আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও |
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও
- অথবা, আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাকালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার চিত্র তুলে ধর।
- অথবা, আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাকালে ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত কর।
উত্তর : ভূমিকা : মুসলিমদের আগমনের পূর্বে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধশালী ছিল। জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল সচ্ছল। জনসাধারণ ধনী ও অভাবমুক্ত ছিল। কৃষি কাজই ছিল জনগণের প্রধান পেশা।
দেশের শিল্প ও বাণিজ্য যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছিল। বঙ্গদেশ ও গুজরাট কার্পাস তুলার বস্ত্র তৈরি ও রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু কৃষকদেরকে তাদের রুজি রোজগারের নিমিত্তে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।
অপরদিকে, উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকেরা বিলাসিতা ও আড়ম্বরের মধ্যে দিন কাটাতো। এদেশের অভূল ধনৈশ্বর্যে আকৃষ্ট হয়েই বিদেশি বণিক এবং আক্রমণকারীগণ ভারতে আগমন করে।
→ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা : নিয়ে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা হলো:
১. উৎপাদন ব্যবস্থা : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল কৃষিভিত্তিক । গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ লোক কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করত।
কৃষিতে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান ছিল প্রধান। ধান ছাড়া সে সময় পাট, ভুলা, আখ প্রভৃতি উৎপাদিত হতো। কৃষকেরা তাদের আবাদি জমির জন্য জমিদারকে খাজনা বা কর প্রদান করত।
২. শিল্প বাংলার অর্থনৈতিক ভিত্তি : কৃষি হলেও সে সময় শিল্পের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। বাংলায় বস্ত্রশিল্প ছাড়াও প্রস্তরশিল্প, ধাতু শিল্প, কার্পাসজাত শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়েছিল। সমকালীন কুটিরশিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প, ধাতুশিল্প, চামড়াশিল্প প্রভৃতি ছিল প্রধান।
৩. ব্যবসা-বাণিজ্য : ধনসম্পদের প্রাচুর্যের জন্য বিদেশি বণিকরা আগে থেকেই বাংলার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। তাম্রলিপ্ত ও সপ্তগ্রাম নামে দুটি সমুদ্র বন্দর ছিল।
এ বন্দর দুটি দিয়ে বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতো। বণিকরা এ বন্দর থেকে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দূরদূরান্তে যাত্রা করত।
শ্রীপুর, ভুলুয়া, চন্দ্রদ্বীপ ইত্যাদি বন্দরের নাম পাওয়া যায়। সে সময়ে স্থলপথে তিব্বত, নেপাল, মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কে ছিল।
৪. মুদ্রা ব্যবস্থা : মুসলমানদের আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালো থাকলেও মুদ্রার ব্যাপন তেমন ছিল না। কারণ মুসলমানদের আক্রমণের পূর্বের স্বর্ণ ব রৌপ্য মুদ্রা তেমন পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিক মিনহাজ-2 সিরাজের মতে, “যখন মুসলমানরা বাংলায় প্রবেশ করে তখন তারা কোনো স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা পাননি”। সে সময় বিনিময়ে একমাত্র মাধ্যম ছিল কড়ি। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কলি প্রচলন ছিল।
৫. বিভিন্ন ইমারত তৈরি : সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির ব্যক্তিগত বিলাসিতা ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করলেও তারা নানাবিধ জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে উদ্যোগী ছিলেন।
৬. প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিল। ধনৈশ্বর্যে আকৃষ্ট হয়ে যুগ যুগ ধরে বহু বণিক এদেশে আগমন করেছে এবং এদেশের ধনসম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য হামলাও চালিয়েছে।
৭. আয়ের উৎস : ঐতিহাসিক ভি. ভি. মহাজন বলেন, মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের আয়ের উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব, আবগারি ও বাণিজ্য শুল্ক, পথকর, জলকর, রাজন্যবর্গের নিকট হতে প্রাপ্তকার ইত্যাদি ।
সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থা : যুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. বর্ণপ্রথা : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় হিন্দুরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এ চারটি প্রধান বর্ণে বিভক্ত ছিল। এ বর্ণপ্রথা ছিল খুবই জটিল। সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের বেশি প্রজন ছিল।
এ প্রথা ভারতে চরম আকার ধারণ করে। অধ্যাপক হাবীব বলেন, "ব্রাহ্মণগণ ইচ্ছাপূর্বক জনগণকে অজ্ঞ করে রাখতো এবং এভাবে সমাজে তারা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করত।”
২. ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের প্রভাব : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের ব্যাপক প্রভাব ছিল। ধর্মীয় অনুষ্ঠান যাগযজ্ঞে এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপত্তি পরিলক্ষিত হতো।
তারাই আইনকানুন প্রণয়ন করত এবং শাসনদণ্ডও তাদের হাতেই ছিল। মনুর দৃষ্টিতে আদিষ্ট হয়েছে যে পৃথিবীর যেখানে যা কিছু আছে তা ব্রাহ্মণদের সম্পত্তি বলে পরিগণিত হবে।
তাদের অত্যাচারে জৈন ও বৌদ্ধগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে এবং নিম্ন শ্রেণির হিন্দুসহ সকলে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হয়।
৩. বৈশ্য ও শূদ্রদের অবস্থা : ভারতীয় সমাজে বৈশ্য ও শূদ্ররা ছিল অধঃপতিত, অসহায় ও অস্পৃশ্য। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা তাদের ঘৃণার চোখে দেখত।
বেদবাক্য শুনলে ও পাঠ করলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। এমনকি তাদের জিহ্বা কেটে দেওয়া হতো। সমাজে তাদেরকে অপবিত্র ও অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হতো। তারা নিম্নমানের পেশা গ্রহণ করত।
৪. নরবলি ও শিশুবলি প্রথা : আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতীয় হিন্দু সমাজে অনেকগুলো ঘৃণ্য প্রথার প্রচলন ছিল।
নরবলি ও পশুবলি ছাড়াও তারা তাদের শিশু সন্তানকে গঙ্গার জলে বিসর্জন দিত এবং এগুলোকে তারা পুণ্যের কাজ মনে করত। দেবতাকে তুষ্ট করার মানষে এগুলো করত বিধায় জনসাধারণ এগুলোকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত।
৫. নারীদের অবস্থান : মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতে নারীদের ভোগের পণ্য ছাড়া আর কিছুই ভাবা হতো না। বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে ভুলেছিল। পুরুষেরা বহুবিবাহ করলেও নারীদের একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল।
৬. কুসংস্কার : কুসংস্কার ও অনাচার সমাজ জীবনকে পঙ্গু করে রেখেছিল। আল-বেরুনী তার 'কিতাবুল হিন্দ' গ্রন্থে বলেন “সমাজে হিন্দু প্রাধান্য ও তাদের রীতিনীতিগুলো সমাজব্যবস্থাকে কলুষিত করে তুলেছিল।"
৭. হিন্দুধর্মের প্রাধান্য : তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে প্রধানত বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দুধর্মের লোক বাস করত। হিন্দুধর্মের প্রাধান্য ছিল সবচেয়ে বেশি এবং অধিকাংশ রাজা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
৮. সামাজিক প্রথা : ভারতীয় সমাজে বহুবিবাহ, সতীদাহ ও অস্পৃশ্যতাসহ বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত ছিল। সমাজে তখন বহু বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল।
শাসকগোষ্ঠীর উৎসাহ সমাজে সতীদাহ প্রথা- জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সমাজে অস্পৃশ্যতা বিদ্যমান ছিল। অধিকাংশ লোক ছিল নিরামিষভোজী এবং তারা পিঁয়াজ ও রসুন খেতো না।
৯. বহু দেব-দেবীর পূজা অর্চনা : মুসলিমদের আগমনের প্রাক্কালে ভারতের হিন্দুরা বহু দেব-দেবীর পূজা করত। নিজেদের মনমত মূর্তি গড়ে তারা সেগুলোর পূজা করত।
১০. সামন্ততন্ত্রের বিকাশ : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এ সময় ভূমির মালিকানা এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সাধারণ কৃষকের নিকট হতে নবপ্রতিষ্ঠিত ভূস্বামীদের নিকট চলে যায়। ভূ-স্বামীরা রাজা বা ব্রাহ্মণের দ্বারা ভূমি দানের মাধ্যমে ভূমির মালিক হন। পরে তারাই ক্ষত্রিয় শ্রেণিতে পরিণত হয়।
১১. শিক্ষাব্যবস্থা : জনসাধারণের শিক্ষার জন্য দেশের সর্বত্র স্কুল ও কলেজ ছিল। পশ্চিম ভারতের বহুতী ও বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল।
সংস্কৃতি ভাষা শিক্ষাদানের জন্য মালাধর ও আজমীরে দুটি কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শান্ত ও বেদান্ত ছাড়াও বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে শিক্ষাদান করা হতো।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা সচ্ছল ছিল। ভারতের অর্থনৈতিক প্রাচুর্যে আকৃষ্ট হয়ে মুসলমানরা বাংলায় আগমন করে।
তবে সামাজিক ক্ষেত্রে তখনো ছিল বিভিন্ন সমস্যা। এ সমস্যার জন্য হিন্দু রাজাগণ মুসলিম আক্রমণ প্রতিহত করতে ও সামাজিক ঐক্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়।
ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পূর্বে এখানকার সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। সামাজিক ভেদাভেদ জনগণকে অতিশয় দুর্বল করে দেওয়ায় মুসলমানরা সহজেই ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও। যদি তোমাদের আজকের আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।