ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর |
ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর
- অথবা, তুমি কি একমত যে ফিরোজ শাহ তুঘলক জনহিতকর শাসক ছিল কিন্তু তিনি ছিলেন দুর্বল - কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনব্যবস্থা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের এক চমকপ্রদ ঘটনা। তার শাসনামলের কিছু বৈচিত্র্যময় কাহিনি আর কিছু গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তাকেএকজন আকর্ষণীয় সুলতানের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
দিল্লির সিংহাসনে তিনি চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। সামরিক শক্তিতে বিফল হলেও প্রজাবৎসল শাসক হিসেবে তার জুড়ি নেই।
সামরিক অভিযানসমূহ : ফিরোজ শাহ তুঘলক সমরবিজেতা না হলেও সালতানাতের প্রয়োজনে তাকে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করতে হয়। নিম্নে শাসক হিসেবে তার সামরিক আভিযানসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. বাংলায় অভিযান : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের অভিযানসমূহের মাঝে অন্যতম একটি অভিযান হলো ১৩৫৩- '৫৪ সালে বাংলায় অভিযান। শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ বঙ্গদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করে মূলত তারই আমলে।
তিনি সমগ্র বাংলা, নিহত ও নেপালের কিয়দংশ এবং উড়িষ্যা বিজয় করে বেনারস পর্যন্ত তার রাজ্যসীমা বর্ধিত করেন।
ফিরোজা শাহ তুঘলক ইলিয়াস শাহের শক্তিতে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং ৭০ হাজার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা করেন। উভয়ের মাঝে ভীষণ যুদ্ধে ইলিয়াস শাহ পরাজিত হন। এবং একডালা দুর্গে আশ্রয় লাভ করেন।
২. উড়িষ্যা অভিযান : বাংলা বিজয় লাভ করার পর দিল্লিতে ফেরার পথে সুলতান ফিরোজ শাহ জৌনপুরে অবস্থান করেন এবং উড়িষ্যা আক্রমণ করেন।
রাজা তেলিঙ্গনায় পলায়ন করলে ফিরোজ শাহ বিনা বাধায় জৌপুরীতে প্রবেশ করেন এবং জগন্নাথ মন্দির ধ্বংস করেন। এবং অবশেষে তেলিগানার রাজা বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।
৩. নগরকোর্ট বিজয় : ফিরোজ শাহ তুঘলকের অনবদ্য কীর্তি হলো নগর কোর্ট জয়। ১৩৬০-৬১ সালের মাঝে ফিরোজ শাহ নগরকোর্ট জয় করেন। মূলত নগরকোট প্রথমে অবরোধ করেন মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের শাসনামলে। যার অনুপ্রেরণায় | ফিরোজ শাহ নগরকোট জয় করতে পেরেছিলেন।
৪. সিন্ধু বিজয় : ১৩৬১-৬২ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলকের | শাসনামলে সিন্ধু বিজিত হয়েছিল। সিন্ধু ও ঘাটাবাসীদের অবাধ্যমূলক আচরণের সমুচিত জবাব দেওয়ার লক্ষ্যেই ফিরোজ শাহ সিন্ধু অভিযান প্রেরণ করেন । প্রথমে ফলাফল শূন্য হলে পরবর্তীতে সফল হন।
৫. বিদ্রোহ দমন : গুজরাটের শাসনকর্তা বিদ্রোহী হলে ফিরোজ শাহ তুঘলক তাকে পরাজিত করেন এবং তিনি বর্গাতিহারের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। উপরোল্লেখিত বিজয়ের পরেও ঐতিহাসিকরা মনে করেন তিনি শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থ হয়েছিলেন।
• ফিরোজ শাহ তুঘলক এর শাসনব্যবস্থা : তুঘলক বংশীয় শাসকদের মাঝে ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার চমৎকার ছিল। যদিও তার অভিযান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয় । নিম্নে ফিরোজ শাহের শাসনব্যবস্থা তুলে ধরা হলো
১. অতিরিক্ত কর বিলোপ : ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনামলে দুর্ভিক্ষসহ কিছু ঘটনা ঘটে। মূলত মুহাম্মদ-বিন- তুঘলকের কুশাসনে, বলপূর্বক কর আদায়ের ফলে দেশের আর্থিক দুরবস্থা ঘটলে তার প্রতিকারকল্পে সুলতান ফিরোজ শাহ বিশেষ মনোযোগী হন। তিনি পূর্ববর্তী শাসকের সকল কর ব্যবস্থা বিলোপ করার আদেশ প্রদান করেছিলেন।
২. ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাচুর্য এবং মুদ্রা সংস্কার : দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারকল্পে আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক উঠিয়ে দেন। ফলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র অবাধ বাণিজ্য বিস্তার লাভ করে।
৩. বিচারব্যবস্থার উন্নতি সাধন : সুলতান ফিরোজ শাহ ইসলামি আইন অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনার সুব্যবস্থা করেন। মূলত কাজি বা বিচারক বিচারকার্য পরিচালনা করতেন এবং সুফিগণ শরিয়তের ব্যাখ্যা দান করে তাদের সাহায্য করতেন।
৪. কৃষি সংস্কার : ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত কৃষি প্রধান অর্থনীতির হওয়ার ফলে ফিরোজ শাহ তুঘলক কৃষি সংস্কার মনোযোগী হন। ফিরোজ শাহ যুমনা নদী ও শতদ্রু নদী হতে যথাক্রমে বাজিওয়া এবং আলমখান নামক দুটি খাল খনন করেন। এতে কৃষি ব্যবস্থার চরম উন্নতি লাভ করেছিল।
৫. মুদ্রানীতি : ফিরোজ শাহ তুঘলক ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে নিজস্ব মুদ্রানীতি পরিচালনার সুব্যবস্থা করেন।
৬. সৈন্যবাহিনীর পুনর্গঠন : বিচক্ষণ শাসক হিসেবে ফিরোজ শাহ সামন্ত প্রথার ভিত্তিতে সৈন্যবাহিনী গঠনের সুব্যবস্থা করেন। তার রাজত্বকালে সেনাপতিদের জায়গীর দেয়া হয় এবং যেসব অঞ্চলে জায়গীরের ব্যবস্থা ছিল না তাদের নগদ বেতন দেয়া হতো। ফলে ফিরোজ শাহের সময়ে দিল্লি সালতানাতে ৯১ হাজার নিয়মিত সৈন্য ছিল।
৭. ক্রীতদাস বিভাগ গঠন : শামসউদ্দিন ইলতুৎমিশের ন্যায় ফিরোজ শাহ বিরাট এক ক্রীতদাস বাহিনী গঠন করেন। সেখানে প্রায় ৮০ হাজার সৈন্য বা ক্রীতদাস ছিল।
৮. শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা : ফিরোজ শাহ তুঘলক নিজে একজন জ্ঞানী এবং পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি রাজদরবারে জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ করতেন। তার বাস্তব প্রমাণ হলো ইতিহাসবিদ জিয়াউদ্দিন বারানি এবং শামস-ই-সিরাজ আফিক তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
৯. চরিত্রবান মানুষ : ফিরোজ শাহ তুঘলক একজন আল্লাহ ভীরু ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান উদার শাসক ছিলেন। তার চরিত্রের মিল পাওয়া যায়, নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের সাথে। ন্যায়পরায়ণ, বিনম্র, ভদ্র, দয়ালু ও খোদাভীরু সকল চরিত্রের সমাবেশ তার মাঝে ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু তিনি দুর্বল শাসকও ছিলেন। নানাগুণের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ফিরোজ শাহ সালতানাতের পতনের সময় তার নিজ কর্মশক্তি দ্বারা রোধ করতে পারেনি।
মূলত তার মাঝে গোড়া ধর্মীয় নীতি এবং শাসনকার্যে উলেমাগণকে প্রাধান্য দেওয়া শিয়া সম্প্রদায় ও হিন্দুদের রোষানলের কারণ এটাও তুঘলক বংশের পতনের জন্য দায়ী ছিল। তাই বলা যায়, ফিরোজ শাহ তুঘলকের অবদান চিরস্মরণীয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের ফিরোজ শাহ তুঘলক ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু দুর্বল শাসক ছিলেন কথাটি ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।