১৭টি মাসি পিসি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর | Masi Pisi Onudhabon Question Answer
১৭টি মাসি পিসি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর Masi Pisi Onudhabon Question Answer |
প্রশ্ন-১. কৈলাশ কৈন গোপন কথা আহ্লাদিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে?
উত্তর: স্বামী জগুর বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে কৈলাশ গোপন কথা আহ্লাদিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে ।
জগু তার সাগরেদ কৈলাশকে মাসি-পিসির কাছে পাঠায়। সে বিভিন্নভাবে মাসি-পিসিকে বোঝাতে চেষ্টা করে যেন আহ্লাদিকে তারা স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। তা না হলে জগু এবার মামলা করবে বলে কৈলাশ জানিয়ে দেয়।
এ সকল গোপন কথা সে জোরে জোরে বলে, যাতে আহ্লাদি তা শুনতে পায় এবং স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনস্থির করতে পারে। তাই বলা যায়, স্বামীর প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্যেই কৈলাশ গোপন কথা আহ্লাদিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে ।
প্রশ্ন-২. হাতে টাকা এলে কৈলাশের স্বভাব কীভাবে পাল্টায়?
উত্তর: হাতে টাকা এলে কৈলাশ শুঁড়িখানায় মদ পান করতে যায়। কৈলাশ শ্রমজীবী মানুষ। শ্রমের বিনিময়ে টাকা আয় করে। কখনো যদি হাতে দুটো বেশি টাকা আসে, তখন কৈলাশের মতিগতি ঠিক থাকে না।
একজন শ্রমিক আয় বুঝে যেভাবে ব্যয় করে, কৈলাশ তখন সেটা ভুলে যায়। বাড়তি টাকার কোনো সদ্ব্যবহার না করে মদপানের জন্য টাকা খরচ করে ।
প্রশ্ন-৩. আহ্লাদিকে দেখে বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে কেন?
উত্তর: আহ্লাদিকে দেখে তার নিজের মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।.
আহ্লাদির চেয়ে বয়সে ছোটো মেয়েটাকে রহমান বিয়ে দিয়েছিল। অবুঝ মেয়েটা শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ার জন্য খুব কেঁদেছিল। কিন্তু তার ভালোর জন্যই তাকে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় রহমান।
সেখানে গিয়ে অল্পদিন পরেই মেয়েটা মারা যায়। একই সমস্যার শিকার আহ্লাদিকে দেখে মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।
প্রশ্ন-৪. বুড়ো রহমান খড়ের আঁটি তুলে দেবার ফাঁকে ফাঁকে আহ্লাদির দিকে তাকায় কেন ?
উত্তর: আহ্লাদির ফ্যাকাশে মুখে নিজের মেয়ের মুখের ছাপ দেখতে পায় বলে বুড়ো রহমান খড়ের আঁটি তুলে দেবার ফাঁকে ফাঁকে আহ্লাদির দিকে তাকায় ।
আহ্লাদির মতো বুড়ো রহমানের মেয়েও শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার। সেও শ্বশুরবাড়িতে ফেরত যেতে চায়নি, কিন্তু তাকে ফেরত পাঠানো হলো এবং শ্বশুরবাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।
তাই রহমান যখন কৈলাশ ও মাসি- পিসির মধ্যে আহ্লাদির অত্যাচারী স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে কথোপকথন শোনে, তখন সে আহ্লাদির ফ্যাকাশে মুখে তার মেয়ের মুখের ছাপ দেখতে পায়। তাই বারবার সে আহ্লাদির দিকে তাকায় এবং তার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে যায় ।
প্রশ্ন-৫. ‘সোয়ামি নিতে চাইলে বৌকে আটকে রাখার আইনে নেই।'- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মাসি-পিসিকে ভয় দেখিয়ে আহ্লাদিকে স্বামী জগুর কাছে পাঠানোর কৌশল হিসেবে কৈলাশ উক্তিটি করেছে।
আহ্লাদি স্বামীর বাড়িতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতো। স্বামীর নির্যাতনে তার মৃত্যুর আশঙ্কায় মাসি-পিসি তাকে শ্বশুরবাড়ি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ।
স্বামী জগুর লোভ ছিল স্ত্রীর সম্পত্তির প্রতি। এ সম্পত্তির লোভে সে স্ত্রীকে ফিরে পেতে চায়। তাই সে কৈলাশকে দিয়ে মাসি-পিসিকে মামলার ভয় দেখায় ।
প্রশ্ন-৬. ‘মরবে তোমরা জান মাসি, জান পিসি, মারা পড়বে তোমরা একেবারে।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মাসি-পিসিকে মামলা ও জেলের ভয় দেখিয়ে আহ্লাদিকে স্বামী জগুর কাছে পাঠানোর কৌশল হিসেবে কৈলাশ উক্তিটি করেছে।
স্বামীর বাড়িতে আহ্লাদি প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতো। স্বামীর নির্যাতনে তার মৃত্যুর আশঙ্কায় মাসি-পিসি তাকে শ্বশুরবাড়িতে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ।
স্বামী জগুর লোভ ছিল স্ত্রীর সম্পত্তির প্রতি। এ সম্পত্তির জন্য স্ত্রীকে ফিরে পেতে সে কৈলাশকে দিয়ে মাসি-পিসিকে মামলার ভয় দেখিয়েছে
প্রশ্ন-৭. আহ্লাদির বাপ দুর্ভিক্ষের সময় মাসি-পিসির খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কেন?
উত্তর: খাবারের অভাবে আহ্লাদির বাপ দুর্ভিক্ষের সময় মাসি-পিসির খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল
দুর্ভিক্ষের সময় প্রচণ্ড খাবার সংকট দেখা দেয়। আহ্লাদির বাপের সংসারেরও তখন খুব খারাপ অবস্থা। এর মধ্যে মরমর অবস্থায় আহ্লাদিও বাপের বাড়ি চলে আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাই বাধ্য হয়েই আহ্লাদির বাবা মাসি-পিসির খাবার বন্ধ করে দেয়।
প্রশ্ন-৮. জগুর লাথির আঘাতে মরমর আহ্লাদি বেঁচে গিয়েছিল কীভাবে?
উত্তর: জগুর লাথির আঘাতে মরমর আহ্লাদি মাসি-পিসির সেবা-শুশ্রূষায় বেঁচে গিয়েছিল ।
দুর্ভিক্ষের সময় স্বামীর লাথির আঘাতে আহ্লাদি মরমর অবস্থায় বাবার বাড়ি আসে। মেয়ের এরূপ অবস্থা দেখে বাবা দিশেহারা।
এমন অবস্থায় মাসি-পিসি খেয়ে না খেয়ে দিনরাত আহ্লাদির সেবা করতে থাকে। মাসি- পিসির এরূপ অক্লান্ত সেবাযত্নেই জগুর লাথির আঘাতে মরমর আহ্লাদি বেঁচে গিয়েছিল ।
প্রশ্ন-৯. স্বামীর ঘর ছেড়ে আহ্লাদি বাপের বাড়ি চলে আসে কেন?
উত্তর: অত্যাচারের ভয়ে আহ্লাদি স্বামীর ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসে।
জগুর সাথে আহ্লাদির বিয়ের পর থেকেই আহ্লাদি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে জগু তাকে খেতে না দিয়ে খুঁটির সাথে দিনভর বেঁধে রাখত, কলকে পুড়ে ছ্যাকা দিত।
জগুর লাথির চোটে ' আহ্লাদির প্রায় মরমর অবস্থা হয়েছিল। জগুর এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি বাপের বাড়ি চলে আসে।
প্রশ্ন-১০. “মরণ ঠেকাতেই ফুরিয়ে আসছে তাদের জীবনীশক্তি।”— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে দুর্ভিক্ষের সময় মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘মাসি-পিসি' গল্পে দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যের অভাব তীব্র হয়ে ওঠে। তার মধ্যে অসুস্থ আহ্লাদি এসে হাজির হয় মাসি-পিসির ঘরে। খেয়ে না- খেয়ে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে সুস্থ করার চেষ্টা করে।
কিন্তু আহ্লাদির অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। অন্যদিকে, চারপাশের মানুষ না- খেয়ে মরতে শুরু করে। ফলে জীবন বাঁচাতে মাসি-পিসিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।মাসি-পিসির মতো যারা সে যাত্রায় বেঁচে যায়, তাদের অবস্থা বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-১১. মাসি-পিসির মধ্যকার বিরোধ উবে গেল কীভাবে?
উত্তর: একসাথে রোজগার করতে গিয়ে মাসি-পিসির মধ্যকার সমস্ত বিরোধ উবে গেল ।
মাসি-পিসির মধ্যে আগেও সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু পিসির বাপের বাড়িতে মাসি আশ্রয় নেওয়ায় মাসির প্রতি পিসির অবজ্ঞা ও অবহেলার ভাব ছিল।
দুর্ভিক্ষের পর গ্রামের শাকসবজি নিয়ে শহরে গিয়ে বেচে রোজগারের চেষ্টা শুরু করার পর থেকে তাদের দুজনের একমন একপ্রাণ হয়ে গেল। আর আহ্লাদির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর তাদের মধ্যকার বিরোধও উবে গেল ।
প্রশ্ন-১২. জগু বৌ নিয়ে যাওয়ার জন্য এত আগ্রহ দেখায় কেন?
উত্তর: আহ্লাদির বাপের জমিজমার লোভে জগু বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য এত আগ্রহ দেখায় ।
দুর্ভিক্ষের সময় আহ্লাদির বাবা-মা ও ভাই মারা যায়। এতে বাপের ঘর- বাড়ি ও জমিজমার মালিক হয় আহ্লাদি। আহ্লাদিকে নিলে জগু তার জমিজমার মালিক হতে পারবে। আর এ লোভেই সে আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে খুব আগ্রহী।
প্রশ্ন-১৩. মাসি-পিসি খালি ঘরে আহ্লাদিকে রেখে যেতে সাহস পায় না কেন?
উত্তর: আহ্লাদির নিরাপত্তার কথা ভেবে মাসি-পিসি খালি ঘরে তাকে রেখে যেতে সাহস পায় না ।
স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আহ্লাদি বাবার বাড়ি চলে আসে এবং মাসি-পিসির কাছে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এখানেও তার নিরাপত্তা নেই।
গ্রামের জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের লালসার দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। তাই মাসি ও পিসি আহ্লাদিকে ঘরে একা রেখে কোথাও যাওয়ার সাহস করে না । কোথাও যেতে হলে তারা আহ্লাদিকে সাথে করে নিয়ে যায়।
প্রশ্ন-১৪. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ‘পাষাণ’ শব্দটি দ্বারা নির্যাতক পুরুষের নিষ্ঠুর মানসিকতাকে বোঝানো হয়েছে ।
সন্তানের প্রতি পিতামাতা স্বভাবতই সংবেদনশীল হয়। অপত্যস্নেহের বশবর্তী হয়ে কঠিন হৃদয়ের মানুষও আবেগে আপ্লুত হয়।
আর তাই সন্তানের প্রতি স্নেহের কারণে স্ত্রী নির্যাতনকারী কঠিন হৃদয়ের পুরুষও অনেক সময় স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হয় । আলোচ্য উক্তিটিতে ‘পাষাণ' শব্দটি দ্বারা স্ত্রীর প্রতি নির্দয় ও কঠিন মানসিকতার পুরুষদের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে ।
প্রশ্ন-১৫. ‘নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে’– কার, কেন?
উত্তর: নিজেকে ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে ‘মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির ।
অত্যাচারী স্বামী জগুর ঘর থেকে আহ্লাদি তার মাসি-পিসির কাছে চলে আসে। এলাকার কিছু খারাপ লোক তার দিকে কুদৃষ্টি দেয়।
মাসি-পিসির সাথে বাজারে গেলে তারা তরিতরকারি কেনার মতো তাকেও করায়ত্ত করার জন্য মাসি-পিসির সাথে আলাপ জমায়। এসকল কথা চিন্তা করে নিজেকে আহ্লাদির ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো মনে হয় ।
প্রশ্ন-১৬. 'অতি সন্তর্পণে তারা বিছানা ছেড়ে ওঠে।'- কাদের সম্পর্কে এবং কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: মাসি-পিসি সম্পর্কে এ উক্তি করা হয়েছে ।
সাধু বৈদ্য ও ওসমানের দল আবার আসতে পারে এই আশঙ্কায় মাসি-পিসি রাত্রে সজাগ থাকার পরিকল্পনা করে এবং গুন্ডাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
তাদের এই প্রস্তুতির কারণে আহ্লাদির যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্যই মাসি-পিসি সন্তর্পণে বিছানা ছাড়ে ।
প্রশ্ন-১৭. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি'— উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাসি-পিসির নানারকম প্রস্তুতির দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘মাসি-পিসি' গল্পে রাতের বেলা দুশ্চরিত্র ও লোভী প্রতিবেশী গোকুল আহ্লাদিকে তুলে নিতে কয়েকজন গুন্ডা-বদমাসকে পাঠায়। কিন্তু মাসি- পিসি দা-বঁটি হাতে তুলে নিয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাদের তাড়িয়ে দেয়।
তা সত্ত্বেও এ কুচক্রীরা রাতে আবারও আক্রমণ চালাতে পারে- এ আশঙ্কায় মাসি-পিসি নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এ বিষয়টি প্রবাঝাতে গল্পকার আলোচ্য উক্তিটি করেন।
অনেক ভালো লাগলো