প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর
প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর ।
প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর |
প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব নিরূপন কর
উত্তর : ভূমিকা : পিতা প্রথম আব্দুর রহমান স্পেনে উমাইয়া স্বাধীন আমিরাত প্রতিষ্ঠার পর প্রথম হিশামকে উত্তরাধিকারী করে মৃত্যুবরণ করেন।
পিতার মৃত্যুর পর হিশাম সিংহাসনে আরোহণ করেন। পিতা কর্তৃক নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পথ সমতল বা মসৃণ ছিল না।
প্রথম হিশাম স্বীয় যোগ্যতা, মেধা ও প্রতিভা দ্বারা ধীরে ধীরে নব প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া আমিরাতের ভিতকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। রাজ্য বিজয় নয়, বরং সুশাসন ও সংহতির দ্বারা তিনি আমিরাতের স্থায়িত্বকে সুনিশ্চিত করেন ।
→ প্রথম হিশামের কৃতিত্ব : স্পেনের উমাইয়া আমিরাতে প্রথম হিশাম গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তার রাজত্বকালে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করে স্পেনকে সাময়িক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন । নিম্নে তার কৃতিত্বের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হলো :
১. উমাইয়া খিলাফত সুদৃঢ়করণ : আব্দুর রহমান আদ দাখিল স্পেনে উমাইয়া রাজবংশের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু এর বুনিয়াদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পড়ে তার উত্তরাধিকারীদের উপর। হিশাম সে দায়িত্ব অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পালন করেন।
তিনি একের পর এক বিদ্রোহ দমন করে স্পেনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভেদ দূর করেন। অতঃপর ফ্রাঙ্কোদের দমন করে তিনি স্পেনের সার্বভৌমত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত ভিত্তির উপর স্থাপন করেন ।
২. বিদ্রোহ দমন : প্রথম আব্দুর রহমান তাঁর তিন ছেলের মধ্যে হিশামকে অধিক যোগ্যতাপূর্ণ ও ধর্মপ্রাণ বিধায় তাকে উত্তরাধিকার নিযুক্ত করেন। কিন্তু অনতিকালেই দুই ভাই হিশামকে ক্ষমতচ্যুত করতে হাত মিলান।
অবশেষে হিশাম ২০ হাজার সৈন্যনিয়ে বুলক বা বুলতে নামক প্রান্তরে এসে উপস্থিত হন। আব্দুল্লাহ হিশামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হয়। আমির প্রথম হিশাম তার ভাইদের ক্ষমা করে দেন।
ভ্রাতাদের বিদ্রোহ দমন করার পর আমির হিশাম পূর্ব স্পেনের সাঈদ বিন হোসাইন বিন ইয়াহিয়া আল আনসারির নেতৃত্বাধীন হিমারীয় বিদ্রোহ দমন করেন ।
৩. ফ্রান্সে অভিযান : প্রথম হিশাম যখন সিংহাসনে বসেন তখন ফ্রান্সের নারবো ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে খ্রিস্টানরা লুটতরাজ ও হত্যাকাণ্ড শুরু করে দেয়। ৭৭২ খ্রিস্টাব্দে আবু উসমানের নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী ফ্রান্সে প্রেরণ করেন।
সুদীর্ঘ বত্রিশ বছর পর নারবোতে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো টুলুসের উক উইলিয়াম মুসলমান অভিযান প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
ফলে সেপটেমানিয়া মুসলমানদের দখলে আসে। অতঃপর চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে আব্দুল করিম বিন আব্দুল ওয়াহিদ আস্তুরিয়া ও গ্যালিসিয়া আক্রমণ করেন।
আস্তুরিয়ার রাজা প্রথম বরমূড়া এবং তার ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিতীয় আল ফোনসো উভয়েই যুদ্ধে পরাজিত হন। মুসলিম বাহিনী ফ্রান্সের বিশাল এলাকা দখল করে এবং খ্রিস্টান নৃপতিগণ হিশামের সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হয়।
৪. শাসন সংস্কারক হিসেবে : তিনি জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণসাধনে প্রশাসনকে নিয়োজিত করেন। তিনি দেশের অপ্রয়োজনীয় আইন রহিত করেন। তিনি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে প্রদেশগুলো পরিদর্শন করতে নিয়োগ করেন। তারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আচরণ সম্পর্কে তার নিকট প্রতিবেদন পাঠান ।
তিনি যাকাত আদায়ের ব্যাপারে সজাগ ছিলেন এবং কখনো ধর্মের অনুমোদন বিহীন কর আরোপ করতেন না। তিনি দেশে নৈশ প্রহরীর প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ করতেন।
৫. গুপ্তচর প্রথা চালু : তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গুপ্তচর প্রথা চালু করেন। তিনি এ গুপ্তচরদের সাহায্যে সাম্রাজ্যের প্রজাদের অবস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পর্কে খবর নিতেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হতো তাহলে তিনি তাকে বরখাস্ত করতেন ।
৬. জনদরদি শাসক : তিনি জনসেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। জনসাধারণের অসুবিধার অভিযোগসমূহ বিচারালয়ে নিষ্পত্তি করা হতো। তিনি রোগীর জন্য খাদ্য ও ঔষধ এবং অভাবী লোকের জন্য অর্থ দিয়ে দাতব্যকর্ম সম্পাদনের জন্য এমনকি দুর্যোগপূর্ণ রাতেও প্রাসাদ থেকে গোপনে বের হতেন।
৭. মালিকী মাজহাবের প্রবর্তন : তিনি চার মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম পবিত্র মদীনা নগরীতে বসবাসকারী প্রখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইমাম মালিক বিন আনাসের ধর্মপ্রচার ও বিধানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। আমির হিশাম মালিকী মাজহাবকে স্পেনের রাষ্ট্রীয় ধর্মীয় মতবাদের মর্যাদা দেন।
তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা ফকিহদের সমাদর করতেন। স্পেনের সমস্ত মুসলিম মালিকী মতবাদের অনুসারী হওয়ায় ‘মুয়াত্তা’ ছিল তাদের কুরআনের পর সর্বাপেক্ষা শ্রদ্ধেয় গ্রন্থ ।
৮. শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক : তিনি শিল্প ও সাহিত্যের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন। তার দরবারের বিখ্যাত কবি ছিলেন আমর ইবনে আলী গাফ্ফার, ইসা বিন দিনার, আব্দুল মালিক বিন হাবিব, ইয়াহিয়া বিন ইয়াহিয়া, সাঈদ বিন হাসান, ইবনে আবু হিন্দ ।
৯. স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক : তিনি স্থাপত্যের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য একটি ঝর্ণা ধারা সৃষ্টি করেন। তিনি পিতা কর্তৃক নির্মিত কর্ডোভা মসজিদের সংস্কার করেন। তিনি এতে ১৪০ ফুটের একটি সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেন।
তিনি কর্ডোভা মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি করেন। এতে তাঁর মোট ব্যয় হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার দিনার। এছাড়া তিনি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করেন ও পুরাতন প্রাসাদের সংস্কার করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্পেনে উমাইয়া সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে তথায় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করে একটি নিরাপদ রাজ্য উপহার দেওয়ার কৃতিত্ব একমাত্র আমির প্রথম হিশামের। তাঁর সুদৃঢ় শাসনে স্পেনে উমাইয়া শাসন আরও দীর্ঘ স্থায়ী হতে সাহায্য করেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রথম হিশামের কৃতিত্ব লিখ | প্রথম হিশামের কৃতিত্ব বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।