তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ
তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ |
তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ
তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্দুর রহমান ছিলেন সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত সেসব মানুষদের একজন যিনি জাতির চরম সংকটকালে জাতির জীবনে আবির্ভূত হন। বছরের পর বছর তিনি রাজ্যের সংহতি বিধান করেন এবং এটিকে এমন এক সময় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের চোখে একটি মহান সভ্যতার কেন্দ্ররূপে আকর্ষণীয় করতে কঠোর পরিশ্রম করেন যখন পশ্চিম ইউরোপের সমগ্র এলাকা আলস্য ও অজ্ঞতায় ডুবেছিল।
তৃতীয় আব্দুর রহমান দেশের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন। সকল উমাইয়া শাসকদের মধ্যে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠতম ।
→ তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব : স্পেনে উমাইয়া শাসকদের মধ্যে তৃতীয় আব্দুর রহমান ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। স্পেনে যখন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, বিশৃঙ্খলা, গৃহযুদ্ধ আর বহিঃশত্রু খ্রিস্টানদের আক্রমণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে উন্নতির এক চরম শিখরে নিয়ে যান। নিম্নে তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সামরিক বাহিনী সংস্কার : সিংহাসনে আরোহণের পর চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নিরসনের জন্য তিনি সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠন করেন। তিনি সুকৌশলে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালিয়ান প্রভৃতি বেতনভুক্ত সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বিশাল ও শক্তিশালী বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী ‘স্লাভ’ বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। এই বাহিনীর সাহায্যে তিনি বিদ্রোহীদের নির্মূল করেন ।
২. সংগঠক : সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি রাজনৈতিক অরাজকতা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ এবং ফাতেমীয়দের বিরোধিতার সম্মুখীন হন এবং দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, বলিষ্ঠ সমরনীতি এবং অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে তিনি স্পেনের উমাইয়া শাসনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাজ্যে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
ফলে পূর্ববর্তী শাসনামলে বিপন্ন উমাইয়া শাসন সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বীয় সংগঠন শক্তি দ্বারা তিনি কর্ডোভার কেন্দ্রীয় ক্ষমতা সুদৃঢ় করেন ।
৩. শাসক হিসেবে : শাসক হিসেবে তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করেন। কর্ডোভা ছাড়া সমগ্র স্পেনকে ৬টি প্রদেশে বিভক্ত করেন।
এ প্রদেশগুলোয় তিনি সামরিক ও বেসামরিক শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। তিনি স্লাভ ও নবদীক্ষিত মুসলমানদের দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দান করেন ।
৪. ন্যায়বিচার : তিনি ছিলেন ন্যায়বিচারক। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তার কাছে ন্যায় বিচার পেত। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তার বিদ্রোহী পুত্রকেও মৃত্যুদণ্ড দিতে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব বোধ করেননি।
৫. বৈদেশিক সম্পর্ক : তার বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল উত্তর স্পেনের খ্রিস্টানদের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে ধূলিসাৎ করা, অন্যদিকে ভূমধ্যসাগরে ফাতেমীয় নৌবহরের প্রভাব খর্ব করা। তার অপর একটি উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের সাথে মিত্রতা ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা।
এ সম্পর্ক স্থাপিত হয় দূত বিনিময়ের মাধ্যমে। তার দরবারে কনস্টান্টিনোপল সম্রাট ৭ম কনস্টান্টাইন, জার্মান নৃপতি প্রথম অটো, ফ্রান্সের রাজা প্রোভেন্স ও ইতালির রাজাগণ দূত প্রেরণ করেন।
৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন দূত প্রথমবার কর্ডোভায় পৌঁছে এবং বিনিময়ে আব্দুর রহমান ক্যাথলিক বিশপ হিশাম ইবন হুদদাইলকে উপহার সামগ্রীসহ সম্রাটের নিকট প্রেরণ করেন ।
৬. কৃষি সম্প্রসারণ : আব্দুর রহমানের শাসনামলে কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। রাজ্যের চাষ উপযোগী জমি কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হতো এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক জমির মালিক পেত এবং বাকি অর্ধেক রাজকোষে জমা হতো রাজস্ব হিসেবে।
তিনি কখনো উৎপীড়নমূলক কর চাপাননি। কৃষি ব্যবস্থার সম্প্রসারণের জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে চারাগাছ, বীজ সংগ্রহ করা হতো ।
৭. শিল্পের সম্প্রসারণ : সমস্ত স্পেনে বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সমস্ত কারখানায় রেশম, কার্পাস, পশম, চামড়া, ধাতুর দ্রব্যাদি উৎপাদিত হতো সিল্কের কাপড় উৎপাদিত হতো ভ্যালেনসিয়া এবং এলভিরায়, অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হতো টলেডোতে, কার্পেট Cuenca শহরে।
পরবর্তীতে বয়ন শিল্পে সেভিল ও আল বিয়া কর্ডোভাকে ছাড়িয়ে যায়। স্পেনে ধাতুর অস্ত্রশস্ত্র, তরবারি, বর্ম ইত্যাদি তৈরি করা হতো।”
৮. বাণিজ্যের উন্নতি বিধান : ব্যবসা-বাণিজ্যোর সুবিধার্থে খলিফা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার ছাড়াও বহু নতুন সেতু ও রাজপথ নির্মিত হয়। নিরাপত্তা ও শান্তি যাতে বহাল থাকে সে জন্য বিভিন্ন শহরে তিনি Watch Tower নির্মাণ করেন। তার রাজত্বে প্রায় এক হাজার বাণিজ্য জাহাজ ছিল ।
৯. শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি : শিক্ষা সংস্কৃতিতে তৃতীয় আব্দুর রহমানের সময় এক নবজাগরণের সূচনা হয় । তিনি রাজ্যের সর্বত্র স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড হতে বহু শিক্ষার্থী তখন স্পেনে শিক্ষা অর্জন করতে আসতো।
তখন বহু জ্ঞানীগুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তির সমাগম হয়েছিল। তার সময়ে কর্ডোভা ইউরোপের বাতিঘর হিসেবে খ্যাতি লাভ করে ।
১০. স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ : তিলোত্তমা নগরী কর্ডোভায় খলিফা আব্দুর রহমান অতুলনীয় ইমারত স্থাপত্যের চরম উৎকর্ষতা লাভ করে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মদিনাতুল জাহারা এবং কর্ডোভা মসজিদের সম্প্রসারণ ও অলঙ্করণে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়া তিনি স্নানাগার, বিশ্ববিদ্যালয়, উদ্যান প্রভৃতি স্থাপন করে যশস্বী হয়েছেন ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তৃতীয় আব্দুর রহমান সিংহাসনে আরোহণ করে সরকারি কোষাগারকে শূন্য অবস্থায় দেখতে পান। অগণিত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তিনি আন্দালুসিয়াকে এর অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি আধিপত্যর হাত থেকে রক্ষা করেন। কৃষি, কলকারখানা, ব্যবসা- বাণিজ্য এবং শিল্পবিজ্ঞান সকল ক্ষেত্রে চরম উন্নতি সাধিত হয়।
তার সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী সম্ভবত ঐসময়ের বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বাহিনী তাকে খ্রিস্টানদের উপর আধিপত্য প্রদান করতে সাহায্য করে। সর্বকালের সর্বাপেক্ষা গর্বিত রাজারাও তার বন্ধুত্ব কামনা করতেন । এজন্য তাকে স্পেনের ত্রাণকর্তা বলা হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্ব সংক্ষেপে লিখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।