চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর |
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর
- অথবা, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কী? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা বর্ণনা করা।
- অথবা, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে কি বুঝ? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজের বর্ণনা দাও।
- অথবা, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কী? চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক সমাজে এমন অনেক সংগঠন, গোষ্ঠী বা দল লক্ষ করা যায়, যার সদস্যরা নির্দিষ্ট স্বার্থের বন্ধনে পরস্পর সংযুক্ত এবং তারা সরকারি কার্যকলাপ, নীতি ও সিদ্ধান্তকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে থাকে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ তথা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। মানবজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
→ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞা : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কেউ কেউ এদের Pressure grous আবার কেউ কেউ বলেন Interest group। আবার কেউ কেউ Political party বলে অভিহিত করেন।
অধ্যাপক ফাইনার এর নাম দিয়েছেন "Lobby' যার অর্থ আইন পরিষদ ভবনের পাশের কক্ষ বা বারান্দা। অন্যভাবে বলা যায় যে, সাধারণভাবে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের গোষ্ঠীকে বুঝায় যাদের কতিপয় সাধারণ স্বার্থ রয়েছে এবং যারা রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সরকারি নীতিমালা প্রভাবিত করে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো স্বার্থের প্রতিভূ। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে প্রভাবিত করাই হলো- স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সর্বপ্রথম কাজ। গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত কার্যাবলি সম্পাদনা করে থাকে ।
১. আইন ও শাসন বিভাগের উপর প্রভাব : গোষ্ঠীগুলো সরকার গঠনে সচেষ্ট না হয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। আইন ও শাসন বিভাগের প্রতিপত্তি সমপর্যায়ভুক্ত হলেও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব শাসন বিভাগের উপর অধিক মাত্রায় প্রতিফলিত হয়।
২. বিচার বিভাগের উপর প্রাধন্য : বিচার Pressure Group থেকে মুক্ত নয়। প্রধানত দুটি উপায়ে এই গোষ্ঠী বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও এখতিয়ারের উপর প্রভাব বিস্তার করে। (ক) বিচারপতি নিয়োগের সময় প্রতিটি গোষ্ঠী নিজেদের সমর্থকদের মধ্য থেকে যাতে বিচারপতি নিযুক্ত হন সেজন্য চেষ্টা করেন।
(খ) অনেক সময় আইনের প্রশাসনিক ব্যাপারে ফিটনেস মামলা করে আদালতে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে বক্তব্য রেখে এই গোষ্ঠী বিচারপতিদের রায় মানে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
৩. তথ্য সরবরাহ : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো তথ্যসংগ্রহ ও সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এ ধরনের গোষ্ঠী বক্তৃতা, সভা, মিছিল, বিবৃতি ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। এগুলোর মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে।
৪. জনসংযোগ সাধনের ক্ষেত্রে : উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সংযোগ সাধনে সাহায্য করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রসারের জন্য সংযোগ সাধনের উদ্যোগ ত্যাগ করতে পারে না।
গণসংযোগের মাধ্যমে এরা জনগণের কাছে নিজেদের দাবির যৌক্তিকতা ও সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী নীতির সমালোচনা করে।
৫. রাজনৈতিক প্রচারণা : রাজনৈতিক সংগঠন না হওয়া সত্ত্বেও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক কার্য পরিচালনার একটি সুসংগঠিত মাধ্যম।
নির্বাচনি রাজনীতিতে কোনো গোষ্ঠী স্বতন্ত্রভাবে সরকারি ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে না। সরকার গঠন তাদের লক্ষ্য ।
৬. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর প্রভাব : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়।
ইউরোপ ও আমেরিকার শাসনব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো আইন ও শাসন বিভাগকে প্রভাবিত করে নিজ নিজ গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট হন।
৭. সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারের উপদেষ্টার ভূমিকাও গ্রহণ করে। কেননা বর্তমানে সরকার বিশেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে।
যার ফলশ্রুতিতে সরকার গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা ও পেশাদারী বক্তব্যের মাধ্যমে আইন অথবা সিদ্ধান্তকে ত্রুটিমুক্ত করার সুযোগ পায় ।
৮. আইন ও নীতির উৎস : উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সমাজে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ আইন এবং সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বহুক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন ও নীতি পরিবর্তনের জন্য গোষ্ঠীসমূহ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
৯. রাজনৈতিক কৃষ্টির উপর প্রভাব : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক কৃষ্টির উপর প্রভাব বিস্তার করতে সে হয়। রাজনৈতিক বৃষ্টি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অনুকূলে হলে তাদের পক্ষে দাবি-দাওয়া আদায় করা সহজ হয়।
১০. বিক্ষোভ ও হিংসাত্মক আন্দোলন : উন্নয়নশীল দেশে অনেক সময় Pressure Group বিক্ষোভ বা হিংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে এবং নিজেদের স্বার্থে সরকারকে কাজ করতে বাধ্য করে।
১১. সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি দূরীকরণের ক্ষেত্র : চাপসৃষ্টিকারীর গোষ্ঠী প্রশাসনের দক্ষতা বজায় রাখা এবং ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করতে সাহায্য করে। এ গোষ্ঠী সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে প্রচারণা চালায়। এর ফলে সরকার যথেষ্ট সচেতন থাকে।
১২. বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধি প্রেরণ : বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন— সভা, সমাবেশ, বৈঠক, আলোচনা চক্র ইত্যাদিতে প্রতিনিধি প্রেরণ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রতিনিধি .প্রেরণের মাধ্যমে তাদের প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট থাকে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজব্যবস্থা মূলত বিভিন্ন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। এরা সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন, কার্যকর এবং সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট আছে।
যদিও সরকার গঠন করা তাদের কাজ নয় তবুও সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটায়। Alan. R. Ball বলেছেন, “চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং অনড়।”
আর্টিকেলের শেষকথাঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।