জমির যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়।
৪/ ব্যক্তির স্বাক্ষর: স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাক্ষর ব্যতীত জমি খারিজ করা সম্ভব নয়। স্বাক্ষর শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিটির হতে হবে যে ব্যক্তিটি জমি খারিজ করতে এসেছে।
যে ব্যক্তিটি জমি খারিজ করতে এসেছে যদি সেই ব্যক্তির স্বাক্ষর না দিয়ে অন্য কোন ব্যক্তি স্বাক্ষর দিয়ে থাকে তাহলে যে ব্যক্তির তার প্রাপ্য জমির পাওয়ার কথা ছিল সে ব্যক্তিটি পাবে না বরং অন্য যে ব্যক্তি ভুলে স্বাক্ষর দিয়েছে সেই ব্যক্তি পাবে।
সুতরাং স্বাক্ষরের বিষয়ে খেয়াল রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। এই স্বাক্ষরে কিছুটা হেরফের হলেই নিজের প্রাপ্য সম্পদ অন্যের অধীনে চলে যেতে পারে যা মোটেও বোধগম্য নয়।
৫/ খতিয়ানের ফটোকপি: জায়গা জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে খতিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জায়গা জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে খতিয়ান “হিসাব” হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে খতিয়ান হচ্ছে জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ণয়ের জন্য সরকার প্রদত্ত যে দলিল প্রদান হয় তাকে খতিয়ান বলে। আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে খতিয়ান কে বিভিন্ন ধরনের নামে ডাকা হয়।
এস এ খতিয়ান
এস এ খতিয়ান এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে (State Acquisition Survey)।জমি খারিজ করার ক্ষেত্রে এস এ খতিয়ান অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৫০ সালের দিকে এস এ খতিয়ানের প্রচলন শুরু হয়,তখন সরকারি কর্মকর্তাগণ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে এস এ খতিয়ানের সকল কার্যাবলী সম্পন্ন করেন।
এস এ খতিয়ান এমন একটি খতিয়ান যেটি হাতে লিখিত হয়ে থাকে এবং এটির কোন প্রিন্ট কপি হয় না। এটি সাধারণত একটিমাত্র পৃষ্ঠায় লিখিত হয়ে থাকে একের অধিক পৃষ্ঠা ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়। এস এ খতিয়ান ৬২ খতিয়ান অথবা টেবিল খতিয়ান নামেও পরিচিত।
আর এস খতিয়ান
যদিও সিএস খতিয়ান জমি খারিজের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে সিএস খতিয়ানের আবির্ভূত হওয়ার ৫০ বছর পর আরএস খতিয়ানের আবির্ভূত হয়েছিল।
আর এস খতিয়ানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে (Revisional Survey)। আর এস খতিয়ান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান জমির ক্রয়কারী অথবা বিক্রয়কারীকে এর উপর নির্ভর হওয়াটা অত্যাবশ্যক।
আমাদের জন্মভূমি স্বাধীন হবার পূর্বে আর এস খতিয়ানের ব্যবহার অথবা প্রচলন একদমই ছিল না। আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর আর এস খতিয়ানের ব্যবহার অথবা প্রচলন শুরু হয় যার জন্য এই খতিয়ান কে বাংলাদেশ খতিয়ান হিসেবেও বিবেচিত করা হয়ে থাকে।
আর এস খতিয়ানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে একটি মাত্র পৃষ্ঠায় খতিয়ান করা হয় এবং লম্বালম্বি দাগ টানা থাকে।
৬/ বায়া দলিলের ফটোকপি: বায়া দলিল বলতে বোঝায় যার কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করা হবে সেই ব্যক্তির দলিল। বায়া দলিল পর্যন্তই যে সীমাবদ্ধ বিষয়টি একদম এরকম নয়,বায়া দলিল ছাড়াও জমির পূর্বের সকল দলিল প্রয়োজন হতে পারে। যদিও সর্বক্ষেত্রে জমি খারিজে বায়া দলিল প্রয়োজন হয় না যদি প্রয়োজন হয় তবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭/ ওয়ারিশান সনদ : ওয়ারিশান সনদপত্র এমন একটি প্রত্যয়ন পত্র যা এলাকার পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদান করা হয়।
সাধারণত পরিবারের কোন ব্যক্তি মারা গেলে সে ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের সদস্যদের যেটুকু সম্পদ পাওয়ার কথা ছিল অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা তারা তাদের প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে এক্ষেত্রে ওয়ারিশান সনদপত্র বিরাট ভূমিকা পালন করে।
ওয়ারিশান সনদপত্র এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যার মাধ্যমে পরিবারের কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার কাছ থেকে যদি কোন সদস্য জমি প্রাপ্য থাকে তাহলে ওয়ারিশান সনদপত্রের মাধ্যমে তার প্রাপ্য সম্পদ সে সহজেই পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং জমি খারিজে ওয়ারিশান সনদপত্রের বিকল্প নেই এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং অতুলনীয়।
৮/ জমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কপি: যেকোনো সম্পত্তি অর্জনের পর সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। জমি খারিজ করার জন্য কর প্রদানের রেকর্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যা যা জমি উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
জমি খারিজে অনলাইনের অবদান: জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে
জমি খারিজ প্রক্রিয়ায় অনলাইন ওয়েবসাইট এর অবদান অপরিসীম। বর্তমান যুগের ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অথবা দলিলপত্র সংগ্রহ করতে পারি। জমি খারিজের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে জমি খারিজের সকল কাগজপত্র যা রয়েছে তা সংগ্রহ করতে পারি।
জমি খারিজ প্রক্রিয়া ব্যতীত জমির মালিকানা স্বত্ব পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বা আদায় করাও সম্ভব নয় কেউ যদি জমি খারিজ প্রক্রিয়া ছাড়া জমি আদায় করতে চায় তাহলে এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ হবে।