আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন |
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন
- অথবা, "একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য।” উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ কেন? আলোচনা কর। অথবা, গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য? উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগ থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো বিচার বিভাগ। আর আইন ও শাসন বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হলে বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখতে হবে।
বিচার বিভাগে আইন ও শাসন বিভাগের প্রভাব থাকলে সম্পূর্ণ পণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাই ব্যর্থ হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করতে হলে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বুঝায় বিচার বিভাগ আইন ও শাসন বিভাগের প্রভাব মুক্ত থাকবে। বিচারকগণ আইনের অধীন হবে আর কারও অধীন হবে না।
বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক চাপ মুক্ত থাকবে। তাহলেই সমাজেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
→ গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগের অপরিহার্যতা : জনগণের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকা আবশ্যক।
Lord Bryce Mordern Democracies গ্রন্থে বলেন “বিচার ব্যবস্থায় দক্ষতা নিরূপণ ছাড়া সরকারের উৎকর্ষ নির্ধারণের ভালো কোনো পথ থাকতে পারে না।"
নিচে গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগের অপরিহার্যতার কারণসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখার অপরিহার্য কারণ হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কারণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। নাগরিকের জানমানের নিরাপত্তা থাকে না।
২. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : বিচার বিভাগ নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষাকর্তা। নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সে আদালতে অভিযোগ করে কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয় না।
৩. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখার একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনের চোখে ধনী-গরিব, প্রভাবশালী আর সাধারণ মানুষ এক কাতারে থাকবে এজন্য বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকা জরুরি।
৪. সংবিধান রক্ষা করা : বিচার বিভাগ সংবিধানের রক্ষাকর্তা। বিচার বিভাগ তখনই সংবিধান রক্ষায় কৃতকার্য হবে যখন বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে।
৫. শাসন সংক্রান্ত কাজ : বিচার বিভাগ শাসন সচে কাজও করে থাকে। যেমন : আইন ব্যবসায়ীদের লাই প্রদান, নাবালকের সম্পত্তির তত্ত্বাবধান প্রভৃতি কর্ম করতে হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
৭. রক্ষা : ব্যক্তিস্বাধীন হলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে হবে। ব্যক্তি বিকাশ, প্রকাশের ক্ষমতা, সংগঠনের ক্ষমতা, রক্ষায় বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া আবশ্যক।
৮. মূলক কাজ : জনগণের জানমালের নির নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগ তদন্তমূলক কাজ করে থাকে। এতে সঠিক ঘটনার উদঘাটন হয় কিন্তু এজন্য বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকা আবশ্যক।
→ আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের উপায়সমূহ : অপরাধীদের শাস্তি ও নিরপরাধীদের মুক্তি নাম করার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়য়। কিছু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে কতিপয় উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
নিচে তা উল্লেখ করা হলো :
১. বিচারকের চাকরির নিশ্চয়তা : বিচারকের যদি চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং অন্যায়ভাবে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত না করা হয় তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে পারে।
২. বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি : বিচারকগণদের নিয়োগ দলীয়ভাবে না হয়ে যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে হলে বিচারকগণ নির্দলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে। এতে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে।
৩. যোগ্য বিচারক নিয়োগ : বিচারক নিয়োগ দেওয়ার সময় সৎ, যোগ্য, আইনত ও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে।
৪. পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা : বিচারকের বেতন-ভাতা পর্যাপ্ত না হলে বিচারকগণ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে এজন্য বিচারকদের পর্যাপ্ত বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে এতে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে।
৫. বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ : বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগ থেকে পৃথক রাখতে হবে। তাহলে বিচার বিভাগ অন্য বিভাগের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৬. পদোন্নতির ব্যবস্থা : তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দেখা যায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি বিবেচনা না করে অল্প অযোগ্য লোকের পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং দলীয় লোকের দ্রুত পদোন্নতি হয়। ফলে বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখতে পদোন্নতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
৭. বিচারকের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি : যত কিছুই করা হোক না কেন বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকার জন্য সরকার বিচারকদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি।
বিচারকদের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মনোভাবই বিচার বিভাগকে শত ভাগ নিরপেক্ষ রাখতে পারবে।
৮. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বুঝায় বিচার বিভাগ থেকে আইন ও শাসন বিভাগকে পৃথক করা। বিচার বিভাগের কোনো কাজে আইন ও শাসন বিভাগ হস্তক্ষেপ করবে না।
বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা একটা বিভাগ হবে। শাসন বিভাগ এর ওপর হস্তক্ষেপ করতে না পারলে বিচার বিভাগ অনেকাংশেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখতে হলে উপর্যুক্ত আলোচনা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো যথাযথ প্রতিষ্ঠিত হলেই একমাত্র স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ আশা করা সম্ভব হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় স্বাধীন বিচার বিভাগের বিকল্প নেই।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন। যদি তোমাদের আজকের আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ অপরিহার্য কেন পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।