ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর |
ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর
- অথবা, ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
- অথবা, ভারতবর্ষে মুসলিম ইতিহাসের উৎসসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রত্যেক জাতিরই বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস থাকে। ইতিহাস ছাড়া কোনো জাতি তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে না। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উপাদান খুব একটা পাওয়া না গেলেও মুসলমান তথা মুঘল আমলের ইতিহাসের উপাদান যথেষ্ট পাওয়া যায়।
মধ্যযুগীয় ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস রচনার উপকরণ ও উপাদান প্রচুর থাকলেও কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যও রয়েছে।
ঐ সময়ের ইতিবৃত্ত লেখক, সুলতানদের সভাকবি, সভাপণ্ডিত, বিদেশি বণিক ও পর্যটকদের পরস্পর বিরোধী উক্তি ও মতবাদের দ্বন্দ্বের মধ্য হতে প্রকৃত ঐতিহাসিক সত্য উদ্ধার করা হলো মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস লেখকগণের কঠিন দায়িত্ব।
প্রশ্নালোকে ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎসসমূহ আলোচনা করা হলো-
→ ভারতের মুসলমানদের ইতিহাসের উৎস : মুসলিম যুগের ভারতের ইতিহাস রচনার তথ্যাবলিকে ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
১. সরকারি দলিলপত্র,
২. সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের রচনা ও সাহিত্য,
৩. বিদেশি বণিক ও পর্যটকদের বিবরণী,
৪. মুদ্রা ও শিলালিপি ও
৫. স্মৃতিস্তম্ভ ও অট্টালিকা।
১. সরকারি দলিলপত্র : সুলতানি ও মুঘল আমলের সরকারি দলিলপত্রাদি ঐ যুগের ইতিহাস লেখার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উপকরণ। মুঘল সম্রাটদের রাজত্বকালে সরকারি নথিপত্রাদি বিশেষভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয় যে,হাতাস পরবর্তীকালের যুদ্ধবিগ্রহ ও অযত্নের ফলে এসব মূল্যবান | ঐতিহাসিক তথ্যসম্বলিত দলিলপত্রের অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে।
মুঘল সম্রাট আকবরের গ্রন্থাগারে প্রায় ২৪ হাজার পাণ্ডুলিপি ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই পাণ্ডুলিপির একটিরও সন্ধান এখন পর্যন্তও পাওয়া যায়নি।
যাই হোক ইতিহাস রচয়িতাদের সরকারি বা বেসরকারি কাগজপত্র যা উদ্ধার করা গিয়েছে তা ঐ সময়ের ইতিহাস রচনা অতিশয় প্রয়োজনীয় উপাদান।
২. সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের রচনা ও সাহিত্য : ভারতের মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে হলে সমসাময়িক ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন ।
নিম্নে তেমন কিছু ঐতিহাসিক সাহিত্য তুলে ধরা হলো :
(ক) ঐতিহাসিক সাহিত্যের মধ্যে আলী বিন হামিদের 'চাচনামা'"অত্যন্ত প্রাচীন ও মূল্যবান গ্রন্থ। সিন্ধু প্রদেশের ইতিহাসের জন্য 'চাচনামা'-ই আমাদের কাছে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ।
(খ) আল বেরুনী ছিলেন সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক। তিনি ছিলেন গজনির সুলতান মাহমুদের দরবারের একজন বিশিষ্ট রত্ন। তিনি 'তারিখ-উল-হিন্দ' নামে এক অতি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে ইতিহাসের ভাষারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
তার এই গ্রন্থটিতে ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির এক নিখুঁত ছবি ফুটে উঠেছে। সমসাময়িক হিন্দু সমাজের রীতিনীতি, আচার-আচরণ প্রভৃতি সম্পর্কে এই গ্রন্থে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। [ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, আব্দুল হালিম, পূ:-08 1
(গ) মিনহাজ-উস-সিরাজ এবং হাসান নিজামীর ঐতিহাসিক রচনা হতে দিল্লির প্রাথমিক যুগের তুর্কি সুলতানদের রাজত্বকাল সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্যসংগ্রহ করা যায় ।
মিনহাজ মামলুক সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের অধীনে এক উচ্চ রাজকর্মচারী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ “তবাকাত-ই-নাসিরী' নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকালের এক অতি মূল্যবান ইতিবৃত্ত।
(ঘ) আমীর খসরু ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবলের আমলে শ্ৰেষ্ঠ কবি, পণ্ডিত ও সাহিত্যিক। তার লিখিত গ্রন্থ 'খাজাহন-উল-ফুতুহ' হতে কেবল তার কবিত্ব শক্তি পরিচয় পাওয়া যায় না, বরং ঐ যুগের ইতিহাস রচনায়ও তাঁর এ গ্রন্থাদির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
মুসলিম আইনকানুন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন আইন- উল-মুলক তাঁর 'মুনসৎ-ই-মহরা' নামে একখানি প্রস্থে সুলতান ফিরোজ তুঘলকের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত বিবরণ রেখে গেছেন।
মিনহাজের মৃত্যুর পর তার ইতিহাসের ছিন্ন সূত্রটি তুলে ধরেন অসাধারণ প্রতিভাবান ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানী।
(ঙ) ইসামি রচিত 'ফুতুহ-উস-সালাতিন' একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে হতে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত মুসলিম ভারতের একটি সুন্দর ঐতিহাসিক কাব্য।
(চ) ফিরোজ শাহের স্বরচিত ঐ সময়ের আরও একটি চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ 'কুতাত-ই-ফিরোজশাহী'। এ গ্রন্থে ফিরোজ শাহের শাসনব্যবস্থার একটি ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়।
(ছ) 'আলমগীর নামা', 'বাদশাহ্ নামা' নামে দুইটি ঐতিহাসিক গ্রন্থে সম্রাট শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের শাসনামলের বহুবিধ মূল্যবান তথ্য সন্নিবিষ্ট আছে।
'মা আসির-ই- আলমগীর' আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালের একখানি নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ। কাকী খান প্রণীত 'মুনতাখাব-উল-লুৰাৰ' গ্রন্থ হতে আওরঙ্গজেবের রাজত্বকাল সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।
(জ) সমগ্র মুসলিম যুগের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ফিরিশতা। তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সমসাময়িক এবং তার রাজদরবারের সভাসদ ছিলেন।
মুঘল যুগ ও পরবর্তীকালের বিস্তারিত ইতিহাস তিনি রচনা করে গেছেন। তার লিখিত ইতিহাস হতে বহু মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।
(ঝ) সম্রাট আকবরের সমসাময়িক লেখক আবুল ফজলের বিখ্যাত 'আইন-ই-আকবরী' এবং 'আকবর নামা গ্রন্থদ্বয় হতে আকবরের শাসনকাল সম্পর্কে বিস্তারিত ও অতি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায়।
৩. বিদেশি পর্যটকদের বর্ণনা : অনেক বিদেশি পর্যটক সুলতানি ও মুঘল আমলে ভারতে আগমন করেছিলেন। তারা ভারতের বিভিন্ন স্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে বিবরণ নিয়েছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :
(ক) মার্কোপালোর আগমন : ব্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইতালীয় পর্যটক মার্কোপালো দক্ষিণ ভারতের তামিল রাজ্যে এসেছিলেন। তার ভ্রমণকাহিনিতে তৎকালীন দাক্ষিণাত্যের | সমৃদ্ধি সম্বন্ধে বেশ মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় ।
(খ) ইবনে বতুতার আগমন : সুলতানি আমলের চতুর্দশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা খ্যাতনামা বিদেশি পর্যটকও আফ্রিকানবাসী ইবনে বতুতা ভারতে এসেছিলেন। ইবনে বতুতা মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালের একটি নিখুঁত ইতিবৃত্ত রচনা করে গেছেন।
(গ) মাহুয়ানের আগমন : চীন দেশীয় পর্যটক মাহুয়ান পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আসেন। তার বর্ণনা হতে ঐ সময়কার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য, সমৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
(ঘ) অন্যান্য পর্যটক : নিকোলো কন্টির আগমন, রুশ পর্যটক নিকিতিন, পারস্য দেশীয় পর্যটক আব্দুর রাজ্জাক এদের বর্ণনা হতেও তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানা যায়।
৪. মুদ্রা ও শিলালিপি : মুসলিম ভারতের ইতিহাস রচনায় সে সময়ের মুদ্রা ও শিলালিপি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উৎস। সুলতানি ও মুঘল শাসনকালের মুদ্রাগুলো ঐ যুগের মুদ্রানীতি এবং ধাতু শিল্পের পরিচয় দিয়ে থাকে।
সাধারণত পাথর কিংবা তাম্রপাত্রের উপর নানাবিধ অনুশাসন লিপি লিখিত হতো। এ অনুশাসন লিপি হতেই ঐতিহাসিক ঘটনাবলির যথার্থ তারিখ নির্ধারণ করা যায়। (ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, আব্দুল আলিম, পৃ-৭)
৫. স্মৃতিস্তম্ভ ও অট্টালিকা : সুলতানি ও মুঘল যুগের স্থাপত্যশিল্প ও ললিতকলার প্রচুর নিদর্শন আজও বিদ্যমান। সুলতানি আমলের স্থাপত্যশিল্প, স্মৃতিস্তম্ভ, অট্টালিকায় হিন্দু ও মুসলিম শিল্প কৌশলের সংমিশ্রণের সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।
স্মৃতিস্তম্ভ ও অট্টালিকা ঐ সময়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থার উপর যথেষ্ট আলোকপাত করে।
মুঘল আমলের স্থাপত্যশিল্পের সুষ্ঠু কারুকার্য, উৎকর্ষ ও বৈশিষ্ট্যে মুঘল সম্রাটদের উন্নত রুচিবোধ এবং মুসলিম সংস্কৃতির পরিচয় মেলে। (ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, আব্দুল আলিম, পৃ-৭)
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যেকোনো ইতিহাস জানার কিছু নির্ভরযোগ্য উৎসের প্রয়োজন হয়। তেমনি ভারতের মুসলিমদের ইতিহাস রচনার জন্য আমাদের কিছু উৎস বা উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়, যার মাধ্যমে আমরা তৎকালীন ইতিহাসের গঠন-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি।
এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি দলিলপত্র, ঐতিহাসিকদের বর্ণনা, পর্যটকদের বর্ণনা, মুদ্রা ও শিলালিপি, স্মৃতিস্তম্ভ ও অট্টালিকা ইত্যাদি।
এসব তথ্যের উপর নির্ভর করেই আমরা ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থসামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়ে থাকি। তাই এসব উৎসব বা উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসের উৎস সমূহ আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।