গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর |
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর
- অথবা, গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্যবিস্তার নীতি ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশের চমকপ্রদ ঘটনা সৃষ্টিকারী শাসক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। যিনি জসী থেকে মসী উপাধির মধ্য নিয়ে ইতিহাস বিখ্যাত শাসক হতে পেরেছিলেন।
শুধু তাই নয় তুঘলক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতির মালিক হয়েছিলেন। গিয়াসউদ্দিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি অনেক কৃতিত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করেন। চারিত্রিক দিক থেকে তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্যবিস্তার : নিজ সাম্রাজ্যকে বিস্তৃতকরণের পাশাপাশি তার উপর পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। নিম্নে সুলতান গিয়াসউদ্দিনের রাজ্যবিস্তার এর ঘটনা তুলে ধরা হলো ।
১. বরঙ্গল বিজয় : সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এর সাম্রাজ্যের নীতির মধ্যে প্রথমে অন্তর্ভুক্ত হলো বরগল বিজয়। ১৩২১ সালে সর্বপ্রথম বঙ্গলের স্বাধীন ঘোষণাকারী রাজা দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্র দেবের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নিজ পুত্র জুনা থানকে প্রেরণ করেন।
জুনা খান ব্যর্থ হলে ১৩২৩ সালে পুনরায় দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনা করে বরঙ্গল জয় করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে গিয়াসউদ্দিনের এটি ছিল অনেক বড় পাওয়া।
২. উড়িষ্যা বিজয় : মধ্যযুগের ইতিহাসে বিশেষ একটি দিক ছিল তা হলো ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা। বঙ্গলে শাস্তি স্থাপনের পর জুনা খান পূর্ব দিকে এক অভিযান পরিচালনা করে উড়িষ্যা আক্রমণ করেন।
রাজা দ্বিতীয় তানুদেব প্রবল শক্তিমত্তা নিয়ে বাধা প্রদান করলেও তা বিফলে যায়। জুনা খান জয়ী হয়ে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করলে সুলতান তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা প্রদান করেন।
৩. মোঙ্গলদের প্রতিরোধ : ১৩২৪ সালে মোঙ্গলরা সাম্রাজ্যের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে পশ্চিমাঞ্চলে হানা দেয়। এতে সুলতান বিরাট বাহিনী পাঠিয়ে তাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করেন।
৪. গুজরাট অভিযান : দিল্লির সালতানাতে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক গুজরাট অভিযান পরিচালনা করে তিনি ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। গুজরাটের প্রবল বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
৫. বঙ্গ অঞ্চল জায় : সুলতান গিয়াসউদ্দিনের শাসনামলে বঙ্গ বিজয় হয়েছিল কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে বিরোধ পরিলক্ষিত হয়।
কারো মতে, হয়েছিল আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক দ্বিমত পোষণ করেন। তবে গিয়াসউদ্দিনের পরে বঙ্গ অঞ্চল দিল্লি সালতানাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৬. নিহত বিজয় : জিয়াউদ্দিন বারানিসহ প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতে, বঙ্গদেশ বিজয় করার পথে সুলতান গিয়াসউদ্দিন নিহত বিজয় করেন। তিনি রাজা হরিসিংদেবকে পরাজিত করে দিল্লির অধীনে তার রাজ্য আনয়ন করেন।
এ গিয়াসউদ্দিন তুলঘলকের চরিত্র সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন অত্যন্ত চরিত্রবান নরপতি ছিলেন। নিম্নে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের চরিত্র আলোচনা করা হলো :
১. হাজারো গুণে গুণান্বিত : সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন সুনিপুণ সমन ছিলেন। মহাবতা, ধর্মভীরুতার মাঝে তিনি নিজেকে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত করেন। তিনি নিজেকে শাসক হিসেবে বিলিয়ে দিয়েছেন জনসাধারণের জন্য।
২. ধর্মভীরুতা : সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ছিলেন একনিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি ধর্মের যাবতীয় বিষয়াদি যথাযথভাবে পালন করতেন। নিজে ইসলামের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করতেন তার সাথে অপরকে পালনে উদ্বুদ্ধ করে
৩. ন্যায়বিচারক : সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। | ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তার সাম্রাজ্যের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ করেন।
৪. দানশীল : তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা পিয়াসউদ্দিন একজন অখ্যাত পিতামাতার সন্তান হয়েও নিজেকে বিশ্ব ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নিজে দানবীর ছিলেন।
সালতানাত থেকে অনেক অর্থ সম্পদ পরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে বিতরণ করতেন। তার শাসনামলে তিনি নিজে গরিব মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করতেন।
৫. গরিবের প্রতি উদারতা : দরিদ্র তহবিল গঠন এবং মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গিয়াসউদ্দিন তুঘলক বিশেষ কার্যাবলি সম্পাদন করেন। বিশেষ করে তিনি দরিদ্র জনগণ ও এতিমদের জন্য বিশ্রাম ও দরিদ্র ভাণ্ডার গঠন করেন।
৬. মাধুর্যময় চরিত্র : সুলতান গিয়াসউদ্দিনের চরিত্র ছিল মাধুর্যময়। তার বিশেষ প্রমাণ হলো তিনি জনসাধারণের সাথে কোনো দেহরক্ষী ছাড়া দেখা সাক্ষাৎ করতেন এবং তাদের সাথে সুন্দর সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করতেন।
৭. মদ্যপান ও তৈরি নিষিদ্ধকরণ: ধর্মীয় এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার মাঝে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সাম্রাজ্যের সর্বত্র মদ্যপান নিষিদ্ধকরণ এবং সাথে সাথে তৈরিতেও বিধিনিষেধ জারি করেন।
৮. বিদ্বান নরপতি : সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন বিজ্ঞান নরপতি ছিলেন। তিনি নিজে জ্ঞানী ছিলেন বিধায় বিজ্ঞ ব্যক্তিদের তিনি যথেষ্ট সমাদর করতেন। তিনি আনী ও দুঃখী ব্যক্তিদের মাঝে অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন ।
৯. প্রজাতিষী : প্রজা সাধারণের কল্যাণার্থে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক হাজারো প্রজাহিতৈষী কার্যসম্পাদন করেন। সাম্রাজ্যের রাস্তাঘাট, করলাঘব, গরিবদের পাশে দাঁড়ানো প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করতেন। ঐতিহাসিক বারানির মতে, তার ন্যায় বহুবিধ গুণাবলির অধিকারী কোনো সুলতান দিল্লির সিংহাসন আরোহণ করেননি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সালতানাতের | ইতিহাসের অন্যতম বংশ তুঘলক। যার প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নিজের মেধা, যোগ্যতা ও ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করে।
সাম্রাজ্য বিস্তারে সঠিক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন। চারিত্রিক দিক বিবেচনা করলে তিনি সত্যই একজন মহানুভব ও খোদাভীরু শাসক ছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজ্য বিস্তার নীতি ও চরিত্র আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।