ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।
ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় |
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. পাকিস্তানি শাসন আমলে বাঙালিদের জাতীয় মুক্তির প্রথম আন্দোলনের নাম ছিল ‘ভাষা আন্দোলন' ।
খ. ছয় দফা দাবিতে বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা উল্লেখ থাকায় একে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ' বলা হয় ।
১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এতে বাঙালির চরম প্রত্যাশিত স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি উত্থাপন করা হয়। এ দাবিগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও তা বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এ কারণেই ছয় দফাকে ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ' বলা হয় ।
গ. সারণি ক-তে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর দুটি অংশ অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ ছিল বাঙালি; তবুও রাষ্ট্র পরিচালনা, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগসহ সবক্ষেত্রেই বাঙালির প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণমূলক নীতি বজায় ছিল। প্রতিরক্ষা খাতও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
সারণি ‘ক’ এ প্রতিরক্ষা বিভাগে নিয়োজিত পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানির কর্মকর্তা এবং সৈনিকদের সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিভাগের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীতে বাঙালির নিয়োগ ও
পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজ করছিল। মোট অফিসারদের মাত্র ৫% সেনা কর্মকর্তা ছিল বাঙালি। অথচ ৯৫% ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি। আবার সাধারণ সৈনিকের ক্ষেত্রে ৯৬% ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি আর পূর্ব পাকিস্তানিরা ছিল মাত্র ৪%। এছাড়াও নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ৮১% ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি, অন্যদিকে বাঙালি ছিল ১৯%। এছাড়া নৌবাহিনীর অন্যান্য পদে মাত্র ৯% ছিল পূর্ব পাকিস্তানি যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিল ৯১%। অথচ জনসংখ্যার দিক থেকে তারা ছিল অনেক কম। তাই বলা যায়, সারণি 'ক' তে প্রতিরক্ষা খাতে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।
ঘ. প্রদত্ত সারণি খ-এ প্রদর্শিত বৈষম্যের প্রেক্ষিতে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল ভয়াবহ।
পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব বাংলার চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। যেমন— ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৫৯-৬০ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মোট বাজেট বরাদ্দের ১১৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছিল, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান পেয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৪-৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৪৮ কোটি টাকা, আর পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য তা ছিল ২২,২৩০ কোটি টাকা। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, কৃষিসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের চাইতে কয়েকগুণ পিছিয়ে পড়ে।
সারণি-খ তে প্রদর্শিত তথ্যে মূলত পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজমান ছিল। শাসকগোষ্ঠীর এ ধরনের বৈষম্যমূলক নীতির ফলে পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্তের বিকাশ মন্থর হয়ে পড়ে। বাঙালিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে থাকে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন কৃষিসহ অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে পড়ে ।
সুতরাং, সারণি খ-এ প্রদর্শিত তথ্যের আলোকে বলা যায়, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দ্বারা চরম অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ছয় দফাকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।