গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর |
গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর
- অথবা, "গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্র এক অত্যন্ত জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। প্রাচীন গ্রিসে গণতন্ত্রের প্রচলন। হলেও বর্তমান বিশ্বের সর্বত্রই এখন গণতন্ত্রের জয়গান চলছে।
এ এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শুধু সরকার নিয়েই বিধিবিধান নেই, বহু জীবনব্যবস্থা সম্পর্কেরও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা : গণতন্ত্র বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থা ব সমাজব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের যোগ্যতানুযায়ী রাষ্ট্রীয়কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
গণতন্ত্রে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং জনগণ সেই ক্ষমতা প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শাসন পরিচালনার অংশগ্রহণ করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেন, “গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের কল্যাণার্থে, জনগণের দ্বারা পরিচালিত জনগণের সরকার। সুতরাং গণতন্ত্র অর্থ জনগণের শাসনক্ষমতা জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে রাষ্ট্রীয় শাসনকার্যে প্রয়োগ করে।”
→ গণতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা : গণতন্ত্রের বর্তমান গুরুত্বকে বিবেচনা করে দার্শনিকগণ বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করেছেন।
সমাজবিজ্ঞানীগণ মনে করেন, গণতন্ত্র হচ্ছে একটি সামাজিক কর্তৃত্ব, পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা মনে করেন এটি একটি সরকার পদ্ধতি, সমাজতন্ত্রীরা মনে করেন এটি একটি অর্থব্যবস্থা, ঠিক একইভাবে দার্শনিকগণ গণতন্ত্রকে শুধু একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, বরং একটি জীবনব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জীবনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র : নিম্নলিখিত গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমেই প্রমাণ করব যে, গণতন্ত্র শুধু সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে।
১. বুদ্ধিভিত্তিক বস্তুবাদ : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মানুষের মাঝে পারস্পরিক যে সম্পর্ক তা মানুষের বুদ্ধি বিচার বিবেচনার উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। গণতন্ত্রে মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়।
মুক্ত চিন্তার ফলে মানুষ তার ভালো-মন্দ সব দিকগুলো বিচার-বিবেচনা করতে পারে । সুতরাং গণতন্ত্র শুধু একটি সরকার ব্যবস্থা হিসেবে দেখলেই চলবে না এটি যে একটি জীবন ব্যবস্থাও।
২. ব্যক্তির উপর প্রাধান্য : গণতন্ত্র যেহেতু জনগণের পরিচালিত .শাসনব্যবস্থা এবং সমাজব্যবস্থা সেহেতু সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তির জ অধিকার, দায়িত্ব কর্তব্য এবং শাসনকার্যে অংশগ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় । গণতান্ত্রিক সমাজে একজন ব্যক্তির কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে। তাই গণতন্ত্র ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দেয়।
৩. সাম্য স্বাধীনতা সংরক্ষণ : গণতন্ত্রের মূলকথাই হচ্ছে সাম্য, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি অধিকার সংরক্ষণ করা। একজন নাগরিক হিসেবে মানুষ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ পায় এই গণতন্ত্রে। সুতরাং ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ পেয়ে থাকে ।
৪. আইনের শাসন : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনের চোখে সকলেই সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে আইনের অনুশাসন মেনে চলতে হয়। আইনের নিয়ম ব্যতীত কাউকে বন্দি বা আটক করা যাবে না বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।
৫. জনকল্যাণ নিশ্চিত করা : গণতন্ত্র, জনকল্যাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছে । গণতন্ত্র যেহেতু জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হয়, সেহেতু জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করাই এ শাসনব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। এভাবে গণতন্ত্র একটি জীবনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬. সর্বাধিক স্বাধীনতা প্রদান : গণতন্ত্রকে জনগণের শাসনব্যবস্থা বলা হয় । গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একটি সংবিধান থাকে যেটি লিখিত দলিল হিসেবে কাজ করে এবং সেই সংবিধানে চলাফেরা করার স্বাধীনতা, সংগঠন, কাজের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়। এভাবে গণতন্ত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে ।
৭. মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা : মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষকে বিচার বুদ্ধি ও যুক্তির সাহায্যে সঠিক জীবন পদ্ধতি বেছে নেওয়ার সুযোগ দান করে। ব্যক্তি একজন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তার দাবি-দাওয়া প্রকাশ করতে পারে।
৮. সহনশীলতা ও সহমর্মিতা : গণতন্ত্র সহনশীলতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিটি ব্যক্তি, জাতি, ধর্ম-বর্ণ ও আদর্শকে ভালোবাসবে এবং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।
এভাবে পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতার আলোকে একটি সুন্দর ও সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তাই গণতন্ত্র একটি জীবন বিধান হিসেবে বিবেচিত হয়।
৯. সাম্য প্রতিষ্ঠা : সকল মানুষের আদর্শের প্রতি গণতন্ত্র শ্রদ্ধাশীল। গণতন্ত্র সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। সকলকে সমান চোখে দেখে।
সুতরাং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাজকর্ম ও দায়িত্ব পালন করা গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ ।
১০. জাতীয় চরিত্র ও নৈতিক মানের উন্নতি : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন থাকে। অধিকার ভোগ করার পাশাপাশি জনগণ নানাবিধ কর্তব্য পালন করে।
গণতন্ত্রে জনগণ ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমষ্টির স্বার্থ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে জনগণের জাতীয় চরিত্র ও নৈতিক মানের উন্নতি ঘটে।
১১. দেশপ্রেম বৃদ্ধিতে সহায়ক : গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত ও পরিচালিত সরকার। গণতন্ত্রে জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। সরকার তাদের নিজেদের সরকার। এই অনুভূতি থেকে জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়।
১২. উন্নত জীবনের সহায়ক : গণতন্ত্র সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন গঠনের সহায়ক। গণতান্ত্রিক শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে বলে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত জীবন নিশ্চিত হয় ।
সমালোচনা : গণতন্ত্র একটি শাসন ও জীবনব্যবস্থা হলে তা ত্রুটিমুক্ত নয়। নিম্নে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রের সমালোচনা তুলে ধরা হলো :
(ক) এলিট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত : গণতন্ত্র সকলের অংশগ্রহণের সরকার হলেও প্রকৃতপক্ষে শাসন ক্ষমতা মুষ্টিমেয় এলিট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় ।
(খ) অবাস্তব ও অযৌক্তিক বিশ্বাস : মানুষের বিচার বুদ্ধি সম্পর্কে গণতন্ত্র অবাস্তব ও অযৌক্তিক বিশ্বাস স্থাপন করে ।
(গ) কল্পনার নামান্তর : গণতন্ত্র একটি জীবন ব্যবস্থা এটি একটি অলীক কল্পনা। মূলত এটি একটি সরকার ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্র আধুনিক যুগে জীবনব্যবস্থা এবং সরকার ব্যবস্থা উভয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গণতন্ত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পাশাপাশি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতাও দেয়। সুতরাং গণতন্ত্রকে একটি জীবনব্যবস্থা বললেও অত্যুক্তি হবে না।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।