নারীর দ্বৈত ভূমিকা কি | নারীর দ্বৈত ভূমিকা বলতে কী বুঝ
নারীর দ্বৈত ভূমিকা কি | নারীর দ্বৈত ভূমিকা বলতে কি বুঝ
উত্তর : সূচনা : সমাজে ও রাষ্ট্রে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট থাকলেও নারীকে অধিকাংশ সময়ে নারী ও পুরুষের উভয়ের কাজ করতে হয় । প্রশ্নের আলোকে নারীর দ্বৈত ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো :
নারীর দ্বৈত ভূমিকা কি | নারীর দ্বৈত ভূমিকা বলতে কি বুঝ |
→ নারীর দ্বৈত ভূমিকার ধারণা : শিল্পায়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে নারীরা যখন বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ নেয়, তখন তাদের বাইরের কাজ বেড়ে যায়। কিন্তু আগে ঘর ও বাইরের কাজ নারী-পুরুষের জন্য বিভক্ত ছিল। মেয়েরা বাইরের কাজে যোগদানের পর তাদের ঘরে-বাইরে উভয় জায়গায়ই কাজের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সুতরাং এ সময় নারীকে দ্বৈত শ্রম বা দ্বৈত ভূমিকায় দেখা যায়। নারীরা বাইরের দায় দায়িত্ব পালন শেষে ঘরে ফিরে আবার সার্বক্ষণিক ঘর পরিচর্যায় নিয়োজিত হন। এভাবেই নারীরা কর্মক্ষেত্রে (at work) এবং গৃহক্ষেত্রে (at home) দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।
১. উৎপাদনে : যে কাজের বিনিময় মূল্য আছে তাই হলো উৎপাদন। অর্থাৎ, যে উৎপাদনমূলক কাজের দ্বারা যে ভূমিকা পালন করতে হয় তাকে উৎপাদনমূলক ভূমিকা বলা হয়। এই কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর ব্যবহারিক মূল্য ও সম্ভাব্য মূল্য আছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদন মূলক কাজের সাথে পুরুষরাই যুক্ত বা সম্পৃক্ত থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ঘরের বাহিরে ও অভ্যন্তরে বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজে ভূমিকা রাখে যার ফলে আয় ও দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন হয় ।
২. পুনঃউৎপাদনমূলক ভূমিকা : পুনঃউৎপাদনমূলক ভূমিকা হলো সাধারণত গৃহস্থালির কাজ কর্মের মাধ্যমে যে ভূমিকা পালন করা হয় । এই কাজের বৈশিষ্ট্য হলো এর কোন বিনিময় অর্থ বা বিনিময় মূল্য নেই। অথচ এর ব্যবহারিক মূল্য অসীম, সেগুলো হলো :
(ক) সন্তান জন্মদান : একজন নারীর অন্যতম একটি উৎপাদনমূলক কাজ হলো সন্তান জন্মদান। এর সামাজিক ও রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কোন মূল্য নেই। কিন্তু সংসার বিস্তারের জন্যে নারীকে সন্তান জন্ম দিতে হয়।
(খ) সন্তান লালন পালন : একজন নারীর অন্যতম একটি কাজ হলো সন্তান লালন-পালন করা। এই কাজে নারীকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে নারীরা সন্তান লালন-পালনের ভূমিকা পালন করে ।
(গ) প্রয়োজনীয় কাজ : সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক কাজ, যেমন : রান্না-বান্না, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি কাজে নারীর ভূমিকাই প্রধান ।
খ) অন্যান্য : আরো অনেক ধরনের কাজে নারীকে ভূমিকা রাখতে হয়। সেগুলো হলো- পানির ব্যবস্থা, পরিবারের সদস্যদের সেবা ও জৈবিক কার্যাবলি সম্পাদনে ভূমিকা পালন করতে হয়। এই কাজগুলো জাতীয়ভাবে স্বীকৃতিহীন হলেও প্রয়োজনের তাগিদে নারীকে এই দ্বৈত ভূমিকা পালনে এসব কাজ বিনা বিনিময়ে করে যেতে হচ্ছে।
উপসংহার : নারীকে উৎপাদন ও পুনউৎপাদন দ্বৈতভূমিকাই পালন করতে হয় অথচ নারীকে শুধু প্রাইভেট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং পুরুষকে পাবলিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়। এটাই হলো নারীর দ্বৈত ভূমিকা ।