উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল
উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল
উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল
উত্তর : ভূমিকা : প্রথম মুহাম্মদের রাজত্বকালে অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে ওমর বিন হাফসুনের উত্থান ঘটে। তার সময়ে স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ওমরের বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অশান্ত । রোন্দা ও মালাগার মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে তার দখলে ছিল।
৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রোমানদের পরিত্যক্ত পুরাতন দুর্গে তার আস্তানা প্রতিষ্ঠা করেন। নওমুসলিম ও মোজারাবদের নিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
এভাবে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করে একাধারে ত্রিশ বছর স্পেনের উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তিনি ধূর্ততা, শঠতা, বিশ্বাসঘাতকতার দ্বারা আমিরদেরকে প্রায় পর্যুদস্ত করে ফেলেন এবং উমাইয়া শাসনের ভিত প্রকম্পিত হয় ।
→ ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড : ওমর প্রথমে আমির প্রথম মুহাম্মদের রাজত্বে তার সংগ্রামী কর্মকাণ্ড শুরু করে। নিম্নে ওমর বিন হাফসুনের উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. প্রথম মুহাম্মদের সাথে সংঘর্ষ (৮৮০-৮৬) : ওমর বিন হাফসুন বর্ধিত শক্তিতে উৎসাহিত হয়ে একদা রিজিও আক্রমণ করেন। মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হিশাম বিন আজিজকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে হিশাম প্রথমে পরাজিত হয় পরে অবশ্য ওমরকে পরাজিত করেন।
তার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে হিশাম তাকে ৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভার নগরপালের সাথে হাফসুনের মনোমালিন্য হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে ব্যর্থ হন এবং পদত্যাগ করে পুনরায় বোবাস্ট্র পর্বতের দস্যুদের সাথে মিলিত হন।
প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করে মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মুহাম্মদ জায়েদ বিন কাশিমকে প্রেরণ করলে ওমর ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে ওমর অতর্কিতে রাজকীয় বাহিনীকে আক্রমণ করে জায়েদকে হত্যা করেন।
অতঃপর মুহাম্মদ ক্রুদ্ধ হয়ে ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে আল মুনজিরকে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে প্রেরণ করলে ওমর আল হামায় পালায়ন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ সময় পিতার মৃত্যু সংবাদে মুনজির রাজধানীতে ফিরে আসেন।
২. মুনজিরের সাথে সংঘর্ষ (৮৮৬৮৮) : ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুনজির সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের কিছু অসমাপ্ত কাজের প্রতি মনোযোগ দেন। এ সুযোগে ওমর সারাগোসা দখল করে তলেদোর অভিমুখে যাত্রা করেন।
মুনজির সেনাপতি বিন হিশাম বিন আব্দুল আজিজকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে ওমর একটি বন্ধুত্বমূলক চুক্তি করার আবেদন করেন। তিনি নগরে প্রবেশ করলে বিশ্বাসঘাতক ওমরের অনুচরগণ তাকে আক্রমণ করে । অবশেষে আমির তাঁর ভ্রাতা আব্দুল্লাহকে প্রেরণ করেন।
তিনি ৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে বসন্তকালে দুর্ভেদ্য বোবাস্ট্র অবরোধ করলে ওমর আত্মসমর্পণ করে একশত খচ্চর প্রার্থনা করেন । কিন্তু তিনি দলবলসহ রাতের অন্ধকারে আমিরের তাবু হতে পলায়ন করেন ।
৩. আব্দুল্লাহর সাথে সংঘর্ষ : ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল্লাহ ওমরের বিরুদ্ধে চল্লিশ দিন ব্যাপী এক অভিযান পরিচালনা করে বহু বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন। পর পর কয়েকটি যুদ্ধে ব্যর্থতা ও অমাত্যবর্গের দৌরাত্ম্যের ত্রিসংকুল অবস্থায় পড়ে আব্দুল্লাহ ওমরের স্মরণাপন্ন হন।
ওমর উদ্দেশ্য গোপন রেখে সেনাবাহিনীতে যোগদেন এবং ষড়যন্ত্র করে সেনাপতি ইব্রাহিম বিন খামিরকে ও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে বন্দি করেন।
খ্রিস্টানদের সহায়তায় রাজধানীতে এতদূর প্রভাব বিস্তার করেন যে রাজধানীর জন্য তিনি হুমকি হয়ে দাঁড়ান । ওমর গোয়াদল কুইভার নদীর উত্তরের প্রধান দুর্গসমূহ দখল করেন।
ফলে দলে দলে স্পেনবাসী তাকে নেতা বলে স্বীকার করতে থাকে। এখানেই ওমরের কৃতিত্বের চূড়ান্ত পর্যায় এবং উমাইয়া শাসনের জন্য খুবই দুঃখজনক ছিল।
৪. পোলির যুদ্ধ : আব্দুল্লাহ ওমরকে দমন করার জন্য প্রধান সেনাপতি আব্দুল মালেক বিন উমাইয়াকে ৪,০০০ নিয়মিত ও ১০,০০০ সদ্য সংগৃহীত সৈন্য নিয়ে পোলি অভিমুখে যাত্রা করেন। ওমর ৩০,০০০ সৈন্য নিয়ে উমাইয়া বাহিনীর মোকাবিলায় আসেন।
৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ এপ্রিল পোলির যুদ্ধে ওমর পরাজয় বরণ করে। উমাইয়া বাহিনী ইসিজা দখল করে বোবাস্ট্র অভিমুখে যাত্রা করে ক্লান্ত হয়ে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
এদিকে আফ্রিকা ও আব্বাসীয়দের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে ওমর আব্দুল্লাহর সাথে সন্ধিতে আবদ্ধ হন এবং দত্তক পুত্র জামিন হিসাবে প্রেরণ করেন । তার এ ধূর্তামির জন্য অচিরেই যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ওমর ইসিজা পোলি পুনরুদ্ধার করে হায়েন গ্রানাডা দখল করেন ।
৫. ধর্মান্তর : স্বীয় শক্তি ও সাফল্যে গর্বিত হয়ে ওমর সমস্ত পরিবারবর্গসহ ৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘স্যামুয়েল' নাম ধারণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ায় খ্রিস্টানগণ তাকে সাহায্য করবে বলে তার বিশ্বাস ছিল কিন্তু খ্রিস্টানরা ওমরকে বিশ্বাসঘাতক মনে করতো।
এদিকে ইয়াহিয়া বিন আনাতুসসহ তার সাঙ্গ পাঙ্গরা তার আনুগত্য অস্বীকার করে আব্দুল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করেন। এ সময় আমিরের পক্ষে ওমরকে একেবারে দমন করা সম্ভব ছিল না বলে চুক্তি সম্পাদন করেন।
৬. তৃতীয় আব্দুর রহমানের সাথে সম্পর্ক : খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান সিংহাসনে আরোহণ করার সাথে ওমরের ভাগ্যরবি অস্তমিত হতে শুরু করে। আব্দুর রহমান স্যামুয়েলকে ধ্বংস করায় বদ্ধপরিকর হন।
তিনি স্যামুয়েলকে গুয়াদাল কুইভার নদীর তীরে টোরক্সের যুদ্ধে আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। অতঃপর তিনি রিজিও আক্রমণ করলে খ্রিস্টানগণ প্রাণপণ যুদ্ধ করে রক্ষা করতে পারল না ।
খলিফা স্যামুয়েলের আশ্রয়স্থল টোলক্স আক্রমণ করে তা হস্তগত করেন। এভাবে পরাজিত হয়ে স্যামুয়েলের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এবং ৯১৭ খ্রিস্টব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ওমর বিন হাফসুন ছিলেন একজন প্রতিভাবান সংগঠক ও সমরকুশলী নেতা। ক্রমাগত ত্রিশবছর ধরে তিনি তিনজন আমির এবং একজন খলিফার সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন।
তবে তার ধূর্তামি, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা ও দস্যুবৃত্তি তার বীরত্বের অহমিকাকে ম্লান করে দেয়; তবুও একজন সফল নেতার যাবতীয় গুণাবলি তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ওমর বিন হাফসুনের কর্মকাণ্ড কি ছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।