১৯টি মানব কল্যাণ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১৯টি মানব কল্যাণ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সহ জেনে নিন |
১৯টি মানব কল্যাণ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - manob kollan hsc bangla srijonshil
১ নম্বর প্রশ্ন
আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই, সকলের সুখ, সখা, সুখ শুধু তাই । আমার একার আলো সে যে অন্ধকার, যদি না সবারে অংশ দিতে পাই । সকলের সাথে বন্ধু, সকলের সাথে, যাইব কাহারে বল; ফেলিয়া পশ্চাতে । এক সাথে বাঁচি আর এক সাথে মরি, এসো বন্ধু, এ জীবন সুমধুর করি।
ক. ‘ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ'- কথাটি কে বলেছেন?
খ. ‘রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক’– উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটিকে প্রতিফলিত করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি”- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও ।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ'— কথাটি ইসলামের নবি বলেছেন ।
খ. আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে।
একটি জাতি যেভাবে জীবনযাপন করে, যে চেতনা ধারণ করে বেড়ে ওঠে রাষ্ট্রও সে অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে।
রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য না করে, তবে রাষ্ট্রও তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়।
অর্থাৎ যে রাষ্ট্র হাতপাতা আর চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে পারে না।
কাজেই রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া । প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের এমন অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককেই বোঝানো হয়েছে ।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস নিয়ে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার দিকটিকে প্রতিফলিত করেছে ।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক কীভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। লেখকের মতে, করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত কখনোই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধন করে না।
তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস, যা মানব-মর্যাদাকে অবমাননা করে কখনোই সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতভাবে মানুষের কল্যাণ করতে চাইলে সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। নিজ স্বার্থ উপেক্ষা করে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করতে চাইছে। যেখানে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো বৈষম্য।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত সকল শ্রেণির মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস নিয়ে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার দিকটিই প্রতিফলিত করেছে।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটিতে কেবল কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় কবির প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি, পূর্ণাঙ্গ নয় ৷
“মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সমাজে প্রচলিত মানব-কল্যাণ কথাটির উপলব্ধিহীন প্রয়োগের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।
পাশাপাশি প্রকৃত মানব-কল্যাণ কীভাবে সম্ভব তার বিস্তারিত দিক তুলে ধরেছেন। মানব-কল্যাণ কথাটার অর্থ ক্ষুদ্রার্থে ব্যবহার করলে মানব- মর্যাদার যে অবমাননা ঘটে, সে বিষয়েও তিনি সকলকে সচেতন করেছেন।
করুণার বশবর্তী হয়ে সামান্য দান-খয়রাত করে মানব- মর্যাদার অবমাননা না করে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের প্রতিই তিনি তাঁর মত প্রকাশ করেছেন ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির গুরুত্বের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। সংসারজীবনে সকলের সুখ-দুঃখ নিজের করে নিতে পারলেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া যায়।
মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতাই যে পারে কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তুলতে, সে বিষয়টিই উদ্দীপকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার গুরুত্বের পাশাপাশি দেশে মানব-কল্যাণের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে।
মানব-কল্যাণের নামে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটানো হয়, সে বিষয়টিও প্রবন্ধটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মনুষ্যত্বের অবমাননার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরায় প্রবন্ধটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের অন্যতম বিষয় কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রবন্ধটির একটি খণ্ডাংশ। আর এ কারণেই আমি মনে করি উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের একটি আংশিক প্রতিচ্ছবি, পূর্ণাঙ্গ নয় ।
২ নম্বর প্রশ্ন
পঞ্চায়েতের পরিকল্পনায় খুশি এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা কানুপদ বাছাড়, স্বপন মাহাতো, রত্না দাসরা বলেন, “অভাবের জেরে পরিবারের অধিকাংশই ভিন রাজ্যে কাজ করি। করোনার ভয়ে গ্রামে পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ঠিক করেছিলাম, যা হওয়ার হোক, ফিরে যাব ভিন রাজ্যে। তবে প্রধানের চেষ্টায় আপাতত আমরা এলাকাতেই কাজ পেয়েছি।” প্রধান মানস বলেন, “ওঁরা এসে দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন । তারপরেই নদী বাঁধে মাটি ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। এতে এলাকায় কাজ করেই গ্রামের মানুষ রোজগারের মুখ দেখছেন ৷” একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সুপারভাইজার জয়দেব দাস বলেন, “আটপুকুর পঞ্চায়েতের পরিকল্পনায় শ্রমিকরা যেমন কাজ পেয়ে খুশি, তেমনি নদীর পাড় চওড়া এবং শক্তপোক্ত হচ্ছে দেখে খুশি এলাকার মানুষও।””(সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ অক্টোবর ২০২০/
ক. ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধটির রচয়িতার নাম কী?
খ. মনুষ্যত্ববোধ ও মানব-মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি মানুষের উপলব্ধি করা হয় না কেন? ব্যাখ্যা করো ।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকটি প্রাবন্ধিকের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণাঙ্গ ধারক হতে পেরেছে কি? তোমার মতামত দাও ।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক, ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধটির রচয়িতার নাম আবুল ফজল ।
খ. মানব-কল্যাণ কথাটাকে সস্তা আর মামুলি অর্থে ব্যবহার করার কারণে মনুষ্যত্ববোধ ও মানব-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি মানুষের উপলব্ধি করা হয় না ৷
আমাদের প্রচলিত ধারণা ও চলতি কথায় মানব-কল্যাণ কথাটা অনেকখানি সস্তা আর মামুলি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে মানুষ মানব-কল্যাণ কথাটার প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আর একমুষ্টি ভিক্ষা দেওয়ার মতো ক্ষুদ্র কাজকেও মানব-কল্যাণ বলে মনে করে। অথচ এতে প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যত্ববোধ ও মানব-মর্যাদার অপমান ঘটে। তাই বলা যায়, মানব-কল্যাণ কথাটার ভুল অর্থ করার কারণেই মনুষ্যত্ববোধ ও মানব- মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি মানুষের উপলব্ধি করা হয় না।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত কল্যাণময় পৃথিবী রচনার গুরুত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবীর প্রত্যাশা করেছেন। আর এজন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রাবন্ধিক। তিনি মনে করেন, মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করা সম্ভব।
করুণা বা দয়ার দান নয়, মানব-মর্যাদার উত্তরণই পারে সমাজকে বদলে দিতে। আর সমাজ বদলের মানসিকতা নিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে মানুষকে আত্মমর্যাদাবান করে তোলা যায় ৷
উদ্দীপকে দেখা যায় কল্যাণচিন্তার প্রকাশ্য রূপ। সেখানে করোনার কারণে কাজ হারানো অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রামের পঞ্চায়েত । দরিদ্র মানুষগুলোকে দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে কোনো দান করা হয়নি।
তাদের মানব-মর্যাদার যাতে অপমান না ঘটে সেজন্য নদীর বাঁধে মাটি ফেলার কাজের ব্যবস্থা করেন পঞ্চায়েত প্রধান। এতে গ্রামের মানুষগুলোর কাজের ব্যবস্থাও হয়েছে, আবার তাদের করুণার দানও গ্রহণ করতে হয়নি। ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধেও উদ্দীপকের এই দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ।
ঘ. উদ্দীপকে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের প্রয়াস ফুটে ওঠায় উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণাঙ্গ ধারক হতে পেরেছে। ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব-মর্যাদার জয়গান গেয়েছেন।
তিনি মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাকে যদি যথার্থভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় তাহলেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হবে।
মানুষকে অবমাননাকর অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলেই প্রকৃত কল্যাণময় পৃথিবী নির্মাণ করা সম্ভব। আর আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন ।
উদ্দীপকে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। সেখানে বিপদগ্রস্ত মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য পঞ্চায়েত প্রধান ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান না করে দরিদ্র মানুষগুলোর আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যবস্থা করেছেন। পঞ্চায়েত প্রধানের এই কাজ কল্যাণময় পৃথিবী নির্মাণে সহায়ক। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন ঘটবে। আবার মানুষের মর্যাদারও হানি ঘটবে না ।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সমাজের মঙ্গল সাধন করার কথা বলা হয়েছে। আর উদ্দীপকের পঞ্চায়েত প্রধান গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর মর্যাদা সমুন্নত রেখেই কাজের ব্যবস্থা করেছেন।
আলোচ্য প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সমাজের মঙ্গলের জন্য মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক সৃজনশীল মানবিক কর্ম সম্পাদন করতে বলেছেন। আর উদ্দীপকে এ বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। এদিক বিবেচনায় তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি প্রাবন্ধিকের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণাঙ্গ ধারক হতে পেরেছে।
৩ নম্বর প্রশ্ন
আনন্দধাম আর কল্যাণব্রত পাশাপাশি দুইটি সেবামূলক সংগঠন। আনন্দধাম সংগঠনটির কাজ হলো প্রতিদিন তিনবেলা অভুক্ত, দুঃখী, অনাহারী মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়া। প্রতিবেলা প্রায় ১০০ জনকে তারা বিনামূল্যে খাবার খাওয়ায়। আর কল্যাণব্রত সংগঠনটি অসহায়, অল্পশিক্ষিত, মানুষদের বিনা পয়সায় নানা ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। কর্মহীনদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলাই এদের মূল উদ্দেশ্য ।
ক. ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে?
খ. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'আনন্দধাম' এর কর্মকাণ্ড ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে মনে করিয়ে দেয়? তুলে ধরো।
ঘ. “বদান্যতার দ্বারা ধনের দান নয়, ধন-কে খর্ব করে নয়, ধন-কে অস্বীকার করেও নয়; ধন উৎপাদনে অন্যকে সক্ষম করে তোলাই প্রকৃত মানব-কল্যাণ”— উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো ।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধটি ‘মানবতন্ত্র' গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
খ. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে বেড়ে ওঠার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাকে বোঝানো হয়েছে।
মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে বেড়ে উঠতে হবে। এর জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হলো যথাযথ ক্ষেত্র রচনা।
কারণ উপযুক্ত; ক্ষেত্র বা পরিবেশ গড়ে তোলা না হলে প্রকৃত মানব-কল্যাণ কখনোই সাধিত হবে না। আর এ দায়িত্ব যেমন পরিবারের রয়েছে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রও সে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। মূলত সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরই এ দায়িত্ব অধিক পরিমাণে বর্তায়।
তাই মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে এই বেড়ে ওঠার যথাযথ ক্ষেত্রকেই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘আনন্দধাম'-এর কর্মকাণ্ড ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের মানব-কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার বা প্রচলিত ধারণার দিকটি মনে করিয়ে দেয়।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব-কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণাটি তুলে ধরেছেন। অধিকাংশ মানুষেরই বিশ্বাস মানুষকে দান-খয়রাত করলেই তার কল্যাণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা হয় বলে মনে করেন প্রাবন্ধিক ।
তিনি মনে করেন, করুণা প্রদর্শনে নয় বরং দুস্থ মানুষকে তার হীন দশা থেকে মুক্ত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করার মাধ্যমেই সত্যিকারের মানব-কল্যাণ সম্ভব ।
উদ্দীপকে সেবামূলক সংগঠন আনন্দধামের অভুক্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এই সংগঠনটি প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন মানুষকে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ায়।
কিন্তু তাদের এই সেবামূলক কাজকে সত্যিকারের মানব-কল্যাণ বলতে নারাজ প্রাবন্ধিক আবুল ফজল । তিনি মনে করেন, অসহায় মানুষকে খাবার দিয়ে নয় বরং তাদের কর্মক্ষম করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার অবলম্বন করে দেওয়াই সত্যিকারের মানব- কল্যাণ।
তাই বলা যায়, আনন্দধামের কর্মকাণ্ড ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের মানব-কল্যাণের প্রচলিত দিকটির কথা মনে করিয়ে দেয়।
ঘ. মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনই সত্যিকারের মানব-কল্যাণ— বিবেচনায় উদ্দীপক ও 'মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ । ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক আবুল ফজল মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন ।
এই প্রবন্ধে তিনি সমাজের প্রচলিত মানব- কল্যাণের ধারণা এবং সত্যিকারের মানব-কল্যাণের বিষয়টি তুলে ধরেছেন । অনেকেই দান-খয়রাত করাকেই মানব-কল্যাণ ভেবে ভুল করেন । কিন্তু এটা সত্যিকারের মানব-কল্যাণ নয় বরং মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নিরন্তর প্রয়াসই মানব-কল্যাণ ।
উদ্দীপকে সেবামূলক সংগঠন আনন্দধাম ও কল্যাণব্রতের মানব- কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। আনন্দধাম অভুক্ত মানুষকে তিনবেলা খাবার প্রদান করে।
অন্যদিকে কল্যাণব্রত অসহায় মানুষকে কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করে তোলার মাধ্যমে মানব-কল্যাণে অবদান রাখছে।
এখানে মানব-কল্যাণ নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং সত্যিকারের ধারণা উভয়ই প্রকাশ পেয়েছে । আনন্দধামের কর্মকাণ্ড মানব- কল্যাণ সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং কল্যাণব্রত সংগঠনের কর্মকাণ্ড সত্যিকারের মানব-কল্যাণের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে।
মানব-কল্যাণের মূল লক্ষ্য অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। কেননা অসহায়কে দান খয়রাত বা খাবার প্রদান করে সাহায্য করার মাধ্যমে তার সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করা যায় না ।
এতে প্রকারান্তরে তার মর্যাদাহীন অবস্থাকেই সমর্থন করা হয়। এই বিষয়টি আলোচ্য প্রবন্ধে বর্ণিত মানুষের মনুষ্যত্ববোধ ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করার শামিল।
মানুষের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল নিশ্চিত করাই সত্যিকারের মানব-কল্যাণ, যা উদ্দীপকের কল্যাণব্রত সংগঠনের কর্মকাণ্ডে ফুটে উঠলেও আনন্দধাম সংগঠনের কর্মকাণ্ড সমাজের প্রচলিত বা ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপ তুলে ধরে।
তাই বলা যায়, “বদান্যতার দ্বারা ধনের দান নয়, ধনকে খর্ব করে নয়, ধনকে অস্বীকার করেও নয়; ধন উৎপাদনে অন্যকে সক্ষম করে তোলাই প্রকৃত মানব-কল্যাণ” অর্থাৎ দান-খয়রাত নয় বরং কর্মক্ষম করে তোলাই প্রকৃত মানব-কল্যাণ। এই দিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ।
৪ নম্বর প্রশ্ন
ক. জাতিকে কী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে?
খ. ইসলামের নবি ভিক্ষুককে কুড়াল কিনে দিয়েছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে আলোচনা করো ।
উদ্দীপকের ‘ছকের’ কোন পাশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের মনের কথা ফুটে' উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতিকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে ।
খ .স্বাবলম্বী হয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য ইসলামের নবি ভিক্ষুককে কুড়াল কিনে দিয়েছিলেন ।
ইসলাম ধর্মে ভিক্ষা করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর তাই তো ইসলামের নবির কাছে যখন একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইতে এসেছিল, তখন নবি তাকে একটি কুড়াল কিনে দিয়েছিলেন।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ভিক্ষুকটি যেন স্বাবলম্বনের মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করতে পারে। কারণ ভিক্ষা করলে আত্মমর্যাদার অবনমন ঘটে।
আর এ কারণেই ইসলামের নবি ভিক্ষুককে কুড়াল কিনে দিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহের পরামর্শ দিয়েছিলেন ।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত আমাদের সমাজে প্রচলিত ও প্রকৃত মানব-কল্যাণের ধারণার দিকটি প্রকাশ করে ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণের প্রকৃত স্বরূপ উপস্থাপন করেছেন । তিনি মনে করেন, আমাদের বর্তমান সমাজে মানব-কল্যাণ শব্দটি অনেকেই ভুল অর্থে ব্যবহার করে থাকেন।
অনেকে করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত করাকেও মানব-কল্যাণ, মনে করে থাকেন। অথচ এটি প্রকৃতপক্ষে মানব-মর্যাদার অবমাননা। তিনি মনে করেন, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো প্রকৃত মানব-কল্যাণ ।
উদ্দীপকের ছকে মানব-কল্যাণ সম্পর্কে দুটি ধারণার উপস্থাপনা লক্ষ করা যায়। আলোচ্য প্রবন্ধের আলোকে বাম দিকের বিষয়বস্তুই আমাদের সমাজে প্রচলিত, আর ডানদিকের বিষয়বস্তু প্রকৃত মানব-কল্যাণ।
মানব- কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্যের উপলব্ধিহীনতার কারণেই মানুষ মূলত মানব- কল্যাণের ভুল অর্থ অর্থাৎ ছকের বাম দিকের নেতিবাচক অর্থ করে থাকেন।
কিন্তু লেখকের দৃষ্টিতে ছকের ডানদিকের ইতিবাচক দিকগুলোই কাঙ্ক্ষিত মানব-কল্যাণ আনয়ন করে থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত আমাদের সমাজে প্রচলিত ও প্রকৃত মানব- কল্যাণের ধারণার দিকটিই প্রকাশ করে ।
ঘ. ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশা কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করা, যা উদ্দীপকের ছকের ডানদিকের বিষয়বস্তুর বাস্তবায়নেই সম্ভব। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন।
সাধারণভাবে অনেকেই দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন । কিন্তু লেখক একে মানব-মর্যাদার অপমান হিসেবেই মনে করেন। লেখকের মতে, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানব-কল্যাণ ।
উদ্দীপকের ছকের ডানদিকের অংশের বিষয়বস্তুতে দেখা যায়, সেখানে মানব-কল্যাণের প্রকৃত ধারণার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সামান্য দান- খয়রাত নয়, বরং মানুষকে স্বাবলম্বনের মাধ্যমে আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপনের পথ দেখানোকেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ হিসেবে এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কেবল মানব-মর্যাদা বৃদ্ধিই পায়, কখনোই মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটে না ।
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা শেষে বলা যায়, ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখক যেমন কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রত্যাশী, তেমনি উদ্দীপকের ছকের ডানদিকের বিষয়বস্তুতেও সে বিষয়টি স্পষ্ট।
এ কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। তিনি বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করা সম্ভব । আর এটিই মূলত লেখকের কাঙ্ক্ষিত বক্তব্যবিষয়।
ছকের ডানদিকের বিষয়বস্তু যেন লেখকের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশাই পূরণ করে । তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের ছকে নির্দেশিত ডানদিকের বিষয়বস্তুই মূলত ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের কাঙ্ক্ষিত বক্তব্য বিষয়”— মন্তব্যটি যথার্থ।
৫ নম্বর প্রশ্ন
মাদার তেরেসা শৈশব থেকে স্বপ্ন দেখতেন মানবসেবার। এক সময় যোগ দেন খ্রিষ্টান মিশনারি সংঘে। মানুষকে আরও কাছ থেকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিশনারি অব চ্যারিটি । তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত আরও অনেকেই এগিয়ে আসেন এ মহান কাজে। একসময় এ মহান কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। সারা জীবনের তাঁর সবটুকু উপার্জনই বিলিয়ে দেন মানবের কল্যাণে ।
ক. ছাত্রজীবনে আবুল ফজল কোন আন্দোলনে যুক্ত হন?
খ. ‘রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনার প্রতীক'— উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “মাদার তেরেসা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ছাত্রজীবনে আবুল ফজল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে যুক্ত হন ।
খ. আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে ।
একটি জাতি যেভাবে জীবনযাপন করে, যে চেতনা ধারণ করে বেড়ে ওঠে রাষ্ট্রও সে অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে।
রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য না করে, তবে রাষ্ট্রও তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয় ।
অর্থাৎ যে রাষ্ট্র হাত পাতা আর চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে পারে না।
কাজেই রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের এমন অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককেই বোঝানো হয়েছে ।
গ. মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। সাধারণভাবে অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-
খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন ধারণা খুবই সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো ।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসা মানবতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মানুষের সেবা করার জন্য তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। গড়ে তোলেন মিশনারিজ অব চ্যারিটি। সারাজীবনের সবটুকু উপার্জন তিনি মানবের কল্যাণে বিলিয়ে দেন । তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অনেকেই এ মহান কাজে যুক্ত হয়েছে।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মানবতার ধারক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে মানব-কল্যাণের প্রকৃত আদর্শ ফুটে উঠেছে, যা ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. মানব-কল্যাণে মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি আর মানবিক চেতনা বিকাশের জন্যই মাদার তেরেসা ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন, মানব-কল্যাণ মানব- মর্যাদার সহায়ক। মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথেই বেড়ে উঠতে হবে; আর তার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাই মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান।
সাধারণভাবে অনেকে দুস্থ মানুষদের করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, মানব-কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো ।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসা তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় মানব-কল্যাণে ব্যয় করেছেন। মানুষকে আরও কাছ থেকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন।
তিনি আশৈশব স্বপ্ন দেখেন মানবসেবার। আর একসময় এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। উদ্দীপকের মাদার তেরেসা মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে মানুষের জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মানবসেবার ব্রত গ্রহণ করেননি।
তার আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষের সার্বিক মঙ্গল কামনা, যা ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের অনুরূপ। লেখক মানুষের প্রতি সাময়িক করুণা নয়, মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটাতে চেয়েছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মাদার তেরেসার মধ্যে আলোচ্য প্রবন্ধের বাস্তব প্রতিফলন স্পষ্ট।
৬ নম্বর প্রশ্ন
সমাজসেবার ক্ষেত্রে বাংলার ক্ষুদিরাম, হাজি মুহম্মদ মুহসীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী বিশ্বখ্যাত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারা প্রমুখ মহান নেতার নাম উল্লেখযোগ্য। মানব-কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার মাধ্যমেই ইতিহাসে তাঁরা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন । তাঁরা শুধু অর্থ দিয়ে নয়, নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়ে মানব- কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে গেছেন। এসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে মানবসেবায় আমরা নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে পারি ।
ক. লেখকের মতে, কোন ধারণা সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক?
খ. কীভাবে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে পারেনি”— মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো ।
৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখকের মতে, করুণাবশত, দান-খয়রাত করা সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক।
খ. মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায় ।
প্রাবন্ধিক আবুল ফজল তাঁর প্রবন্ধে মানব-কল্যাণ কথাটিকে মানব- মর্যাদার সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিয়েছেন । তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাবৃদ্ধি মানবকল্যাণের অন্যতম শর্ত। আর এ ধরনের
মানব-কল্যাণ বাস্তবায়িত করতে হলে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। আর মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই কেবল তা সম্ভব ।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা- ভাবনার ফসল । আর বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভারা সবাই মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। সে উত্তরাধিকার আমাদের জীবনে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে । তাদের দেখানো পথে চলতে হবে ।
উদ্দীপকে মহৎ প্রতিভাদের জীবনাদর্শের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ক্ষুদিরাম, হাজী মুহম্মদ মুহসীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বনেতাদের মহৎ কর্ম চিত্রিত হয়েছে।
মানব-কল্যাণে আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই তাঁরা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করতে সক্ষম হব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে কেবল মহৎপ্রাণ মানুষদের জীবনাদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের খণ্ডিত চিত্র প্রকাশ করে । ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ কথাটির স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আর এটি করতে গিয়ে তিনি নানা বিষয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন করুণায় বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত করলে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটে। আমাদের সমাজ যে এরূপ উপলব্ধিহীন মানুষে ভরে আছে, সেটিও তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছেন ।
এছাড়া রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত চেতনা কীভাবে মানব-কল্যাণের অন্তরায় ঘটাচ্ছে, সে বিষয়টিও তিনি দেখিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি একটি আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি গড়ে তোলার সহায়ক নির্দেশনাও দিয়েছেন ।
উদ্দীপকে কেবল মহৎপ্রাণ মানুষদের জীবনাদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি উঠে এসেছে। এ জীবনাদর্শ কীভাবে আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে এক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে পারি, সে বিষয়টিই মূলত উদ্দীপকে প্রাধান্য পেয়েছে।
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের পর্যালোচনা শেষে বলা যায়, ‘মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুর পরিধি ব্যাপক। এখানে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার মানসে নানা অনুষঙ্গের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।
অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল মহৎ মানুষদের জীবনাদর্শ কীভাবে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে মানব-কল্যাণ সাধন করা যায় সে বিষয়টি উঠে এসেছে, যা প্রবন্ধটির একটি খণ্ডাংশ। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে পারেনি।”— মন্তব্যটি যথার্থ ।
৭ নম্বর প্রশ্ন
আমি সেই অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী
যে ঘৃণা বিদ্বেষ অহংকার
এবং জাত্যভিমানকে করে বার বার পরাজিত ।
যে অস্ত্র আধিপত্যের লোভকে করে নিশ্চিহ্ন
যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না
করে সমাবিষ্ট
সেই অমোঘ অস্ত্র— ভালোবাসা
পৃথিবীতে ব্যাপ্ত করো ।
ক. সমাজের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ কোনটি?
খ. অনুগ্রহকারী আর অনুগ্রহীতের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে লেখো ।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে উল্লিখিত লেখকের কোন আহ্বানকে প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটিই কি যথেষ্ট? ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধ অবলম্বনে মতামত বিশ্লেষণ করো ।
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ হলো— পরিবার।
খ. অনুগ্রহকারী আর অনুগৃহীতের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য । মনুষ্যত্ব ও মানব-মর্যাদার দিক থেকে অনুগ্রহকারীর স্থান সবার ওপরে।
পক্ষান্তরে অনুগৃহীতের স্থান সবার নিচে। অনুগ্রহকারী ব্যক্তি সমাজের সর্বস্তরে প্রশংসিত হন। আর অনুগৃহীত ব্যক্তি সমাজে সর্বদা নিগৃহীত হন । তাই বলা যায়, অনুগ্রহকারী আর অনুগৃহীতের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান ।
গ. উদ্দীপটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে উল্লিখিত মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আহ্বানের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
আবুল ফজল ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ কামনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন প্রমুখদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তাঁদের মানবিক চিন্তাধারাকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে ধারণ করতে বলেছেন। মানুষে মানুষে বিদ্যমান ভেদাভেদের বিষবাষ্প দূর করে মানবধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সত্যিকার মানব-কল্যাণ সম্ভব হবে বলে মনে করেন লেখক ।
উদ্দীপকে ভালোবাসা নামক মহার্ঘ অস্ত্রকে সারা পৃথিবীতে ব্যাপ্ত করতে বলা হয়েছে। এই অস্ত্রের প্রভাবে পৃথিবী থেকে সকল অকল্যাণ দূর হবে। এই অস্ত্র মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এভাবেই সৃষ্টি হবে শান্তিপূর্ণ, মানবিক পৃথিবী। ‘মানব-কল্যাণ’ রচনায় লেখক মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত মানবিক সমাজ গড়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন সেটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধটি অনুযায়ী বলা যায়, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটি তাৎপর্যপূর্ণ হলেও যথেষ্ট নয় ।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আবুল ফজল সত্যিকারের মানব-কল্যাণ বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। সেইসঙ্গে তিনি মানব-কল্যাণ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় বিষয়েও আলোচনা করেছেন ।
এক্ষেত্রে তিনি জোর দিয়েছেন মনুষ্যত্বের বিকাশের মাধ্যমে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, মুক্তবুদ্ধির প্রসার এবং প্রতিটি পর্যায়ে মানুষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের ওপর ।
উদ্দীপকের কবি পৃথিবী থেকে সকল প্রকারের বৈষম্য ও অনাচার দূর করতে চান । তিনি চান মানুষে মানুষে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্কের উন্মেষ। এ কারণে কবির প্রত্যাশা ভালোবাসা নামক মহৎ অস্ত্রটি ব্যাপ্ত হবে পৃথিবীজুড়ে। অবিনাশী এই অস্ত্রের আগমনেই শান্তির আলয় হয়ে উঠবে পৃথিবী ।
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণকে বলেছেন জাগতিক মানবধর্ম, যার সাথে মানব-মর্যাদার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানবমর্যাদা তখনই সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সমাজের মানুষ মনুষ্যত্ববোধকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রবর্তী হবে।
এক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত পারস্পরিক ভালোবাসা অপরিহার্য। তবে প্রবন্ধ অনুসারে এটিই মানব-কল্যাণ নিশ্চিতের একমাত্র উপায় নয় ।
লেখক মনে করেন, কেবল সদিচ্ছা থাকলেই মানব-কল্যাণ সম্ভব নয়। মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য ব্যক্তির নিজের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ সামাজিক সকল প্রতিষ্ঠানের। সমন্বিতভাবে কল্যাণময় পরিবেশ সৃষ্টি করলেই কেবল প্রকৃত মানব-মুক্তি এ প্রতিষ্ঠানগুলো মিলবে ।
প্রবন্ধে এছাড়াও কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় লেখক গুরুত্ব দিয়েছেন মুক্তবুদ্ধির চর্চার ওপর যার ফলে সুপরিকল্পিত, যুক্তিপূর্ণ একটি সমাজ নির্মাণ সম্ভব। উদ্দীপকে প্রবন্ধের এ দিকগুলোর পরিচয় ফুটে ওঠেনি। উদ্দীপকের দিকটি আলোচ্য রচনার লেখকের অভিমতকে আংশিকভাবে ধারণ করে। তাই আমার মতে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটি যথেষ্ট নয় ।
৮ নম্বর প্রশ্ন
জামিল সাহেব লন্ডন প্রবাসী। দীর্ঘদিন বিদেশের মাটিতে থাকলেও তিনি নিজের গ্রামের মানুষদের ভুলতে পারেন না। গ্রামের মানুষের উপকারের জন্য তিনি এলাকায় তার ছোটোভাই আলমের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা ত্রাণসহায়তা পাঠান। আলম সেই টাকা দিয়ে বেশকিছু রিকশা কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দেন। রিকশা কিনে দেওয়ার সঙ্গে শর্ত দেন, স্বাবলম্বী হওয়ার পর রিকশা কেনার টাকা ফেরত দিতে হবে ।
ক. ‘রেডক্রস' কোন ধরনের সংস্থা?
খ. মানব-কল্যাণ স্বয়ম্ভূ, বিছিন্ন, সম্পর্ক-রহিত হতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন বিষয়টিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. আলমের উদ্যোগটি সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধ অনুযায়ী আলোচনা করো ।
৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘রেডক্রস’ সেবাধর্মী সংস্থা ।
খ. প্রত্যেক মানুষ সমাজের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ফলে মানুষের কল্যাণও সামগ্রিকভাবে সমাজের ভালো-মন্দের ওপর নির্ভর করে । কিন্তু সমাজে মানব-কল্যাণ কথাটি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
মূলত উপলব্ধিহীনতার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কখনো মানব-কল্যাণ সাধিত হতে পারে না।
প্রকৃত মানব-কল্যাণ তখনই সাধিত হবে যখন সমাজের সকলের কল্যাণ একসাথে হবে। আর এ কারণেই মানব-কল্যাণ স্বয়ম্ভূ, বিছিন্ন, সম্পর্করহিত হতে পারে না ।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসের দিকটিকে তুলে ধরে ।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী বিনির্মাণের প্রত্যাশা করেছেন। লেখকের মতে, করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত কখনোই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধন করে না।
তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো | মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস, যা মানব-মর্যাদাকে অবমাননা করে কখনোই সম্ভব নয়। তাই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ করতে গেলে অবশ্যই মানুষকে অবমানকর অবস্থা থেকে উত্তোলিত করতে হবে।
উদ্দীপকে প্রকৃত অর্থে মানুষের কল্যাণের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য জামিল সাহেবের পাঠানো ত্রাণসহায়তা তাঁর ছোটোভাই কাজে লাগান। তিনি ত্রাণের টাকা দিয়ে রিকশা কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন।
ত্রাণের টাকা করুণার বশবর্তী হয়ে দান না করে দরিদ্রদের অবমাননাকর অবস্থা থেকে উত্তোলনে ব্যয় করেন। এরূপ কর্মকাণ্ডে মানুষের সার্বিক কল্যাণের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় । আর উদ্দীপকের এই দিকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের লেখকের মূল প্রত্যাশারই প্রতিফলন ।
ঘ. সমাজের পরিবর্তন আনার জন্য উদ্দীপকের আলমের উদ্যোগটি যথার্থ বলেই প্রতীয়মান । ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
লেখকের মতে, করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত না করে মানুষের সার্বিক কল্যাণে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণই সমাজের উন্নয়নে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা করুণার দান মানব-মর্যাদার অবননা ঘটায়। সমাজের প্রকৃত উন্নতি করতে হলে বরং মানুষকে অবমাননাকর অবস্থা থেকে তুলে আনতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ।
উদ্দীপকের আলম তাঁর বড়োভাইয়ের দেওয়া টাকা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছেন। সমাজের পরিবর্তনের মানসে আলম বেশ কিছু রিকশা কিনে দরিদ্রদেরকে দিয়েছেন।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রত্যাশায় আলমের কর্মকাণ্ড সময়োপযোগী। তাঁর এই কাজ সমাজের একটি শ্রেণিকে আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপনের পথ দেখায় । আর এটিই কল্যাণময় পৃথিবী নির্মাণের পথ রচনা করে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক যেরূপ কল্যাণময় পৃথিবী নির্মাণের প্রত্যাশী, উদ্দীপকের আলমের মাঝে তারই প্রতিফলন লক্ষণীয় ।
মানুষকে অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় উত্তরণ ঘটানোর যে আকাঙ্ক্ষা প্রাবন্ধিকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকের আলম যেন তারই বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। আলমের কর্মকাণ্ডে সমাজের যে পরিবর্তন আসবে তা কল্যাণময় পৃথিবী বিনির্মাণে সহায়ক। এ প্রেক্ষিতে তাই উদ্দীপকের আলমের উদ্যোগটি যথার্থ বলেই প্রতীয়মান ।
৯ নম্বর প্রশ্ন
করোনাভাইরাসের প্রকোপে যখন সারাদেশ বিপর্যস্ত, তখন এদেশের অনেক বিত্তবান মানুষ অসহায় কর্মহীনদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, কিন্তু কতিপয় মানুষ অসহায় মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে নিজেদের মানবদরদি হিসেবে জাহির করা শুরু করে। তারা বিপদগ্রস্ত মানুষকে সামান্য সাহায্য প্রদান করে তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে শুরু করে। তাদের দেখাদেখি সারাদেশে একশ্রেণির মানুষ তা অনুকরণ করে । তাদের কাছে এটি মানব-কল্যাণ বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা যেন মানব- মর্যাদার অবমাননাই করে চলেছে ।
ক. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান রচনার দায়িত্ব কার?
খ. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকের প্রতিফলিত দিকটি যেন আমাদের সমাজের আশেপাশেরই প্রতিচ্ছবি’— উক্তিটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে বিচার করো।
৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান রচনার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্রের।
খ. মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে বেড়ে ওঠার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাকে বোঝানো হয়েছে ।
মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে বেড়ে উঠতে হবে। এর জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হলো যথাযথ ক্ষেত্র রচনা। কারণ উপযুক্ত ক্ষেত্র বা পরিবেশ গড়ে তোলা না হলে প্রকৃত মানব-কল্যাণ কখনোই সাধিত হবে না ।
আর এ দায়িত্ব যেমন পরিবারের রয়েছে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রও সে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। মূলত সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরই এ দায়িত্ব অধিক পরিমাণে বর্তায়।
তাই মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান বলতে মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথে এই বেড়ে ওঠার যথাযথ ক্ষেত্রকেই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণার দিকটি প্রতিফলিত করে ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে দেখা যায়, কিছু মানুষ মানব-কল্যাণ শব্দটি ভুল অর্থে প্রয়োগ করে থাকে। তারা করুণার বশবর্তী হয়ে সামান্য দান- খয়রাতকেও মানব-কল্যাণ বলে মনে করে । অথচ এমন কর্মকাণ্ড মানব- মর্যাদার অবমাননাই ঘটিয়ে থাকে।
লেখকের মতে, যে কাজ অন্যকে ছোটো করে, হেয় করে, তা কখনো মানব-কল্যাণ হতে পারে না । তাঁর মতে, মানুষ তাদের উপলব্ধিহীনতার কারণেই মানব-কল্যাণের মতো মহৎ শব্দের ভুল অর্থ করে থাকে ।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে মানব-মর্যাদার অবমাননার দিকটি প্রত্যক্ষ হয়। করোনা মহামারির সময় দেশ যখন বিপর্যস্ত, দেশের মানুষ যখন কর্মহীন, অসহায়, তখন কতিপয় মানুষ মানব-কল্যাণের নামে প্রকারান্তরে মানব- মর্যাদার অপমান করছে।
তারা মূলত মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে উপলব্ধিহীন । আর এ কারণেই তারা এর ভুল অর্থ বেছে নিয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিষয়বস্তু আলোচ্য প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণার দিকটিই প্রতিফলিত করে ।
ঘ. আমাদের সমাজের আশেপাশে তাকালেই মানব-মর্যাদার অবমাননার দিকটি প্রত্যক্ষ হয় বলে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপক ও 'মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্ৰবন্ধানুসারে মানব-মর্যাদার অবমাননার দৃশ্য দেখার জন্য দূরদূরান্তে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তা আমাদের সমাজের আশেপাশে তাকালেই দেখা যায়।
এখানে লেখক দেখিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ ‘মানব-কল্যাণ” শব্দটির প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ। আর এ কারণে করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত এবং কাঙালিভোজের মতো ব্যাপারকে আমরা মানব-কল্যাণ বলে মনে করে থাকি ।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে মনুষ্যত্বের অবমাননার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে কিছু ব্যক্তি মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টিকে নিজেদের মানবদরদি হিসেবে জাহির করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সামান্য সহায়তার মাধ্যমে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট যে, উভয় ক্ষেত্রেই মনুষ্যত্বের অবমাননার দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমান সমাজের চারপাশে তাকালেই আমরা যেন এরূপ দৃশ্য অহরহ প্রত্যক্ষ করছি। মানব- মর্যাদার অবমাননাকর এরূপ প্রবণতা আজ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
মানুষের মনোভাব আজ এতই সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে যে মানব-কল্যাণের মতো মহৎ কাজকেও তারা নিজেদের প্রচারণায় ব্যবহার করছে। আর এভাবেই তারা মনুষ্যত্বকে করছে পদদলিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ ।
ধন-রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,
সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই । ‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ করো যদি, পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি । নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা, তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি ।
[সূত্র: সুখ; কায়কোবাদ ক. ‘মাটির পৃথিবী’ আবুল ফজলের কোন ধরনের রচনা? খ. ‘অনুগ্রহকারী এবং অনুগৃহীতের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত’ কেন তা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উক্ত দিকটিই পারে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের রচয়িতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে”— মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘মাটির পৃথিবী’ আবুল ফজলের একটি গল্পগ্রন্থ ।
খ. সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের চরিত্র হওয়ায় অনুগ্রহকারী আর অনুগৃহীতের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত ।
যিনি দান করেন তিনি অনুগ্রহকারী। অপরদিকে, যিনি সেই দান গ্রহণ করেন তিনি অনুগৃহীত ব্যক্তি। উভয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। একজন ইতিবাচক আর অপরজন নেতিবাচক। আর এ কারণেই তাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতার গুরুত্বের দিকটি ফুটে উঠেছে
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের রচয়িতা মনে করেন, বিভক্তীকরণের মনোভাব নিয়ে কারও কল্যাণ করা যায় না, করা যায় একমাত্র সংযোগ-সহযোগিতার পথে । কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে মানব-কল্যাণের প্রধানতম অন্তরায় হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত চেতনা। লেখকের মতে, এ চেতনা মানুষকে মেলায় না, বরং বিভক্তিই বাড়ায়।
উদ্দীপকের কবিতাংশে দেখা যায়, আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থে আত্মনিবেদনের মাঝেই রয়েছে সুখ। এর মাধ্যমে যেমন মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা যায়, তেমনি পাওয়া যায় আত্মসুখ।
কবির দৃষ্টিতে এই সুখ ধন-রত্নের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয়, কেবল সম্ভব অপরের কল্যাণের মাঝে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার গুরুত্বের দিকটিই ফুটে উঠেছে।
ঘ. ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের রচয়িতার লক্ষ্য কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করা, যা পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে সম্ভব।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের রচয়িতা কল্যাণময় পৃথিবী রচনার স্বপ্ন দেখেন, যে পৃথিবীতে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হবে। মানবজাতির সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় উত্তরণ ঘটবে। আর এসব সম্ভব মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে, যে পথ পারস্পরিক সহযোগিতার কল্যাণময় পথ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি মানুষের প্রকৃত কল্যাণ-সাধনের কথা বলেছেন । এজন্য তিনি পরোপকারের কথা বলেছেন, আত্মস্বার্থ বিসর্জনের কথা বলেছেন, অপরকে সহযোগিতার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, পারস্পরিক এ সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি স্থাপিত হলে আত্মসুখ যেমন অর্জিত হবে, তেমনি কল্যাণময় পৃথিবীও রচিত হবে। আর এটাই কবির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, উদ্দীপকের কবি এবং প্রাবন্ধিকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এক ও অভিন্ন । কারণ উভয়েই পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতাপূর্ণ এক কল্যাণময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন।
প্রাবন্ধিক যেমন মানব-মর্যাদার সহায়ক এমন কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করতে চান, তেমনি উদ্দীপকের কবিও চান পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ এক শান্তিময় পৃথিবী গড়ে তুলতে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে ওঠা পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার দিকটিই পারে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের রচয়িতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে।
১১ নম্বর প্রশ্ন
রফিকুল ইসলাম করুণার বশবর্তী হয়ে সামান্য দান-খয়রাত করাকেই মানব- কল্যাণ বলে মনে করে থাকেন। কোনো সভা-সমিতিতে তাকে আমন্ত্রণ করা হলে তার নামের পূর্বে ‘জনদরদি' শব্দটি লেখা না থাকলে রাগান্বিত হন । অথচ ব্যক্তিগতভাবে তিনি দরিদ্র মানুষকে ঘৃণা করে থাকেন। মাঝেমধ্যেই তার আচরণে সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
ক. নবি ভিক্ষুককে কী কিনে দিয়েছিলেন?
খ. ‘সে সোপান রচনাই সমাজ আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব'— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সম্পূর্ণভাব প্রকাশ করে কি? তোমার মতের সপক্ষে যুক্তি দাও ।
১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. নবি ভিক্ষুককে একখানা কুড়াল কিনে দিয়েছিলেন।
খ ‘সে সোপান রচনাই সমাজ আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব'— বলতে মানব- কল্যাণের প্রাথমিক সোপানকে বোঝানো হয়েছে ।
মানব-কল্যাণ তখনই সাধিত হবে যখন মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারবে। আর এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ ক্ষেত্র রচনা, যে ক্ষেত্র রচনার প্রধান দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের।
লেখক এ ক্ষেত্রকে বলেছেন মানব-কল্যাণের প্রাথমিক সোপান। এ সোপান প্রস্তুত থাকলেই সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হবে বলে লেখক মনে করেন । প্রশ্নোক্ত কথাটির দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-মর্যাদার অবমাননা কীভাবে ঘটে তার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। এ বিচার করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন মানুষ তথাকথিত মানব-কল্যাণের নামে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটিয়ে থাকে ।
তারা মানব-কল্যাণ শব্দটির প্রকৃত অর্থই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ। আর তাই তো লোকদেখানো সামান্য দান-খয়রাতকেই তারা মানব-কল্যাণ বলে মনে করে থাকে ।
উদ্দীপকে আমরা মানব-মর্যাদার অবমাননার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করি, যেখানে জনাব রফিকুল ইসলাম করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত করাকেই মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন।
আর তাই তো তিনি নিজের নামের পূর্বে ‘জনদরদি' শব্দটি ব্যবহার করেন। সভা-সমিতিতে আমন্ত্রণ পেলে নিজের নামের পূর্বেও তিনি ‘জনদরদি' শব্দটি দেখতে চান ।
অথচ তিনি দরিদ্র মানুষকে ঘৃণা করে থাকেন। আসলে তার দ্বারা মানব- কল্যাণ নয় মানব-মর্যাদার অবমাননাই ঘটে থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-মর্যাদার অবমাননা কীভাবে ঘটে সে দৃষ্টান্তই উপস্থাপন করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে কেবল মানব-মর্যাদার অবমাননার দিকটি ফুটে ওঠায় তা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সম্পূর্ণভাব প্রকাশ করেনি বলে আমি মনে করি। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত তাৎপর্য তুলে ধরার পাশাপাশি আরও নানা বিষয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন ৷
তিনি এখানে যেমন আমাদের বর্তমান সমাজে মানব-মর্যাদার অবমাননার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন, তেমনি তুলে ধরেছেন প্রকৃত মানব-কল্যাণের দৃষ্টান্তও। সামান্য দান-খয়রাতকে যারা মানব-কল্যাণ বলে মনে করে থাকেন, তাদের তিনি সংকীর্ণ মনোভাবের মানুষ বলেছেন ।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা কেবল মানব-মর্যাদার অবমাননার দিকটি প্রত্যক্ষ করি। কিছু মানুষ দরিদ্র মানুষদের পছন্দ না করলেও নামের পাশে ‘জনদরদি' শব্দটি ব্যবহার করতে পছন্দ করে। এ ধরনের মানুষে যেন সমাজ আজ ছেয়ে গেছে।
এমনকি এরা নিজেদের জনদরদি হিসেবে পরিচিত করাতে যেকোনো হীন পন্থা অবলম্বনেও পিছপা হয় না। প্রকৃতপক্ষে এদের দ্বারা কেবল মানব-মর্যাদা ক্ষুণ্নই হয়ে থাকে।
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোচনা শেষে আমরা দেখতে পাই যে, উদ্দীপকে কেবল মানব-মর্যাদার অবমাননার দিকটি ফুটে উঠেছে। পক্ষান্তরে এ বিষয়টি ছাড়াও প্রবন্ধে আরও অনেক বিষয়ের সমাবেশ ঘটেছে ।
সমাজ এবং রাষ্ট্র কীভাবে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ সৃষ্টি করতে পারে, সে বিষয়টি প্রবন্ধের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক। প্রবন্ধটিতে লেখক মানব-মর্যাদা বৃদ্ধির উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। আবার বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে কীভাবে মানব-কল্যাণে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
এছাড়া এখানে লেখকের সার্বিক মানব- কল্যাণের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। সর্বোপরি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটিয়ে এক কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করাই লেখকের উদ্দেশ্য । তাই উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করেনি, আংশিক ভাব প্রকাশ করেছে।
১২ নম্বর প্রশ্ন
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও ।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
“সুখ সুখ করি কেঁদো না আর ।
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়ভার ।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে।
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে ।
ক. লেখকের মতে, কোন ক্রিয়াকর্মের আবশ্যম্ভাবী পরিণতি মনুষ্যত্বের অবমাননা?
খ. মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকের কবিতাংশে বর্ণিত দিকটিই ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়”— তোমার মতের সপক্ষে যুক্তি দাও ।
১২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখকের মতে, দয়া বা করুণায় বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি মনুষ্যত্বের অবমাননা।
খ. মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে বুঝিয়েছেন ।
লেখকের মতে, অনেক মানুষই মানব-কল্যাণ অর্থে দয়া বা করুণায় বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে বোঝেন। কিন্তু তিনি একে মানব-কল্যাণ বলতে নারাজ।
কারণ এ কাজে প্রকারান্তরে মনুষ্যত্বের অবমাননাই হয়। মানব-কল্যাণের পরিবর্তে ঘটে মানব-মর্যাদার চরম অপমান । মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক মানব-মর্যাদার এই অপমানকেই বুঝিয়েছেন ।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সংযোগ-সহযোগিতার দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কল্যাণময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের কথা বলেছেন । এরূপ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন মানুষে-মানুষে বিভেদ দূর করা । আর এটি তখনই সম্ভব হবে যখন পারস্পরিক সংযোগ-সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানব-মর্যাদার বর্তমান অবমাননাকর অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটবে ।
উদ্দীপকে পৃথিবীতে মানুষের আগমনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে মানুষ পৃথিবীতে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই আসেনি, বরং অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।
আর এর মাঝেই মানবজন্ম সার্থক হয়, মানুষ প্রকৃত সুখের দেখা পায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত, কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সংযোগ ও সহযোগিতার দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কেবল আত্মস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পারস্পরিক সংযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার কথা হয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ কথাটির স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর এটি করতে গিয়ে তিনি নানা বিষয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন করুণার বশবর্তী হয়ে দান- খয়রাত করলে কীভাবে মানব-মর্যাদার অপমান ঘটে। আমাদের সমাজ যে এরূপ উপলব্ধিহীন মানুষে ভরে আছে, সেটিও তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছেন ।
এছাড়া রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত চেতনা কীভাবে প্রকৃত মানব-কল্যাণের অন্তরায় ঘটাচ্ছে, সে বিষয়টিও তিনি দেখিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি একটি আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি গড়ে তোলার সহায়ক দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন ।
উদ্দীপকে পরার্থে আত্মস্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগ- সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমেই যে পৃথিবীতে সুখ লাভ সম্ভব এবং কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব, সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন কবি। কবির মতে, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই কারও জন্ম হয়নি, বরং অন্যের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোচনায় দেখা যায়, উদ্দীপকটি প্রবন্ধের একটি খণ্ডাংশকে উপস্থাপন করছে মাত্র। প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। আলোচ্য প্রবন্ধে উদ্দীপকের বিষয়টি ছাড়াও রয়েছে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটে তার দৃষ্টান্ত ।
এছাড়া রয়েছে প্রকৃত মানব-কল্যাণের উদাহরণ। লেখক যুক্তিনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তোলার সঠিক দিকনির্দেশনা । উদ্দীপকের কবিতাংশে এসব বিষয় উঠে না আসায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
১৩ নম্বর প্রশ্ন
সবুজ ও শাহিন একই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের পাশের গ্রামে ভবন ধসে অনেক মানুষ আটকে পড়েছেন। খবর শুনে সবুজ ও শাহিন সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের বাঁচার জন্য আর্তনাদ শুনে সবুজ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সকলের সঙ্গে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় । কিন্তু শাহিন তা না করে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বাড়ি ফেরে। পরে বিপদগ্রস্ত কিছু পরিবারকে অর্থ সহায়তা করে। আর সবুজ উদ্ধারকাজ শেষ হলে তাদের সার্বিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থার চেষ্টা করে ।
ক. ‘রাঙা প্রভাত' কী জাতীয় রচনা?
খ. যে রাষ্ট্র হাতপাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্রের পরিণতি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের শাহিন চরিত্রের মধ্যে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শাহিন নয়, সবুজের মধ্য দিয়েই মানব-কল্যাণের আদর্শ ফুটে উঠেছে’– ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যুক্তিসহ বিচার করো ।
১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘রাঙা প্রভাত’ একটি উপন্যাস ।
খ. যে রাষ্ট্র হাতপাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কখনোই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না ৷
হাতপাতা বা চাটুকারিতা মানবচরিত্রের দুটি নেতিবাচক দিক। যে মানুষ বা জাতি এই দুটি কাজকে প্রশ্রয় দেয়, তারা যেন প্রকারান্তরে নিজের বা ঐ জাতির মর্যাদাকেই ভূলুণ্ঠিত করে।
ফলে ঐ ব্যক্তি যেমন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তেমনি ঐ জাতিও সুনাগরিক সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয় । কারণ রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক।
গ. যারা দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ মনে করে, ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সেই দিকটি উদ্দীপকের শাহিন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন যে, আমাদের সমাজের অনেকে আছেন, যারা দান-খয়রাত আর কাঙালি ভোজনকে মানব-কল্যাণ মনে করেন। তারা মনে করেন, মানুষের জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই মানব-কল্যাণ।
অনেকে আবার বাহবা কুড়োবার জন্যও এসব করে থাকেন। কেউ কেউ এক মুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও মানব-কল্যাণ মনে করেন, যা লেখক মানতে রাজি নন ।
উদ্দীপকের শাহিন ভবন ধসে আটকে পড়া মানুষদের দুরবস্থা দেখতে গিয়ে কিছু না করে ফিরে আসে। পরবর্তীকালে সে কিছু পরিবারকে অর্থ সহায়তা করে। এর মধ্যদিয়েই সে মনে করে সে অনেক বড় কাজ করে ফেলেছে।
কিন্তু মানব-কল্যাণের উৎস মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি আর মানবিক চেতনা বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। তাই বলা যায়, “মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধে যারা সাময়িক অনুগ্রহ করাকে মানব-কল্যাণ মনে করে শাহিন তাদের সমগোত্রীয় ।
ঘ. উদ্দীপকের শাহিন সাময়িক অনুগ্রহ করাকে মানব-কল্যাণ মনে করলেও মানব-কল্যাণের প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠেছে সবুজের মধ্য দিয়ে।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন । তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস, যা মানব-মর্যাদার সহায়ক।
এ কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। কিন্তু যারা দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে মানব-কল্যাণ মনে করে, তারা কখনোই প্রকৃত মানবসেবক নয় ।
উদ্দীপকের শাহিন ভবন ধসে আটকে পড়া মানুষদের আর্তনাদ শুনতে পেলেও অনুভব করতে পারেনি। তাই সাময়িক অর্থদানকেই সে তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছে। কিন্তু সবুজ ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। নিজের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে মানব-কল্যাণের যে আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে, তা কেবল উদ্দীপকের সবুজের মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। কারণ সে বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর সার্বিক কল্যাণের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছে, কিন্তু শাহিন তা করেনি।
সে কেবল আর্থিক অনুদান দিয়েই নিজের দায়িত্বের ইতি টানে। মনুষ্যত্বের অবমাননা যে ক্রিয়াকর্মের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি তাকে কিছুতেই মানব-কল্যাণ নামে অভিহিত করা যায় না। তাই ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকের শাহিন নয়, সবুজের মধ্যে মানব-কল্যাণের স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
১৪ নম্বর প্রশ্ন
অন্নহীনে অন্নদান, বস্ত্র বস্ত্রহীনে
তৃষাতুরে জলদান, ধর্ম ধর্মহীনে
মূর্খজনে বিদ্যাদান, বিপন্নে আশ্রয়,
রোগীরে ঔষধদান, ভয়ার্তে অভয়
গৃহহীনে গৃহদান, অন্ধেরে নয়ন,
পীড়িতে আরোগ্যদান, শোকার্তে সান্ত্বনা:
স্বার্থশূন্য হয় যদি এ দ্বাদশ দান
স্বর্গের দেবতা নহে দাতার সমান ।
ক. কীসের সহায়তায় কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব?
খ. মানব-কল্যাণ কীভাবে মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানই পারে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে।”— মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
১৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখকের মতে, মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব ।
খ. কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলে মানব-কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। কল্যাণময় পৃথিবী বলতে তিনি এমন পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন যেখানে মানব-মর্যাদা কখনো ক্ষুণ্ণ হয় না, বরং সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় সেখানে মানুষের উত্তরণ ঘটে।
তিনি মনে করেন মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে চললে তা সম্ভব; কারণ একমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনাকারীকে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। তাই বলা যায়, কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলেই মানব- কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে।'
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-কল্যাণের তাৎপর্যপূর্ণ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-মর্যাদার জয়গান গেয়েছেন । প্রবন্ধটিতে তিনি সবার ওপরে মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষের মর্যাদাকে যদি মানুষ যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তবেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হবে, কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তুলতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা প্রকৃত মানব-কল্যাণের উপায় সম্পর্কে অবগত হই। মানুষ নানাবিধ সমস্যায় জর্জড়িত। তাই মানুষের কল্যাণ করতে চাইলে প্রথমে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে।
আর অবশ্যই তা হতে হবে স্বার্থশূন্য । কবি এখানে মানব-কল্যাণ সাধনকল্পে বারো প্রকার দানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধন সম্ভব । তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ” প্রবন্ধে বর্ণিত মানব-কল্যাণের তাৎপর্যপূর্ণ দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ‘ মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের লেখকের মতে, প্রকৃত মানব-কল্যাণ তখনই সম্ভব যখন মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হবে, যা উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকেই অনেকে মানব-কল্যাণ বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন ধারণা খুবই সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস ।
উদ্দীপকে প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধনে দ্বাদশ দানের উল্লেখ করা হয়েছে কবির মতে, সমাজে কেউ বিত্তবান, আবার কেউ অসহায়। যারা সম্পদশালী তারা আর্থিকভাবে সাহায্য দিয়ে সমাজের দীন-দুঃখীদের সাহায্য করতে পারে। আর যাদের সে সামর্থ্য নেই, তারা সান্ত্বনা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, অসুস্থকে সেবা দিয়ে এবং সাধ্যমতো শ্রম দিয়ে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে । এভাবে সমাজের মানুষ যদি একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তবে কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব ।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবি মানব-কল্যাণে কার্যকর দ্বাদশ দানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন । আবার আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের প্রতি জোর দিয়েছেন । তাই বলা যায়, “উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানই পারে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে।”— মন্তব্যটি যথার্থ।
১৫ নম্বর প্রশ্ন
উদ্দীপক-১: কবির সাহেবের কাছে একটি অনাথ ছেলে এসে কাজ চাইলে তিনি তাকে দশটি টাকা ভিক্ষা দিয়ে বিদায় করে দেন ।
উদ্দীপক-২: বাদল সাহেবের কাছ একটি অনাথ ছেলে এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে কাজের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলের প্রস্তাব দেন। ছেলেটি তাতে রাজি হলে তাকে তিনি একটি সরকারি কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেন। ছেলেটির হোস্টেলে থাকা-খাওয়া বাবদ যা খরচ আসে তা বাদল সাহেব বহন করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা মূল্যে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে ছেলেটি আজ স্বাবলম্বী
ক. মানব-কল্যাণের কুৎসিত রূপ কোথায় দেখা যায়?
খ. ‘এ সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।'— কোন সত্যটা? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক-১ ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপক-২-এ ““মানব-কল্যাণ’ রচনার মূলভাব ফুটে উঠেছে” মন্তব্যটির যথার্থতা আলোচনা করো ।
১৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব-কল্যাণের কুৎসিত রূপ আমাদের আশপাশে, চারদিকে তাকালেই দেখা যায়।
খ. সব রকম কল্যাণকর্মেরই যে সামাজিক পরিণতি রয়েছে, সে সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয় ।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সবকিছুর সঙ্গেই তার সম্পর্ক বিদ্যমান ফলে মানুষের কর্মের সাথে যে কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে তা নয়, তার সামাজিক পরিণতি বা Social Consequence-ও অবিচ্ছিন্ন।
যেহেতু সব মানুষই সমাজের অঙ্গ তাই তার সব রকম কল্যাণ-কর্মেরও রয়েছে সামাজিক পরিণতি। আর এ সত্যটিই অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।
গ উদ্দীপক-১ আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘মানব-কল্যাণ' সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপ তুলে ধরে ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব-কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণাটি তুলে ধরেছেন। অধিকাংশ মানুষেরই বিশ্বাস মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করলেই তার কল্যাণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা হয় বলে মনে করেন আবুল ফজল । তাঁর মতে, করুণা প্রদর্শনে নয়, বরং দুস্থ মানুষকে তার হীন দশা থেকে মুক্ত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করার মাধ্যমেই সত্যিকারের মানব-কল্যাণ সম্ভব।
উদ্দীপক-১-এ আমরা দেখি কবির সাহেবের কাছে একটি ছেলে এসে কর্মসংস্থানের জন্য আবেদন জানায়। কবির সাহেব তাকে দশটি টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন । এর মধ্য দিয়ে কবির সাহেবের সংকীর্ণ মনোবৃত্তির স্বরূপই ফুটে উঠেছে। ছেলেটিকে তিনি স্বাবলম্বনের পথ প্রদর্শনের পরিবর্তে ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহিত করেন, যা মানুষের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাহানিকর কাজ। দশ টাকা দান করাকেই কবির সাহেব মানব-কল্যাণ হিসেবে মনে করেছেন। ‘মানব-কল্যাণ' রচনা অনুসারে বলা যায়, সাহেবের এ ভাবনাটি নিতান্তই অমূলক ও ভ্রান্ত । কবির
ঘ সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনই 'মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধের মূলভাব, যার স্বরূপ উদ্দীপক-২ এ ফুটে উঠেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন । সাধারণত অনেকেই দান-খয়রাত করাকেই মানব- কল্যাণ ভেবে ভুল করেন। লেখকের মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নিরন্তর প্রয়াস ।
উদ্দীপক-২-এ আমরা ইতিবাচক একটি সামাজিক বার্তার সন্ধান পাই । বাদল সাহেবের কাছে একটি ছেলে ভিক্ষা চাইলে তিনি ছেলেটিকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেন। ছেলেটি তাঁর কথায় রাজি হলে তিনি ছেলেটির পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ শেখার ব্যবস্থা করে দেন।
ছেলেটির ভরণ-পোষণের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। বাদল সাহেবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাই সেদিনের দুস্থ ছেলেটিকে মর্যাদাবান ও স্বাবলম্বী মানুষে পরিণত করেছে। ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখকও ঠিক এভাবেই মানব-কল্যাণ নিশ্চিতের প্রত্যাশী।
মানব-কল্যাণের মূল লক্ষ্য অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। একজন ভিক্ষুককে কয়েকটি টাকা বা অন্য কোনো সাহায্য দান করার মাধ্যমে তার সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করা যায় না, বরং এতে তার মর্যাদাহীন অবস্থাকেই প্রকারান্তরে সমর্থন করা হয় ।
এই বিষয়টিকেই আলোচ্য প্রবন্ধে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করার শামিল বলেছেন। উদ্দীপকের বাদল সাহেবের মাঝেও এ বিষয়ে সচেতনতা লক্ষণীয় । প্রবন্ধের লেখকের মতে, এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আমাদের মানুষের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল নিশ্চিতে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
তাঁর মতে, মানুষকে মর্যাদার সাথে জীবনযাপনে সক্ষম করে তোলাই মানব-কল্যাণের প্রকৃত উদ্দেশ্য। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ, মুক্তবুদ্ধির জাগরণ এবং স্বাবলম্বনের মাধ্যমে আত্মমর্যাদা অর্জনই কল্যাণকামী সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উদ্দীপকের বাদল সাহেবের মাঝে এই প্রয়াসই ফুটে উঠেছে। সুতরাং উদ্দীপক-২ এ আলোচ্য প্রবন্ধের মূলভাব অর্থাৎ প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিতকরণের প্রসঙ্গটি ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।
১৬ নম্বর প্রশ্ন
আর্থিক সংগতি না থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়াশোনার ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন পলান সরকার। তিনি ছিলেন বই-পাগল মানুষ। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধাতালিকায় স্থান পেত, তাদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তার বই বিলির অভিযান। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে করেছেন এই কাজ। নিজের টাকায় বই কিনে পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোটো-বড়ো সবার দোরগোড়ায় বই হাতে পৌঁছে যেতেন পলান সরকার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি হাঁটতে হাঁটতে এই সমাজটাকে বদলানোর আন্দোলনে নেমেছি।”
ক. ‘র্যাশনাল' শব্দের অর্থ কী?
খ. কীভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন?
গ. উদ্দীপকের পলান সরকারের প্রয়াসে ‘মানব-কল্যাণ' রচনার কোন প্রসঙ্গটি লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “পলান সরকারের মাঝে ‘মানব-কল্যাণ' রচনার লেখকের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।”— মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো ।
১৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘র্যাশনাল’ শব্দের অর্থ— বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন।
খ. প্রাবন্ধিক মনে করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন কাজ সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক।
কারণ এভাবে কখনোই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানব-কল্যাণ।
অর্থাৎ সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানব-কল্যাণ। তাই প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব ।
গ. উদ্দীপকের পলান সরকারের প্রয়াসে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত মনুষ্যত্ব ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশের মাধ্যমে সমাজ বদলের প্রচেষ্টার বিষয়টি ফুটে উঠেছে
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব-কল্যাণে মানবিক বৃত্তি তথা মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
লেখকের মতে, মানব-কল্যাণ মূলত মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করাকেই বোঝায়। তার জন্য সমাজের জনসমষ্টির মাঝে মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই ।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পলান সরকার একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি । আজীবন তিনি নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে স্বশিক্ষিত করার জন্য বই বিলিয়ে গিয়েছেন। বই
পড়ার মাধ্যমে মানুষ মূল্যবোধের অধিকারী হয়, যা মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ারই উপায়। মুক্তবুদ্ধির চর্চায়ও বই পড়ার বিকল্প নেই।
এভাবেই বইয়ের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছেন পলান সরকার। ‘মানব- কল্যাণ' রচনায়ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে ।
ঘ. প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিতকরণে নিবেদিত হওয়ায় পলান সরকারের মাঝে ‘মানব-কল্যাণ' রচনার লেখকের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।
আলোচ্য প্রবন্ধে আবুল ফজল সত্যিকারের মানব-কল্যাণের স্বরূপ ও তার তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। দান-খয়রাতের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করার ধারণাটি সংকীর্ণতার পরিচায়ক এবং এতে মানুষের মর্যাদাকে অবমাননাই করা হয়।
লেখকের মতে, সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানব-কল্যাণের আসল উদ্দেশ্য। এজন্য তিনি মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় মানবিক পৃথিবী নির্মাণের প্রত্যাশী ।
উদ্দীপকে বর্ণিত পলান সরকার ছিলেন নিঃস্বার্থ এক বইয়ের ফেরিওয়ালা। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের কাছে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে বেড়িয়েছেন তিনি।
স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত মানুষেরাই মনুষ্যত্ব ও মুক্তবুদ্ধির ধারক। আর তেমন মানুষ সৃষ্টিতেই ভূমিকা রাখতে চেয়েছেন পলান সরকার। এভাবেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা উচিত বলে ‘মানব-কল্যাণ' রচনায় উল্লেখ করেছেন লেখক।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখকের মতে, মানব-কল্যাণকে কেবল ব্যক্তিপর্যায় থেকে দেখলেই হবে না। একজন মানুষের জৈবিক অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাকে কিছু সহায়তা করার নাম মানব-কল্যাণ নয়।
মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সমাজ সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রবন্ধে। এক্ষেত্রে লেখক মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক-বৃত্তির বিকাশের পথ ধরে বেড়ে উঠতে দেওয়ার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাকে বলেছেন মানব-কল্যাণের প্রথম সোপান।
প্রতিটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানেরই এ সোপান রচনায় সমন্বিতভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং মানবিক সমাজ গড়তে হবে। তবেই মানুষের প্রকৃত মর্যাদা নিশ্চিত হবে। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকল্প নেই।
তাই লেখক মানব-কল্যাণ নিশ্চিতে এ দিকটিতেও জোর দিয়েছেন। উদ্দীপকের পলান সরকার মানুষকে স্বশিক্ষিত করে তুলতে সবার দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিয়েছেন। জ্ঞানের স্পর্শে মানুষের মনের সংকীর্ণতা দূর হয়, মানুষের মাঝে মূল্যবোধ তথা মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটে।
মুক্তবুদ্ধির চর্চায় মানবিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন পলান সরকার। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের সত্যিকারের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি তাই ‘মানব-কল্যাণ' রচনার লেখকের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়েছেন বলেই আমি মনে করি । অর্থাৎ আমার মতে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।
চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই, সেখানে মুক্তি নেই। মানুষের অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে, এই মুক্তির দিকে লক্ষ রেখে। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না বলেই ক্ষুৎপিপাসার তৃপ্তির প্রয়োজন। একটা বড়ো লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই অন্নবস্ত্রের সমাধান করা ভালো, নইলে তা আমাদের বেশি দূর নিয়ে যাবে না । মোতাহার হোসেন চৌধুরী। ক. কীসের সাথে মানব-মর্যাদার তথা Human dignity-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য?
খ. ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সাথে কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে কীভাবে? উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মতামত দাও ৷
১৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক মানব-কল্যাণের সাথে মানব-মর্যাদার তথা Human dignity-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
খ আমরা যে বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাদের রেখে যাওয়া আদর্শের উত্তরাধিকারকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি, ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন ।
"
সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। যুগে যুগে বাংলাদেশে অনেক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে। তাঁরা আমাদের জন্য মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন । কিন্তু আমরা সেই আদর্শের পথে চলতে ব্যর্থ হয়েছি। ‘দুঃখের বিষয়' বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন ।
গ মানব-কল্যাণে মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপটিই উদ্দীপকটিকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সাথে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক আবুল ফজল ‘মানব-কল্যাণ’ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন । অনেকেরই ধারণা ভিক্ষা বা অন্য কোনোভাবে অনুগ্রহ প্রদান করতে পারলেই বুঝি মানব-কল্যাণ নিশ্চিত হয় । কিন্তু আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন, মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে কেবল মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে মানব-মঙ্গলের প্রয়াস ফলপ্রসূ হতে পারে না ।
উদ্দীপকে মানবমুক্তির লক্ষ্যে মানুষে র মানসিক মুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষের জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করা হয়নি। তবে মানবিক সত্তার মুক্তি ব্যতীত কেবল ক্ষুৎপিপাসা নিবারণের ভাবনা ভাবলে সমাজের বিশেষ কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। মানসিক মুক্তির প্রথম সোপানই হলো মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়া। মানুষের সার্বিক উন্নয়নে জৈবিক চাহিদা ও মানসিক মুক্তির এই দ্বান্দ্বিক অবস্থানের স্বরূপ ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধেও প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধ অবলম্বনে বলা যায়, মানুষের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য চাই মানবিক বোধ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আবুল ফজল সচেষ্ট হয়েছেন মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে। করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে লেখক মানব-কল্যাণ নয়, বরং মানব-অবমাননা বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস যার লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চাই মানবিক পৃথিবী নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে ।
উদ্দীপকে মানুষের সার্বিক মুক্তি বলতে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ক্ষুৎপিপাসা মিটলেও মানসিক মুক্তির দেখা না মিললে কখনোই মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা করা যায় না।
তাই ক্ষুৎপিপাসা মেটানোর সাথে সাথে মানসিক মুক্তির দিকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে উদ্দীপকে। এক্ষেত্রে প্রকারান্তরে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মনুষ্যত্বের বিকাশকেই উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধেও এ বিষয়গুলোকে মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে ।
মানব-কল্যাণ প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় 'নয়, কেবল সদিচ্ছার ওপরও এটি নির্ভরশীল নয়। মানব-কল্যাণে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি।
কেবল মানুষের জৈবিক চাহিদা মিটলেই মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় না। সমাজের মানুষ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ।
তাই ব্যক্তির বা ব্যক্তিগোষ্ঠীর সাময়িক কল্যাণ হলেও গোটা সমাজের মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত না হলে কোনো কল্যাণ প্রয়াসই দীর্ঘস্থায়ী সফলতার মুখ দেখে না। মানব-কল্যাণে তাই প্রয়োজন সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হওয়া, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে নিজের মর্যাদা বুঝতে শেখাবে। পাশাপাশি অন্যকেও মর্যাদা দিতে শেখাবে।
এমন মানবিক সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিকল্প নেই, যার তাগিদ উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধে রয়েছে। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে মানবিক সমাজ নির্মাণ করতে পারলেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিত হবে ।
১৭ নম্বর প্রশ্ন
চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই, সেখানে মুক্তি নেই। মানুষের অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে, এই মুক্তির দিকে লক্ষ রেখে। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না বলেই ক্ষুৎপিপাসার তৃপ্তির প্রয়োজন। একটা বড়ো লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই অন্নবস্ত্রের সমাধান করা ভালো, নইলে তা আমাদের বেশি দূর নিয়ে যাবে না । মোতাহার হোসেন চৌধুরী।
ক. কীসের সাথে মানব-মর্যাদার তথা Human dignity-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য?
খ. ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সাথে কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে কীভাবে? উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মতামত দাও ৷
১৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব-কল্যাণের সাথে মানব-মর্যাদার তথা Human dignity-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
খ. আমরা যে বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাদের রেখে যাওয়া আদর্শের উত্তরাধিকারকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি, ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন ।
সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। যুগে যুগে বাংলাদেশে অনেক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে। তাঁরা আমাদের জন্য মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন । কিন্তু আমরা সেই আদর্শের পথে চলতে ব্যর্থ হয়েছি। ‘দুঃখের বিষয়' বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন ।
গ. মানব-কল্যাণে মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপটিই উদ্দীপকটিকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের সাথে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক আবুল ফজল ‘মানব-কল্যাণ’ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ।
অনেকেরই ধারণা ভিক্ষা বা অন্য কোনোভাবে অনুগ্রহ প্রদান করতে পারলেই বুঝি মানব-কল্যাণ নিশ্চিত হয় । কিন্তু আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন, মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে কেবল মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে মানব-মঙ্গলের প্রয়াস ফলপ্রসূ হতে পারে না ।
উদ্দীপকে মানবমুক্তির লক্ষ্যে মানুষের মানসিক মুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষের জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করা হয়নি।
তবে মানবিক সত্তার মুক্তি ব্যতীত কেবল ক্ষুৎপিপাসা নিবারণের ভাবনা ভাবলে সমাজের বিশেষ কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।
মানসিক মুক্তির প্রথম সোপানই হলো মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়া। মানুষের সার্বিক উন্নয়নে জৈবিক চাহিদা ও মানসিক মুক্তির এই দ্বান্দ্বিক অবস্থানের স্বরূপ ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধেও প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধ অবলম্বনে বলা যায়, মানুষের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য চাই মানবিক বোধ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা।
‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আবুল ফজল সচেষ্ট হয়েছেন মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে। করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে লেখক মানব-কল্যাণ নয়, বরং মানব-অবমাননা বলেই মনে করেন।
তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস যার লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চাই মানবিক পৃথিবী নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে ।
উদ্দীপকে মানুষের সার্বিক মুক্তি বলতে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ক্ষুৎপিপাসা মিটলেও মানসিক মুক্তির দেখা না মিললে কখনোই মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা করা যায় না।
তাই ক্ষুৎপিপাসা মেটানোর সাথে সাথে মানসিক মুক্তির দিকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে উদ্দীপকে।
এক্ষেত্রে প্রকারান্তরে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মনুষ্যত্বের বিকাশকেই উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধেও এ বিষয়গুলোকে মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে ।
মানব-কল্যাণ প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় 'নয়, কেবল সদিচ্ছার ওপরও এটি নির্ভরশীল নয়। মানব-কল্যাণে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি।
কেবল মানুষের জৈবিক চাহিদা মিটলেই মানব-কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় না। সমাজের মানুষ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ।
তাই ব্যক্তির বা ব্যক্তিগোষ্ঠীর সাময়িক কল্যাণ হলেও গোটা সমাজের মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত না হলে কোনো কল্যাণ প্রয়াসই দীর্ঘস্থায়ী সফলতার মুখ দেখে না।
মানব-কল্যাণে তাই প্রয়োজন সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হওয়া, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে নিজের মর্যাদা বুঝতে শেখাবে। পাশাপাশি অন্যকেও মর্যাদা দিতে শেখাবে। এমন মানবিক সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিকল্প নেই, যার তাগিদ উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধে রয়েছে।
উদ্দীপক ও প্রবন্ধের সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে মানবিক সমাজ নির্মাণ করতে পারলেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিত হবে ।
১৮ নম্বর প্রশ্ন
সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ
সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ ।
মানুষের সাথে কভু মানুষের রবে না বিচ্ছেদ—
সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ ।
দেশে দেশে যুগে যুগে কত যুদ্ধ কত না সংঘাত
মানুষে মানুষে হলো কত হানাহানি ।
এবার মোদের পুণ্যে সমুদিবে প্রেমের প্রভাত
সোল্লাসে গাহিবে সবে সৌহার্দের বাণী ।
ক. মুক্তবুদ্ধি কী?
খ. দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে লেখক কেন মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন না?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকের কবিতাংশে যেন ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের লেখকের আকাঙ্ক্ষাই ব্যক্ত হয়েছে'— মন্তব্যটি যথার্থতা যাচাই করো ।
১৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মুক্তবুদ্ধি হলো— সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামিমুক্ত উদার মানসিকতা
খ. মনুষ্যত্বের অবমাননা হয় বলে দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান- খয়রাতকে লেখক মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন না ।
মানব-কল্যাণের উৎস মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি ও মানবিক চেতনা বিকাশের মধ্যে নিহিত। কিন্তু দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত করলে প্রকারান্তরে মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটে, মানব-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় । আর এ কারণেই দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে লেখক মানব-কল্যাণ বলে মনে করেন না ।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে বর্ণিত কল্যাণময় পৃথিবী রচনার গুরুত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ।
. ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এমন পৃথিবী কীভাবে রচনা করা সম্ভব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
তাঁর মতে, মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথেই এমন পৃথিবী রচনা করা সম্ভব। কল্যাণময় পৃথিবী বলতে তিনি মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হবে এমন পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে নতুন সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। যে সমাজে মানুষে-মানুষে কোনো ব্যবধান থাকবে না, থাকবে মৈত্রীর ভাব ।
সেখানে থাকবে না কোনো হানাহানি, সবার মাঝে বিরাজ করবে এক সৌহার্দ্যময় সম্পর্ক। ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধেও আমরা এমন পৃথিবীর প্রত্যাশা লক্ষ করি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত কল্যাণময় পৃথিবী রচনার গুরুত্বের দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কল্যাণময় পৃথিবীর প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায় । ‘মানব-কল্যাণ’, প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এক কল্যাণময় পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
শুধু তা-ই নয়, এমন পৃথিবী কীভাবে রচনা সম্ভব সে . বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। এজন্যই তিনি মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য আমাদের নিকট উপস্থাপন করেছেন ।
তিনি মনে করেন, সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটলেই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধন সম্ভব। আর এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এক কল্যাণময় পৃথিবীর ।
উদ্দীপকের কবির মাঝেও কল্যাণময় পৃথিবী রচনার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। এজন্যই তিনি সংসারে নতুন সমাজ গড়ে তোলার কথা বলেছেন— যে সমাজে থাকবে না কোনো বৈষম্য, মানুষের মাঝে বিরাজ করবে মৈত্রীর ভাব ।
আর তা সম্ভব হলে পৃথিবীতে এক প্রেমপূর্ণ সৌহার্দ্যময় সমাজ গড়ে উঠবে। উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধের পর্যালোচনা শেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, উভয়ক্ষেত্রেই এক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে যেমন সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও প্রেমপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত হয়েছে, তেমনি ‘মানব- কল্যাণ' প্রবন্ধের লেখকের মাঝেও কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রতি আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে । তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।