সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর।
সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর |
সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা মানুষের সামাজিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে এবং মানুষ সামাজিক হয়ে ওঠে।
এটি সাধারণত শিক্ষা, পরিবার, সমাজের বিভিন্ন সংঘের মাধ্যমে মানুষকে সমাজের সদস্য হিসেবে গড়ে তোলে।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ব্যক্তিই তার সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে চলতে চেষ্টা করে। তবে মৃত্যুর সাথে সাথে সামাজিকীকরণের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সামাজিকীকরণ : সাধারণ অর্থে সামাজিকীকরণ হলো একটি সামাজিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া। সামাজিকীকরণ হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানবশিশু সামাজিক মূল্যবোধ।
আদর্শ আচরণ, নিয়মনীতি শিক্ষালাভ করে নিজেকে সমাজে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলে এবং যা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া; যা সমগ্র জীবন ধরে চলতে হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
আর. টি. শেফার সামাজিকীকরণ সম্পর্কে বলেন, “সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার নিজ গোষ্ঠীর আদর্শ ও মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রাখে।”
কিংসলে ডেভিস এর মতে, “যে পদ্ধতিতে মানবশিশু ক্রমেই সামাজিক মানুষে পরিণত হয় তাকে সামাজিকীকরণ বলে।”
আরনল্ড গ্রিন বলেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো শিশু তার নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয় এবং তার অহংবোধ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে।”
Smelser বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় মানুষ সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে তাকে সামাজিকীকরণ বলে।”
Cooley বলেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সামাজিক ও অন্যান্য পৈতৃক বিষয়াবলি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়।”
Watson বলেন, “বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক, “শিক্ষামূলক শাখা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির সাথে নিজেকে তার সমাজের মধ্যে খাপখাইয়ে বলার পদ্ধতি শিক্ষাই হচ্ছে সামাজিকীকরণ।"
● সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ : নিম্নে সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. অভিযোজন : অভিযোজন হলো সামাজিকীকরণের মূল মাধ্যম। অভিযোজনের মাধ্যমেই সামাজিকীকরণ তৈরি হয়।
এখানেই শিশুর প্রথমে মানসিক জগৎ তৈরি হয়। শিশু তার পরিবারের থেকে যে আদর্শ, রীতিনীতি, শিক্ষালাভ করে থাকে সে হিসেবেই তার ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে ওঠে।
২. পরিবার : সামাজিকীকরণের মূল মাধ্যম হলো পরিবার। সামাজিকীকরণ তৈরি হয় পরিবারের মাধ্যমে। শিশুর প্রথম মানসিক জগৎ তৈরি হয় পরিবারে।
৩. ধর্মীয় আদর্শ : ধর্মীয় আদর্শ হলো সামাজিকীকরণের অন্যতম মাধ্যম। প্রত্যেক ব্যক্তিই ধর্মীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষালাভ শুরু করে এবং বৃহত্তর সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আদর্শ ও আচারআচরণের সাথে পরিচয় ঘটে।
সমাজ অনুমোদিত আচারবাহার এবং সমাজের নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পর্কে সে অবহিত হয়, আইনশৃঙ্খলার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ জাগে এবং সে সহনশীল হয়।
৫. রাষ্ট্র : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে যে মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে রাষ্ট্র অন্যতম। রাষ্ট্র ব্যতীত সামাজিকীকরণ অসম্ভব ।
রাষ্ট্র হলো একটি কর্তৃত্বমূলক প্রতিষ্ঠান। আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সমাজবাসীদের আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে অমান্যকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়।
৬. পেশাগত সংস্থা : পেশাগত সংস্থাসমূহও সামাজিকীকরণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা ব্যক্তি শিক্ষার্জনের শেষে যেকোনো একটি বৃত্তি বা পেশা গ্রহণ করে।
ফলে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা হলো সামাজিকীকরণের সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।
৭. অনুকরণ : সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম আরেকটি উপাদান হলো অনুকরণ। সাধারণত শিশুদের মাঝে এই অনুকরণ প্রবণতা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়।
এই প্রবণতার ফলে শিশু তার পিতা, সঙ্গী সাথি ও আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে অনেক কিছু রপ্ত করে । বিশেষ করে অনুকরণের মাধ্যমেই শিশু ভাষা উচ্চারণ, কথা বলার ধরন অন্যদের থেকে শিখে থাকে।
৮. অহংবোধ : ব্যক্তি মানুষের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অহংবোধের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।
অহংবোধের সৃষ্টি হয় অপরের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে এবং এভাবে সূত্রপাত ঘটে সামাজিকীকরণের।
৯. ভাষা : ভাষা হলো সামাজিকীকরণের আসল; উপাদান। ভাষার মাধ্যমে সাধারণত শিশুরা সমাজ, সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে।
প্রকৃতপক্ষে, এই ভাষাই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য উপাদান। শিশুরা কিছু এলোমেলো ভাষা শিখতে একসময় সে তার মাতৃভাষাকে আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়।
১০. গণমাধ্যম : বর্তমান সময়ে সমাজজীবনে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও তাৎপর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমাধ্যমে দেশবিদেশের বহু ঘটনা তুলে ধরা হয়।
তাই গণমাধ্যম সামাজিকীকরণের অন্যতম বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমের সাহায্যে ব্যক্তি সমাজে বিভিন্ন প্রান্তের খোঁজখবর আনতে সমর্থ হয়।
১১. স্নেহ-ভালোবাসা : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে স্নেহভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। কেননা এটি ছাড়া সামাজিকীকরণ সম্ভবপর হতে পারে না।
কারণ শৈশবে শিশু আপনজনদের থেকে স্নেহভালোবাসা পেয়েই সামাজিক রীতিনীতি শিক্ষালাভ করে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিকীকরণ বলতে প্রচলিত আচরণ ধারা গ্রহণ করাকেই বুঝায় । সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানুষকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
তাই সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলোর তাৎপর্য অনন্য। অতএব আমরা বলতে পারি যে, যার মাধ্যমে কোনো মানবশিশু সমাজে বসবাস করার উপযোগী হিসেবে গড়ে ওঠে তাকে সামাজিকীকরণের মাধ্যম বলে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সামাজিকীকরণ কি। সামাজিকীকরণের বাহন সমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।