সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর।
সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর |
সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক লোকপ্রশাসনিক আলোচনায় সংগঠনের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । অষ্টম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেকেই তাত্ত্বিক সংগঠন সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন।
তন্মধ্যে সনাতন মতাবাদ ও আধুনিক মতবাদ সাংগঠনিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আধুনিক বিশ্বে সুসংগঠিত সংগঠন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালীকরণে এসব মতবাদ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য : সংগঠন ব্যবস্থাপনায় সনাতন ও আধুনিক মতবাদ বেশ কার্যকর হলেও এ দুটি মতবাদের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে এসব পার্থক্য নির্ণয় করা হলো :
১. সংজ্ঞাগত : সনাতন মতবাদ বলতে এখন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠন পূর্ব ঘোষণার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, আধুনিক মতবাদে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংগঠনের কর্মীদেরকে কোনো তদন্ত বা কর্ম সম্পাদনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা না করে।
বরং কর্মীদের সাথে মানবিক আচরণের মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।
২. কাঠামোগত : সংগঠনের সনাতন মতবাদ কাঠামো ভিত্তিক এবং নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ। এটি আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কর্ম সম্পাদন করে না।
পক্ষান্তরে, আধুনিক সংগঠনের কাঠামো অনেকাংশে শিথিল এবং এটি আইনের তুলনায় সামাজিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
৩. পদসোপানগত ভিন্নতা : সনাতন প্রশাসনে সম্পূর্ণরূপে পদসোপান নীতি অনুসরণ করা হয়। এখানে প্রশাসনিক সম্পর্ক অধস্তন ও ঊর্ধ্বতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
অপরদিকে, আধুনিক প্রশাসনে পদসোপান নীতির কোনো কড়াকড়ি নেই বরং সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনার জন্য এখানে ঊর্ধ্বতন অধস্তনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
৪. প্রকৃতিগত : সাধারণত সনাতন মতবাদ অনেকাংশে সংকীর্ণ ও সাদাসিধে ধরনের হয়ে থাকে। এটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ বিধায় এখানে সৃজনশীলতার কোনো স্থান নেই।
পক্ষান্তরে, আধুনিক মতবাদে সংগঠনের জন্য বিভিন্ন বান্ধি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর প্রকৃতি সব বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে তার কর্ম পরিচালনা করে থাকে।
৫. দক্ষতার ক্ষেত্রে : সংগঠনের সনাতন মতবাদ অনুসারে কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, আধুনিক মতবাদে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও কর্মচারীদের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে সংগঠন পরিচালনার ওপর গুরুত্ব নিয়ে থাকে।
৬. সমন্বয়গত : সাধারণত সংগঠনের সমন্বয়ের দিক থেকে সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
সনাতন সংগঠনে সমন্বয়ের তেমন কোনো উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় না বিধায় এতে প্রায়শই সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয় । অপরপক্ষে, আধুনিক মতবাদে যথাযথ সমন্বয়ে নীতি অনুসৃত হয়।
৭. ক্ষমতার ব্যবহারে ভারতম্য : সনাতন প্রশাসন জোরজবরদস্তিমূলকভাবে প্রশাসনিক আইন দ্বারা প্রশাসন পরিচালনা করে। কর্মীদেরকে সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়।
অপরদিকে, আধুনিক সংগঠনে আইনের পরিবর্তে প্রশাসন পরিচালনায় কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় নীতি গ্রহণ করা হয়।
৮. কর্মী সংগঠন : সনাতন মতবাদের সংগঠনে সীমিত পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে চাহিদার চেয়েও স্বপ্ন সংখ্যক কর্মী বা শ্রমিকের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে, আধুনিক সংগঠনে চাহিদা মোতাবেক কর্মী ও শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
৯. যান্ত্রিকতা ও মানবিকতা : সাধারণত সনাতন প্রশাসন অনেকটাই নিয়মতান্ত্রিক হয়ে থাকে। এখানে মানবিকতার দিকটি উপেক্ষিত হয়।
অপরপক্ষে, আধুনিক প্রশাসন অনেকাংশে মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়।
১০. কর্মভিত্তিক : সনাতন মতবাদ অনুসারে সংগঠন কার্যভিত্তিক হয়ে থাকে। অন্যদিকে, আধুনিক মতবাদ হলো একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থা এবং তুলনামূলক কার্যক্রম প্রকৃতির।
১১. যৌক্তিকতার বিচার : যৌক্তিকতা বিচারে সনাতন প্রশাসন অনেকাংশে ন্যায়ানুগ আচরণ করে না। পক্ষান্তরে, আধুনিক সংগঠন ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এবং এটি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কল্যাণসাধনের জন্য নিয়োজিত ।
১২. স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে ; সনাতন মতবাদে প্রশাসনের সব দিক ফুটে ওঠেনি বিধায় এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
অপরদিকে, আধুনিক মতবাদকে আধুনিক মতবাদ তার পূর্বেকার সনাতন মতবাদ ও নব্য সনাতন মতবাদের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে বিধায় তাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মতবাদ বলে গণ্য করা হয়।
এটি সনাতন প্রশাসনের ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন করে প্রশাসনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে সনাতন ও আধুনিক মতবাদ উভয়েরই অবদান রয়েছে।
সনাতন মতবাদ কালের বিবর্তনে সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখী হলেও সংগঠনের বিকাশে এর অবদান কোনো অংশে কম নয়।
অন্যদিকে, যুগের চাহিদা অনুযায়ী এবং মানবিক ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের আধুনিক মতবাদ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংগঠনের সনাতন ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংগঠনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।