সাম্প্রতিককালে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণগুলো আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করু...
সাম্প্রতিককালে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণগুলো আলোচনা কর |
সাম্প্রতিককালে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণগুলো আলোচনা কর
- অথবা, তুমি কি মনে কর "আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে” বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ বর্ণনা কর।
- অথবা, তুমি কি মনে কর আধুনিক কালের আইনসভার ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে? যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আইনসভা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্ব ও সরকারের নীতিনির্ধারণ করে থাকে। তবে আইনসভার সদস্য ও শাসন, বিভাগের সদস্যরা একই হওয়ায় শাসন বিভাগ আইন বিভাগের ওপর খবরদারি করছে। এতে অনেকে মনে করে দিন দিন শাসন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
আইনসভার সংজ্ঞা : সরকারের যে বিভাগ রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রচলিত আইনের সংশোধন ও পরিবর্তন করে থাকে তাকে আইনসভা বলে।
আইনসভা একটি যৌথ সংগঠন। অর্থাৎ এখানে সংসদ বিরোধী দল ও সরকারি দল নিয়ে গঠিত হয়। আইনসভার প্রধান কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: আইনসভা সম্বন্ধে বিভিন্ন তাত্ত্বিক তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিচে তাদের মতামত তুলে ধরা হলো :
Prof. Hirchen বলেন, “আইনসভা সরকারি সংগঠনের পাশাপাশি জনগণের কণ্ঠস্বর করা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।"
Prof. Laski বলেন, “আইনসভার কাজ শুধু পার্লামেন্টেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রকৃত কাজ হলো জনগণের অধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে শাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা।"
Prof. Garner বলেন, “যেসব বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভিপ্রায় ব্যক্ত ও বলবৎ হয় তার মধ্যে আইন বিভাগই সর্বোত্তম।"
টকভেলীর মতে, "সকল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইনসভা হলো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের মহান চালিকাশক্তি যেখানে সকল সমস্যার সমাধান করা হয় ও জনগণের প্রাধান্য পায়।"
অর্থাৎ, আইনসভা হলো সরকারের সেই বিভাগ যাতে সরকারের আইন প্রণয়ন ও নীতিমালা নির্ধারণ হয়ে থাকে।
আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ : নিচে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. অভিজ্ঞতার অভা : আইনসভার সদস্যরা জনগণকে ভয়ভীতি, টাকার লোভ দেখিয়ে জোরপূর্বক নির্বাচিত হয়। এতে অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোক নির্বাচিত হয় বলে অভিজ্ঞতার অভাবে এ বিভাগ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।
২. শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি : আইন বিভাগে অদক্ষ লোকের সমাগম বলে শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ আবশ্যক হয়ে পড়ে ফলে আইন বিভাগের ওপর শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. জনকল্যাণমূলক কাজ : বর্তমান রাষ্ট্র আর পুলিশী রাষ্ট্রের মতো নয়। বর্তমান রাষ্ট্র হলো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আর জনকল্যাণমূলক কাজ মূলত শাসন বিভাগই করে থাকে। এতে আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৪. দলীয় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত : আইন বিভাগের সদস্যরা দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনে জয়ী হয় ফলে নির্বাচিত ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা কম থাকে। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
৫. জরুরি অবস্থায় অনুপযোগী : আইনসভা জরুরি অবস্থায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। যেমন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক রাষ্ট্রেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে আইনসভার কোনো ভূমিকা ছিল না বললেই চলে ।
৬. প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ : আইনসভার নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী। আবার একাধারে তিনি শাসন বিভাগেরও প্রধান । তাই আইন বিভাগ শাসন বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করতে পারে না। আবার প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে আইনসভা ভেঙে দিতে পারে ।
৭. মীমাংসায় ব্যর্থতা : আইন সভায় বিভিন্ন শ্রেণি তাদের | স্বার্থ উদ্ধারে পরস্পরে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে কিন্তু এ মীমাংসায় শাসন বিভাগ এগিয়ে আসে।
৮. কেবিনেটের প্রাধান্য : আইনসভায় সদস্যগণের ওপর কেবিনেটের প্রভাব প্রতিনিয়ত অব্যাহত রয়েছে এভাবে তারা আইন পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আইনসভার ক্ষমতা ক্রমশ হৃাস পাচ্ছে।
৯. জনমতকে উপেক্ষা : আইনসভার সদস্যরা নির্বাচনের আগে জনমতকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু নির্বাচনের পর জনমতকে উপেক্ষা করে এতে শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
১০. জনসংযোগের অভাব : আইনসভার সদস্যের চেয়ে জনগণ মন্ত্রিদের বেশি প্রাধান্য দেয়। এতে আইনসভার গুরুত্ব -হ্রাস পায় ও শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১১. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা : আইনসভার কাজ হলো আইন প্রণয়ন সংশোধন ও পরিবর্ধন। কিন্তু আইন বিভাগের এ সকল কার্যাবলির পর্যালোচনার দায়িত্ব আবার সুপ্রিমকোর্টের ওপর পড়ে। এতে বিচার বিভাগ আইন বিভাগের ওপর খবরদারি করে থাকে ।
১২. নেতৃত্বের দুর্বলতা : আইন সভায় অনেক সময় অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অশিক্ষিত লোক নির্বাচিত হয়। এতে তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব পড়ে ওঠে না। ফলে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
উদাহরণ : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। তারা স্ব-স্ব রাষ্ট্রের শাসন বিভাগীয় সমস্যাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছে।
১৩. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অভাব : সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করবে আইন বিভাগ। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকার জন্য আইনসভার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে ও শাসন বিভাগ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে।
১৪. সামরিক হস্তক্ষেপ : আইন বিভাগের দুর্বলতার কারণে শাসন বিভাগ ক্ষমতাশীল হচ্ছে এতে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী ক্ষমতাচরণ করছে। এতে করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সামরিক হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইন বিভাগের ক্ষমতা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে উপর্যুক্ত কারণে এবং শাসন বিভাগ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে।
আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সদস্যরা একই ব্যক্তি হওয়ায় তাদের ইচ্ছামতো শাসনকার্য করার জন্য আইন বিভাগের উপর কর্তৃত্ব ও প্রভাব ফেলছে। ফলে আইন বিভাগ তার মৌলিকত্ব ধরে রাখতে পারছে না।a
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।