পাবলিক কর্পোরেশন কি? পাবলিক কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পাবলিক কর্পোরেশন কি? পাবলিক কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পাবলিক কর্পোরেশন কি? পাবলিক কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর ।
পাবলিক কর্পোরেশন কি? পাবলিক কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর |
পাবলিক কর্পোরেশন কি? পাবলিক কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণ। তাই বর্তমানে রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এবং পূর্বের তুলনায় এর কর্মকাণ্ড বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর এ কল্যাণ রাষ্ট্র তার বহুমুখী কার্যসম্পাদনে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। জনসংস্থা এসব কর্মপন্থাসমূহের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় সংস্থাগুলোই অতীতে জনসংস্থা বা পাবলিক কর্পোরেশন নামে পরিচিত ছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনেও জনসংস্থার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বিংশ শতাব্দীতেই জনসংস্থার ধারণা ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে জনসংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
জনসংস্থা : সাধারণত জনসংস্থা বলতে কোনো ব্যবসায় বা অর্থ সংক্রান্ত উদ্দেশ্যে দেশের স্থানীয় আইন অনুসারে প্রতিষ্ঠিত সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাকে বুঝায়। যা জনসংস্থার হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত। বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে জনসংস্থার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক ডিম্বক (Professor Dimock) জনসংস্থার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “কোনো ব্যবসা বা অ সংক্রান্ত উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় আইন অনুসারে প্রতিষ্ঠিত সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাই হচ্ছে জনসংস্থা।"
World Bank staff working paper এ জনসংস্থাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, "স্বল্প পরিমাণে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জনসংস্থা সার্ভিসসমূহ, খনি ও পরিবহণ সংস্থা এবং আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে জনসংস্থা অন্যতম।
অন্যান্য সরকারি সংস্থা থেকে জনসংস্থা পৃথক ধরনের। কারণ এর অর্থ আসে উৎপাদিত দ্রব্য থেকে; এতে রয়েছে এক স্বয়ংক্রিয় হিসাব ব্যবস্থা এবং এক স্বতন্ত্র আইনগত অস্তিত্ব
অধ্যাপক ডব্লিউ. এ. রবসন ( W. A. Robson ) বলেছেন, "The public corporation is the most important intention of the twentieth century in the sphure of government in situation. " অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জনসংস্থা হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
আব্রাহাম চেইস (Abraham Chayes) এর মতে, "The Moders Corporation is the big business enterprise in corporate form. " কিন্তু তাই বলে জনসংস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো স্বাতন্ত্রা সংস্থা নয়।
সরকারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই এ সংস্থার প্রতিষ্ঠা। প্রকৃতপক্ষে জনসংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে আইনসভার কোনো বিশেষ আইন দ্বারা।
● জনসংস্থার বৈশিষ্ট্য : জনসংস্থার কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা নীতি রয়েছে যেগুলো এটিকে অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা থেকে স্বতন্ত্র ও পৃথক করে। নিয়ে এর বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব : জনসংস্থার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকারী। জনসংস্থার পরিচালনা ও নীতিমালা সকল প্রকার পার্লামেন্টারি অনুসন্ধান থেকে মুক্ত।
যদিও এসব সংস্থা আইন দ্ব প্রতিষ্ঠিত তথাপি তারা অনেকটা স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য ভোগ করে থাকে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জনসংস্থাগুলো যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে।
অর্থাৎ জনসংস্থাগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। যেমন- বাজেট প্রণয়ন, অর্থ ঘাটানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে। তাছাড়া এসব ব্যাপারে সংস্থাগুলো নিজেদের ধ্যানধারণা প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।
অনুরূপভাবে, সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব ব্যাপারে যেকোনো প্রশাসনিক উদ্যোগও গ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি সংস্থায় একটি পরিচালকমণ্ডলীর বোর্ড থাকে যারা সর্বময় ক্ষমতার উৎস।
সাধারণত তাদের ওপর তেমন কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান থাকে না। তারা অনেকটাই স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে কাজ করে থাকে।
২. আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত : জনসংস্থাসমূহ আইনের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো জনসংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে শাসন বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় আইন সভায়।
আইনসভা দ্বারা প্রস্তাব পাস হলে জনসংস্থা প্রতিষ্ঠার আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। এভাবে প্রতিটি জনসংস্থা সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক আইনি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
কোনো জনসংস্থা যদি নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয় কিংবা এর প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় তাহলে যেভাবে তা সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক সেভাবে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৩. বৈধ চরিত্র : জনসংস্থার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর বৈধ চরিত্র। জনসংস্থা মাত্রই স্বীয় নামে বিচার প্রার্থনার অধিকার রাখে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, জনসংস্থাকে অভিযুক্ত করে এর নামে আদালতে বিচার প্রার্থী হতে পারে।
তাছাড়া জনসংস্থার বিভিন্ন প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় জনসংস্থারও সম্পত্তি অর্জন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।
8.নিঃস্বার্থকতা ও নিরপেক্ষতা : জনসংস্থার বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য বা নীতি হলো নিঃস্বার্থকতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন। জনসংস্থা কখনও স্বীয় স্বার্থ বা লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না।
কোনো প্রকার মুনাফা লাভের জন্য জনসংস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় না। জনসংস্থার প্রধান উদ্দেশ্যই জনকল্যাণ বা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ নিশ্চিত করা। যেসব নীতিমালা জনসংস্থা অনুসরণ করে থাকে তা হলো সনদ ।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্রিটেনের জাতীয় কয়লা বোর্ড সংবিধি কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় কয়লা উত্তোলন ও মান নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে।
অনুরূপভাবে ব্রিটিশ ওভারসিজ এয়ারওয়েজ কর্পোরেশনের কাজও সংবিধি ও সনদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একথা অনস্বীকার্য যে, জনকল্যাণই জনসংস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য ।
৫. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা : জনসংস্থাসমূহের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বা নীতি হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা স্বাতন্ত্র্য। জনসংস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা এর সামগ্রিক অর্থব্যবস্থা জাতীয় বাজেটের অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বা কোনো কোনো সময় জনসংস্থার অর্থের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয় বা সরকারের অর্থ বিভাগ বা ট্রেজারির নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে।
তদুপরি পুঁজি গঠন ও পুঁজি বৃদ্ধির বিষয়গুলো মেটানো হয় সরকারি তহবিল থেকে। এতদসত্ত্বেও জনসংস্থার অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জাতীয় বাজেটের বাইরেই রাখা হয়। তাই অন্যান্য সংস্থার তুলনায় জনসংস্থা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
৬. জনসংস্থার কর্মকর্তাগণ সিভিল সার্ভিস এর অংশ : জনসংস্থার কর্মকর্তাগণ সিভিল সার্ভিসের আওতার বাইরে। জনসংস্থার পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য থেকে শুরু করে নিম্ন বেতনভুক্ত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ সিভিল সার্ভিস বহির্ভূত ব্যক্তি ।
এই ব্যবস্থার তাৎপর্য হলো এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর ট্রেজারি, কিংবা সিভিল সার্ভিস কমিশন বা আইন সভার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এদের বেতন, ভাতা, চাকরির শর্ত সবকিছুই সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয় ।
তবে জনসংস্থা একেবারেই সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। সাধারণত প্রধান প্রধান নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা জনসংস্থার ওপর এসে বর্তায় যা এ সংস্থাকে মেনে চলতে হয়। উদাহরণ হিসেবে ব্রিটেনের বিবিসি (BBC) এর কথা উল্লেখ করা যায় ।
৭. সদস্যদের পদমর্যাদা : জনসংস্থার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বা নীতি হলো এর পরিচালকমণ্ডলী বোর্ডের সদস্যগণ এবং চেয়ারম্যানকে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
সরকারি আমলাদের ন্যায় এরা স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন এবং যারা মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পর্কিত নিয়মাবলি দ্বারা পরিচালিতও নন। এ পদ রাজনৈতিক নয়; সরকারের পতন ঘটলে বা নতুন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও এ পদের কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না।
তারা কেবলমাত্র নির্ধারিত মন্ত্রণালয় কর্তৃক মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকে। জনসংস্থার আইনগত মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিককালের জনসংস্থাগুলো এক ধরনের সাংবিধানিক নীতিমালার ফলশ্রুতি।
প্রশাসনের এককগুলোকে জাতীয় ও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বণ্টিত করা এবং সরকারের সাধারণ কার্যাবলি থেকে জনসংস্থা সার্ভিসকে পৃথক করার ক্ষেত্রে জনসংস্থার অবদান অপরিসীম।
তাছাড়া জনসংস্থার বাজেটকে জাতীয় বাজেট থেকে পৃথক করা এবং সে সাথে মুনাফা অর্জনের প্রবণতা রোধ করে জনকল্যাণ ও জনসেবার জন্য সকল ব্যাংককে পরিচালিত করার প্রতিও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে
আর্টিকেলের শেষকথাঃ জনসংস্থা কী? জনসংস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কী? রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।