ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর
ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে নারী এবং পুরুষ পাশাপাশি বসবাস করে আসছে । কালে কালে বিভিন্নভাবে নারী বৈষম্যের শিকার হয়েছে । ইসলামে এমন একটি যুগের কথা বলা হয় যা ‘জাহেলিয়া যুগ' বা নারীর উপর পুরুষের নির্যা চনের যুগ বলা হয়।
এই সময়ে নারীদের কোনো মূল্যায়ন করা হতো না। তাদের পণ্যে পরিণত করা হয়েছিল। সেই সময় নারীরা দাসত্ব বরণ করেছিল। আর এই যুগ থেকে নারীদের মুক্তি দিয়েছে ইসলাম ধর্ম । যেখানে নারীর পূর্ণাঙ্গ অধিকার দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্ম নারীদের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছে ।
ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর |
→ ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা : ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। যেখানে সমগ্র মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার বিধান রয়েছে। ইসলাম ধর্ম মানুষকে সকল দুর্দশা, অনিয়ম, হীন অবস্থা থেকে মুক্ত করে আলোর পথ দেখিয়েছে। নিম্নে ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. মা হিসেবে নারী : ইসলাম ধর্মে নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তার চেয়েও বেশি মর্যাদা দেয়া হয়েছে মা হিসেবে। আল্লাহ পাক তার আনুগত্যের পরেই মায়ের প্রতি আনুগত্যের কথা বলেন। আরো উল্লেখ আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত ।
সন্তানদের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা, আদর-স্নেহ, ত্যাগ ইত্যাদির কারণে মাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
২. স্ত্রী হিসেবে : আমাদের সমাজ জীবনে পারস্পরিক সহাবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে যেমন একজন অন্যজনের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না তেমনি পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন । ইসলাম ধর্ম নারীকে নরের সমান মর্যাদা দিয়েছেন।
সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে বন্ধু হিসেবে মনে করবে। বিপদে-আপদে পাশে থাকবে। আল্লাহ পাক বলেন, নারীরা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা নারীদের পরিচ্ছদ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭]।
৩. কন্যা হত্যার চিরাবসান : এক সময় এমন একটি যুগ ছিল যেখানে কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা হতো। তাদের জন্মের পর হত্যা করা হতো । তাদের বাজারে পণ্য হিসেবে ক্রয় বিক্রয় করা হতো। কন্যা সন্তানদের দাসে পরিণত করা হতো। সেই অবস্থা হতে ইসলাম তাদের মুক্তি দিয়েছে।
এক সময় আরব দেশে কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। আর এটি বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসে মানবতার ধর্ম, কল্যাণের ধর্ম ইসলাম ধর্ম। মহানবি (স.) বলেছেন, যে কন্যা সন্তানকে হত্যা করবে, সে চির জাহান্নামী হবে, পক্ষান্তরে যে সন্তুষ্ট চিত্তে কন্যা সন্তানদের আদরযত্ন করবে, প্রতি পালন করবে সে চির জান্নাতী হবে।
মহানবী একদিকে যেমন কল্যাণের খবর এবং অন্যদিকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন । আর এভাবে নারী তা অধিকার ও মর্যাদা ফিরে পেয়েছে।
৪. শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা : ইসলাম ধর্ম নারীকে তার প্রাপ্য ফিরিয়ে দিয়েছে। ইসলাম শুধুমাত্র নারীকে পুরুষের সমান জ্ঞান অর্জন করতে বলে নাই বরং জ্ঞানার্জনের জন্য বাধ্যতা আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষা অর্জনের দ্বার নারীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
তাদের জন্য জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । শিক্ষার কারণেই অনেক যুগে অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে ইসলাম কর্তৃক অধিক মর্যাদাবান ঘোষণা করা হয়েছে।
৫. বৈবাহিক ক্ষেত্রে : বিবাহের ক্ষেত্রেও নারীকে তার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা হয়েছে। ইসলাম নারীকে তার স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। তবে এখানে অভিভাবকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শান্তি-শৃংখলার জন্য অভিভাবকের অনুমতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে জোর পূর্বক তার মতামতের বাইরে বিবাহ দেওয়ার কথা নিষেধ করা আছে । এই প্রসঙ্গে নবী করিম (স.) বলেন, “বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবক অপেক্ষা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের মতামতের গুরুত্বই বেশি।”
৬. তালাকে নারীর অধিকার : নারীর মর্যাদা রক্ষা এবং বংশ রক্ষার তাগিদে বিবাহ। আর কোনো কারণে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দেয় যা অশান্তি হয় তাহলে ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তালাকের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ উভয়ে তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে । একজন নারী যেন তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে তেমনি একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে।
৭. বিধবা নারীর মর্যাদা : ইসলাম বিধবা নারীর পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দিয়েছেন। মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন বিধবা নারী যেন তার স্বামীর অভাবে ভালোভাবে চলতে পারে সেজন্য তার স্বামীর সম্পত্তির উপর অধিকার দিয়েছে।
বিধবা নারী স্বামীর সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ পায় । যা দ্বারা তার পরবর্তী জীবন ভালোভাবে চলতে পারে। তাছাড়া ইসলামি অনুশাসন অনুযায়ী একজন বিধবা নারী তার প্রয়োজনে আবার বিবাহ করতে পারবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলাম হলো মুক্তি, মানবতা, কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম নারী-পুরুষ ভেদে মানব জাতিকে সমান অধিকার দিয়েছে। ইসলাম নারীকেও তার প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। তাই ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে পরিপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করব ।