সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি।
সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি |
সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি
উত্তর ভূমিকা : রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির সুষ্ঠু সম্পাদনা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। সংগঠন ছাড়া প্রশাসন ব্যবস্থা অচল, প্রতিটি সংগঠনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপাদান বিদ্যমান থাকে।
কেননা উপাদান ছাড়া কোনো সংগঠন কল্পনাও করা যায় না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কতিপয় উপাদান সক্রিয় থাকে। সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সব উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
উক্ত উপাদানসমূহ সংগঠন ও প্রশাসন ব্যবস্থায় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । সংগঠন ছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তাও করা যায় না।
সংগঠনের উপাদানসমূহ : প্রতিটি সংগঠন গড়ে উঠার পিছনে কতিপয় উপাদান কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিম্নে সংগঠনের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ। কেননা ব্যক্তি বা মানুষ ব্যতীত কোনে সংগঠনই গড়ে উঠতে পারে না। মানুষ তার নিজ প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী সংগঠন সৃষ্টি করে এবং তা দ্বারা চাহিদা মেটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে।
অনেকের মতে সংগঠন হচ্ছে মানুষের উদ্দেশ্য সাধনের একটি উপায় মাত্র। মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে থাকে। মানবজীবনে সংগঠনের প্রভাব খুব বেশি।
সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মানুষ সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যা সংগঠন গড়ে উঠার অন্যতম কারণও বটে।
জন্মের পরবর্তী ব্যক্তির উন্নত জীবনধারণ, উন্নত জীবনযাত্রার মান ও সুকুমার বৃত্তির পরিপূর্ণ বিকাশ বহুলাংশে সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল এবং সংগঠনের সৃষ্টির মূল পটভূমিও মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকেন্দ্রিক।
একমাত্র সংগঠনের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজে সমাজবদ্ধ জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয় এবং নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়।
মানুষের প্রচেষ্টা দ্বারা সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে স্কুল- কলেজ, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
মানুষের কর্মপ্রচেষ্টাই সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। তাই মানুষ বা ব্যক্তি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ছাড়া সংগঠন সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।
২. রাজনৈতিক উপাদান : রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ হতেই লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি। রাজনীতি প্রশাসনিক সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাজনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনে সংগঠনের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে।
রাজনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে সাধন করতে সংগঠনের বিকল্প নেই। সরকারি কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয় রাষ্ট্রের অন্তর্গত বিভিন্ন সংগঠনের প্রকৃতি ও গঠন এবং কার্যাবলির ওপর।
রাষ্ট্রীয় সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগ এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের প্রকৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রশাসনিক সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। কার্ল মার্কস আইন ও নির্বাহী বিভাগকে সংগঠনের স্রষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
৩. পরিবেশগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে যেসব উপাদান সক্রিয় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পরিবেশগত উপাদান অন্যতম, কেননা সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উপযুক্ত পরিবেশ ব্যতীত সংগঠন গড়ে উঠার সম্ভাবনা খুবই কম। কেবল উপযুক্ত পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব হলে তা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয় এবং সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হয়।
তবে সব পর্যায়ে একই পরিবেশ বিরাজ করে না বিধায় সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ, রাজনৈতিক উপাদান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৪. প্রযুক্তিগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা আধুনিককালে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জটিল কার্যাবলি সম্পাদনে প্রযুক্তিগত উপাদানের কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমানে সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিগত উপাদানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সংগঠনের কাজের মান, স্থায়িত্ব ও সফলতা বহুলাংশে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।
নতুন প্রযুক্তির ব্যবস্থায় সমাজ সংগঠনের আমূল পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার সংগঠনকে নতুনত্ব দান করে এবং কার্যক্ষেত্রে ফলাফল প্রাপ্তি দ্রুত সময়ে নিশ্চিত করে।
৫. প্রায়োগিক উপাদান : সংগঠনের অন্যতম একটি উপাদান হলো এর প্রায়োগিক উপাদান। সমাজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে বহুবিদ জটিল কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়।
যেগুলোর জন্য কারিগরি দক্ষতা ও বিশেষ ধরনের নৈপুণ্যের প্রয়োজন হয়। কার্ল মার্কসের মতে সংগঠনের জন্য প্রায়োগিক উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
সংগঠনের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকে তাদের কর্মের দক্ষতা ও নিপুণতা থাকা একান্ত আবশ্যক। বিশেষ করে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, চিকিৎসা, প্রকৌশল ইত্যাদি সংগঠনগুলোতে প্রায়োগিক উপাদানই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুষ্ঠুভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, কর্মের নৈপুণ্য ও দক্ষতার প্রয়োগের মাধ্যমে সংগঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় ।
৬. ভৌগোলিক উপাদান : সংগঠনের অন্যতম উপাদান হলো এর ভৌগোলিক উপাদান। রাষ্ট্রীয় সংগঠনের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
প্রশাসন ও পরিকল্পনা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ইত্যাদি সংগঠন ভৌগোলিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেগুলোর কাজ সহজ প্রকৃতির কিন্তু কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে গঠিত সংগঠনগুলো বিষয়ের গুরুত্ব ও ব্যাপকতার কারণে জটিল পদ্ধতির হয়ে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠন গড়ে তোলা, পরিচালনা ও অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এসব উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। উপর্যুক্ত উপাদানসমূহ ছাড়া সংগঠন যেমন গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তেমনি সংগঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হবে না।
তবে পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থায় সংগঠনের উপাদানসমূহ সুনির্দিষ্ট ও স্থির নয়। সুষ্ঠু পরিচালনা ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংগঠনের উপাদান কয়টি ও কি কি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।