বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর ।
বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর |
বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর
অথবা, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক ঘটনা প্রবহ আবহমান কাল থেকেই বাংলাদেশে আবর্তিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উত্তর গোলার্ধে।
দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে হিমালয় বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি রয়েছে চরম প্রতিকূলতা। ফলে বাংলাদেশের প্রায়ই আইলা, সিডর, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লক্ষ্য করা যায় ।
→ বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে বাংলাদেশের প্রধান ৪টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. ঘূর্ণিঝড় : ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় প্রধান প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম । cyclone এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। cyclone শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ kiklos থেকে যার অর্থ কুণ্ডলী পাকানো সাপ।
পৃথিবীতে ৩০° উত্তর এবং ৩০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল তথা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে যে কেন্দ্রাভিমুখী ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয় সেটিই ঘূর্ণিঝড়।
১৮৪৮ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদ Henry pidington হেনরি পিডিংটন ভারত ও মহাসাগরে সংঘটিত ঝড়কে সর্বপ্রথম ঘূর্ণিঝড় বলে আখ্যা দেন।
তিনিই সর্বপ্রথম cyclone শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে বর্তমানে cyclone বলতে | বিশ্বের সকল অঞ্চলের বায়ু রাশিকে বুঝায়। প্রতি বছর বিশ্বে ৮০টির বেশি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে ।
The penguin Dietionary of geography তে বলা হয়েছে "A region of low atmosphere pressure to which a system of winds rotates, The world books encyclopedia হয়েছে, "Cyclone is a low pressure are a in the atmosphere in which winds sprial in world."
ঘূর্ণিঝড়ের প্রকারভেদ : ঘূর্ণিঝড়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় ।
১. উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং
২. নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তির কারণ : বিজ্ঞানীগণ ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তির ৮টি কারণ দেখিয়েছেন।
১. ব্যাপক এলাকা জুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি;
২. অত্যধিক ভূকম্পন সৃষ্টি হওয়া ও
৩. আপেক্ষিকভাবে উচ্চতর আর্দ্রতা ।
৪. সমুদ্রের তাপমাত্রা ২৬° সেন্টিগ্রেট পর্যন্ত বৃদ্ধি । ৫. পৃথিবীর ঘূর্ণনজনিত চাপ ।
৬. বায়ু প্রবাহ সুগম করার জন্য-বাতাসের বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘন ও শীতল বাতাসের শূন্যস্থান দখল ।
৭. ১০ কি. মি. অবধি গতিবেগসম্পন্ন হালকা বাতাস ।
৮. নিম্ন বায়ুস্তরে বাতাসের অন্তর্মুখী প্রবাহ ও ঘূর্ণন বাতাস, ঘূর্ণনজনিত প্রবাহ সৃষ্টি ।
২. খরা : বিশ্বে যতগুলো পরিবেশগত বিপর্যয় আছে খরা তাদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণত দীর্ঘকালীন শুল্ক আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে খরা সৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীয় ভবনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে তাকে খরা বলে। খরার সময় খরা পীড়িত অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। খাল, বিল, কুয়া, পুকুর ইত্যাদি শুকিয়ে যায়।
১৯৯০-২০০০ সালে ভারতের ১২টি রাজ্যের খরা ছিল গত শতাব্দীর মধ্যে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় খরা। বাংলাদেশে সাধারণত খরা হয় বর্ষা মৌসুমের আগে ও পরে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে মাঝে-মধ্যে খরার প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়।
খরার সংজ্ঞা দিতে যেয়ে Me qraw Hill বলেন, "A general term implying a deficiency of precipitation of sufficnent magnitude of interfere with some face of economy, agriculture drought, occurring when crops are threatened by laen of rain, is the most common, hydrologic drought when reservoirs are depleted, is another common form. the palmer index is used by agricultrist to express the intensity of drought as a function of rainfall and hydrologic veriables." অর্থাৎ, আমরা বলতে পারি, দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়াকে খরা বলে । খরার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় ।
৩. বন্যা : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এজন্য বন্যা এ দেশের একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতি বছর এ দেশে বন্যা হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো বছর এটি প্রবল আকার ধারণ করে ১৯৮৮ সাল, ১৯৯৮ সাল, ২০০০ সাল এবং ২০০৪ সালে এ দেশে মারাত্মক বন্যা 'হয়।
এ সমস্ত বন্যায় দেশের ৫৫ শতাংশ বন্যার প্রকোপে পড়ে। সাধারণভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা তাকে বন্যা বলি। বর্ষা মৌসুমে যখন খাল-বিল নদী-নালা ও নীচু এলাকা পানিতে ডুবে যায় এবং এ সকল এলাকার জনপদ পানিতে ভাসতে থাকে তখন আমরা তাকে বন্যা বলি।
পানি বিজ্ঞানী ওয়ার্ড বলেন, ”বন্যা হলো পানির এমন এক আপেক্ষিক উচ্চতা যা একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা বা প্রবাহকে অতিক্রম করে ।
Hydrological science এর মতে, বন্যা হলো পানি প্রবাহ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় প্লাবন মুক্ত এমন ভূমিকে প্লাবিত করে ।
ফলাফল : বন্যা হলে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে বহু জীবের প্রাণহানি ঘটে। এসময় মানুষের খাদ্য সংকট দেখা দেয় । ডায়রিয়া আমাশয় এর ন্যায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পায়। তবে বন্যায় কিছু উপকার আছে। বন্যার ফলে ফসলী জমিতে যে নতুন পলিমাটি এসে পড়ে তাতে প্রচুর পরিমাণ ফসল জন্মে।
৪. ভূমিকম্প : ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্প অতি অল্প সময়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হচ্ছে জাপান।
বাংলাদেশে বছরে কয়েক বার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ভূমিকম্প হচ্ছে কখনও কখনও প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবী কেঁপে উঠা বা ঝাঁকুনি দেওয়া। | বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবী কয়েকটি প্লেটের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই প্লেট যখন পরিধ্যান হয় তখন ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরে যে ভূমিকম্প হয় তাকে ভূমিকম্পনের কেন্দ্র বলে। এ কেন্দ্র থেকে স্পন্দন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপার স্কেলকে রিকটার স্কেল বলা হয়। ভূমিকম্পের প্রকারভেদ : ভূমিকম্প তিন প্রকার । যথা : ১. অগভীর কেন্দ্রে ভূমিকম্প;
২. মাঝারি কেন্দ্রে ভূমিকম্প ও
৩. গভীর কেন্দ্রে ভূমিকম্প।
ভূমিকম্প হচ্ছে তরঙ্গ জাতীয় এক ধরনের শক্তি যা সীমিত পরিসরে উদ্ভূত হয়ে উৎস হতে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি অন্যতম ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।