ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর |
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর
- অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসসমূহ কী কী?
- অথবা, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উৎসসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর ৷
- অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ সংবিধান কোনো নির্দিষ্ট সূত্র থেকে উদ্ভূত হয়নি। এ কারণেই তাকে কোনো লিখিত ও বিধিবদ্ধ আকার দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র দেশে কোনো বিপ্লব-বিদ্রোহ বা স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিণতি স্বরূপ কোনো বিশেষ গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত হয়নি।
কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এই শাসনতন্ত্রের সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘকালের ঐতিহাসিক ক্রমবির্তনের ধারায় নানাভাবে এই শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে।
কোনো বিশেষ একটি উৎস থেকে এই সংবিধানের সৃষ্টি হয়নি। বহু উৎস থেকে এই শাসনতন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র কখনোই সম্পূর্ণ নয়।
সব সময়ই ক্রমবর্ধমান। ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের এই বৈচিত্র্যের জন্য বলা হয় যে জীবনতর পড়লেও এই শাসনতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়।
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস : ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলোকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পার :
(ক) সাংবিধানিক আইন ও
(খ) সাংবিধানিক রীতিনীতি বা প্রথা।
(ক) সাংবিধানিক আইন : সাংবিধানিক আইন (Law of constitution) বলতে সংবিধানের সেই অংশকেই বুঝায় যা আদালত কর্তৃক স্বীকৃত ও বলবৎকৃত হয়। সাংবিধানিক আইনের কিছু উৎস রয়েছে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো।
১. ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তিপত্র : যে সকল ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তিপত্র ব্রিটেনের সংবিধানের উৎসরূপে পরিগণিত হয় তাদের মধ্যে ১২১৫ খ্রিস্টাব্দের মহাসনদ (Magna Carta) ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে অধিকার আবেদনপত্র (Petition of Rights), ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দের বন্দোবস্তের আইন (Act of settlement) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এ সবই ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রিক আইনের নগণ্য অংশমাত্র।
২. বিধিবদ্ধ আইন : পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহ অনেক ক্ষেত্রে সংবিধানের উৎস বলে স্বীকৃত হয়। সরকারের ক্ষমতা ও কার্য পরিচালনার ব্যাপারে সময় সময় পার্লামেন্ট কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা হয়।
ভোটাধিকার, নির্বাচন পদ্ধতি, সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি, ব্যক্তিগত অধিকার ইত্যাদি নির্ধারণের জন্য পার্লামেন্ট এ আইনগুলো মাঝে মাঝে প্রণয়ন করেছে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংস্কারমূলক আইনগুলো এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ।
৩. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত : প্রচলিত বিধি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন ও রাজ সনদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচার বিভাগ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে এবং তা অনেকাংশে সংবিধানকে প্রভাবান্বিত করেছে।
মোটকথা, যখনই সরকারের সাথে জনসাধারণের কোনো বিরোধ উপস্থিত হয়েছে, সে | বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে বিচার বিভাগ সে সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, ব্রিটেনের ব্যক্তি অধিকারগুলো তারই প্রত্যক্ষ ফল।
অন্যান্য দেশের সংবিধানের ব্যক্তি স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়, ইংল্যান্ডে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের নীতি থেকেই সংবিধানের উদ্ভব হয়েছে।
(খ) সাংবিধানিক রীতিনীতি বা প্রথা : সাংবিধানিক রীতিনীতি বা প্রথা বলতে সংবিধানের সেই অংশকে বুঝায়, যা আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য। কিন্তু জনমত ও ঐতিহ্যের বলে প্রযোজ্য হয়। এর মধ্যকার উৎসসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো।
১. সাধারণ আইন : ব্রিটিশ সংবিধান কতকগুলো প্রথাগত সাধারণ আইন হতে উৎসারিত হয়েছে। সাধারণ আইন বলতে সেই সকল আইনকে বুঝায়, যা পার্লামেন্টের বাইরে ক্রমশ জন্মলাভ করেছে এবং পরে ধীরে ধীরে সমগ্র দেশব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।
ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা সমবেত হওয়ার অধিকার, নিরাপত্তা বিধানের অধিকার প্রভৃতি সাধারণ আইন হতে উদ্ভূত হয়েছে।অধ্যাপক অগের (Ogr) মতে, “এ সকল রীতিনীতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রচলিত থেকে অলঙ্ঘনীয়, সুচার এবং স্থায়ী হয়ে উঠেছে।"
- (Munre)-এর মতে, The common laws like statutary laws are continuosly in the propces of development by judicial decisions." তিনি বলেন, “সাধারণ ডাইনগুলো পার্লামেন্টে কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের ন্যায়বিচারকদের | সিদ্ধান্তের মাধ্যমে-অগ্রগতি লাভ করেছে।"
২. প্রথা : সাংবিধানিক রীতিনীতি বা প্রথা হলো ব্রিটিশ সংবিধানের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। রাজনৈতিক ব্যাপারে | প্রথা অভ্যাস, আচার আচরণ দেশাচার প্রচলিত রীতি পদ্ধতিসমূহকে ১৮৮৫ সালে জাইসি প্রথা (Convention) বলে আখ্যায়িত করা হয়।
জে. এস. মিল (J.S. Mill) সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলোকে সংবিধানের অলিখিত বিধান বলে অভিহিত করেছেন। সাংবিধানিক রীতিনীতি বলতে সেই সমস্ত নিয়ম ও বিধিনিষেধকে বুঝায়, যেগুলো শাসনব্যবস্থার প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদ্ভূত হয়েছে।
যেগুলো সঠিক অর্থে সাংবিধানিক আইন নয় এবং আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়, অথচ শাসনকার্যের সাথে সংযুক্ত সকলে এগুলোকে বাধ্যতামূলক বলে স্বীকার করে নিয়েছে। রাজা মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ মতো কাজ করেন।
বছরে একবার পার্লামেন্টের অধিবেশন বসতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে এ সকল প্রথা মাত্র। তাই এসব প্রথা বা রীতিনীতির অনুধাবন ব্যতীত ব্রিটেনের সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব নয়।
৩. সংবিধান সংক্রান্ত গ্রন্থ : সংবিধান বিশেজ্ঞ প্রখ্যাত আইনবিদ ও লেখকদের দ্বারা রচিত সংবিধান সম্পর্কিত প্রামাণ্য পুস্তকসমূহ ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম উপাদান। ব্রিটিশ সংবিধান বিচার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ব্যাপারে এ সকল মৌলিক ও প্রামাণ্য গ্রন্থের মূল্য অপরিসীম।
সাংবিধানিক আইন সম্পর্কিত রচনাবলির মধ্যে অ্যানসনের Law and custom of the constitution' মে-এর Parliamentary practice এ.ভি. ডাইসির "An Introduction to the law of the constitution. বেজহটের The English constitution.' আইভর জেনিংস এর 'The law and the constitution.' 'Parliamentary Government England' বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আইন বিশারদ ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের চিন্তা ও বক্তব্যের দ্বারা ব্রিটিশ সংবিধান অনেকাংশে একটি বিশেষ রূপ লাভ করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সংবিধানের ছবিধ উৎস রয়েছে। কোনো একটি নির্দিষ্ট দলিল অথবা আইনের মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধানের সকল উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে না।
এ সংবিধান হলো প্রজ্ঞা এবং দৈবের সন্তান, যার গতিধারা কখনও দৈব দুর্ঘটনা, আবার কখনও বা উচ্চ পরিকল্পনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক সনদ, পার্লামেন্ট ধর্ণীত আইন, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত, প্রধানত আইন সাংবিধানিক রীতিনীতি এবং প্রখ্যাত আইন বিশারদদের ইচনাবলিই সংবিধানের উৎস।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।