আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর |
আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর
- অথবা, সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সময়ে ভারতে মোঙ্গল আক্রমণের কারণ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ক্রমবর্ধমান মোঙ্গল আক্রমণে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তার পূর্ববর্তী অন্যান্য সুলতানের ন্যায় ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত মোঙ্গল আক্রমণ দিল্লি সুলতানের নিকট ভীতি ও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১২৯৬ সাল হতে ১৩০৭ সাল পর্যন্ত মোঙ্গলরা সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজ্যে আক্রমণ পরিচালনা করে। ভারতবর্ষের অপরিসীম ধন-সম্পদের প্রতি পৃথিবীর যেসকল যোদ্ধা শ্রেণির প্রবল লোভ ও আগ্রহ ছিল তাদের মধ্যে মোঙ্গলরা অন্যতম।
মোঙ্গল আক্রমণ : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ সালে ক্ষমতা লাভের পরপরই তিনি মোঙ্গল আক্রমণের শিকার হন। নিম্নে মোঙ্গল আক্রমণের কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
১. দাউদের নেতৃত্ব আক্রমণ : মোঙ্গলরা ১২৯৬ সালের শেষের দিকে আমির দাউদের নেতৃত্বে ১০,০০০ সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে পাঞ্জাব, সিন্ধু ও মুলতান জয়ের উদ্দেশ্য ভারত অভিযান পরিচালনা করে।
সুলতান উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে যোগ্য শাসনকর্তা জাফর খার নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। জলান্ধরে নিকট জাফর শোচনীয়ভাবে মোঙ্গলদের পরাজিত করে।
২. সালদির নেতৃত্বে অভিযান : ১২৯৭ সালে মোঙ্গল নেতা | সালদি এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বারের মতো মোঙ্গলরা আক্রমণ করে। এ সময় তারা অভিযান চালিয়ে দিল্লির নিকটস্থ সিরিনগর দুর্গটি দখল করেন।
এবার সুলতান জাফর খানের নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করা হয়। জাফর খান মোঙ্গলদের পরাজিত করে সিরিনগর দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
এখানে সংঘঠিত যুদ্ধে অসংখ্যা মোঙ্গল সৈন্য নিহত হয়। প্রায় ২০ হাজার মোঙ্গল নেতাকে বন্দি করে দিল্লিতে প্রেরণ করা হয়।
৩. কুলতুঘ খানের নেতৃত্বে অভিযান : ১২৯৯ সালে তৃতীয়বারের মতো কুলতুম খানের নেতৃত্বে প্রায় দুই লক্ষাধিক সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মোঙ্গলরা অভিযান চালিয়ে দিল্লির নিকটস্থ অঞ্চলগুলো জয় করেন।
সুলতান আলাউদ্দিনের সেনাপতি জাফর খান ও উলুঘ খানের প্রবল বাধার সম্মুখে কয়েক দফা খণ্ড যুদ্ধে পরিচালিত হয়। তবে যুদ্ধে সুলতানের | সুদক্ষ ও যোগ্য সেনাপতি জাফর খান নিহত হন।
৪. তারখির নেতৃত্বে অভিযান : ১৩০৩ সালে মোঙ্গলরা আবার শক্তি সঞ্চয় করে তারখির নেতৃত্বে ভারতীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ করে এবং দ্রুত গতিতে সাম্রাজ্যের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
সময়ের অভাবে প্রতিরোধ গড়া সম্ভব হয়নি। অবস্থার অবনতি দেখে সুলতান সিরিনগর দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। রাজকীয় বাহিনী এ সময় তার চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করতে পারেনি।
৫. আলীবেগের নেতৃত্বে অভিযান : ১৩০৪ সালে মোঙ্গলরা আলীবেগের নেতৃত্বে ৩০ বা ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে পুনরায় ভারতবর্ষ আক্রমণ করে। এবার তারা উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের বন্ধুর পথ ধরে অগ্রসর হয়ে লাহোরের আমরোহা পর্যন্ত পৌঁছে।
সুলতানের সেনাপতি গাজি মালিক ও মালিক কাফুর তাদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। ফলে তারা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয় ।
৬. কাবাকের নেতৃত্বে অভিযান : ১৩০৬ সালে মোঙ্গলরা সুলতানের নিকটবর্তী সিন্ধু নদী পাড়ি দিয়ে পুনরায় ভারত আক্রমণ করেন। তারা ভারতের ভিতরে প্রবেশ করে হিমালয় পর্বতের দিকে অগ্রসর হয়।
কিন্তু গাজি মালি এবারও তাদের পরাজিত করেন। তিনি মোঙ্গল নেতা কাবাকসহ প্রায় ৫০ হাজার সেনাকে বন্দি ও হত্যা করে । এবং তাদের স্ত্রী পুত্রদের দাস রূপে বিক্রয় করেন।
৭. ইকবাল মন্দের নেতৃত্বে অভিযান : বার বার পরাজিত হয়ে ও মোঙ্গলরা ভারতবর্ষে অর্থবিত্তের লোভ সামলাতে পারেনি। ১৩০৭-'০৮ সালে ইকবাল মন্দের নেতৃত্বে ৫০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী সিন্ধু নদী অতিক্রম করে অগ্রসর হতে থাকে, সুলতান সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য আলাউদ্দিন খলজি একদল শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যুদ্ধে মোঙ্গল নেতা ইকবাল মন্দ প্রাণ হারায় । প্রচুর মোঙ্গল সেনা আহত নিহত ও বন্দি হয়।
৮. খাজা তাশের নেতৃত্বে অভিযান : মোঙ্গলরা খাজা তাশের নেতৃত্বে ৩০ বা ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে পুনরায় ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। কিন্তু তারা সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সেনাপতি গাজি মালিক ও উলুঘ খানের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ক্ষমতাসীন হওয়ায় পর ১২ বারের বেশি মোঙ্গল আক্রমণের সম্মুখীন হন।
উপর্যুপরি এ ভাগ্য বিপর্যয় এবং সুলতানের সেনাবাহিনী সমরদক্ষতা মোঙ্গলদের মনে এরূপ ভীতি সৃষ্টি করল যে, আলাউদ্দিনের জীবিতকালে মোঙ্গলরা আক্রমণ করতে সাহস পায়নি।
তিনি যদি মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করতেন তবে ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারা ভিন্ন রূপে ধারণ করত ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গল নীতি বিস্তারিত আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।