১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ |
১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ
- অথবা, বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন সম্পর্কে আলোচনা কর।
- অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধান সমগ্র জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দেশের প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ৩৪ সদস্যবশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন মহলের ৯৮টি সুপারিশের ভিত্তিতে ৭৪টি বৈঠকে ৩০০ ঘণ্টা সময়ে সংবিধান প্রণয়ন করেন।
এরপর সংসদে মুক্ত বিতর্কের মাধ্যমে ৪ নভেম্বর ১৯৭২ বিপুল ভোটাধিক্যে এটি গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্যকর হয়।
সংবিধান প্রণয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়। ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিব অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারি করেন।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
৪ নভেম্বর খসড়াটি গৃহীত হয়। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে শাসনতন্ত্রটি কার্যকর হয়। ১৯৭২ সােেলর পর থেকে বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৬টি সংশোধনী গৃহীত হয়।
এ বাংলাদেশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য যেকোনো সংবিধান নির্দিষ্ট কতগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনী হলো ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টম্বর গৃহীত ষোড়শ সংশোধনী। বর্তমানে প্রচলিত বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১. প্রজাতন্ত্রের বাংলাদেশ : সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি একক 1. স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত। বলা হয় যে পূর্বে যেসব এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল। স্বাধীনতার পর সেসব এলাকা নিয়েই বাংলাদেশ গঠিত হবে।
২. অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তি : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (ক) অনুযায়ী অসাংবিধানিক পন্থার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
৩. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের ৮ নং অনুচ্ছেদে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ছিল চারটি। যেমন- (ক) জাতীয়তাবাস, (খ) গণতন্ত্র, (গ) সমাজতন্ত্র ও (খ) ধর্ম নিরপেক্ষতা। ১৯৭৯ সালে পরবর্তীতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। (ক) সর্বশক্তিমান আলাহ তায়ালার ও তাঁর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, (খ) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ, (গ) গণতন্ত্র ও (খ) সমাজতন্ত্র।
৪. মৌলিক অধিকার : সংবিধানের তৃতীয় ধারায় নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত করার তাগিদে কতকগুলো মৌলক অধিকার সংবিধানে লিপিবন্ধ করা হয়। যেমন- সাম্যের অধিকার, চলাফেরা, সভা-সামিতি, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সম্পত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতির অধিকার দেওয়া হয়
৫. জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদে অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবেন এবং তাদের এ নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবেন।
৬. পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার ও পার্লামেন্টারির প্রাধান্য : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান হবেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদসহ প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রকৃত শাসক।
৭. সংবিধানের সার্বভৌমত্ব : বাংলাদেশ সংবিধানে শাসনতন্ত্রের সার্বভৌমত্ত্বের বিধান রয়েছে। এখানে সংবিধান ব শাসনতন্ত্রই হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন ভাই সংবিধানের সাথে সঙ্গতিবিহীন যেকোনো আইন বাতিল বলে গণ্য হবে।
৮. জনগণের সার্বভৌমত্ব : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।
৯. শাসনতন্ত্র বা সংবিধানের প্রাধান্য : শাসনতন্ত্রের যেকোনো ধারা সংশোধন বা রদবদল করার জন্য পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতিসূচক প্রস্তাব বা ভোট গ্রহণের বিধান সংবিধানে রয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যদের সম্মতি প্রয়োজন।
১০. বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা : বাংলাদেশ সংবিধানের বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট নামে পরিচিত হবে। আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত এই সুপ্রিম কোর্ট শাসন বিভাগ থেকে পৃথক থাকবে।
১১. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র : বাংলাদেশে যেহেতু কোনো প্রদেশ নেই, সেহেতু এখানে সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে এবং দেশে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত থাকবে।
১২. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধনগত দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়। একে পরিবর্তন করতে হলে দরকার শিরোনাম, সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন।
১৩. সর্বজনীন ভোটাধিকার : বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী ন্যূনতম ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার যোগ্য। এক ব্যক্তি এক ভোট নীতিই বাংলাদেশ সংবিধানের সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এই সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল লিখিত দলিল। এতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, শাসক শাসিতের সম্পর্ক, অধিকারের প্রশ্ন ইত্যাদি বিষয়ে সাংবিধানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য যেহেতু জনগণ, সেহেতু রাষ্ট্র জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে যুগোপযোগী করে তোলে। তাই বাংলাদেশের সংবিধান বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে পবিত্র ও অমূল্য সম্পদ ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ। যদি তোমাদের আজকের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি প্রবন্ধ লেখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।