ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে | ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে
পবিত্র মহাসত্য ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। আর ইসলামেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন বা স্তম্ভ হলো সিয়াম তথা রোজা। এই রোজা পালন করার জন্যও রয়েছে নানান বিধিনিষেধ। যা আমার সাধারণ মুসলমানরা অনেকেই জানি না।
বিশেষ করে ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে অথবা কোনো কারণে ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে? এই জাতীয় অনেক মাসালা মাসায়েলই আমরা জানি না।
ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে |
তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করব, ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে কিনা এবং ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে নাকি। একইসাথে ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ।
সেহরি খাওয়া
সিয়াম পালন বা রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতের সুবহে সাদিকের আগে যে পানাহার বা খাওয়া দাওয়া করা হয়, তাকে সেহরি বলে।
সিয়াম পালন বা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি সুন্নত। তবে কোনো কারণে সেহরি খাওয়ার আগে গোসল ফরজ হলে, তখন কি সেহরি খাওয়া যাবে?
অথবা সেহরি খাওয়ার পর যদি গোসল ফরজ হয় তাহলে কি রোজা থাকবে? এই জাতীয় অনেক প্রশ্নই আমাদের অনেকের মাঝে ঘুরপাক খায়। তাই আসুন আগে জেনে নিই কী কী কারণে গোসল ফরজ হয়।
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। তাই ইসলামে প্রতিটি বিষয় আল্লাহর নির্দেশ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক মানতে এবং পালন করতে হবে। ঠিক এমনই কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে গোসল ফরজ হওয়ার জন্য। নিম্নে যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় তার বিবরণ দেওয়া হলো।
যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়
- যদি পুরুষ কিংবা মহিলার স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে। অথবা ইচ্চছাকৃত ভাবে কেউ বীর্যপাত ঘটালে।
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের মিলনে হলে। অথবা পুরুষে পুরুষে কিংবা মহিলা মহিলায় যৌনসঙ্গম হলে। এতে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক।
- মেয়েদের হায়েয যা মহিলাদের প্রতি মাসে প্রাকৃতিক ভাবে হয়ে থাকে, তার সমাপ্তি ঘটলে। একইভাবে নিফাস তথা মহিলারা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর চারমাস সময় অতিক্রান্ত হলে।
- কোনো বিধর্মী ইসলাম গ্রহণ করলে অর্থাৎ নও মুসলিম হলে।
- নারী পুরুষের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করলে।
- উপরোক্ত কারণে আমাদের প্রত্যেকের জন্য গোসল ফরজ হয়।
- সেহরি খাওয়ার আগে গোসল ফরজ হলে
যদি উপরের উল্লিখিত কারণ গুলো রোজার সেহরি খাওয়ার আগে হলে, গোসল অবশ্যই ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় সেহরি খেয়ে রোজা রাখা যাবে কি? অথবা ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে?
ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে | ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে
অবশ্যই গোসল ফরজ হলেও, সেই ফরজ গোসল না করা ছাড়াই রোজা রাখা যাবে। অর্থাৎ যদি কেউ সেহরি খাওয়ার আগে তার গোসল ফরজ হয়ে যায়, তাহলে সে অবশ্যই (যদি কোনো কারণে যথাসময়ে গোসল করতে না পারে) তবে গোসল না করেই সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে পারবে এবং তার রোজা রাখা সহিহ হবে।
এর স্বপক্ষে দলিল হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমরা জানতে পারি, গোসল ফরজ হলে, নাপাক অবস্থায় নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, কিংবা কুরআন স্পর্শ করা, তাওয়াফ করা, ও মসজিদে প্রবেশ ছাড়া অন্যান্য সাধারণ যেকোনো প্রকারের কাজ করা যাবে। এতে কোনো বাধা নেই যায়। (বুখারি হাদিস নং ২৭৯)
সুতরাং গোসল ফরজ হওয়া অথবা নাপাক অবস্থায় সেহরি খেতে কোনো বাঁধা নিষেধ নেই। এই হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, কারো গোসল ফরজ হলেও সে সেহরি খেতে পারবে, এতে তার রোজার কোনো হেরফের হবে না।
তবে এখানে উল্লেখ্য যে, গোসল ফরজ অবস্থায় সেহরি খেয়ে রোজা রাখা গেলেও, গোসল ফরজ অবস্থায় ফজরের সালাত বা নামাজ কাযা করা যাবে না।
কেননা নামাজ ছেড়ে দেওয়া কিংবা বিনা কারণে নামাজ ছুটে যাওয়া মারাত্মক একটি কবিরা গুনাহ। তাই অবশ্যই নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলেও ফজরের নামাজের আগে অবশ্যই গোসল সেরে নামাজ আদায় করতে হবে।
এইক্ষেত্রে কিছু হাদিস হযরত মা (রা.) থেকে এসেছে। যেখানে তিনি বলেন, রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়া অপবিত্র নাপাক অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুবহে অতিক্রম করতেন। অতঃপর তিনি গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা রাখতেন। (বুখারি, হাদিস নং ১৮২৯, মুসলিম, হাদিস নং ১১০৯)
এই বিষয়ে রাসুলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর স্ত্রী উম্মুল মোমিনীন উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, "সহবাসের ফলে না-পাকি অবস্থায় রাসুল সুবহে সাদিক পার করতেন, অত:পর গোসল সেরে রোজা রাখতেন। (বুখারি হাদিস নং ১৯২৬)
সেহরির পরে গোসল ফরজ হলে
আমাদের অধিকাংশ মানুষের একটি অভ্যাস হচ্ছে, সেহরি খেয়ে নামাজ পড়ে বা না পড়ে আবার ঘুমানো। এই ঘুমের কারণে অনেকেরই অনিচ্ছাকৃত কারণে শরীর নাপাক হয়ে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
অথবা ঘুমের ঘোরে স্ত্রী সহবাসের কারণেও গোসল ফরজ হয়ে যায়। এইসব বিভিন্ন কারণে যদি সেহরির পর গোসল ফরজ হয়, তাহলে তার উত্তর কী? এই ফরজ গোসল না করলে কি রোজা রাখা যাবে? আসুন উত্তর জেনে নিই।
স্বপ্নদোষ হলে
যাদের সেহরির পর স্বপ্নদোষ হয়ে গোসল ফরজ হয়ে যায়। তাদের রোজা হবে কি? এবং এ ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর বিখ্যাত শাইখ বিন বায (রহ.) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি এর উত্তরে যা বলেন তা হলো, তার উপর রোজা কাযা আদায় করা জরুরী নয়।
কেননা স্বপ্নদোষ কোনো মানুষের ইচ্ছাধীন কিছু নয়। তবে, তার উপর গোসল ফরয হবে, যদি এই স্বপ্নদোষে তার আসে এবং সেই বীর্যের আলামত সে দেখে। (মাজমুউল ফাতাওয়া ১৫/২৭৬)
ঠিক একই প্রশ্ন শাইখ উছাইমীন (রহ.) কে করা হলে তিনি জবাব দিয়েছেন, তার রোযা সহিহ হবে। স্বপ্নদোষের কারণে তার রোযা ভাঙ্গবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার এখতিয়ারের (ইচ্ছার) মধ্যে নেই। যেকারণে ঘুমন্ত অবস্থায় কলম তুলে রাখা হয়।
সুতরাং সেহরির পর গোসল ফরজ হলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। তবে তাকে অবশ্যই দ্রুত গোসল করে পাক পবিত্র হতে হবে।
একইভাবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের উপর গোসল ফরজ করে। অর্থাৎ নিজের কামনা বাসনা থেকে রোজা রেখে স্ত্রীর সাথে দিনে সঙ্গম করে (বীর্যপাত না হলেও), হস্তমৈথুন করে, পুরুষে পুরুষে কিংবা নারীতে নারীতে সঙ্গম করে, তাহলে তার গোসল ফরজ হয়। এই গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় তার রোজা হবে কিনা?
হস্তমৈথুনের কারণে গোসল ফরজ হলে
রোজা রেখে হস্তমৈথুন করলে রোজা হবে কি? এই বিষয়ে শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন, "কেউ যদি রোজার দিন রোজা থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন করে এবং তার বীর্যও বের হয়।
তাহলে এতে তার রোজাটি ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর রোজাটি রমজানের ফরজ রোজা হয়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই এই রোজার কাযা আদায় করতে হবে।
একইসাথে তাকে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে তার গুনাহ ক্ষমা চাইতে হবে। কেননা রোজা রাখা বা না রাখা যে কোন অবস্থাতেই হস্তমৈথুন করা কখনোই জায়েয নয়। (ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায, ১৫/২৬৭)
একইভাবে শাইখ ইবনে উছাইমীন এই বিষয়ে বলেন, "যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় হস্তমৈথুন করে এবং এর ফলে তার বীর্যপাত হয়, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
একারণে সে যেদিন হস্তমৈথুন করেছে তাকে সেই দিনের রোজা কাযা আদায় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তাকে কাফফারা দিতে হবে না।
কেননা কাফফারা শুধু সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে সেক্ষেত্রে ফরজ হয়। এই পাপ কাজের জন্য তাকে তওবা করতে হবে।” (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা- ৪৭৮)
এখানে প্রাধাণ্য যে, উপরোক্ত হুকুম তখন প্রযোজ্য হবে যদি এই হস্তমৈথুনের ফলে তার বীর্যপাত হয়। আর হস্তমৈথুন করেছে কিন্তু বীর্যপাত হয়নি তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে এক্ষেত্রেও সে গুনাহগার হবে এবং গুনাহের জন্য তওবা করতে হবে।
স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরজ হলে
সেহরির পর স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরজ হলে রোজা হবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, রোজা রেখে স্ত্রী সহবাস অবশ্যই গর্হিত অপরাধ।
এই জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়কেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাই গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে পবিত্র হতে হবে। আর এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর প্রধান কাজ হচ্ছে, যে তারা যে রোজা নষ্ট করেছে।
তার পরিবর্তে একাধারে ৬০ টি রোজা তাদের রাখতে হবে। যদি এটা সম্ভব না হয়, তবে তাদের প্রত্যেককে ষাটজন মিসকিনকে খাওয়াতে হবে।
এই ব্যাপারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি স্ত্রীর অসম্মতিতে স্বামী এই কাজ করে। তাহলে শুধু স্বামীকেই কাফফারা দিতে হবে। এই সম্পর্কে একটি বিখ্যাত হাদিস বুখারি মুসলিম শরিফে রয়েছে। যে হাদিসটি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
আর হাদিসটির সারমর্ম হলো, একদিন তারা আল্লাহ্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল যে, হে আল্লাহ্র রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম তথা রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি।
আল্লাহ্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আযাদ করার মত কোনো ক্রীতদাস (তোমার কাছে আছে যে) তুমি মুক্ত করতে পারবে? সে বলল, না। এর পর তিনি জানতে চাইলেন, তুমি কী একাধারে দুই মাস (অর্থাৎ একটি রোজা গ্যাপ না দিয়ে লাগাতার রোজা রাখা) সিয়াম (তথা রোজা) পালন করতে পারবে?
সে উত্তরে জানায়, সে পারবে না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, তোমার এমন সামর্থ্য আছে ষাটজন মিসকিন খাওয়ানোর? এই প্রশ্নের উত্তরেও সে জানায় , না নেই। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেমে গেলেন।
সেখানে উপস্থিত সকলেও চুপ করে রইলো। এমন সময় সেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এক ঝুড়ি সাদকার খেজুর এলো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে চাইলেন, প্রশ্নকারী কোথায়?
তখন সেই প্রশ্নকারী বলল, আমি এখানে। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে (তুমি) সদাকাহ করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রাসুল! (আমি কি) আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্থকে সদাকাহ করব? আল্লাহ্র শপথ, মাদিনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্থ (আর) কেউ নেই।
(এ কথা শুনে) আল্লাহ্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো (নিয়ে) তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (মূল হাদিস সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৩৬, মুসলিম ১১১১)
সুতরাং সেহরির পর গোসল ফরজ হলে রোজা হবে না এবং তা কাজা আদায় করতে হবে। নতুবা তার পরিবর্তে মিসকিন খাওয়াতে হবে।
সমকামিতার ফলে গোসল ফরজ হলে
উপরোক্ত কারণ ছাড়াও সমকামিতার জন্যও গোসল ফরজ হয়। তাই সাথে সাথে গোসল করে পবিত্র হতে হবে এবং দিনের বাকি অংশ রোজা পালন করতে হবে।
আর সমকামিতার ক্ষেত্রে গুনাহের মাত্রা বেশী। কেননা সমকামিতা ইসলামে হারাম অর্থাৎ কখনোই জায়েজ নয় এবং তা করা যাবে না। তাই রোজা তো ভঙ্গ হবেই একইসাথে আল্লাহর কাছে তওবাতুন নছুহা করতে হবে।
আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে এই কবিরা গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। সুতরাং সমকামিতার ফলে গোসল ফরজ হলে রোজা হবে না। এবং এই রোজা কাযা আদায় করতে হবে। অপারগ হলে ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে কি হবে না। একইসাথে ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে কিনা।
আমরা ফরজ গোসলের মাসাআলা জানলেও অনেকেই ফরজ গোসলের নিয়ম কানুন জানে না। তাই তাদের জন্য নিম্নে ফরজ গোসলের নিয়ম দেওয়া হলো।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
- যার গোসল ফরজ হয়েছে, তাকে পবিত্র হওয়ার জন্য অবশ্যই গোসলের নিয়ত করতে হবে মনে মনে। এক্ষেত্রে আমাদের অনেকেই মুখে আরবি শব্দ মালা দিয়ে নিয়ত করে থাকি। যা সুস্পষ্ট বিদ’আত।
- এরপর প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধুয়ে নিতে হবে।
- তারপর পানি দিয়ে লজ্জ্বাস্থান ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যাতে নাপাকি কোনো কিছু লেগে না থাকে। এক্ষেত্রে পানি ডান হাতে নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ধুতে হবে।
- সব কিছু পরিষ্কার করার পর বামহাতও ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- তারপর সালাত বা নামাজের মতো করে ওজুর নিয়মে ওজু করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দুই পা ধোয়া যাবে না।
- ওজু করা শেষ হলে মাথায় নূন্যতম তিনবার পানি ঢালতে হবে।
- তারপর এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডান দিকে তারপর ৩ বার বাম দিকে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনভাবে শরীরে পানি ঢালতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ বা কোনো লোমও শুকনো না থাকে। এমনকি নাভি, বগল ও শরীরের অন্যান্য কুঁচকানো অংশ যেখানে সহজে পানি পৌঁছায় না, সেইসব অংশ ভালো ভাবে পানি দিয়ে ধুতে হবে।
- উপরোক্ত প্রক্রিয়া শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিন বার ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এই ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী যে,
পুরুষদের মধ্যে যা দাড়ি রাখেন, তারা তাদের দাড়ির গোড়ায় গোড়ায় ও মাথার চুলের গোড়ায় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পানি পৌঁছাতে হবে।
এই নিয়মে গোসল করার পর নতুন করে আর ওজু করতে হবে না। যদি কোনো ইবাদত তথা সালাত বা নামাজ আদায় কিংবা কুরআন তেলাওয়াতের মতো অন্যান্য ইবাদত, যে ইবাদতে ওজুর প্রয়োজন হয়। এই নিয়মে গোসল করে কোনো কারণে ওজু ভঙ্গ না হলে, এই ওজু দিয়েই সকল ইবাদত করা যাবে।
প্রিয় বন্ধুরা আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পবিত্র রমজানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসাআলা মাসায়েল জানতে পারলাম।
বিশেষ করে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমরা লজ্জ্বায় কারো কাছে শেয়ার করতে পারি না। তাই আশাকরি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন, ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে কিনা।
আর না হলে কী করতে হবে। একইভাবে ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে কিনা। আর না হলে কী করতে। একইসাথে আরও জানতে পারলাম ফরজ গোসলের নিয়ম কিংবা কীভাবে ফরজ গোসল করতে হয় ইত্যাদি।
শেষকথা: ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে | ফরজ গোসল না করলে কি রোজা হবে
পবিত্র রমজান মাসই হচ্ছে পবিত্র একটি সময়। যে সময় গুলোতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করে প্রচুর পরিমাণ নেকী দিয়ে থাকেন। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এই মাসে সবসময় পবিত্র থাকা।
যদি কোনো কারণে অপবিত্র হয়েও যাই, তাহলে উচিত হবে সাথে সাথে যতটুকু সম্ভব দ্রুততার সহিত গোসল করে পবিত্র হওয়া।
আর ভুলেও কখনো রমজানে রোজা অবস্থায় অধিকক্ষণ অপবিত্র অবস্থায় না থাকি। কেননা রমজানে অপবিত্র অবস্থায় থাকা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এতে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি)।