৪৯টি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

৪৯টি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
৪৯টি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

৪৯টি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন-১. ট্র্যাজেডি হিসেবে ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: নায়কমুখ্য কাহিনি এবং করুণ রস পরিবেশনের ফলে ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

নায়ক কিংবা নায়িকামুখ্য করুণ রস পরিবেশন ট্র্যাজেডির ধর্ম। ট্র্যাজেডি নাটকে কোনো জটিল ও গুরুতর ঘটনার আশ্রয়ে বিশেষ ধরনের রস সঞ্চার করা হয়, যা আমাদের অনুভূতিকে অভূতপূর্ব আবহে আলোড়িত করে । 

এই ধরনের নাটকে শত বিপর্যয় সত্ত্বেও নায়কের সুদৃঢ় মহিমান্বিত অবস্থান রূপায়িত হয় । ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে আমরা দেখি নায়কমুখ্য কাহিনি এবং করুণ রসের ব্যঞ্জনা।

প্রশ্ন-২. “ভিক্টরি অর ডেথ, ভিক্টরি অর ডেথ’— উক্তিটি বিশ্লেষণ করো ।

উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ক্যাপ্টেন ক্লেটন সৈনিকদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন— “ভিকটরি অর ডেথ, ভিকটরি অর ডেথ।'

১৭৫৬ সালের ১৯শে জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাবের বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হচ্ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদের কাছে ইংরেজরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছিল। 

তাদের উৎসাহ দিতে ক্লেটন আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন। কারণ তাঁর মতে যুদ্ধে জয়লাভ অথবা মৃত্যুবরণ, এটাই ব্রিটিশ সৈনিকদের প্রতিজ্ঞা ।

প্রশ্ন-৩. ওয়ালি খানকে চড় মারার জন্য ক্লেটন এগিয়ে গেলেন কেন? 

উত্তর: ‘বাঙালি কাপুরুষ নয়'— একথা বলায় ওয়ালি খানকে চড় মারার জন্য ক্লেটন এগিয়ে গেলেন ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যরা গোলাগুলি করতে করতে ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের কাছাকাছি এসে গেলে জীবন বাঁচানোর জন্য ওয়ালি খান ক্যাপ্টেন ক্লেটনকে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ দিতে বলেন। 

কিন্তু ক্যাপ্টেন ক্লেটন বাঙালিদের কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করেন । বাঙালি ওয়ালি খান একথার প্রতিবাদ করলে ক্লেটন তাকে চড় মারার জন্য এগিয়ে যান ।

প্রশ্ন-৪. 'ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা'- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলার আক্রমণের মুখে ২/ ইংরেজরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

১৭০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে ইংরেজরা নবাবের বিনা অনুমতিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই নবাব ওই দুর্গ আক্রমণ করেন। 

ইংরেজ সৈন্যরা নবাবের সৈন্যদের আক্রমণের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়লে ক্যাপ্টেন মিনচিন, কাউন্সিলার ফকল্যান্ড ও ম্যানিংহাম নৌকাযোগে দুর্গ থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। 

শেষ পর্যায়ে ক্যাপ্টেন ক্লেটনও গভর্নর ড্রেকের সাথে পরামর্শের নাম করে আত্মরক্ষার্থে সব প্রতিজ্ঞা ভুলে দুর্গ থেকে পালিয়ে যান। তাই ব্যঙ্গার্থে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-৫. “রজার ড্রেক প্রাণভয়ে কুকুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে” - ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য কলকাতা আক্রমণের সময় গভর্নর রজার ড্রেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাব প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ইংরেজদের নিয়মবহির্ভূত শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টার প্রাক্কালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গ আক্রমণ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে কলকাতায় 'ফোর্ট উইলিয়াম' নামক মূল দুর্গটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ১৭০৬ সালে। ১৭৫৬ সালে নবাব . সিরাজউদ্দৌলা এটি অধিকার করে নেন এবং কলকাতার নামকরণ করেন ‘আলিনগর’। 

তখন থেকেই দুর্বল কাঠামোর এ দুর্গটির ধ্বংসের সূচনা ঘটে। সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুনভাবে দুর্গটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং ১৭৮১ সালে তা সম্পন্ন হয়। এ দুর্গটি বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

নবাব সৈন্যের কলকাতা আক্রমণে ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তখন গভর্নর রজার ড্রেক ভয় পেয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। 

কিন্তু হলওয়েল প্রকৃত সত্য গোপন করে নবাবকে জানায়, রজার ড্রেক কলকাতার বাইরে গেছেন। তখন রজার ড্রেকের কাপুরুষতার কথা জানিয়ে নবাব প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন ।

প্রশ্ন-৬. “ফরাসিরা ডাকাত আর ইংরেজরা অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি, কেমন?”— উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ফরাসিরা আর ইংরেজরা এদেশে এসেছে মূলত বাণিজ্য করার নামে অবাধ লুণ্ঠন করতে, কেউ সজ্জন ব্যক্তি নন, তাদের লক্ষ্য অভিন্ন, সিরাজউদ্দৌলা একথাই বোঝাতে চেয়েছেন ।

ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নিষেধ সত্ত্বেও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। ইংরেজদের এই নিয়ম-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করে নেন এবং ওয়াটস ও হলওয়েলকে বন্দি করেন। 

বন্দিদের কাছে নবাবের নির্দেশ অমান্যের কারণ জানতে চাইলে হলওয়েল জানায়, তারা ফরাসিদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য দুর্গ নির্মাণ করছিল। হলওয়েলের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নবাব কটাক্ষ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন ।

প্রশ্ন-৭. সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানি ও ইংরেজদের সম্পত্তি নবাব তহবিলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন কেন? 

উত্তর: ক্ষতিপূরণ আদায় এবং কলকাতা অভিযানের সমস্ত খরচ বহনের উদ্দেশ্যে নবাব কোম্পানি ও ইংরেজদের সম্পত্তি নবাব তহবিলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন।

‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ইংরেজরা এবং কোম্পানির লোকেরা দুর্গ দখল করে। নবাবের সাথে ষড়যন্ত্র করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ কারণে নবাব ইংরেজ এবং কোম্পানির লোকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। 

এ কারণে নবাব ইংরেজদের এবং কোম্পানির সকল সম্পত্তি নিজ অধিকারে নিয়ে আসতে চায়। কলকাতা দখল করে তাই উমিচাঁদকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের এবং কোম্পানির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নবাব তহবিলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। নবাব বলেন কলকাতা অভিযানের সমস্ত খরচ বহন করবে ইংরেজ প্রতিনিধিরা।

প্রশ্ন-৮. ইংরেজ অধিপত্য অত সহজেই মুছে যাবে নাকি? উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘ইংরেজ আধিপত্য অত সহজে মুছে যাবে নাকি' ড্রেকের এই উক্তিটি দ্বারা ইংরেজদের দাম্ভিকতার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

নবাব সিরাজের তাড়া খেয়ে ইংরেজরা কলকাতা দুর্গ ছেড়ে পালায় । তারা জাহাজে আশ্রয় নিলে সেখানে খাদ্য-বস্ত্রের সংকট দেখা দেয়। তখন ড্রেক, মার্টিন, হ্যারিরা তাদের দুরবস্থার জন্য ড্রেককে দায়ী করে। 

সেই প্রসঙ্গে ড্রেক দাম্ভিকতার সঙ্গে ইংরেজদের আধিপত্যের স্থায়িত্বের কথা বলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করে।

প্রশ্ন-৯. ‘ওর লোভের অন্ত নেই।'— উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উমিচাঁদের লোভী মানসিকতার প্রসঙ্গে ড্রেক আলোচ্য উক্তিটি করেন।

উমিচাঁদ ছিলেন প্রচণ্ড অর্থলোভী একজন মানুষ। অর্থের বিনিময়ে তিনি ইংরেজদের পক্ষে সকল কাজ করার আগ্রহের কথা জানান । ইংরেজদের কলকাতায় ব্যবসা করার জন্য মানিকচাঁদের হুকুমনামা আনতে উমিচাঁদ মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দাবি করেন। এই প্রেক্ষিতে ড্রেক আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন ।

প্রশ্ন-১০. ‘শওকতজঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্য হাসিল হবে'— কেন?

উত্তর: শওকতজঙ্গ ঘসেটি বেগমের আস্থাভাজন হওয়ায় সে নবাব হলে ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থসিদ্ধি ঘটবে, এমনটিই প্রকাশ পেয়েছে প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ।

আলিবর্দি খানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা । কিন্তু ঘসেটি বেগমসহ অন্যান্য চক্রান্তকারী এটি মেনে নিতে পারে না। 

তারা সিরাজউদ্দৌলার খালাতো ভাই শওকত জঙ্গকেই যোগ্য উত্তরাধিকারী মনে করে। কেননা, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে-

প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ফলে ঘসেটি বেগমের স্নেহধন্য শওকতজঙ্গকে নবাব বানাতে পারলে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় কোনো অন্তরায় থাকবে না বলে মনে করে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্যই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে। 

প্রশ্ন-১১. ষড়যন্ত্রকারীরা শওকতঙ্গকে নবাব হিসেবে চেয়েছিল কেন ?

উত্তর: শওকতজঙ্গ ঘসেটি বেগমের আস্থাভাজন হওয়ায় সে নবাব হলে ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থসিদ্ধি ঘটবে বলেই তারা তাকে নবাব হিসেবে চেয়েছিল I

আলিবর্দি খানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু ঘসেটি বেগমসহ অন্যান্য চক্রান্তকারীরা এটি মেনে নিতে পারে না। 

তারা সিরাজউদ্দৌলার খালাতো ভাই শওকতঙ্গকেই যোগ্য উত্তরাধিকারী মনে করে। কেননা, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ফলে ঘসেটি বেগমের স্নেহধন্য শওকতজঙ্গকে নবাব বানাতে পারলে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় কোনো অন্তরায় থাকবে না বলে মনে করে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্যই তাকে নবাব হিসেবে চেয়েছিল তারা ।

প্রশ্ন-১২. দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদামশায়ের চেয়ে বড়’– উক্তিটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদামশায়ের চেয়ে বড়’– উক্তিটি দ্বারা উমিচাঁদের অর্থলোলুপ মানসিকতার দিকটি বোঝানো হয়েছে।

‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার অমাত্যদের অধিকাংশই ছিল অর্থলোভী ও বিশ্বাসঘাতক। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থলোভী ছিল উমিচাঁদ। 

অর্থের জন্য সে একেক সময় একেকজনের পক্ষ নিত। ঘসেটি বেগমের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে উমিচাঁদ জানায় যে সে দওলতের পূজারি। কারণ দওলত বা অর্থ তার কাছে ‘ভগবানের দাদামশায়ের চেয়েও বড়।

প্রশ্ন-১৩. ‘মতিঝিল ছেড়ে আমি এক পাও নড়ব না'— উক্তিটিতে ঘসেটি বেগমের কোন মানসিকতা ফুটে উঠেছে?

উত্তর: ‘মতিঝিল ছেড়ে আমি এক পাও নড়ব না'— উক্তিটিতে ঘসেটি বেগমের ক্রোধ ও ঔদ্ধত্য ফুটে উঠেছে।

মতিঝিলে ঘসেটি বেগমের বাড়িতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছিল। নবাব সেখানে উপস্থিত হয়ে মতিঝিলের জলসা ভেঙে দেন এবং ঘসেটি বেগমকে তার প্রাসাদে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ঘসেটি বেগম তা মানতে নারাজ । তাই নবাবের প্রতি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে সে বলে, ‘মতিঝিল ছেড়ে আমি এক পাও নড়ব না।'

প্রশ্ন-১৪, ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অভিসম্পাত করলেন কেন?

উত্তর: ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন প্রত্যাশা করতেন বলে তাঁকে অভিসম্পাত করলেন ।

ঘসেটি বেগম রাষ্ট্রদ্রোহিতা করছিলেন। কিন্তু সম্পর্কে খালা হওয়ায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমের প্রতি যথেষ্ট কঠোর হতে পারছিলেন না। তাই নবাব দেশকে রক্ষা করার জন্য ঘসেটি বেগমকে তাঁর প্রাসাদে রাখতে চাইলেন। 

এটা এক অর্থে ঘসেটি বেগমের কাছে বন্দিত্ব। সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাত করে ক্ষমতা প্রাপ্তির বদলে নিজেই বন্দি হচ্ছেন দেখে তিনি অভিশাপ দিয়েছিলেন সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদ যেন বাজ পড়ে খানখান হয়ে যায় ।

প্রশ্ন-১৫. “তোমার ক্ষমতা ধ্বংস হবে সিরাজ”– কে, কাকে লক্ষ্য করে কেন এ উক্তিটি করেছিল?

উত্তর: প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলাকে লক্ষ্য করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিল।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সরিয়ে যারা অর্থ ও ক্ষমতা লাভের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের সঙ্গে ছিল ঘসেটি বেগম। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হলে তা মেনে নিতে পারে না ঘসেটি বেগম। তাই সে গোপনে মিরজাফর ও অন্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমের এই কর্মকাণ্ড বুঝতে পেরে তাকে মতিঝিল থেকে নবাবের মায়ের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয় ঘসেটি বেগম। আর তখনই সে নবাবকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

প্রশ্ন-১৬. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজের ধ্বংস কামনা করেন?

উত্তর: সিরাজউদ্দৌলার প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অর্থ ও ক্ষমতার লোভে ঘসেটি বেগম তাঁর ধ্বংস কামনা করেন ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সরিয়ে যারা অর্থ ও ক্ষমতা লাভের জন্য ষড়যন্ত্র করছিল, তাদের সঙ্গে ছিলেন ঘসেটি বেগম। রাজকার্য পরিচালনার লোভে তিনি সিরাজউদ্দৌলার ভাই একরামউদ্দৌলাকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। 

ছেলেটি অকালে মৃত্যুবরণ করায় অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিল তাঁর স্বপ্ন। আবার হোসেন কুলি খাঁ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘসেটির অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, যাঁকে আলিবর্দি খানের নির্দেশে হত্যা করেন সিরাজউদ্দৌলা। এসব কারণে সিরাজের প্রতি আক্রোশ থেকে ঘসেটি বেগম তাঁর ধ্বংস কামনা করতেন।

প্রশ্ন-১৭. “আমার নালিশ আজ আমার বিরুদ্ধে”— এ উক্তির তাৎপর্য কী?

উত্তর: প্রজাদের দুর্ভোগের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ না করে আত্মগ্লানি প্রকাশ করতে গিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা একথা বলেছেন । 

উৎপীড়িত ব্যক্তিকে দরবারে ডাকার পূর্বে নবাব তাঁর পারিষদদের ডেকে তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্ব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে মিরজাফর নবাবকে প্রশ্ন করে, তিনি তাদের সন্দেহ করছেন কি না? 

কিন্তু নবাব কোনো অভিযোগ জানাতে চান না। বাংলার প্রজাদের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য বিধান না করতে পারায় নিজেকেই অপরাধী আখ্যা দেন তিনি। আর এ প্রসঙ্গেই তিনি নিজের বিরুদ্ধে নালিশের কথা বলেন ।

প্রশ্ন-১৮. ওরা বেনিয়ার জাত পয়সা ছাড়া কিছু বোঝে না— কেন একথা বলা হয়েছে? (বি এ এফ শাহীন কলেজ, যশোর।

উত্তর: ইংরেজদের অর্থলোলুপতা অনুধাবন করে রাজবল্লভ তাদের সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

ইংরেজরা ব্যবসায়ীর জাত। তাই তারা সবকিছু থেকে অর্থকে প্রাধান্য দেয়। অর্থ ছাড়া যেন তারা কিছু বোঝে না। তারা বুঝতে পেরেছিল সিরাজ নবাব থাকলে তারা তেমন সুবিধা পাবে না। কাজেই সিরাজকে সরিয়ে মিরজাফরকে তারা সিংহাসনে বসাতে চায়। যাতে করে তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। ইংরেজ জাতির এই অর্থলিপ্সার কারণে রাজবল্লভ আলোচ্য উক্তিটি করেছিল ।

প্রশ্ন-১৯. “একটা দিন মাত্র একটা দিনও যদি ওই মসনদে মাথা উঁচু করে আমি বসতে পারতাম।” – বুঝিয়ে লেখো। (ঢাকা সিটি কলেজ।

-

উত্তর: প্রশ্নোক্ত বাক্যটি দ্বারা বাংলার সিংহাসনে মিরজাফরের মাথা উঁচু করে বসার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে।

মিরজাফর সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি। কিন্তু অতিরিক্ত লোভের কারণে সিরাজের শাসনকে সে মেনে নিতে পারেনি। সিরাজের জায়গায় নিজে সিংহাসনে বসার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে। ষড়যন্ত্রের একপর্যায়ে জগৎশেঠ, রাজবল্লভসহ অন্যদের সাথে আলোচনার সময় মিরজাফর প্রশ্নোক্ত বাক্যটি বলে তার সিংহাসনে বসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে । 

প্রশ্ন-২০. “আমার বাসগৃহ অনেকটা নিরাপদ” – কে, কোন প্রসঙ্গে একথা কাকে বলেছে? শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ।

উত্তর: মোহনলাল কর্তৃক গুপ্তচর নিয়োগের কারণে মিরন রায়দুর্লভকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত বিষয়ের অবতারণা করেছেন ।

মিরজাফর জগৎশেঠ প্রমুখ মোহনলালের সন্দেহের তালিকায় ছিল। তাই তাদের পেছনে গুপ্তচর নিয়োগ করেছিলেন। গুপ্তচরের কারণে তারা তাদের কার্যক্রম ঠিকমতো কার্যকর করতে পারছিল না। 

মিরনের বাসগৃহে রায়দুর্লভ এলে মিরন তাকে তার বাসগৃহ নিরাপদ থাকার কারণ বলেন। কেননা মোহনলাল জানে যে মিরন গানবাজনায় মশগুল থাকে তাই সে সন্দেহের বাইরে । অতএব, বাসগৃহে গুপ্তচরের ভয় নেই ।

প্রশ্ন-২১. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি কেন সিপাহসালারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন?

উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস সিপাহসালারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন ।

মিরন, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, মিরজাফর প্রমুখ নবাবের সিপাহসালার ও অমাত্যরা একত্র হয়েছিলেন সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ক্লাইভ ও ওয়াটস সেখানে গিয়েছিলেন ক্লাইভ সেখানে গিয়েছিলেন দলিল করে সব ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করার জন্য ।

প্রশ্ন-২২. মিরজাফর উমিচাঁদকে কালকেউটে বলেছেন কেন?

উত্তর: উমিচাঁদের ধূর্ত স্বভাব ও অর্থলোলুপ 'মানসিকতার কারণে মিরজাফর উমিচাঁদকে কালকেউটে বলেছেন ।

শিখ বংশোদ্ভূত উমিচাঁদ ছিলেন লাহোরের অধিবাসী। কলকাতায় এসে তিনি দালালি ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করে মালিক হয়েছিলেন প্রভূত ধন- সম্পত্তির। 

পলাশির যুদ্ধে তিনি ঘন ঘন পক্ষ পরিবর্তন করে কৌশলে বাংলার নবাব ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে প্রচুর অর্থবিত্ত অর্জন করেন। পলাশির যুদ্ধের মহড়ায় তাঁর এ বিশেষ ভূমিকার জন্য মিরজাফর বিদ্রুপ করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।

প্রশ্ন-২৩. রবার্ট ক্লাইভ নারীর ছদ্মবেশে মিরনের বাড়িতে এসেছিল কেন?

উত্তর: গুপ্তচরের চোখ ফাঁকি দিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে রবার্ট ক্লাইভ নারীর ছদ্মবেশে মিরনের বাড়িতে এসেছিল ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করতে রবার্ট ক্লাইভ এবং নবাবের অমাত্যবর্গ মিরনের বাড়িতে গোপন বৈঠক ডাকে। বৈঠকে মিরজাফর, ওয়াটস, রায়দুর্লভসহ সমস্ত বিশ্বাসঘাতকেরা উপস্থিত হয়। 

নবাবের গুপ্তচরেরা যেন এই গোপন বৈঠকের খবর না পায় এবং তাদের ধরতে না পারে সেজন্য রবার্ট ক্লাইভ নারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে মিরনের বাড়িতে উপস্থিত হয় ।

প্রশ্ন-২৪. “আপনারা ইচ্ছা করলে আমাদের ক্ষতি করতে পারেন।”— ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ক্লাইভ নবাব সিরাজের অমাত্যবর্গের প্রতি তাঁর অবিশ্বাসের কথা বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি করে।

কলকাতায় ইংরেজদের পরাজয়ের পর নবাব ইংরেজদের বিষয়ে খোঁজখবর ান্য নেওয়ার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করেন। 

জগৎশেঠ, রাজবল্লভ ক্লাইভকে এই ছিল গুপ্তচর সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। তখন ক্লাইভ অহংকারের সাথে বলে কে নবাব তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। 

কেননা নবাবের অমাত্যরা বিশ্বাসঘাতক । তবে ইংরেজরা যাদের সাথে হাত মিলিয়েছে সেই মিরজাফর, রণের জগৎশেঠ প্রভৃতি অমাত্যরা চাইলে ইংরেজদের ক্ষতি করতে পারে।

প্রশ্ন-২৫. উমিচাঁদ এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক কেন?

উত্তর: উমিচাঁদ অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করতে পারে বলে ক্লাইভ তাকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন ।

উমিচাঁদ অর্থ উপার্জনের জন্য লাহোর থেকে বাংলায় এসেছিল । তার ছিল অর্থের প্রতি সীমাহীন লোভ। অর্থের মোহে পড়ে সে যেকোনো কাজ করে দিতে পারে। তার চরিত্রে নীতি-নৈতিকতার বালাই ছিল না । 

অর্থের লোভে সে নবাবকে ছেড়ে ইংরেজদের পক্ষে যোগ দিয়েছে, আবার যদি নবাবের কাছ থেকে বেশি অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা 'দেখা দেয়, তবে সে ইংরেজদের ত্যাগ করে নবাবের পক্ষে চলে যেতে দ্বিধা করবে না । এসব দিক বিবেচনায় ক্লাইভ উমিচাঁদকে এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছেন ।

প্রশ্ন-২৬. সিরাজউদ্দৌলার পতন হলে কে কত টাকা পাবে বলে দলিলে সই হয়?

উত্তর: সিরাজউদ্দৌলার পতন হলে কোম্পানি এক কোটি, কলকাতার বাসিন্দারা সত্তর লক্ষ এবং ক্লাইভ দশ লক্ষ টাকা পাবেন বলে চুক্তি হয় । 

‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ষড়যন্ত্রকারীরা ক্লাইভের সঙ্গে চুক্তি করে। এ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে ক্লাইভের আনা দলিলে বিশ্বাসঘাতকেরা সই করে। চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পতন হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এক কোটি টাকা পাবে। 

এছাড়া কলকাতার বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণ বাবদ পাবে সত্তর লক্ষ টাকা এবং ক্লাইভ সাহেব পাবেন দশ লক্ষ টাকা। অন্যদের টাকা সম্পর্কে নাটকে উল্লেখ করা না হলেও এ চুক্তিপত্রে জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, মিরন সবাই স্বাক্ষর করে।

প্রশ্ন-২৭. শুভ কাজে অযথা বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়’– ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এক পর্যায়ে নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারা হিসেব করতে গিয়ে মিরজাফর প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিল ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য তার সিপাহসালার মিরজাফর ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা মিরনের বাসগৃহে একত্রিত হয়েছিল । 

যুদ্ধে ক্লাইভ বিজয়ী হলে কে কতটা ভাগ পাবে তা নিয়ে দলিল তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু দলিলে সই করতে গিয়ে চক্রান্তকারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়ে। তখন বিলম্ব না করে দলিলে সই করার মাধ্যমে নিজ স্বার্থকে পাকাপোক্ত করার জন্য মিরজাফর আলোচ্য উক্তিটি করে।

প্রশ্ন-২৮. “... সবাই মিলে সত্যিই আমরা বাংলাকে বিক্রি করে দিচ্ছি না তো?” বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ক্লাইভের দলিলে স্বাক্ষর দিতে গিয়ে মিরজাফর নিজের মনের শঙ্কা প্রকাশ করে এ কথা বলেছিল ।

নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলায় মিরজাফরসহ নবাবের পারিষদবর্গের বেশ কয়েকজন । ষড়যন্ত্রের জন্য নিজেদের মধ্যে সমঝোতার দলিল তৈরি করেন লর্ড ক্লাইভ। 

ক্লাইভ এ দলিলে সই করতে বললে মিরজাফর ক্ষণিকের জন্য উদ্বিগ্ন হয়। তার মনে হয়, নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের চূড়ান্ত ক্ষতি সাধন করছে না তো তারা? প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে মিরজাফরের সে আশঙ্কাই ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন-২৯. মিরজাফর কোম্পানির সাথে দলিল সইয়ের সময় মরাকান্না শোনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কী?

উত্তর: মিরজাফর কোম্পানির সাথে দলিল সইয়ের সময় মরাকান্না শোনার তাৎপর্য– বাংলার স্বাধীনতা বিক্রি করে দেওয়ার মর্মবেদনার করুণ সুর।

বাংলার স্বাধীনতা হরণে ইংরেজরা তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা দেশীয় স্বার্থপর লোভী কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। দেশীয় এসব ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছিল । 

তাই মিরজাফর যখন নিজ লোভে ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রের চুক্তিতে সই করে তখন নেপথ্যে একটা করুণ সুর ধ্বনিত হয়। মূলত বাংলাকে ‘বিক্রি’ করে দেওয়ার ঘটনায় যে একটা অন্তর্নিহিত বেদনাবোধ তা ফুটিয়ে তোলার জন্যই করুণ সুরের মূর্ছনা তৈরি করেছেন নাট্যকার।

প্রশ্ন-৩০. ‘আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।'— উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ এ উক্তিটি করেছেন।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলার সিংহাসন করায়ত্ত করতে চায় বিশ্বাসঘাতকের দল। তাই নিজ নিজ সংকীর্ণ স্বার্থকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য তারা ইংরেজদের সাথে একটি ঘৃণ্য চুক্তি করে। 

এ ঘটনার মাধ্যমেই পাকভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের দীর্ঘ শাসনের বীজ রোপিত হয়। চুক্তিপত্রে একেক করে জগৎশেঠ, মিরজাফর, রাজবল্লভ সবাই স্বাক্ষর দেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলার পরাধীনতার পথ সুগম হয়। 

এ সনদই শত্রুদের বিজয় নিশ্চিত করে ১৭৫৭ সালে ২৩শে জুন ঐতিহাসিক পলাশির প্রান্তরে। যা পাকভারতকে সুদীর্ঘ পরাধীনতার জালে আবদ্ধ করে । উক্তিটি এ ইঙ্গিত বহন করে ।

প্রশ্ন-৩১. ‘প্রতারণার চেষ্টা করবেন না’– কথাটি কে, কেন বলেছেন? 

উত্তর: ‘প্রতারণার চেষ্টা করবেন না’– কথাটি মোহনলাল মিরনকে বলেছে । মিরনের প্রাসাদে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালানার গোপন ষড়যন্ত্র করতে মিরজাফর ও ক্লাইভসহ অনেকেই মিলিত হয়। 

তারা নানা পরিকল্পনা করে কীভাবে নবাবকে সরিয়ে মিরজাফরকে বাংলার ক্ষমতায় আনা যায়। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের সংবাদ গুপ্তচর দ্বারা মোহনলাল জানতে পেরে আকস্মিকভাবেই মিরনের প্রাসাদে চলে আসেন । এবং তাদের অভিযুক্ত করেন । 

কিন্তু মিরন নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তখন মোহনলাল মিরনকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য উক্তিটি করে ।

প্রশ্ন-৩২. ‘তার নবাব হওয়াটাই আমার মস্ত ক্ষতি’— উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় ঘসেটি বেগম ঈর্ষান্বিত হয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেন ।

নবাব আলিবর্দি খাঁ তাঁর মৃত্যুর আগে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার দিয়ে যান। কিন্তু ঘসেটি বেগম এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। 

একদিন রাজমাতা আমিনার সামনে ঘসেটি বেগম সিরাজের অমঙ্গল কামনা করলে আমিনা বলেন, “সিরাজ তোমার কোনো ক্ষতি করেনি, বড় আপা।' এর উত্তরে ঘসেটি বেগম ক্ষতির ধরন ব্যাখ্যা করে বলেন, 'তার নবাব হওয়াটাই তো আমার মস্ত ক্ষতি।'

প্রশ্ন-৩৩. ‘তুমি কম সাপিনী নও।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।

(আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা। উত্তর: ‘তুমি কম সাপিনী নও’— উক্তিটি করে ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের ঘসেটি বেগম আমিনাকে উদ্দেশ করে ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই তাঁর বড় খালা ঘসেটি বেগম বিরূপ আচরণ করা শুরু করে। সিরাজের সিংহাসনে আরোহণ করাকে তিনি ভালোভাবে নেননি। 

তার ধারণা সিরাজের মা, তার বোন আমিনা তার বাবা আলিবর্দি খাঁকে ছলনায় ভুলিয়ে সিংহাসন দখল করেছে। তাই হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে তার বোন আমিনাকে উদ্দেশ করে ঘসেটি বেগম প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

প্রশ্ন-৩৪. ‘ওর সঙ্গে অমন ব্যবহার করাটা হয়তো উচিত হয়নি।'— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি লুৎফা সিরাজের উদ্দেশে করেছেন । সিরাজের বাংলার নবাব হওয়াটা তাঁর খালা ঘসেটি বেগম মেনে নিতে পারেনি। ঘসেটি বেগম নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। 

এই ঘটনা সিরাজ জানতে পেরে লুৎফুন্নেসার কক্ষে ঘসেটি বেগমকে ক্ষমতাবিলাসী ও স্বার্থপরায়ণ নারী বলে ভর্ৎসনা করে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কক্ষ পরিত্যাগ করলে লুৎফুন্নিসা সিরাজকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে ।

প্রশ্ন-৩৫. ‘আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল যেন দেয়ালের ভীড়'— উক্তিটির তাৎপর্য লেখো । 

উত্তর: ‘আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল যেন দেয়ালের ভিড়'— উক্তিটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেদনাভারাক্রান্ত ও ঘনায়মান অসহায় অবস্থার প্রকাশ পেয়েছে।

শাসনকার্য পরিচালনার শুরু থেকেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা চিন্তা ও কাজের মাঝে বাধা পেয়েছেন। ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র নবাবের শাসনকার্য পরিচালনায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

তাই ঘরে, বাইরে, দরবারে, সবখানে তাঁর মনে হয়েছে শুধু প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। আর এই দেয়ালগুলো তাঁর অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে, যা আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন-৩৬. “ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি দ্বারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতার দিকটি বোঝানো হয়েছে।

ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে রাজ অমাত্যগণ নবাব সিরাজউদ্দৌলার কর্তৃত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করবেন বলে পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে শপথ করেছিলেন। 

কিন্তু নবাবকে পরাজিত করতে গোপনে অনেকেই ষড়যন্ত্র করেছিলেন ইংরেজদের সাথে, যা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পেয়েছে। অমাত্যবর্গের এই বিশ্বাসঘাতকতার দিকটিই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে ।

প্রশ্ন-৩৭. ‘ওর কাছে সব কিছুই যেন বড় রকমের জুয়ো খেলা'— কার কাছে, কেন?

উত্তর: রবার্ট ক্লাইভ স্বার্থের প্রয়োজনে যেকোনো ঝুঁকি নিতে পারত বলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন

নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাষ্যমতে, ক্লাইভ ছিল সাংঘাতিক লোক। মতলব হাসিল করার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে সে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত । 

খেলায় জিততে হলে জুয়াড়ি যেমন সর্বস্ব বাজি ধরতে পারে এবং যেকোনো উপায়ে জিতেই ছাড়ে, ক্লাইভও তেমনি এক ভয়ংকর ব্যক্তি ছিল। 

নবাবের এ দৃষ্টিভঙ্গি ভুল প্রমাণিত হয়নি। ক্লাইভ এত বেশি অর্থলোভী ছিল যে একটি দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেও দ্বিধান্বিত হয়নি সে। তার লোভ ও আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই নবাবের নেতৃত্বাধীন বাংলা করুণ পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।

প্রশ্ন-৩৮. ‘কত বড় শক্তি, তবু কত তুচ্ছ।' —উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ইংরেজদের তুলনায় শক্তি ও সামর্থ্যে বেশি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন ।

প্রশ্ন-৩৯. ‘আমার শেষ যুদ্ধ পলাশিতেই।'— কেন? 

উত্তর: মোহনলাল পলাশির যুদ্ধে আসন্ন পরাজয় ও নিজের মৃত্যু অনিবার্য মনে করে সিরাজউদ্দৌলাকে আলোচ্য কথাটি বলেছে ।

পলাশির যুদ্ধে মিরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ তাদের সৈন্যবাহিনী নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। যে কারণে বিশাল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়। 

কিন্তু নবাবের পক্ষে দেশপ্রেমিক মোহনলাল, নৌবে সিং, বদ্রি আলি প্রমুখ জীবন বাজি রেখে লড়াই করে । যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মোহনলাল সিরাজউদ্দৌলাকে মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে সৈন্য সংগ্রহের পরামর্শ দেয়। নবাব একাই ফিরে যাবেন কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহনলাল প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিল ।

প্রশ্ন-৪০. “তবু ভয় নেই, সিরাজউদ্দৌলা বেঁচে আছে।”— বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: দেশপ্রেমিক নারান সিং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে আলোচ্য উক্তিটি করেছিল

নারান সিং ছিল সিরাজউদ্দৌলার প্রধান গুপ্তচর। সে ছিল বিশ্বস্ত ও দেশপ্রেমিক। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে দেশের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে। 

ক্লাইভের হাতে বন্দি হওয়ার পরও সে নবাবের সন্ধান দেয়নি। বরং গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে সে বলেছিল 'তবু ভয় নেই, সিরাজউদ্দৌলা বেঁচে আছে।'

প্রশ্ন-৪১. সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে সফল হতে পারেননি কেন? 

উত্তর: সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সফল হতে পারেননি ।

মিরজাফর অন্যান্য সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়। নবাবের পতনের জন্য তারা নীল নকশা করে। পলাশির যুদ্ধে নবাবের সৈন্য সামন্ত কম নয়, অস্ত্রও ইংরেজদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল । 

কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতি মিরজাফর সৈন্যসামন্ত নিয়ে যুদ্ধ না করে নিষ্ক্রিয় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার এই বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই নবাব সফল হতে পারেননি।

প্রশ্ন-৪২. পলাশিতে দেশপ্রেমিক সৈনিকরা যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি কেন?

উত্তর: প্রধান সেনাপতির নির্দেশের অভাবে পলাশিতে দেশপ্রেমিক সৈনিকরা যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি।

প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে নবাবের পতনের জন্য নীলনকশা প্রস্তুত করে। যুদ্ধ শুরু হলে সে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। 

সৈন্যসামন্ত নিয়ে পলাশির যুদ্ধে সে যুদ্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিষ্ক্রিয় দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। দেশপ্রেমিক সৈনিকরা তার নির্দেশের অভাবে যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি ।

প্রশ্ন-৪৩. ‘ফিরে এসেছি রাজধানীতে স্বাধীনতা বজায় রাখবার শেষ চেষ্টা করব বলে।” —উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে পলাশির যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে স্বাধীনতা রক্ষার প্রবল আকাঙ্ক্ষার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ।

‘সিরাজউদ্দৌলা” নাটকে পলাশির যুদ্ধে নবাবের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে নবাব সেখানে পরাস্ত হয়ে কিছু সৈন্য নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসেন। 

এ আসা পলায়ন নয়, পুনর্গঠিত হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা রক্ষার শেষ চেষ্টা করতে চান নবাব । প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে সিরাজের সে আকাঙ্ক্ষাই অভিব্যক্ত হয়েছে ।

প্রশ্ন-৪৪. ‘ভীরু প্রতারক দল চিরকালই পালায়'— এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গেলে অনেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাবের প্রশ্নোক্ত কথায় প্রতারক ভীরুদের চিরন্তন প্রবণতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানীতে ফিরে এসে পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দিকে দিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের পালানোর কথা ছড়িয়ে পড়ে । এ খবর নবাবের কাছে এলে হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আশান্বিত করতে তখনো তিনি বীরত্বের কথা বলেন। এ প্রসঙ্গেই পলায়নরতদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন ।

প্রশ্ন-৪৫. ‘এই অস্ত্র নিয়ে আমরা কাপুরুষ দেশদ্রোহীদের অবশ্যই দমন করতে পারব'— এখানে কোন অস্ত্রের কথা বলা হয়েছে এবং কেন?

উত্তর: বিশ্বাসঘাতক ও দেশদ্রোহীদের দমনে দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা রক্ষার সংকল্পই হয়ে উঠতে পারে প্রধান হাতিয়ার এই বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে ।

পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর তিনি আবার ঘুরে = দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। মুর্শিদাবাদে ফিরে দেশপ্রেমী জনতাকে সাথে নিয়ে = প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান ইংরেজদের বিরুদ্ধে। এ সময় দেশের স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে অনেকেই আশাহত হয়ে পড়ে। 

অনেকেই বিশ্বাসঘাতকদের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে। তখন উপস্থিত জনতাকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার প্রয়াসে নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন ।

প্রশ্ন-৪৬. “ইনি কি নবাব, না ফকির?'— মিরজাফর সম্পর্কে ক্লাইভের এ উক্তির কারণ কী?

উত্তর: মিরজাফরের ব্যক্তিত্বহীনতা দেখে রবার্ট ক্লাইভ তাকে ব্যঙ্গ করে ও প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর পূর্ব চুক্তিমতো নবাব ই, হয় বিশ্বাসঘাতক ও ক্ষমতালোভী মিরজাফর। 

রাজদরবারে এসে মিরজাফর সিংহাসনে না বসে সিংহাসনের হাতল ধরে কর্নেল ক্লাইভের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । এতে মিরজাফরের ব্যক্তিত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর তা দেখেই ক্লাইভ প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন ।

প্রশ্ন-৪৭.: দরবারে মিরজাফরের উপস্থিত হতে বিলম্ব দেখে অমাত্যরা কৌতুক করেছিলেন কেন?

উত্তর: দরবারে মিরজাফরের উপস্থিত হতে বিলম্ব দেখে অমাত্যরা অধৈর্য হয়ে কৌতুক করেছিলেন।

পলাশির ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে জয়লাভ করে মিরজাফর বাংলার মসনদের অধিকারী হয়েছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রায় সকলেই মিরজাফরের দরবার কক্ষে উপস্থিত হয়েছে। ক্লাইভ তখনও দরবারে এসে পৌঁছাননি, অন্যদিকে দরবার কক্ষে প্রবেশে বিলম্ব ঘটছে নতুন নবাবের। অধৈর্য অমাত্যরা এ সুযোগে কৌতুক আলাপে লিপ্ত হয়েছিলেন।

প্রশ্ন-৪৮. ‘মিরজাফর বেইমান নয়'— বুঝিয়ে লেখো ।

কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ, নাটোর | উত্তর: যে ইংরেজদের সহায়তায় সিরাজকে উৎখাত করে মিরজাফর নবাব হন, সেই ইংরেজদের আনুকূল্য ছাড়া তিনি মসনদে বসবেন এমন অকৃতজ্ঞ তিনি নন— এটি বোঝাতেই, মিরজাফর ক্লাইভকে উদ্দেশ করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।

পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয় হলে বাংলার নবাব হন মিরজাফর। ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করেই মিরজাফর ও তার সহচরেরা নবাব সিরাজের পরাজয় নিশ্চিত করে। 

এখন তার বাংলার সিংহাসনে বসার সময় হলেও সে ইংরেজদের আনুকূল্য ছাড়া মসনদে বসতে চায় না। তাই সে নিজেকে বেইমান নয় আখ্যা দিয়ে ক্লাইভের হাত ধরে সিংহাসনে বসে।

প্রশ্ন-৪৯. ‘আসামীর সে অধিকার থাকে নাকি?” –কে, কাকে, কখন বলেছিল? বর্ণনা করো।

উত্তর: কারাগারের ভিতর নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার প্রেক্ষাপটে মিরন নবাবকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল ।

‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মিরন ও মোহাম্মদি বেগ কারাগারের ভিতর হত্যা করে। মিরন রবার্ট ক্লাইভের যোগসাজশে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। 

এজন্য সে মোহাম্মদি বেগকে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। মিরন এবং মোহাম্মদি বেগ তাদের হীন স্বার্থ পূরণের জন্য কারাগারে নবাবের কাছে যায়। সেখানে মিরন নবাবকে মিথ্যে দণ্ডাজ্ঞা শোনায়। 

তখন সিরাজউদ্দৌলা সেই দণ্ডাজ্ঞায় সত্যিই মিরজাফরের স্বাক্ষর আছে কি না তা জানতে চাইলে মিরন প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ